ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রতিভা দেখলেন-নজরুল অসুস্থ

Daily Inqilab ইসরাইল খান

১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১০ এএম

কলকাতা থেকে চলে আসবার পরে নজরুল, আমাকে নিয়মিত চিঠি লিখতেন। আমিও আমার অবিশ্রান্ত রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র এবং নজরুলের উপহার দেওয়া অগণিত বই-পড়া মন নিয়ে সেই সব সুন্দর আশ্চর্য সাহিত্যিক চিঠির যোগ্য জবাব লিখতে চেষ্টা করতাম।

নজরুল আমাকে ইটালি রংয়ের পার্কার কলমও উপহার দিয়েছিলেন। সেই কলমেই লিখতাম। উনি খুব বেগুনি রংয়ের কালি ভালো বাসতেন। সেই কালি নিজেই ভরে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি আবার যখন কলকাতা গেলাম, তার বেশ কিছু আগেই চিঠির সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় তলানিতে এসে গিয়েছিল। সেই যে আমাকে ট্রেনিং দিতে উনি ‘হিজ মাস্টারস ভয়েসে’র কুঠুরিতে ঢুকেছিলেন, আর বেরুতে পারেননি। শুনলাম সমস্তক্ষণ সেখানেই আবদ্ধ। অনেকটা অবস্থান্তরও ঘটেছে, গাড়ি কিনেছেন একটি, এবং আঙুরবালা ইন্দুবালা কাননদেবীর মতো বড় বড় গাইয়েদেরই যে তিনি তখন ট্রেইনার, তাই নয়, গ্রামোফোন কোম্পানি অবিরত তাঁকে দিয়ে গানও লিখিয়ে নিচ্ছে তাঁদের জন্য।

নজরুল ইসলাম যখন যার তখন তার, যে তাঁকে যেদিকে নিয়ে গেল। সেখানেই তিনি বসে গেলেন। সেই ভয়ে গ্রামোফোন কোম্পানি তাঁকে নাকি প্রচুর চা আর পান দিয়ে দরজা বন্ধ করে বসিয়ে দেয়।

আমরা কলকাতা আসবার আগে তাঁকে একটা চিঠি লিখে এসেছিলাম। একদিন এলেন, কিন্তু আগের মতো উচ্ছ্বাসের সঙ্গে নয়, আগ্রহের সঙ্গে নয়। মনে হলো খুব অন্যমনস্ক। হঠাৎ আমার ওঁর স্ত্রীর কথা মনে পড়ে গেল। গতবার তাঁকে আমি একপলকের জন্য দেখেছিলাম। সেবার আমার প্রায়ই মনে হতো নজরুল সব সময় আমাদের নলিনীদার বাড়িতে নিয়ে আসেন কেন ? নিজের বাড়িতে নিয়ে যান না কেন ? মনে হলেও আমি বলতাম না ।

উনি আমার সঙ্গে যতোই সমকক্ষের মতো ব্যবহার করুন না কেন, সমস্ত দিক থেকেই উনি আমার চেয়ে এতো বড় যে ওসব বলতে সংকোচ হতো। কিন্তু ওঁর স্ত্রীকে দেখতে কৌতূহলও হতো খুব। একদিন নলিনীদার বাড়ি থেকে স্টেশনে যাবার পথে একটা গলিতে গাড়ি ঢুকিয়ে একটা বাড়ির সামনে থামিয়ে মাকে বললেন, ‘আমি এক্ষুনি আসছি, একটু বসুন।

মা বললেন, ‘এটা কি আপনার বাড়ি ?’
নজরুল বললেন, ‘হ্যাঁ’।
মা বললেন, ‘চলুন না, আমরাও যাই একটু আপনার সঙ্গে, আপনার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হবে।’
অনিচ্ছার সঙ্গে বললেন, ‘চলুন’।
একটা আধো অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠলাম। উঠে ছোট একটু জায়গায় ছড়ানো ছিটানো জিনিসপত্র। একটা ফুটফুটে বাচ্চা দৌড়ে এসে বললো, ‘এই যে কাজীদা, কোথায় ছিলে ?’

নজরুল তাকে দু’হাতে বুকের মধ্যে তুলে নিয়ে চুমু খেয়ে হাসতে হাসতে বললেন, ‘দুষ্টু, আবার কাজীদা বলছিস ?”

পাশেই একটা ঘর। আমাদের নিয়ে সেই ঘরটাতেই ঢুকতে যাচ্ছিলেন উনি। তার পাশের ঘরটা থেকে একজন ধবধবে থান পরা বিধবা মহিলা ছুটে এসে বললেন, ‘খবদার নুরু, ওই ঘরে তুমি যাবে না। দুলুর অসুখ’। আমাদের গ্রাহ্য করলেন না তিনি।

নজরুল ইসলামের মুখ গম্ভীর হলো, থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে আমাদের বললেন, ‘চলুন’।আমরা নেমে এলাম। কিন্তু ওইটুকু সময়ের মধ্যে, ওঁর স্ত্রীকে আমি দেখতে পেয়েছিলাম। ঘরের দরজায় পর্দা ছিল না, উনি মেঝের বিছানায় পাশ ফিরে শুয়েছিলেন, হঠাৎ মুখ ফেরালেন। শ্যামলা রং, ছিপছিপে চেহারা, বড় বড় চোখ।

নজরুলকে অন্যমনস্ক দেখে সেই দৃশ্যটা মনে পড়লো আমার। জিজ্ঞেস করলাম, ‘উনি ভালো আছেন?’
অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন, ‘কার কথা বলছো ?’
‘আপনার স্ত্রীর কথা’।
‘ও। হঠাৎ তার কথা কেন ?’
‘এমনি’।
‘আমার ছেলের কথা মনে আছে তোমার ?’
‘খুব ।’
‘তাকে একদিন নিয়ে আসবো।’

সেদিন তিনি থেকে গেলেন। আবার তাঁর সাবেক আনন্দ ফুটে উঠলো মুখে। গান শেখাতে শেখাতে বললেন, ‘আমার একটা বই বেরিয়েছে, ভেবেছিলাম পাঠিয়ে দেব, হলো না। নিজেই নিয়ে আসবো এবার। বইটা তোমাকে উৎসর্গ করেছি, নাম ‘চোখের চাতক’। গানের বই। কী ? অনুমতি নিইনি বলে মান গেল না তো ?’ বলেই হাসি ।
সারাবেলা কাটিয়ে সন্ধ্যাবেলা চলে গেলেন। আর সেই যে গেলেন আর পাত্তা নেই। মাত্রই কয়েকদিন ছিলাম সেবার। রেডিওতে গান ছিল একদিন। বাবা সঙ্গে ছিলেন। ঢুকতে গিয়ে দেখি একজন মহিলার সঙ্গে তিনি কথা বলতে বলতে বেরিয়ে আসছেন।

আমাদের দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন, ‘আপনারা ?’
বাবা বললেন, ‘ওর গান আছে এখানে’।
‘তাই নাকি ? কই, আমি তো জানি না-’

মহিলা একটু এগিয়ে গিয়েছিলেন, ভাঙা ভাঙা ফাটা ফাটা গলায় ডাকলেন, ‘তাড়াতাড়ি এসো, আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে’। নজরুল দ্বিধান্বিতভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বললেন, ‘আচ্ছা, আজ আমি যাই, কেমন ? ছুটতে হবে দমদম, সেই গ্রামোফোন কোম্পানিতে। রানু, রাগ কোরো না, আমি কাল নিশ্চয়ই বুলবুলকে নিয়ে যাবো ; বাড়ি থেকো ।’

তা তিনি এসেছিলেন, বুলবুলকেও এনেছিলেন। চোখ জুড়োনো ছেলে। ওর বাবা হারমোনিয়মে যে গানই বাজান অমনি সে তার রাগরাগিণী বলে দিয়ে প্রশংসার জন্য সকলের মুখে মুখে তাকায়। সারাবেলা ওর রঙ্গ দেখেই কাটলো। যাবার সময় বললেন, ‘তুমি আমাকে বেশ সুন্দর একটা সোনার খাঁচায় ঢুকিয়ে দিয়ে গেছ।’

আমি বললাম, ‘ভালোই তো। কী সুন্দর গাড়ি কিনেছেন’।
‘তা বটে । চলি ।’
‘আবার কবে আসবেন ?’
‘আসবো। তুমি যাবার আগে আসবো। গ্রামোফোন কোম্পানি আমাকে গ্রাস করে ফেলেছে।’
তিনি অবশ্য আর আসেননি। গ্রামোফোন কোম্পানি সত্যিই তাঁকে গ্রাস করে ফেলেছিল।

নজরুল ইসলামের এই ভাবান্তর যে আমাকে কষ্ট দিয়েছিল সেটা অস্বীকার করলে সত্যের অপলাপ হবে। পুরনো বন্ধু এবং পুরোনো জীবনের সঙ্গে আস্তে আস্তে তিনি সব সম্পর্কই হারিয়ে ফেলেছিলেন। আমি তাঁকে নলিনীদার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলেছিলেন যোগাযোগ নেই। আমার সঙ্গেও যে যোগাযোগ হারিয়ে গেল সে বিষয়ে আমি নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। (পৃ. ৫৫-৫৭)

ঢাকায় মা-বাবার কাছে গেলেই শুধু আরাম আর আরাম। বাচ্চা নিয়ে ভাবনা নেই, হাটবাজারের ভাবনা নেই, কী রান্না হবে কী খাওয়া হবে হবে তার ভাবনা নেই, চমৎকার এক ভাবনাহীন জীবন। মনে আছে, সোম তেকে রবিবার পর্যন্ত কোনদিন কী রান্না হবে তার একটা চার্ট করে আমি দেওয়ালে টাঙিয়ে রেখেছিলাম। তাই দেখে আত্মীয় বন্ধুরা হেসে অস্থির। হাসুক। হাসলে আমি কী করবো ? বুদ্ধদেবের খাওয়া নিয়ে ভীষণ ঝব্ধাট। পর পর দুদিন একরকম হলেই মুশকিল। --- ঢাকা গেলে সব শান্তি।

ঢাকা আমরা বছরে একবারই যেতাম। কিন্তু আমার মা-বাবা তার মধ্যে আর একবার কলকাতা এসে দেখে যেতেন আমাদের। বাবা অবশ্য থাকতে পারতেন না। আপিসে ছুটি নেই, দু’একদিন থেকে মাকে রেখে চলে যেতেন। মাকে আমি জোর করে একমাসের আগে যেতে দিতাম না। মা এলে আমি ভুলে যেতাম আমিও মা হয়েছি, কোলে বসে গলা জড়িয়ে ধরে আদর করতাম। বাবা চলে গেলে হাপুস নয়নে কাঁদতাম। আর যখন গ্রীষ্মের ছুটিতে ঢাকা যাবার সময় হতো, সাতদিন আগে থেকে কেবল বাক্স গুছোনো আর বাক্স খুলে ছড়িয়ে ফেলা। এই গুছোনো আর ছড়ানোর মধ্যেই আমার যাবার আনন্দ উপচে পড়তো। একবার হঠাৎ এরই মাঝখানে আর একবার যাওয়া হয়ে গেল। কী খুশি আর কী খুশি। সেখানে নতুন রেডিয়ো স্টেশন খোলা হচ্ছে, তারই উদ্বোধন করতে কলকাতা থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কয়েকজন জ্ঞানী গুণীকে। তার মধ্যে আমরাও পড়ে গেছি। এই অপ্রত্যাশিত যাবার আনন্দে আমি উদ্বেল।

কলকাতা থেকে ঢাকা খুব যে বেশি দূর তা নয়। কিন্তু যেতে হতো জলপথে। ঐ জলপথের জন্যই প্রায় দু’দিন লেগে যেতো। শিয়ালদ স্টেশন থেকে ট্রেনে গিয়ে শেষ রাত্রে স্টিমারে উঠতে হতো। সেই স্টিমার দুপুরে পৌঁছে দিত নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জ থেকে আবার ট্রেনে উঠে তবে গিয়ে পৌঁছনো যেতো ঢাকার ফুলবাড়ি স্টেশনে।

নারায়ণগঞ্জে গিয়ে পৌঁছে ট্রেনে অবশ্য মাত্রই কয়েকটা স্টেশন। সেই ট্রেনের কামরায় উঠে বসবার পরেই চোখে পড়লো নজরুল ইসলাম বসে আছেন উল্টো দিকের আসনে। এই ফার্স্ট ক্লাস কামরায় আমরাই সাড়ে তিনজন যাত্রী। আমি, বুদ্ধদেব, আমাদের কন্যা মিমি এবং উল্টোদিকে নজরুল ইসলাম। কতকাল বাদে। উনি জানালা দিয়ে গম্ভীর মুখে বাইরে তাকিয়ে ছিলেন। বুঝতে পারলাম ঢাকা রেডিও স্টেশন ওই গুণী ব্যক্তিটিকেও আমন্ত্রণ করে এনেছে। আমি দ্রুত তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম, ‘আপনি ? উনি মুখ ফেরালেন, অনেকক্ষণ আমাকে দেখলেন, তারপর বললেন, ‘রানু ?’

কণ্ঠে কোনো আবেগ নেই, মুখে কোনো ভাব নেই, ওঁর স্বাভাবিক চরিত্রের কোনোই চিহ্ন নেই সেই অস্তিত্বে। আমি আবার খুশিভরা গলায় বললাম, ‘কী আশ্চর্য !’

উনি একই ভঙ্গিতে মৃদু হেসে বললেন, ‘এই রকমই হয়। তারপর একভাবেই তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। আমি থমকে গেলাম। বুঝতে পারলাম না আমাকে উনি ঠিক চিনতে পেরেছেন কিনা। ভেবেও পেলাম না এরপরে ওঁকে কী বলবো। উনি নিজেই বললেন, ‘জানো রানু, আমি শ্রীঅরবিন্দকে দেখেছি।’

আমি বললাম, ‘আপনিও কি শেষে দিলীপদার মতো প-িচেরি চলে গিয়েছেন নাকি ? উনি আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে বললেন,’ আমি প-িচেরি যাইনি। আমি তাঁকে ঘরে বসেই দেখেছি’।

‘ঘরে বসে !’ আমি অবাক।
উনি বললেন, ‘এরি নাম শক্তিসাধনা। সেই সাধনার জোরে আমি কালীদর্শনও করেছি। কথা বলেছি তাঁর সঙ্গে।’ আমি এর উত্তরে কী বলবো বুঝতে পারলাম না। বুদ্ধদেবের দিকে ওঁর চোখ পড়লো, ‘এই যে তুমিও আছো দেখছি, এ বিষয়ে তোমার কী মনে হয়?’

তারপর জবাবের অপেক্ষা না করেই আমার কন্যার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘জান তো, বুলবুল মারা গেছে।’ বলে আমার দিকে তাকালেন। বুলবুলের কথা আমি আগেই লিখেছি। ওঁর প্রথম সন্তান। এই দুঃসংবাদ গায়ক অনিল বাগচীর মুখে দার্জিলিং-এ শুনেছিলাম, গানও শুনেছিলাম। ‘হারিয়ে গেছে অন্ধকারে আমার বুকের হারামণি, গানের প্রদীপ জ্বেলে তারে খুঁজে ফিরি দিনরজনী’।

ঢাকাতে আমরা উঠবো আমার বাবার বাড়ি বকসি বাজারে। বাবা তখন নিজে বাড়ি করে ভাড়া বাড়ি থেকে উঠে এসেছেন এখানে। সুন্দর দোতলা বাড়ি। সামনে লন। আমরা যাবো জানলে মা বাড়িটিকে ছবির মতো সাজিয়ে রাখেন। নজরুল ইসলাম রেডিও অফিসের অতিথি। তারাই বাসস্থান ঠিক করেছে, স্টেশনে লোক এসেছে নিয়ে যাবার জন্য। আগের দিন হলে উনি আমাদের সঙ্গেই চলে আসতেন, অন্যত্র যাবার কোনো প্রশ্নই উঠতো না। কিন্তু নেমে না তাকিয়ে অনেকদূরে চলে গেলেন। খুব অন্যমনস্ক ভাব। তারপরই হঠাৎ ফিরে এলেন আমাদের কাছে। স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কি এখনো সে বাড়িতেই আছো ?’

আমি বললাম, ‘না না, সে বাড়ি আমরা তক্ষুনি ছেড়েছি। এখন বাবা বকসিবাজারে নতুন বাড়ি করেছেন।’
‘কেমন আছ ?’

এতোক্ষণ পরে এই প্রশ্ন ! বললাম, ‘ভালো’।
‘মা বাবা !’

‘ওঁরাও ভালো আছেন’।

‘আমি আজকাল মাঝে মাঝে কেমন যেন হয়ে যাই। আমার উপর রাগ করোনি তো ? বুদ্ধদেব, তুমি কেমন আছ ? কী সুন্দর মেয়ে তোমাদের। আজ তো সন্ধ্যাবেলা তুমিও রেডিও স্টেশনে আসছো, তখন দেখা হবে।’

আমার পিঠে হাত দিলেন, ‘শোনো, আমি কিছুই ভুলিনি, ভুলে যাইনি, ভোলা সম্ভব নয়, মা-বাবাকে বোলো আজ সন্ধ্যায় তো যেতে পারবো না, কাল ঠিক যাবো। কতোদিন পরে, না ?‘

বুদ্ধদেব বাড়ি এসে বললেন, ‘উনি ঠিক প্রকৃতিস্থ নেই। মাঝে মাঝে স্বাভাবিকতায় ফিরে এলেও সেই মানুষ আর ফিরে আসছিলেন না’।

একথায় আমার ভীষণ কষ্ট হলো। সবেগে মাথা নেড়ে বললাম, না না, উনি ঠিক আছেন, ঠিক আছেন।’ তারই বছর দুয়েক বাদে যখন জানলাম উনি সত্যিই আর প্রকৃতিস্থ নেই, কান্না পেয়ে গেল। অনেকের কাছে অনেক রকম খবর পেতাম। অনেকে এরকমও বলেছেন পুরোনো প্রিয়জনদের দেখলেই চিনতে পারেন। আপনি যান না একবার। আমি যাইনি। ঠিকানা তখন তাঁর স্থায়ী। অতদিনে ঐ স্বভাব-বাউল মানুষটিকে গৃহবন্দী হতে বাধ্য করেছে ব্যাধি। কিন্তু তিনি কোথায় ? তাঁকে তো আর বন্দী করতে পারেনি ? সেখানে তিনি তখনো জয়ী ।

তারপরে গড়িয়ে গড়িয়ে আরো কতো বছর কেটে গেল, উনি কখন তলিয়ে গেলেন বিস্মৃতির অন্ধকারে। ধর্মে কর্মে মননে সর্বত্রই যখন তিনি ছায়াহীন আর তখনই একদিন রেডিও ঘোষণা করলো তিনি মারা গেছেন।

মারা গেছেন ! আশ্চর্য ! মারা তো তিনি বহুকাল আগেই গিয়েছেন, এতোদিন পরে এই সংবাদ ? তবুও মারা গেছেন শব্দ কুটা শুনে কেমন ছটফট করে উঠলাম। চোখের জল বাঁধ মানলো না। মনে মনে বললাম, ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই।’

আসলে সত্যিই আমরা কিছুই ভুলি না, ভুলতে পারি না, শুধু ভুলে থাকি।
(পৃ. ১৩৮-৩৯)

 

 

 

প্রতিভা বসুর পরিচয়
জীবনের জলছবি থেকে নজরুলের প্রতিকৃতি আঁকা শেষ হলো।।
প্রতিভা বসু বাংলা সাহিত্যজগতে শরৎচন্দ্রের পরেই এক অজেয় অমর কথাশিল্পী।
সম্ভবত নারী বলে আর বুদ্ধদেব বসুর ন্যায় এক বটবৃক্ষের সাথে অশ্বথ্থের ন্যায় মিশে গিয়েছিলেন বলে--
অথবা তাঁর অপরিসীম ব্যক্তিত্বের জন্যে চাটুকারিতা করতে পারতেন না বলে সমালোচকরা তাঁকে দেখতে পাননি।
তাঁর রচনাবলি অতুলনীয় সাহিত্যিক-শৈল্পিক রসে ভরা স্বর্গীয় অমৃতসুধা। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আমার চিরদিন অটুট থাকবে। (সংগৃহীত)


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্প
গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ : সাহিত্য সংস্কৃতি ভাবনা
প্রার্থনার মূল কাজ সংযোগ স্থাপন
গ্রাফিতি বাংলাদেশ
তোমাকে
আরও

আরও পড়ুন

যশোরে নাশকতার অভিযোগে আওয়ামীলীগের দুই কর্মী আটক

যশোরে নাশকতার অভিযোগে আওয়ামীলীগের দুই কর্মী আটক

যশোরে ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা থানায় রেকর্ড

যশোরে ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা থানায় রেকর্ড

যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল

যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল

ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা

ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা

টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের

টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের

নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ

নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ

রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল

রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল

দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক

বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক

৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪

৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪

থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত

থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত

গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক

গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক

নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী

নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী

ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’

ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’

সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়

সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক