শনিবারের চিঠি ও নজরুল
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের জীবন নানা ভাবে বৈচিত্রময় ও ছন্নছাড়া। সেই জন্য তাঁর জীবনের সব কিছুতেই ছন্নছাড়া ভাব বিদ্যমান ছিল। সবচেয়ে আশ্চর্য জনক ব্যাপার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিজে তাঁর কোন আত্মজীবনী লিখে যেতে পারেন নাই। সেই জন্যই আমরা নজরুল সাহিত্যের অনেক অজানা অশ্রুত তথ্য সঠিক ভাবে জানতে পারিনা একথা নিঃসংশয়ে বলা যায়। “শনিবারের চিঠি” প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩৩১ বঙ্গাব্দের ১০ শ্রাবণ (অর্থাৎ ২৬ জুলাই ১৯২৪ খ্রি.) থেকে সাপ্তাহিক রুপে। পরে এটি মাসিক পত্রিকায় রুপান্তরিত হয়। মূলত এই পত্রিকাটিকে কেন্দ্র করেই কোলকাতায় একটি সাহিত্য-চক্র গড়ে উঠেছিল তৎকালীন সময়ে। এ সাহিত্য চক্রটি গড়ে উঠেছিল প্রধানত একজন অশোক চটোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে। তিনিই কয়েকজন তরুণ কে নিয়ে সর্বপ্রথম সাপ্তাহিক রুপে “শনিবারের চিঠি” প্রকাশ করেন।
বলা বাহুল্য কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন এ পত্রিকার প্রধান টার্গেট অর্থাৎ প্রধান কেন্দ্র বিন্দু। নজরুল বিরোধিতার সর্বাত্মক অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন “প্রবাসী” কর্তৃপক্ষ পুষ্ট “শনিবারের চিঠি”। ১৯২৪ সাল থেকে সে বিরোধিতার সুত্রপাত এবং কয়েক বৎসর ব্যাপী তা’ অব্যাহত থাকে। অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অশোক চট্টোপাধ্যায়, নীরদ চন্দ্র চৌধুরী, সজনী কান্ত দাস আর মোহিত লাল মজুমদারই “শনিবারের চিঠি”র বড় পান্ডা সেজেছিলেন নজরুলকে ঘায়েল করাবার জন্য। অন্য দিকে গোঁড়া ইসলাম পন্থীরাও নজরুলকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে গালাগালি ও ঘায়েল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন। “শনিবারের চিঠি”র বিরোধিতা ছিল মূলত অতি আধুনিকতার বিরুদ্ধে। ছিল নজরুলের বিরুদ্ধে।
এত বিখ্যাত মহৎ তাঁর যে “বিদ্রোহী” কবিতা টা তাও তিনি চিরকুট টুকরো কাগজে পেন্সিলে লিখেছিলেন। তাঁর এই জনপ্রিয় বিদ্রোহী কবিতা সেকালের “সাপ্তাহিক বিজলী” পত্রিকায় পর পর দু’সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। তিনি সে সময় এই বিদ্রোহী কবিতাটা লিখে সারা ভারত বর্ষে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তৎকালীন তাঁরই এই খ্যাতির বিড়ম্বনা ও তাঁকে সে সময় যথেষ্ট দিতে হয়েছিল। ১৩৩১ বঙ্গাব্দের ১৮ আশ্বিন “শনিবারের চিঠি” তে কবি নজরুলের বিখ্যাত কবিতা “বিদ্রোহী”র অশ্লীল প্যারোডি ছাপা হয়। “বিদ্রোহী” কবিতাকে ব্যঙ্গ করে বেনামে সজনী কান্ত দাস “ব্যাঙ” শিরোনামে প্রকাশ করেন-
“আমি ব্যাঙ
লম্বা আমার ঠ্যাং
ভৈরব রভসে বরষা আসিলে
ডাকি যে গ্যাঙোর গ্যাঙ।
আমি ব্যাঙ
আমি সাপ, আমি ব্যাঙেরে গিলিয়ে খাই,
আমি বুক দিয়া হাঁটি ইঁদুর ছুঁচোর গর্তে ঢুকি’য়া যাই।
আমি ভীমভূজঙ্গ ফণিনী দলিত ফণা,
আমি ছোবল মারিলে নরের আয়ু মিনিটে যায়গণা।
আমি নাগশিশু, আমি ফণিমনসার জঙ্গলে বাসা বাঁধি,
আমি “বে অব বিস্কে” সাইক্লোন, আমি মরু সাহারার আঁধি”.....................
বিদ্রোহী “কবিতার এই প্যারোডি শনিবারের চিঠিতে প্রকাশিত হলে তরুণের দল মনে করে এটি মোহিত লাল মজুমদারেরই রচনা। এর ফলে কাজী নজরুল মোহিত লালকে লক্ষ্য করে “সাবধানী ঘন্টা” শিরোনামে ১৩৩১ বঙ্গাব্দের এর কার্তিক সংখ্যায় কল্লোলে লিখেছিলেন-
রক্তে আমার লেগেছে আবার সর্বনাশের নেশা।
রুধির- নদীর পার হতে ঐ ডাকে বিপ্লব হ্রেষা।
হে দ্রোনাচার্য, আজি এই নব জয় যাত্রার আগে,
দ্বেষ পঙ্কিল হিয়া হতে তব শ্বেত পঙ্কজ মাগে।
শিষ্য তোমার দাও গুরু দাও তব রূপ-মসি খানি,
অঞ্জলি ভরি শুধু কুৎসিত কদর্যতার গ্লানি।
তোমার নীচতা, ভীরুতা তোমার, তোমার মনের কালি
উদগার গুরু শিষ্যের শিরে; তব বুক হোক খালি।
বলা বহুল্য মোহিত লাল এই কবিতাটি পড়ে ভীষণ ক্ষুদ্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন এবং এর প্রতি-উত্তরে অত্যন্ত কদর্য ভাষায় রচনা করেন “দ্রোন-গুরু”। ১৩৩১ বঙ্গাব্দের ৮ কার্তিক সংখ্যায় “শনিবারের চিঠিতে” তিনি তা’ প্রকাশ করেন-
আমি ব্রাহ্মণ, দিব্য চক্ষে দুর্গতি হেরি তোর,
অধঃপাতনের দেরী নাই আর ওরে হীন জাতি চোর।
আমার গায়ে যে কুৎসার কালি ছড়াইলি দুই-হাতে,
সব মিথ্যার শাস্তি হবে সে এক অভিসম্পাতে।
গুরু ভার্গব দিল যা তুহারে! ওরে মিথ্যার রাজা!
আত্ম পূজার ভন্ড পূজারী! যাত্রার বীর সাজা
ঘুচিবে তোমার- মহাবীর হওয়া মর্কট সভাতলে!
দু’দিনের এই মুখোশ-মহিমা তিতিবে অশ্রু জলে!
অভিশাপ রূপী নিয়তি করিবে নিদারুণ পরিহাস-
চরম ক্ষণে মেদিনী করিবে রথের চক্র গ্রাস।
নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা লেখা হয়েছিল ১৯২১ সালের শেষের দিকে। ১৯২০ সালে মোহিত লালের “আমি” (জীবন জিজ্ঞাসা) কথিকা লেখা হয়েছিল। “আমি” কথিকাটি মোহিত লাল যে আসরে পড়ে শোনান, সেখানে নজরুল ও মুজাফফর আহমদ ছিলেন। মোহিত লাল উল্লেখ করেন নজরুল তাঁর “আমি” কথিকাটির ভাব নকল করে তাঁর বিদ্রোহী কবিতাটি লিখেছেন। আমি ও বিদ্রোহী, কবিতাটি পাশাপাশি নিয়ে পড়লে কিছু সাদৃশ্য পাওয়া যায় বটে কিন্তু “আমি” একটি দার্শনিক গদ্য রচনা ছাড়া আর কিছুই নয় আর “বিদ্রোহী” উন্মাদনা পূর্ণ এক অনবদ্য রচনা যার রাজনৈতিক সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের দিকটি খুবই উল্লেখ যোগ্য। মোহিত লালের গদ্য রচনায় এসব নেই। কাল পেরিয়ে গেলেও বিদ্রোহী এক অনবদ্য রচনা।
পরবর্তীতে মোহিত লাল মজুমদার “শনিবারের চিঠি” পত্রিকার মাধ্যমে নজরুলের উপর অবিরল আক্রমণ শুরু করেন।
নজরুলের কবি প্রতিভার সর্বোত্তম বিকাশ ঘটেছে তাঁর সঙ্গীত সৃষ্টিতে এবং প্রেমের কবিতায়। কবি নজরুল ইসলাম সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে, বিচিত্র সুর ও ছন্দে এবং বাণী সমৃদ্ধ বাংলা ভাষায় অনেক গান ও গজল লিখেছেন। প্রতিটি গান ও গজল জননন্দিত হয়েছে। অথচ এই গান ও গজল গুলো ও সজনী বাবুদের নগ্ন আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ফরিদপুরে তীব্র খরায় এবার লিচুর ফলন বিপর্যয় লোকসানে চাষিরা

শাপলাচত্ত্বরে গণহত্যার দ্রুত বিচার চায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলন

খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে নেতাকর্মীদের প্রতি জরুরি নির্দেশনা দিলেন মির্জা ফখরুল

২৫ মার্চ কালো রাতকে হার মানিয়েছে শাপলা গণহত্যা : রাশেদ প্রধান

শেরপুরের পেট্রোলের দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা

নিকলীতে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের অপরাধে ২ লক্ষ টাকা জরিমান

তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাভারে যুবদলের লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি

একজন দায়িত্বশীল 'মা' ই পারে ভালো একজন শিক্ষার্থী গড়ে তুলতে

আরও শ্রমিক নেবে ইতালি, জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কিশোরগঞ্জে অবৈধ ইটভাটায় লাখ টাকা জরিমানা, ইটভাটা সিলগালা

আসছে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ‘আপ বাংলাদেশ’

তৃতীয় শ্রেণীর শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা: রাজনগরে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতী, বিক্ষোভ

টেকসই উন্নয়নের জন্য কৃষি, প্রাণ-প্রকৃতি ও খাদ্য নিরাপত্তার সমন্বয় জরুরি : পরিবেশ উপদেষ্টা

জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: মামলা থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বাদ দেওয়ায় চক্রান্ত্রর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘বেগুনি রঙের’ ধান চাষাবাদ করে আলোচনায় কৃষক রফিকুল ইসলাম

রামুতে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিবাদ সমাবেশ

জাতিগত শুমারি: রাহুলের কাছে নতি স্বীকার মোদীর

শাপলা গণহত্যার প্রস্তুতি টের পেয়ে যে পোস্ট দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া

কুষ্টিয়ায় আগ্রাসী রূপে পদ্মা, ৪ কিমি এলাকাজুড়ে ভাঙন

সখিপুরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারীর সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি