আজ ১৬ জানুয়ারী; অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ৮৬তম মৃত্যুবার্ষিকী

Daily Inqilab আকাশ হাসান

১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:১৯ পিএম | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:১৯ পিএম

আজ ১৬ জানুয়ারী অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ৮৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৩৮ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন বাঙালী লেখক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় এবং বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘অপরাজেয় কথাশিল্পী’ নামেও খ্যাত। তার অনেক উপন্যাস ভারতবর্ষের প্রধান ভাষাগুলোতে অনূদিত হয়েছে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর (৩১শে ভাদ্র ১২৮৩ বঙ্গাব্দ) ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি বিভাগের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে, এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় এবং মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। পাঁচ ভাই আর বোনের মধ্যে শরৎচন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয়। তার ডাকনাম ছিল ন্যাঁড়া। শরৎচন্দ্র ৫ বছর বয়সে দেবানন্দপুরে পাঠশালায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি দু থেকে তিন বছর শিক্ষালাভ করেন। এরপর ভাগলপুর শহরে স্থানীয় দুর্গাচরণ বালক বিদ্যালয়ে ছাত্রবৃত্তিতে ভর্তি করিয়ে দেন। ১৮৮৭ সালে শরৎচন্দ্র ভাগলপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৮৯ সালে বাবা’র চাকরি চলে গেলে পরিবারসহ দেবানন্দপুরে ফিরে যান। ফলে শরৎচন্দ্র জেলা স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই সময় তিনি হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু স্কুলের ফি দিতে না-পারার কারণে ১৮৯২ সালে তাকে এই বিদ্যালয়ও ত্যাগ করতে হয়। তিনি ১৮৯৪ সালে কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন। পরে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজে ভর্তি হন। তবে এফএ পরীক্ষার ফি জোগাড় করতে না-পারার জন্য তিনি পরীক্ষায় বসতে পারেননি। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বনেলী রাজ-এস্টেটে কয়েকদিন চাকরি করেন। কিন্তু পিতার ওপর অভিমানবশত তিনি সন্ন্যাসী সেজে ঘর ছেড়ে চলে যান। এই সময় তার পিতার মৃত্যু হলে তিনি ভাগলপুর ফিরে আসেন। পিতার শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করে কলকাতা যাত্রা করেন। যেখানে তিনি কলকাতা উচ্চ আদালতের উকিল লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে, হিন্দি বইয়ের ইংরেজী তর্জমা করার জন্য মাসে ত্রিশ টাকা বেতনের চাকরি পান। ১৯০৬ সালে বর্মার পাবলিক ওয়ার্কস অ্যাকাউন্টস (রেঙ্গুন) চাকরি পান। ১৯১২ সালে শরৎচন্দ্র ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। এই সময় ‘যমুনা’ নামে পত্রিকার সম্পাদক ফনীন্দ্রনাথ পাল তাকে পত্রিকার জন্য লেখা পাঠাতে অনুরোধ করেন। সেই অনুযায়ী, শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে ফিরে গিয়ে "রামের সুমতি" গল্পটি পাঠিয়ে দেন। যা যমুনা পত্রিকায় (১৩১৯ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন ও চৈত্র্য সংখ্যায়) প্রকাশিত হয়। ১৯১৬ সালে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ছুটি নিয়ে মনোমালিন্যের কারণে তিনি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বাংলায় (রেঙ্গুন) ফিরে আসেন। শরৎচন্দ্র ১৯০৫ সালে বার্মা রেলের হিসাব পরীক্ষক হিসেবে ৭৫ টাকা মাইনে কেরেনিগিরির চাকরি লাভ করেন। ১৯২৩ সালে কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) যখন হুগলী জেলে আমরণ অনশনরত ছিলেন। তখন শরৎচন্দ্র তার অনশন ভঙ্গ করাতে জেলে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বৃটিশ পুলিশ তাকে জেলে দেখা করতে দেয়নি। ১৯৩৭ সালে শরৎচন্দ্র প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি স্বাস্থ্য উদ্ধারের উদ্দেশ্যে দেওঘরে তিন চার মাস কাটিয়ে আসেন। পরে তার যকৃতে ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং তার পাকস্থলী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসার জন্য তাকে প্রথমে দক্ষিণ কলকাতার সাবার্বান হসপিটাল রোডের একটি ইউরোপীয় নার্সিং হোমে ও পরে ৪ নম্বর ভিক্টোরিয়া টেরাসে অবস্থিত পার্ক নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। ১৯৩৮ সালের ১২ জানুয়ারী তার দেহে অস্ত্রোপচার হয়। চার দিন পর ১৬ জানুয়ারী (২ মাঘ ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জানা যায়, তার সাহিত্যকর্ম দুইবার করে আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। পরে তিনি সেগুলো আবারো রচনা করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে আছে- উপন্যাস: বড়দিদি (১৯১৩) বিরাজবৌ (১৯১৪), পরিণীতা (১৯১৪), মেজদিদি (১৯১৬), পল্লী-সমাজ (১৯১৬), বৈকুন্ঠের উইল (১৯১৬), শ্রীকান্ত (১ম খন্ড; ১৯১৭, ২য় খন্ড; ১৯১৮; ৩য় খন্ড; ১৯২৭, ৪র্থ খন্ড; ১৯৩৩), দেবদাস (১৯১৭), চরিত্রহীন (১৯১৭), দত্তা (১৯১৮), ছবি (১৯২০), গৃহদাহ (১৯২০), দেনা পাওনা (১৯২৩), নব-বিধান (১৯২৪), পথের দাবী (১৯২৬), শেষ প্রশ্ন (১৯৩১), বিপ্রদাস (১৯৩৫), শুভদা (১৯৩৮), শেষের পরিচয় (১৯৩৯) প্রভৃতি। নাটক: ষোড়শী (১৯২৮), রমা (১৯২৮), বিজয়া (১৯৩৫)। গল্প: রামের সুমতি (১৯১৪), বিন্দুর ছেলে (১৯১৪), পথ-নির্দেশ (১৯১৪), আঁধারে আলো (১৯১৫), দর্পচূর্ণ (১৯১৫), কাশীনাথ (১৯১৭), ছবি (১৯২০), বিলাসী (১৯২০), মামলার ফল (১৯২০), হরিলক্ষ্মী (১৯২৬), মহেশ (১৯২৬), অভাগীর স্বর্গ (১৯২৬), অনুরাধা (১৯৩৪), সতী (১৯৩৪), পরেশ (১৯৩৪)। প্রবন্ধ: তরুণের বিদ্রোহ (১৯১৯), স্বদেশ ও সাহিত্য (১৯৩২) প্রভৃতি।


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কবিতা
আবুল মনসুর আহমদের ‘আয়না’
জুলাই বিপ্লব এবং আমাদের সাহিত্য
থেমে যাক কান্না
এর চেয়ে ভালো থাকা দায়
আরও
X
  

আরও পড়ুন

তুরিন আফরোজের ডক্টরেট ডিগ্রি ভুয়া

তুরিন আফরোজের ডক্টরেট ডিগ্রি ভুয়া

কিডনি চিকিৎসায় এক হাজার ডায়ালাইসিস যন্ত্র কিনছে সরকার : স্বাস্থ্য সচিব

কিডনি চিকিৎসায় এক হাজার ডায়ালাইসিস যন্ত্র কিনছে সরকার : স্বাস্থ্য সচিব

হরিরামপুরে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সোহান আটক

হরিরামপুরে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সোহান আটক

দ্বন্দ্ব ভুলে রাজপরিবারে ফিরতে চান প্রিন্স হ্যারি

দ্বন্দ্ব ভুলে রাজপরিবারে ফিরতে চান প্রিন্স হ্যারি

গণঅধিকার পরিষদে যোগ দিলো বিভিন্ন দলের অন্তত ১ হাজার নেতাকর্মী

গণঅধিকার পরিষদে যোগ দিলো বিভিন্ন দলের অন্তত ১ হাজার নেতাকর্মী

নারী সংস্কার কমিশনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট

নারী সংস্কার কমিশনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট

গাজীপুরে মসজিদের খতিব রহিজ উদ্দিন হত্যার ঘটনায় মামলা

গাজীপুরে মসজিদের খতিব রহিজ উদ্দিন হত্যার ঘটনায় মামলা

দক্ষিণ সুদানে হাসপাতালে বিমান হামলা, নিহত ৭

দক্ষিণ সুদানে হাসপাতালে বিমান হামলা, নিহত ৭

সালমান-শাবনূরের প্রেম নিয়ে যা বললেন ডন

সালমান-শাবনূরের প্রেম নিয়ে যা বললেন ডন

আলবানিজ ফের অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত

আলবানিজ ফের অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত

ইসরায়েলি অবরোধে গাজায় অনাহারে ৫৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু, অধিকাংশই শিশু-বৃদ্ধ

ইসরায়েলি অবরোধে গাজায় অনাহারে ৫৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু, অধিকাংশই শিশু-বৃদ্ধ

৫০ বছর পূর্ণ করল বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধ

৫০ বছর পূর্ণ করল বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধ

সাভারে রং মিস্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, আটক ১

সাভারে রং মিস্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, আটক ১

'মেট গালা–২০২৫' মাতাবেন যারা

'মেট গালা–২০২৫' মাতাবেন যারা

এলপি গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণ বিকেলে

এলপি গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণ বিকেলে

বরগুনায় দেদারসে ধ্বংস করা হচ্ছে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোনা: নিষিদ্ধ মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্য দিবালোকে

বরগুনায় দেদারসে ধ্বংস করা হচ্ছে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোনা: নিষিদ্ধ মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্য দিবালোকে

‘প্যালেস্টাইন-২’ দিয়েই ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালাল ইয়েমেন

‘প্যালেস্টাইন-২’ দিয়েই ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালাল ইয়েমেন

জকিগঞ্জে কৃষকদলের কর্মী সমাবেশে দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ২৬

জকিগঞ্জে কৃষকদলের কর্মী সমাবেশে দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ২৬

নতুন করে আরো ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে, চাপ বাড়ছে আবাসন সংকটে

নতুন করে আরো ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে, চাপ বাড়ছে আবাসন সংকটে

বিশ্বে দূষিত বাতাসের শীর্ষে রিয়াদ, ঢাকার অবস্থান সহনীয় পর্যায়ে

বিশ্বে দূষিত বাতাসের শীর্ষে রিয়াদ, ঢাকার অবস্থান সহনীয় পর্যায়ে