যতন করে রেখো
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

মনিরুলের আপলোড করা ফেসবুকের ছবিটা চোখে না পড়লে জানাই হতো না দেশজুড়ে শুরু হয়ে গেছে বইমেলা। বইমেলা আমাকে কখনো সেভাবে টানেনি। তিন বছর আগে রোজী আপার সাথে প্রথম বইমেলায় গিয়ে আমি তো মুগ্ধ। দেশে তাহলে এত সুন্দর আয়োজন হয়! আমার বইপ্রেমী রোজী আপা সবসময় বইয়ের গন্ধ নিতে অভ্যস্ত। সে দায় থেকে প্রতিবার শ্যামাকে নিয়ে বইমেলায় এসে গাদা গাদা বই কিনে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন। তিন বছর আগে একুশের বইমেলায় আমি রোজী আপা আর শ্যামা। ব্যাপারটা আমার কাছে ভালোই লাগল। দেশে এত এত বইপ্রেমী মানুষ আছে, ধারণাই ছিল না। এ যে পাঠক লেখকের এক অপূর্ব মিলনমেলা।
সেবার মেলা থেকে রোজী আপা আমাকে চারটা গল্পের বই কিনে দিয়েছিলেন। আমার বন্ধু মনিরুল পড়তে নিয়ে আর ফেরত দেননি। রোজী আপার মতো মনিরুলটারও বইয়ের দিকে বেশ ঝোঁক।
এবার রোজী আপা নেই। সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে নকিব ভাইয়ের কাছে। দু’জনে কোর্ট ম্যারেজ করে এখন আলাদা সংসার পেতেছে। দুই পরিবারের কেউই সে বিয়ে মেনে নেয়নি। থাক, এসব আর ভাবতে ভালো লাগে না। এমনিতেই রোজী আপার কথা ভাবতে গেলে আমার মন খারাপ হয়।
বিকেলে বাংলা একাডেমির দিকে গেলাম একা একা। বইমেলা হচ্ছে এখানে। রোজী আপা থাকলে নিশ্চয় আমরা একসাথে যেতাম। সাথে শ্যামাও।
বইমেলায় ঢুকে আমার প্রথমে মনে পড়ল রোজী আপাকে। সেবার আমরা একসাথে এখানে এসেছি। আর এবার একা। ভাবতেই ব্যথায় বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। এত এত মানুষ আজ বইমেলায়। এমন অনেক কথাসাহিত্যিককে সরাসরি দেখছি, যাদের প্রায়ই টিভিতে দেখি। সবার হাতে বই। বিভিন্ন প্রকাশনী তাদের বই প্রকাশ করেছে। আমি ঘুরে ঘুরে বইমেলা দেখেছি। ওই যে কী একটা প্রকাশনীর সাইন বোর্ডে হুমায়ূন আহমেদের ছবি দেখা যাচ্ছে। সে স্টলে পাঠকের উপচে পড়া ভিড়। তারা হুমায়ূন আহমেদের বই কিনছে। রোজী আপাও হুমায়ূন আহমেদের লেখার ভক্ত। আপা থাকলে এখান থেকে তার প্রিয় লেখকের কিছু বই কিনে নিতাম। এটা ভাবতে গিয়ে আমার চোখ ভিজে এলো।
প্রায় তিন ঘণ্টা মেলায় ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যার আগে যখন বইমেলা থেকে বের হতে যাবো, পেছন থেকে তখন চেনা গলায় ডাক, ‘এই আরমান, দাঁড়া! শোন!’ তাকিয়ে দেখি রোজী আপা কঙ্কালসার দেহ নিয়ে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে। চোখ কপালে তুলে বললাম, ‘আপা তুই? শরীরের এ কী হাল করেছিস?’ মুখে মরা হাসি এনে রোজী আপা বলল, ‘কত দিন পর তোকে দেখলাম। কেমন আছিস তোরা? আমাকে মনে রেখেছিস?’ আমি জবাব দিতে পারলাম না। বলা হলো না, ‘আপা, তোর মতো বোনকে আমি ভুলতে পারি? কেন আমাদেরকে ফেলে চলে গেলি! তোর শরীর বলে দেয় তুই সুখে নেই।’
আমাকে চুপ থাকতে দেখে রোজী আপা বলল, ‘জানিস, এবার মেলায় আমার বই এসেছে। দিগন্ত প্রকাশনী আমার বই প্রকাশ করেছে। বইয়ের নাম ‘আলোতে আসিও।’ এই বলে রোজী আপা তার ব্যাগ থেকে এক কপি বই বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল, ‘এটা শ্যামাকে দিস। শ্যামার খবর কিরে! এখনো গানের চর্চা করে?’ আমি জবাব দিতে পারলাম না। রোজী আপার বই বের হয়েছে, অথচ আমরা তার এই সুখের কথা জানলাম না।
রোজী আপার হাত থেকে বইটা নিতে আমার চোখ ভেঙে কান্না আসতে চাইল। সে দিকে খেয়াল না করে রোজী আপা ক্ষীণগলায় বলল, ‘বাড়িতে আমার বইগুলো ঠিকঠাক মতো আছে তো! বইয়ের তাকে ধুলা জমেছে? বড়দাকে বলিস বইগুলো যেন যতœ করে রেখে দেয়।’ আমি ম্লান গলায় বললাম, ‘আচ্ছা।’ কিন্তু বলতে পারলাম না, ‘আপা, তুই চলে যাওয়ার পর বাবা তোর সব কিছু পুড়িয়ে ফেলেছে। এমনকি বইগুলোও।’ কোনো এক অজানা কারণে কথাগুলো আমার মুখ দিয়ে বের হলো না।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো