চল্লিশ দশকের উপন্যাস

আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

Daily Inqilab ড. মুসাফির নজরুল

১৪ জুন ২০২৪, ১২:২৯ এএম | আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪, ১২:২৯ এএম

(পূর্বে প্রকাশের পর)
প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪-১৯৮৮) ‘কল্লোল গোষ্ঠী’র ঔপন্যাসিকদের মধ্যে একজন বিশিষ্ট শিল্পী হিসেবে স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ত্রিশোত্তর আধুনিক সাহিত্য আন্দোলনের স্থপতিদের মধ্যে অন্যতম একজন। পরাবাস্তবতাভিত্তিক গণমানুষের প্রতি সংবেদনশীল যে সাহিত্যধারা ‘কল্লোলগোষ্ঠী’ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল তার প্রতিফলন ঘটেছে প্রেমেন্দ্র মিত্রের কাব্যে ও গল্প-উপন্যাসে। সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরাগই তাঁর সাহিত্যের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। তাঁর উপন্যাসে কল্পনাবিলাস বা কাব্যচর্চার আধিক্য তেমন নেই। এক প্রকার শুষ্ক আবেগহীন বুদ্ধিপ্রধান জীবন সমালোচনা ও বাঙালি সুলভ আচরণ সম্পূূর্ণ বর্জন করে তিনি এক নতুন আঙ্গিকে বাংলা উপন্যাসের গ-িকে প্রসারিত করেছেন। নাগরিক জীবনের পঙ্কিল বিকৃত কুৎসিত রূপের পাশাপাশি তিনি নি¤œ মধ্যবিত্ত সমাজের নৈতিক সংকটের ভয়াবহতার চিত্র তাঁর রচনায় ফুটিয়ে তুলেছেন।

বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪) ‘কল্লোল গোষ্ঠী’র অন্যতম প্রধান লেখক। তিনি ত্রিশোত্তর বাংলা সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ত্রিশের যুগের যুগবৈশিষ্ট্যকে তাঁর মানসে লালন করেই তিনি সাহিত্য রচনা শুরু করেন। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শরৎচন্দ্র পর্যন্ত উপন্যাস সাহিত্যের যে প্রধান ধারা প্রবাহিত হয়েছে, সেই স্রোতধারার সঙ্গে না মিশে তিনি একটি স্বতন্ত্র ধারা সৃষ্টিতে প্রয়াসী হন। বাংলা উপন্যাসে এতদিন যে চিন্তা-ভাবনা কাজ করছিল তার কাছে এটা এক নতুন সুর। সমকালীন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি তাঁর সাহিত্যে দেদীপ্যমান হয়ে উঠেছে। প্রতিকূল অবস্থায় ব্যক্তি মানুষও ক্রমান্বয়ে তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে পরিবর্তিত পরিচয়ে আবির্ভূত হয়েছিল। ফলে, মানুষের ক্রমাবলুপ্তিও লক্ষ্যযোগ্য হয়ে উঠেছিল। এ সময়ের মুখোমুখি হয়েই মানুষ বাঁচার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করে।

বুদ্ধদেব বসুর সাহিত্যের মূল উপজীব্য বিষয় হচ্ছে আমিত্ব, আত্মতা এবং নিঃসঙ্গতা। পরিবার-সমাজ ও স্বজনের সঙ্গে বিশেষ যোগসূত্র না থাকায় প্রতিকূল পরিবেশ এবং বিরূপ ঘটনাধারা তাঁকে ক্রমশ আত্মসমাহিত, নিভৃতচারী, অন্তর্মুখী, সীমাহীন একাকিত্ববোধ ও নিঃসঙ্গচেতনায় আবিষ্ট করে তুলেছিল। তাই তাঁর সাহিত্যে ইউরোপীয় সাহিত্যের ভাবধারার প্রভাব লক্ষণীয়। তাঁর রচনায় তিনি মধ্যবিত্তশ্রেণির চিত্তসংকট উপস্থাপনের অন্তরালে আত্ম-অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এ কারণে অনেকে মনে করেন কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁর উপন্যাসে সমষ্টিচেতনা তথা বৃহত্তর সমাজচেতনা উপেক্ষিত হয়েছে। আবার অনেকে মনে করেন, প্রতিকূল সমাজ প্রতিবেশ ও বিনাশী যুগচৈতন্য তাঁকে বিচলিত করে তুলেছিল।

ত্রিশের যুগের কালপ্রবাহে বাংলা উপন্যাসের ইতিহাসে বুদ্ধদেবের পরিচয় কল্লোলপন্থী হিসেবেই স্মরণীয়। তবে ‘কল্লোলের কথাকোবিদ’ অভিধার অধিকারী হলেও তাঁর লেখায় স্বাতন্ত্র্যের ছাপ সুস্পষ্ট। বস্তুত, সাহিত্যের সব শাখায় বুদ্ধদেবের অসাধারণ দখলদারিত্ব থাকলেও ত্রিশের পূর্বেই তিনি ঔপন্যাসিক পরিচয়ে সমধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। কল্লোলীয় বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটলেও বুদ্ধদেবের স্বকীয়তা তাঁকে স্বতন্ত্র রূপেও পরিচিত করে তুলেছিল। এই পরিচয়ের গৌরব বহন করেই উপন্যাসের জগতে তাঁর আবির্ভাব, বিস্তৃতি ও প্রতিষ্ঠা।

দাম্পত্য সংকট ও বিবাহোত্তর প্রেম বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসের কেন্দ্রীয় বিষয়। প্রেমের সঙ্গে জীবনকে তিনি অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে সংযুক্ত করেছেন। জীবনকে প্রেমের আঁধারে সন্ধান করেছেন তাঁর উপন্যাসে। তিনি তাঁর উপন্যাসে যুগসংকটের প্রভাবে দাম্পত্য-বিচ্ছিন্নতাজাত এক নিঃসঙ্গতার শিল্পরূপ নির্মাণ করে বাংলা উপন্যাসে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছেন। তবে, বুদ্ধদেব বসুর প্রথম পর্বের উপন্যাসে প্রেমই মৌল চেতনার পরিচায়ক হয়ে উঠেছিল। সাড়া, ধূসর গোধূলি, বাসর ঘর প্রভৃতি উপন্যাসে বুদ্ধদেবের কবিত্ব শক্তির পরিচয় যেমন অস্পষ্ট থাকেনি, তেমনি প্রেম চেতনাও হয়ে উঠেছে স্পষ্টতর। প্রেমের এই জাগতিক রূপ প্রকাশে তিনি শরীর র্ধর্মকেও অস্বীকার করেননি।

বুদ্ধদেবের কবিসত্তারই ব্যাপক প্রকাশ ঘটেছে তাঁর উপন্যাসে। উপন্যাসের প্রধান বা কেন্দ্রীয় পুরুষ চরিত্র অথবা নায়ক চরিত্রটি তারই প্রতিভূ পরিচয়ে সমৃদ্ধ এক সৃষ্টি। লেখক নিজস্ব চরিত্র বৈশিষ্ট্যের আভাসই সূচিত করেছেন এই সব চরিত্রে- প্রায়শই তারা কবি-শিল্পী অথবা অধ্যাপক। সে কারণে তাঁর উপন্যাসের বিষয়-বৈচিত্র্য বিধৃত থাকলেও নায়ক চরিত্রের প্রকাশ প্রায়শই বৃত্তাবদ্ধ এক জীবনেরই বৈশিষ্ট্য বহন করে, সে জীবন অনেকাংশে অতি পরিচয়ের আড়ালে আচ্ছন্ন।

বুদ্ধদেব বসুর এই আত্মলীন অধিকার বিস্তারের মধ্যে তাঁর সৃষ্টি প্রয়াসের সীমাবদ্ধতাও সন্ধান করা অস্বাভাবিক নয়। একজন লেখকের পক্ষে নিজেকে অতিক্রম করে সৃষ্টি-বৈচিত্র্যের স্বাভাবিক প্রকাশ ঘটানোর যে প্রবণতা তা বুদ্ধদেবে উপেক্ষিত না হলেও চরিত্র কল্পনায় তাঁর প্রয়াস সীমিত। তাঁর রচনায় বিধৃত কবিত্বপূর্ণ অথবা মননধর্মিতাই পাঠকমনকে আকর্ষণ করেছে। এক স্বপ্নাতুর পরিবেশ, প্রত্যহের ধূলিমলিন জগত থেকে অন্যত্র এবং সেখানে কাব্যময়তার জগতে পাঠকের প্রস্থান ঘটে। একটা সাংকেতিকতা, সংগীতধর্মিতা তাঁর ভাষাভঙ্গিকে আশ্রয় করেছে। তিনি বাইরে থেকে ভিতরে, ঘটনা থেকে মানসিক প্রতিক্রিয়াকেই অধিকতর মূল্য দান করেছেন।

বুদ্ধদেব বসুর ঔপন্যাসিক অগ্রযাত্রার ইতিহাস তাঁর স্বতন্ত্র বিচ্ছিন্ন ও অনন্য পরিচয় নিয়েই উদ্ভাসিত। ত্রিশের যুগে তিনি নিঃসন্দেহে নিঃসঙ্গ ছিলেন না, বহুর সমবায়ে তাঁদের সংক্ষুব্ধ শ্রেণির আবির্ভাব বাংলা কথা সাহিত্যে বিশেষত উপন্যাসে প্রকরণগত বৈচিত্র্যের পাশাপাশি বক্তব্যজাত অভিনবত্বেরও স্ফুরণ ঘটিয়েছিল। তাতে সমসাময়িককালের পা-ুরতা, অস্থিরতা এবং বেদনা-বিহ্বলতার সঙ্গে জীবনচাঞ্চল্যের পরিচয়ও প্রকাশ পেয়েছিল। অবশ্যম্ভাবী সেই পরিবর্তনের প্রবাহে আরো অনেকের মতোই বুদ্ধদেব বসুর ভূমিকাও ছিল অধিকতর উজ্জ্বল।

বুদ্ধদেব বসুর অসূর্যম্পশ্যা উপন্যাসে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার অনিবার্য চাপে নিষ্পেষিত ব্যক্তি হৃদয়ের নৈঃসঙ্গ্য ও সত্তাশূন্যতার অন্তহীন যন্ত্রণার ছবি চিত্রিত হয়েছে। এই সমাজের নারীর সীমাহীন অসহায়াত্ব ও শূন্যতা এ উপন্যাসের সরমা চরিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পুরুষশাসিত সমাজের বিধিবিধান আধুনিক নারীকে চারদিক থেকে যখন দলিত-মথিত করেছে তখন তার অন্তঃসারশূন্যতার যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে পারে।

বুদ্ধদেব বসু বাংলা উপন্যাসের ধারায় পরিবর্তনের প্রয়াসী ছিলেন। মননকে প্রধান্য দিয়ে সহজ-সরল কাহিনি অবলম্বনে বাংলা উপন্যাসকে গ্রাম প্রধান করতে সক্ষম হন। শহুরে জীবনের সচেতনতা না থাকায় একঘেয়েমি শিল্পবোধের নতুন উদ্ভাস কমে আসে। তাঁর তিথিডোর তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ উপন্যাসে কবি বুদ্ধদেব বসু ঔপন্যাসিক বুদ্ধদেব বসুর হাত ধরে চলেছেন। এ কারণে তিথিডোর একটি নিখুঁত আধুনিক প্রেমের কাহিনি হয়ে উঠেছে। আঙ্গিকের পরাকাষ্ঠায় অবিস্মরণীয় এ উপন্যাস। টুকরো টুকরো ছবি- অনেকগুলো মানুষের, অনেকগুলো মনের, অনেক কথার, অনেক দৃশ্যের টুকরো জুড়ে কয়েকটা মুহূর্ত একটি ক্ষণ তৈরি হয়েছে। সেই ক্ষণ জ্বলে উঠল, মিলিয়ে গেল। পাঠক বই পড়া শেষ করলেন। আর তারপর তার মনে ঢেউ দুলতে লাগল কথা আর ছবির।

বস্তুত এ উপন্যাসে স্বাতীর প্রেম আখ্যানের অন্তরালে চল্লিশের দশকের বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজ জীবনের নানামাত্রিক চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। মানুষের অন্তঃবাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের বহিরঙ্গ রূপ অঙ্কনের মাধ্যমে তিনি এ উপন্যাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি বিশেষ কালের শিল্পিত স্বরূপ চিত্রিত করতে সক্ষম হয়েছেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাতে একদিকে মধ্যবিত্ত সমাজের ভাঙন, অন্যদিকে চোরা কারবারি কালোবাজারির সাহায্যে নব্য ধনিক শ্রেণির উত্থানের ফলে মানুষের সব প্রত্যয় যুগস্রোতে ভেসে গিয়েছিল। এই নষ্ট সময়ের ছোঁয়া তিথিডোরে’র মানুষদের গায়েও লাগে। বিপন্ন হয় তারা সময়ের বিনষ্টিতে। তিথিডোর উপন্যাসে বুদ্ধদেব বসু মগ্নচৈতন্যের অন্তরালে ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতার গরল, বিশ্বযুদ্ধোত্তর সমাজজীবনে শূন্যতাÑ একাকিত্বের বাস্তব চিত্র অঙ্কন করেছেন। এ উপন্যাসের চরিত্রসমূহ কেবল রোমান্টিক নৈঃসঙ্গ্যানুভূতি দ্বারাই প্রভাবিত হয়নি একই সঙ্গে যুদ্ধকালীন সমাজবাস্তবতার টানাপোড়েনে সংক্ষুব্ধ পীড়িত ও পর্যুদস্ত হয়েছে। ফলে, উপন্যাসের মৌল জীবনার্থে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

বাসরঘর উপন্যাসের চরিত্রগুলিতে বিংশ শতাব্দীর নবযুগের ভাবনাকে লক্ষ্য করা যায়। শাশ্বত রীতি-নীতি, ঐতিহ্য ঐতিহ্য-সংস্কৃৃতির প্রতি অনাস্থা যাদের জীবনের মূল সুর। কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র পরাশর। তিনি বিবাহ নামক সংস্কারটিতে একেবারেই বিশ্বাসী নন। তবুও তিনি বিবাহ করেন। এ আনুষ্ঠানিকতা অনেকের কাছেই একান্ত চাহিদার হলেও নিতান্ত অনচ্ছিা স্বত্ত্বেও তা তিনি মেনে নেন। বিবাহের রাত্রে পরাশর-কুন্তলা এই বিষয়ে একান্তে কথাও বলে। পরাশর যে এই বিবাহ নামক আনুষ্ঠানিকতার ঘোর বিরোধী সে কথা তিনি কুন্তলার কাছে বলে দেন। তিনি নবপরিণীতা কুন্তলার সিঁথির সিঁদুর, হাতের শাখা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। কুন্তলা মৃদু প্রতিবাদ করেছেন। পরাশর সরাসরি একে বিজ্ঞাপন বলেছেন। দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা হিন্দু নারীর এই সংস্কার অবজ্ঞাত-উপেক্ষিত হয়ে ওঠে। ত্রিশোত্তর কথা সাহিত্যের এ এক বিশিষ্ট লক্ষণ। পুরনো ধারা, পুরনো রীতি-নীতি বিশ্বাস সংস্কারকে দূরে সরিয়ে নতুন করে ভাবাÑ এই চরিত্রগুলিতে তারই প্রভাব পড়েছে। তবে কুন্তলার মধ্যে কৃত্রিমতা কম মনে হয়। তার মধ্যে নরম সুর লক্ষ্য করা যায়।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (১৯০৮-১৯৫৬) ‘কল্লোলের কুলবর্ধন’ বলে অভিহিত করেছেন বাংলা সাহিত্য-গবেষক-আলোচকগণ। ‘কল্লোল’ পত্রিকার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত না হলেও ত্রিশোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যে ‘কল্লোল’ চেতনার এক সমৃদ্ধ ফসল রূপেই তিনি সমৃদ্ধি লাভ করেছেন ও বিশিষ্ট হয়েছেন। সাহিত্য সমালোচকদের এ অভিধায়কে তিনি সার্থক করেছেন ইউরোপীয় ভাবধারায় আদিষ্ট হয়ে ‘কল্লোলে’র বৈশিষ্ট্যবহ সাহিত্য রচনার মাধ্যমে।

মূলত বিংশ শতকের গোড়ার দিকের মধ্যবিত্ত পরিবারের যে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবকাঠামোর মধ্যে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন, সেই পারিবারিক ও সামাজিক বিন্যাস এবং সেই সঙ্গে আমৃত্যু সঙ্গী মাথার অসুখের প্রচ- যন্ত্রণা তাঁর মানস গঠনে ও শিল্পসৃষ্টির প্রাণরস আহরণে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। ফলে, তাঁর রচনা জীবন থেকে সংগৃহীত তথ্য ও অভিজ্ঞতার সমারোহ তাঁর বাস্তব চেতনার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত হয়েছে। কারণ জীবনকে তিনি ঔপন্যাসিক সততায় আবিষ্কার করেছেন, প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁর প্রয়োজনীয় ভূমিকায়। আর সেই ভূমিকা তিনি গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের বৃহত্তর মধ্যবিত্ত ও সাধারণ জনজীবন থেকে।

দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে পৃথক হলেও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম এক গভীর মানবিক বোধে অভিষিক্ত। একজন সমাজবিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি জীবনকে দেখেছেন। আর কথাসাহিত্যকে সচেতনভাবে প্রয়োগ করেছেন সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে। তাই বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে প্রকৃত অর্থেই সমাজবাস্তবতার ক্ষেত্রে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম পথিকৃৎ। তাঁর বক্তব্য হলো নতুন পদ্ধতিতে মানুষের জীবনবোধের আকাক্সক্ষা মেটানোর দায়িত্ব উপন্যাসের। তাই তিনি শ্রেণি সংগ্রাম এবং সমাজতন্ত্রী আদর্শ প্রচারে প্রয়াসী হয়ে ওঠেন। (চলবে)


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইরান আগামী সপ্তাহে দুটি বড় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে

ইরান আগামী সপ্তাহে দুটি বড় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে

কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা

কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা

বুড়িগঙ্গায় ট্রলারের আগুনে একজনের মরদেহ উদ্ধার

বুড়িগঙ্গায় ট্রলারের আগুনে একজনের মরদেহ উদ্ধার

জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ কাল থেকে শুরু

জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ কাল থেকে শুরু

হাসিমুখে করমর্দন করলেন মোদি-রাহুল

হাসিমুখে করমর্দন করলেন মোদি-রাহুল

অর্থ সংস্থান না থাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসরভাতা ৬ মাসে দেওয়া সম্ভব নয় : শিক্ষামন্ত্রী

অর্থ সংস্থান না থাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসরভাতা ৬ মাসে দেওয়া সম্ভব নয় : শিক্ষামন্ত্রী

ভারতের পার্লামেন্টে ‘জয় ফিলিস্তিন’ বলে আওয়াজ দিলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি

ভারতের পার্লামেন্টে ‘জয় ফিলিস্তিন’ বলে আওয়াজ দিলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি

সমাজ পরিবর্তনে সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই : প্রেসিডেন্ট

সমাজ পরিবর্তনে সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই : প্রেসিডেন্ট

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে জাতীয় লজিস্টিক নীতি হবে অন্যতম চালিকাশক্তি: তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে জাতীয় লজিস্টিক নীতি হবে অন্যতম চালিকাশক্তি: তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাগান পরিদর্শনে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাগান পরিদর্শনে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত

আখাউড়া থানা পুলিশের অভিযানে ৯০টি স্কফসহ ১ জন গ্রেফতার

আখাউড়া থানা পুলিশের অভিযানে ৯০টি স্কফসহ ১ জন গ্রেফতার

চট্টগ্রাম বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৬ হাজার

চট্টগ্রাম বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৬ হাজার

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের রোড মডেল হয়েছে : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের রোড মডেল হয়েছে : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

নড়িয়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

নড়িয়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

সাংবাদিকদের সাথে পুলিশের দ্বন্ধ আলোচনার মধ্য দিয়ে নিরসন হবে - আইজিপি

সাংবাদিকদের সাথে পুলিশের দ্বন্ধ আলোচনার মধ্য দিয়ে নিরসন হবে - আইজিপি

এমবাপে ফেরায় স্বস্তিতে দেশ্যম

এমবাপে ফেরায় স্বস্তিতে দেশ্যম

দুর্নীতি যেই করুক এক্ষেত্রে সরকার জিরো টলারেন্স : কাদের

দুর্নীতি যেই করুক এক্ষেত্রে সরকার জিরো টলারেন্স : কাদের

সার্বজনীন নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি : স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

সার্বজনীন নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি : স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

গৌরীপুরে ৩দিন ধরে নিখোঁজ কৃষক, পরিবারে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা

গৌরীপুরে ৩দিন ধরে নিখোঁজ কৃষক, পরিবারে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা

১০ বছর পর ফাইনালে খেলার স্বপ্নে বিভোর ভারত

১০ বছর পর ফাইনালে খেলার স্বপ্নে বিভোর ভারত