গ্রামীণ জীবনে ইদ উৎসব
২১ জুন ২০২৪, ১২:২০ এএম | আপডেট: ২১ জুন ২০২৪, ১২:২০ এএম

ইদ মুসলিম বিশ্বের সর্বোচ্চ দুটি উৎসব; ইদ-উল ফিতর,ইদ-উল আজহা।ইদ কথাটির অর্থ উৎসব। জীবনকে আনন্দে উদ্বেলিত করার জন্য, সাম্য সহানুভূতিশীলতার মধ্যে নিজেকে উপলব্ধি করার জন্য, ত্যাগ,আর আতœসমর্পণের মহান আদর্শ প্রতিফলনের অংশ হিসেবে ইদ উৎসব পালনের রীতি মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত হয়েছে।ইদের উৎসবে সৌভ্রাতৃত্ব ও ত্যাগের অনুপম তাৎপর্য রয়েছে।কবির ভাষায় --শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো,/কত বালুচরে কত আঁখি-ধারা ঝরায়ে গো,/বরষের পরে আসিলে ইদ!
ভুখারীর দ্বারে সওগাত ব’ইয়ে রিজওয়ানের,/কন্টক-বনে আশ্বাস এনে গুল- বাগের,/সাকীরে “জা’মের দিলে তাগিদ!...
ইদ মানে আনন্দ, ইদ মানে খুশি।বছর ঘুরে আসে খুশির ইদ। গ্রামে ইদ উৎযাপনের মজাই আলাদা। ছেলে বুড়ো সবাই মেতে উঠে ইদের খুশিতে। ইট-পাথরের শহুরে জীবনে মাটি নেই,নেই সোঁদা মাটির গন্ধ, আর সবুজের অবারিত নৈসর্গ শহরে কল্পনার বাইরে। এখানে যন্ত্র-যান্ত্রিকতা আর পিচঢালা পথগুলো সহস্র নিয়ন আলোয় ঘেরা। এই আলো ছেড়ে মধুর মিষ্টি বাতাস অথবা মেঠোপথ আর রাতের জোনাকি আলো দেখতে হলে যেতে হবে গ্রামে।বাংলাদেশের গ্রাম মানেই সবুজ, গ্রাম মানেই পাখ-পাখালি, গ্রাম মানেই মধুরতা।নগর জীবনে মিশে থাকা মানুষের গ্রাম দেখার স্বাদ মেলে বছরে দুবার দুই ইদে। বাস ট্রেন লঞ্চ ভরে তখন মানুষ ফেরেন নাড়ির টানে মধুর গ্রামে।শহরে জীবনের বাইরে গ্রামীণ ইদ আসে ভিন্ন আবহে।শহরে ফ্ল্যাট সংস্কৃতিতে স্বজন ছাড়া ইদের আনন্দ বেদনা তেমন না জমলেও দীর্ঘদিন পাশাপাশি কাটিয়ে দেওয়া গ্রামীণ জনপদে ইদ আসে দ্বিগুণ আনন্দে। আল মাহমুদের কবিতায়--
/সব খুশিরই গন্ধ আছে- ঈদের খুশিরও/ইদের খুশির গন্ধটা ভাই ঘিয়ে ডোবানো।/আদর সোহাগ সবকিছুতেই রান্নাঘরের ঘ্রাণ/
কোরমা-পোলাও ছাড়া কি ভাই ভরবে কারো প্রাণ!/খুশির মধ্যে খাওয়াই সেরা- খাওয়ার বাড়া নেই/ঈদের খাওয়া শুরু করো কব্জি ডুবিয়েই!/
ঈদের খাওয়া মায়ের হাসি ঝিলিক মারে মনে/কিছুতো তার হারিয়ে গেছে কিছু সংগোপনে।
অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে শহরের একগুঁয়ে প্রাণহীন যান্ত্রিক জীবনের অবসরে ইদ উদযাপন করতে মানুষ ছুটে গ্রামে, স্মৃতিবিজড়িত পথঘাট প্রান্তর, মানুষজন সবকিছুই সব সময় কাছে টানে। গ্রামের কথা মনে হলেই অতীত সুখস্বপ্নে বিভোর হয়ে নিজের অজান্তেই কেমন জানি আনমনা হয়ে হারিয়ে যায় সবাই ফেলে আসা বাল্য-কৈশোররের দিনগুলোতে। তাইতো প্রতি বছর ইদে মা-মাটি-মানুষের টানে সেই চিরচেনা গ্রামীণ পরিবেশেই বারবার ছুটে চলে,ঘুরে বেড়ায়, গ্রামের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে, মিশে একাকার হয়ে যায় গ্রামের আলো বাতাসের সাথে। এ এক অন্য রকম অনুভূতি।
শহরের একগুঁয়ে প্রাণহীন যান্ত্রিক জীবনের অবসরে ইদ উদযাপন করতে ধনী, গরীব, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়ি আসে। কেন জানি বুঝতে পারি না, গ্রাম-গ্রাম্য প্রকৃতি, চিরচেনা গ্রামীণ দৃশ্যপট,বাল্য-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত পথঘাট প্রান্তর, মানুষজন সবকিছুই সব সময় আমায় কাছে টানে। গ্রামের কথা মনে হলেই অতীত সুখস্বপ্নে বিভোর হয়ে নিজের অজান্তেই কেমন জানি আনমনা হয়ে আমরা হারিয়ে যাই সেই ফেলে আসা বাল্য-কৈশোররের দিনগুলোতে। তাইতো প্রতি বছর ইদে মা-মাটি-মানুষের টানে সেই চিরচেনা গ্রামীণ পরিবেশেই বারবার ছুটে আসে,ঘুরে বেড়ায়, গ্রামের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে, মিশে একাকার হয়ে যায় গ্রামের আলো বাতাসের সাথে।ইদের রং আবহমান বাংলার সব গ্রামেই একরকম। সকাল হতেই গ্রামে গ্রামে চলে সুখের আয়োজন।
মনে পড়ে কিশোর বেলার কথা, ইদের সকালে ঘুম থেকে কে কার আগে উঠে গোসল করবে, নতুন জামা- কাপড় পরবে সে এক বিরাট প্রতযোগীতা।ইদের সকালে সেমাই, হালুয়া খেয়ে ইদগাহে নামাজ পড়তে যাওয়া,জামাত শেষে কোলাকুলি করা,বন্ধুদের সাথে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে যাওয়া এবং যার বাড়িতে যাবেন কিছুনা কিছু খেতে হতো, এই আত্মীয়েতা গ্রামে এখনো চালু রয়েছে। ইদ-উল ফিতর এলে ফিতরার টাকা হিসেব করে যার যার টাকা আব্বা আমাদের হাতে তুলে দিতেন, আমরা যার যার পছন্দ মতো গরীব - মিসকিনকে দিতাম,সে এক মধুর অনুভূতি খুবই ভালো লাগতো। এ ছাড়াও জমাত শেষে সবাই মিলে একসাথে আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীদের কবর জিয়ার করা হয়।
ইদ-উল আজহার সময় এলে আব্বার সাথে হাঠে যেতাম বড় বড় কুরবানির ষাড় দেখতে,কাগজের ফুলের মালা গলায়, লালসালু কাপড়ে আবৃত গরুর শিং দেখতে এক মনোরম দৃশ্য। লাল,কালো, ধবধবে সাদা কত জাতের গরু দেখতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হতো। এতো বড় ষাড় না হলেও আব্বাও কোরবানি কিনতেন বাজার থেকে, নিয়ে আসার সময় কত যে ভালো লাগতো, কত মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো - ষাড়ের দাম কত?
বলতে ভালো লাগতো মনে বিরক্ত আসতো না।যে কয়দিন ইদ-উল আজহার বাকি আছে সে ক’দিন আমাদের কোরবানির যতœ-আত্মীর কোনো কমতি চিল না, ধরি ধরে ঘাস খাওয়া থেকে প্রতিদিন দু-বার গোসল করানো সবই নিয়মিত চলত।ইদের জামাত শেষে হুজুর পাড়ার অন্যান্য কুরবানী জবাই করে ধারাবাহিকভাবে আমাদের বাড়ি আসতেন। মাংস কাটা শেষ হলে গরীবের, আত্মীয়স্বজনের, আমাদের নিজের অংশ আলাদাভাবে বন্টন করা হতো। ইদের পর সপ্তাহ দিন ধরে দাওয়াত-যিয়াফত ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে বেড়াতে স্বপ্নের মতো দিনগুলো চলে যেত।
ইদ মানুষের জীবনে আসে পরম আনন্দ নিয়ে।এর পিছনে থাকে অনেক তাৎপর্য। ইদের বৈশিষ্ট্য থেকে এই তাৎপর্য ইদ উৎসব পালনের মধ্যে উপলব্ধি করতে হবে। ইদের সীমাহীন আনন্দ উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে পরম করুণাময়ের উদ্দেশ্যে নিজেকে নিবেদিত করা আর মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ত্যাগের, ভ্রাতৃত্বের, সম্প্রীতির ও সহমর্মিতার মহান আদর্শ অনুধাবন করতে হবে।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বলিষ্ঠ উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই--সিঁড়ি ওয়ালাদের দুয়ারে এসেছে আজ চাষা-মজুর ও বিড়ি-ওয়ালা/মোদের হিসসা আদায় করিতে ঈদে দিল হুকুম আল্লাহতালা/দ্বার খোল সাততালা-বাড়ি ওয়ালা দেখ কারা দান চাহে/মোদের প্রাপ্য নাহি দিলে যেতে নাহি দিব ঈদগাহে।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো