ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪ | ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সিন্দাবাদের দৈত্য হয়ে বর্তমান সরকার জনগণের কাঁধে চেপেছে : জি এম কাদের

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১১ মে ২০২৪, ০৬:৪০ পিএম | আপডেট: ১১ মে ২০২৪, ০৬:৪০ পিএম

 

 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার সিন্দাবাদের দৈত্য হয়ে জনগণের কাঁধে চেপেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা জিএম কাদের। আজ শনিবার (১১ মে) রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে (রজনীগন্ধা) দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত মত বিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতে কোনো সময় এত বেশি বৈষম্য ছিল না। বৈষম্য তৈরি করার জন্য যদি নোবেল প্রাইজ থাকতো, তাহলে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সেই নোবেল প্রাইজ পেত। আমরা চাই বৈষম্যমুক্ত সমাজ। আর যারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামীল লীগ) বৈষম্য সৃষ্টি করছেন, আমরা চাই তারাও নিপাত যাক।

বর্তমানের কর্তৃত্ববাদী শাসনের কঠোর সমালোচনা করে জি এম কাদের বলেন, আমি একটা দেশ পেলাম। আমার দেশ; প্রজারা বলবেন। আমিই চালাব, আমিই সরকার গঠন করব, আমিই সরকার পরিবর্তন করব। উদ্দেশ্য হলো আমার যে বৈষম্য; আমার ভাইয়ে-ভাইয়ে বৈষম্য করা, সেটার থেকে আমরা মুক্তি চাই। অথচ সেই অর্জন-প্রজাদের সেই মালিকানা ছিনতাই হয়ে গেছে। মালিকানা জনগণের হাতে নেই! এটা হলো বাস্তব কথা। এখন জনগণের কথায় যে চলবে, জনগণের কথায় যে সরকার পরিবর্তন হবে এ রকম কোনো বিষয় ঘটছে না। জনগণের কথা বলারই অধিকার নেই। বলতে গেলেই নানা ধরনের সমস্যা। কথা শোনারও কোনো দরকার নেই।

আওয়ামী লীগ একটা শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এই দেশটাকে দখল করে ফেলেছে। এখন জনগণের কথা নয় তাদের কথায় জনগণকে চলতে হবে এবং তাদের কথায় বৈষম্য বা যাই হোক সৃষ্টি হবে। সেখানে জনগণের কোনো কথা বলার অধিকার নেই।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এখন আমার কাছে মনে হয়, আমরা ছোটবেলায় রূপকথার গল্প পড়তাম, আরব্য রজনী। সেখানে বলা হতো, সিন্দাবাদকে একবার দৈত্য নদী পার হওয়ার কথা বলে আমি পঙ্গু, আমাকে পাড় করে দেন। ঘাড়ের মধ্যে উঠেছে, আর তারপর ঘাড় থেকে নামে না। এখন বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার সিন্দাবাদের সেই দৈত্য হয়ে জনগণের কাঁধে চেপেছে। এখন জনগণের কথায় সে চলবে না, জনগণকে তার কথায় চলতে বাধ্য করছে। এটি হলো আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য। তিনি বলেন, যারা সরকারি দল করছেন, তারা সব ধরনের নিয়ম-নীতির বাইরে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন এবং তারা একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী তৈরি করেছেন। সেটা রাজনৈতিক দল হিসেবে আমার মনে হয় না—একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী, সংঘবদ্ধ দল জনগণের কাঁধে চেয়ে বসেছে।

জাতীয় সংসদের গৃহপালিত এই নেতা বলেন, এমন কোনো বিষয় নেই যেখানে তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) বৈষম্য সৃষ্টি করছেন না। চাকরিবাকরি, ব্যবসা যেখানে যাবেন! প্রথম কথা হলো আপনি সরকারি দলের (আওয়ামী লীগ) সদস্য কি না। তারপর সেকেন্ড কথা হলো, আপনার পরিবারের কেউ সরকারি দলের বাইরে অন্য কোনো দল করে কি না, (যদি করে) তাহলে আপনি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। মুক্তিযুদ্ধে রাষ্ট্রের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, ইজ্জত দিয়েছে, কীসের জন্য? আমার দেশ পাওয়ার জন্য। সেই দেশ আমার থেকে চলে গেল একটি গোষ্ঠীর হাতে এবং তারা এটার মালিকানা নিজেদের দাবি করে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে। যে মুক্তির সংগ্রামের জন্য জনগণ এত কিছু দিয়েছে, সেখানে এখন তারা বৈষম্য সৃষ্টিতে বিশ্বে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করছে বৈষম্য সৃষ্টির নোবেল প্রাইজ। তিনি আরো বলেন, আর বাকি লোকদের কী অবস্থা? তারা পারসনা নন গ্র্যাটা; অবাঞ্ছিত। যারা আওয়ামী লীগের বাইরে তারা অবাঞ্ছিত। থাকলে থাকেন, দাস হিসেবে থাকবেন। না থাকলে যান। দেশ তাদের (আওয়ামী লীগ), কোনো কিছুতে কোনো কিছু বলা নেই। কথা বলার কোনো অবস্থান নেই মানুষের। কাজেই এই অবস্থা থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। উত্তরণ খুব কঠিন।

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সমালোচনা করে জিএম কাদের বলেন, অনেক রাজনীতিবিদদের মধ্যে একটা ভাব এসে গেছে, যারা কিছুটা হলেও ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছে। কিছুটা হলেও ক্ষমতার সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। যেমন আমাদের দলের, আমরা পাচ্ছি, আমি পাচ্ছি। তাদের মধ্যে একটি দ্বিধা আসছে যে, সরকার যেভাবে চেপে বসেছে থাকবেই। কাজেই দরকার কী! এদের সঙ্গে লাইন দিয়ে যা পারা যায় কামাই করো। আর যাদেরকে সরকার নিচ্ছে না, তাদের তো বাধ্য হয়ে সরকারের বিপক্ষে থাকতেই হবে। তারা চাক আর না চাক, জনগণের পক্ষে গিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে। যেহেতু তাদের কোনো জায়গা নেই কোনোখানে। আমাদের কিছু জায়গা দিয়েছে, এটাই হলো আমাদের সর্বনাশ। কারণ আমাদের যারা কিছু সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, উনারা এই সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে ইচ্ছুক। তারা কঠিন পথে যেতে চাচ্ছেন না। জনগণকে উদ্ধার করার জন্য তারা যেতে পারছেন না। সে জন্য আমাদের ওইভাবে সামনের দিকে প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি রাজনীতি করতে হয়, কেননা সামনের দিকে আর কোনো রাজনীতি থাকবে না।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের বুঝতে হবে যে আমরা জনগণের পক্ষে থাকব না সুযোগ-সুবিধার পক্ষে থাকব। জনগণের পক্ষে থাকতে গেলে ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা থাকতে হবে এবং আমি সে রকম মনোভাব থাকা উচিত। যারা সুযোগ-সুবিধার লোভে পড়ছেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই সুযোগ-সুবিধা অত্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্য। সামনের দিকে তাদের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। যারা আওয়ামী লীগের বা সরকারি দলের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অনেক দিন অনেক কিছু করেছেন, তাদেরকে কিন্তু দুই মিনিটে আবার লাথি দিয়ে ফেলেও দেওয়া হয়েছে।

যদি টিকতে হয় রাজনীতিতে, সঠিক রাজনীতিতে থাকতে হবে। জনগণের সঙ্গের রাজনীতিতে থাকতে হবে, যতই কঠিন হোক। সেখানেই আপনি টিকতে পারবেন। না টিকতে পারলে আপনি শেষ হয়ে যাবেন।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

অধৈর্য হয়ে বিষ খাইয়ে প্রতিবন্ধী সন্তান হত্যার অভিযোগ, মা-বাবা গ্রেপ্তার

অধৈর্য হয়ে বিষ খাইয়ে প্রতিবন্ধী সন্তান হত্যার অভিযোগ, মা-বাবা গ্রেপ্তার

আনোয়ারুল আজীম কি ছিলেন বড় কথা নয়, জনপ্রিয়তা দেখে মনোনয়ন দেওয়া হয় : কাদের

আনোয়ারুল আজীম কি ছিলেন বড় কথা নয়, জনপ্রিয়তা দেখে মনোনয়ন দেওয়া হয় : কাদের

রায়পুরায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হত্যার ঘটনায় নির্বাচন স্থগিত

রায়পুরায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হত্যার ঘটনায় নির্বাচন স্থগিত

প্রেমের গল্প লিখে ‘বুকার’ পুরস্কার জিতলেন জার্মান লেখিকা

প্রেমের গল্প লিখে ‘বুকার’ পুরস্কার জিতলেন জার্মান লেখিকা

মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ায় বোন, বাবা-মাকে খুন

মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ায় বোন, বাবা-মাকে খুন

কুখ্যাত মানব-পাচারকারীকে যেভাবে খুঁজে বের করেন বিবিসি সাংবাদিক

কুখ্যাত মানব-পাচারকারীকে যেভাবে খুঁজে বের করেন বিবিসি সাংবাদিক

এমপি আনারকে কলকাতা নিতে যে ‘তরুণী’কে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল

এমপি আনারকে কলকাতা নিতে যে ‘তরুণী’কে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল

কলাপাড়ায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

কলাপাড়ায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

কুলাউড়া পৌরসভার মেয়রকে ফেসবুক লাইভে হত্যার হুমকি

কুলাউড়া পৌরসভার মেয়রকে ফেসবুক লাইভে হত্যার হুমকি

কুমিল্লায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

কুমিল্লায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

দিল্লির দাসত্ব গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি: লিফলেট বিতরণ কালে ১২ দলের নেতারা

দিল্লির দাসত্ব গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি: লিফলেট বিতরণ কালে ১২ দলের নেতারা

শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে মিশন থেকে বাদ

শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে মিশন থেকে বাদ

টানা ৫ দিন পর বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

টানা ৫ দিন পর বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে নেতানিয়াহুকে অনুরোধ বিরোধীদলীয় নেতার

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে নেতানিয়াহুকে অনুরোধ বিরোধীদলীয় নেতার

কক্সবাজার সৈকতে অজ্ঞাত তরুণীর লাশ উদ্ধার

কক্সবাজার সৈকতে অজ্ঞাত তরুণীর লাশ উদ্ধার

গাজীপুরে ৩ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

গাজীপুরে ৩ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

আজ ইব্রাহিম রাইসির দাফন, শেষ বিদায়ে লাখো মানুষের ঢল

আজ ইব্রাহিম রাইসির দাফন, শেষ বিদায়ে লাখো মানুষের ঢল

নির্বাচনী প্রচারণার মঞ্চ ভেঙে নিহত ৫, আহত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী

নির্বাচনী প্রচারণার মঞ্চ ভেঙে নিহত ৫, আহত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী

ড. ইউনূসের স্থায়ী জামিনের আবেদন নামঞ্জুর

ড. ইউনূসের স্থায়ী জামিনের আবেদন নামঞ্জুর

এমপি আনোয়ারুল খুনে নারী, কে এই সিলিস্তি রহমান?

এমপি আনোয়ারুল খুনে নারী, কে এই সিলিস্তি রহমান?