ব্যবসায় বিনিয়োগকারীদের তালিকা
১৮ মার্চ ২০২৩, ১১:০৬ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:২৫ এএম
আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে রাতারাতি টাকার কুমির বনে যাওয়া আরাভ খানের ব্যবসায় বিনিয়োগকারী ও তার সাথে সখ্যতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করছে গোয়েন্দারা।
আরাভ খানের ব্যবসায় বিপুল পরিমান টাকা বিনিয়োগের একটি বড় অংশ দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে গিয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছেন তদন্তের সাথে জড়িত ডিবির কর্মকর্তারা। অন্যদিকে ২০১৮ সালে এসবির পরিদর্শক মামুন এমরান খুনের পর আরাভ খানকে ডিবিতে আটক করে নেয়া হলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয় প্রভাবশালীদের তদ্বিরে। পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খুনের মামলার আসামি হয়েছিলেন গোপালগঞ্জের রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। সেই মামলায় তার পরিবর্তে জেলে যান চাঁদপুরের আবু ইউসুফ লিমন। তবে তিনি এখন জামিনে আছেন।
অপরদিকে, হত্যার অভিযোগ থাকলেও দেশ থেকে পালিয়ে দুবাইয়ে স্বর্ণের ব্যবসা করছেন আরাভ খান। এ ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এতদিন চুপ থাকলেও আরাভ খানের বিষয়ে অবশেষে মুখ খুলেছে আবু ইউসুফের পরিবার।
গতকাল তেজগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠান যোগদান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, দুবাইয়ের সোনা ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনার সব চেষ্টা হচ্ছে। এরই মধ্যে তাকে (আরাভ খান) ধরতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তবে আরাভ যেহেতু ভারতীয় পার্সপোটধারী সেক্ষেত্রে কোন আইনে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হবে সে প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব দেননি মন্ত্রী। চাঁদপুরের কচুয়া থানার সিংগাড্ডা পোস্ট অফিসের অধীন আইনপুর গ্রামের মো. নুরুজ্জামান ও হালিমা বেগম দম্পতির এক ছেলে ও দুই মেয়ে। আবু ইউসুফ লিমন (২২) বড়। নুরুজ্জামান কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করেন।
ইউসুফের মা হালিমা বেগম বলেন, ২০১৬ সালে এসএসসি পাশের পর আবু ইউসুফকে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ার ম্যাটস-এ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্সে ভর্তি করানো হয়। ৩ বছর পড়ার পর সে ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা না দিয়ে ক্রিকেট খেলতে ঢাকায় চলে যায়। এ নিয়ে বাবা ও আমাদের সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। একসময় বাবা তার খরচ চালানো বন্ধ করে দেয়। ঢাকায় গিয়ে আবু ইউসুফ ক্রিকেট খেলার জন্য ভালো সুযোগ খুঁজতে থাকে। সেখানে আরাভের সঙ্গে ওর যোগাযোগ হয়। আরাভ বিকেএসপিতে খেলার সুযোগ করে দেবে বলে ইউসুফের আইডিকার্ড-সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন কাগজপত্র নেয়। পরে কাগজপত্র হাতে পেয়ে আরাভ ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে তার মামলায় ইউসুফকে জেলে যেতে বাধ্য করে।
আবু ইউসুফের মা বলেন, আরাভের প্রলোভনে পড়ে ইউসুফ জেলে গেলেও পরিবারের কাছে বিষয়টি গোপন রাখে। এরমধ্যে আরাভ একদিন ইউসুফের বাবাকে ফোন করে জানায়, সে ইউসুফকে বিকেএসপিতে ট্রেনিংয়ে পাঠিয়েছে। ইউসুফের খেলাধুলার সমস্ত দায়িত্ব তার (আরাভের)।
তিনি আরও বলেন, ইউসুফকে দেড় মাসের মধ্যে জেল থেকে বের করার আশ্বাস দিয়েছিল আরাভ। ৩ মাসেও বের করতে না পারায় বাসায় ফোন করে সব ঘটনা খুলে বলে ইউসুফ। কান্নাকাটি করে। ইউসুফ ৩ মাস জেলে থাকার পর জানতে পেরেছি। এরপর তার জামিন পেতে আরও ৬ মাস লেগেছে। মোট ৯ মাস সে জেল খেটেছে। এই মামলায় ছেলেকে জামিনে আনতে গিয়ে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগী আবু ইউসুফ লিমন বলেন, ফেসবুক সূত্রে আরাভের সঙ্গে পরিচয়। ভালো জায়গায় ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেতে আমার একটু সাপোর্টের প্রয়োজন ছিল। বাড়ি থেকে সাপোর্ট না পাওয়ায় আমি কাজ খুঁজছিলাম। আরাভকে ফেসবুকে আমার ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহের কথা জানাই। পাশাপাশি টাকা-পয়সার সাপোর্ট নেই, এসব বলি। করোনাকালীন সময়ে আরাভের সঙ্গে ফেসবুকে আরও কথা হয়। সে জানায়, দেশে আসলে আমার সব ব্যবস্থা করে দেবে। একটা ভালো দলে খেলার পাশাপাশি সাকিব আল হাসানের সঙ্গে খেলার সুযোগ করে দেবে, কিন্তু মামলার কারণে সে দেশে আসতে পারছে না। আরাভ আমাকে অনুরোধ করে তার হয়ে আদালতে গিয়ে কাস্টডিতে গেলে সে আমাকে দেড় মাসের মধ্যে জামিনে মুক্ত করবে। আমার ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থা করে দেবে। একসময় আমি তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই।
ইউসুফ বলেন, ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর আরাভের কথা মতো আমি ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতে যাই। কী এক কারণে সে দিনের পরদিন আমি আরাভের পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করি। জেলে যাওয়ার পর একাধিকবার আমার জামিনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এসময় আরাভ আস্বস্থ করে যে, ১৬ ডিসেম্বরের আগেই জামিনের ব্যবস্থা করবে। এরপর ডিসেম্বরেও সে আমার জামিন করাতে ব্যর্থ হয়।
ইউসুফ আরো বলেন, আমাকে তখন কাশিমপুর জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে এই মামলার অন্য আসামিদের সঙ্গে কথা হয়। পরে আমি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আরাভ অনেক ক্ষমতাশালী› উল্লেখ করে ইউসুফ বলেন, আমার মতো অনেক তরুণ ছেলে আরাভের ভক্ত। আমার যেহেতু আর্থিক সামর্থ্য নেই, আমি চাই না আরাভের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে জড়াতে। সে চাইলে আমার আরও অনেক ক্ষতি করতে পারে।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আমাদের পুলিশের একজন মেধাবি কর্মকর্তাকে (পরিদর্শক মামুন) হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়, তার লাশ যেন না পাওয়া যায়, তাই গাজীপুরের কালীগঞ্জের জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিল। ডিবি এ ঘটনার তদন্ত করেছে। আসামি আরাভ খান পালিয়ে গেলেও নকল একজন আসামি জেলখানায় দেয় সে। পরবর্তীতে ডিবির তদন্তে নকল আসামির ঘটনা সামনে আসে। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১২টি ওয়ারেন্ট রয়েছে। মামলা রয়েছে, চার্জশিট রয়েছে। বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখেই আরাভের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আরাভ খানের সাথে কাদের যোগাযোগ ছিল এবং কারা তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
আরাভ খানের সম্পদ এবং পুলিশ কর্মকর্তা খুনের বিষয়টি তদন্ত করছেন একটি গোয়েন্দা সংস্থার এমন একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমান টাকা দুবাইয়ে আরাভ খানের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশের সাবেক দু’জন কর্মকর্তার বিপুল পরিমান টাকা আরাভের ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সাথে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৮ সালের ৭ জুলাই পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যাকা-ের আসামি এই রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। রাজধানীর বনানীতে তার অফিসে এই হত্যাকা-টি সংঘটিত হয়েছিল। এরপর সে পালিয়ে ভারতে চলে যায়। সেখানে সে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে। সেই পাসপোর্ট দিয়েই পাড়ি জমায় দুবাইয়ে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে পুলিশ সদস্য হত্যার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে সোহাগ মোল্লা ভারত থেকে দুবাইতে গিয়ে হয়ে গেছে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, এই ঘটনায় পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, মামুনকে ফাঁদে ফেলে বনানীর ওই বাসায় ডেকে নেয়া হয়। সেখানে তাকে বেঁধে, স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। এক একপর্যায়ে পরিদর্শক মামুন মারা যান। পরে তার মরদেহ গুম করতে গাজীপুরের কালীগঞ্জে জঙ্গলে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। পরে সেখান থেকে মামুনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তদন্তের প্রয়োজনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে, গোয়েন্দা পুলিশের এমন বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হিরো আলম সাংবাদিকদের বলেন, আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। যেকোনো মামলা তদন্তের প্রয়োজনে অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারে। কিন্তু পুলিশ খুনের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের মতো জনপ্রিয় ক্রিকেটার ও আমার সংশ্লিষ্টতা কোথায়, সেটা আগে পুলিশকে বলতে হবে।
আরাভ খান পুলিশ কর্মকর্তা খুনের মামলার আসামি এই তথ্য আগে থেকে জানতেন না দাবি করে হিরো আলম বলেন, তার (আরাভ খান) সঙ্গে পরিচয় ফেসবুকে। একজন বাংলাদেশি উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি দাওয়াত করেছেন। আমরা প্রবাসী উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে তারকারা সেখানে গিয়েছি। আরাভ খানের জায়গায় দুবাই থেকে যেকোনো বাংলাদেশি ব্যবসায়ী দোকান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালেও সেখানে যেতাম।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা