ফাঁসি দেওয়ার আগে আবেগ কাজ করত কিন্তু কাজটি তো করতেই হতো
১৮ জুন ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম | আপডেট: ১৯ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
পরনে ধবধবে নতুন সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট। কোমরে কালো রঙের বেল্ট। পায়ে কালো জুতা। হাতে কালো রঙের কাপড়ের ব্যাগ। মেহেদি রাঙ্গানো ছোট চুল। এমন পরিপাটি হয়েই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হলেন বহুল আলোচিত প্রধান জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া। দীর্ঘ সাড়ে ৩১ বছর কারাভোগের পর গতকাল রোববারই ৭৩ বছর বয়সী শাহজাহান দেখতে পেলেন বাইরের আলো-মুক্ত বাতাস। দুপুর তখন পৌনে ১২টা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (কেরানীগঞ্জ) থেকে মুক্তি পেলেন বহুল আলোচিত সমালোচিত ২৬ ফাঁসি কার্যকর করার দড়ি টানা এ জল্লাদ। কারাগারের মূল ফটক থেকে তিনি যখন বের হন, তখন বিদায় জানাতে তার সঙ্গে ছিলেন একাধিক কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষী ও তাকে নিতে আসা শুভাকাঙ্খী। ছিলেন বিভিন্ন মিডিয়া কর্মী। সবার সামনে তিনি হাঁটছেন। আর তাকে ঘিরেই যেন সকলের কৌতুহল। কত প্রশ্ন। পরিবেশ যেন এক মিছিলের আবহ হয়ে ওঠে ক্ষনিকের জন্য।
গতকাল রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দীর্ঘ ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন কারাভোগ শেষে মুক্ত হয়ে মুক্তি পেয়ে শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, তিনি অতীতে যত অপরাধ করেছেন, সে জন্য সাজা খেটেছেন। কারাবাস তাঁকে পরিশুদ্ধ করেছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ফাঁসি কার্যকর করার আগে তার আবেগ কাজ করেছে। তবে এ কাজ কাউকে না কাউকে করতেই হতো। এখন আমি চলে আসছি, অন্য কেউ করবে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে আমাকে এ কাজ করতে হয়েছে।’
কারামুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কারাগারে প্রধান জল্লাদের দায়িত্ব পালন করেন। গত ২১ বছরে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে তিনি বঙ্গবন্ধুর ৬ খুনি, ৪ যুদ্ধাপরাধীসহ ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন।
কারামুক্ত হওয়ার পর ঠিকানা কী হবে, সেটিও জানেন না তিনি। বলেন,‘আমার একটিই চিন্তা কীভাবে ভালোভাবে চলব। আমার বাড়ি নেই, ঘর নেই। আমি এখন বের হয়ে নিজের বাড়িতেও যাচ্ছি না। আমি আরেকজনের বাড়িতে গিয়ে উঠছি, যিনি একসময় আমার সঙ্গে জেলে থেকেছেন। আমি কী করে খাব জানি না। সরকারের কাছে দাবি, আমার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তিনি করেন, আমার থাকার ব্যবস্থা করেন।’
কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে কারাফটকের সামনে শাহাজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার খুব ভালো লাগছে। ‘কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছে, আদর করেছে। আমি সেখানে (কারাগার) ভালো ছিলাম। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে জল্লাদের কাজ দিয়েছিল। আমি সাহসী ছিলাম বলেই এ কাজ পেয়েছিলাম। কাজটি আমি না করলে কেউ না কেউ করতেন। এখন আমি চলে এসেছি, এ কাজ অন্যরা করবেন।’ জানতে চাইলে শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার একটা বোন আছে বলে জানি। একটা ভাগনেও আছে। তবে জেলে আসার পর তাঁদের সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। তবে দু–একবার ফোনে কথা হয়েছে।’
কারাগারের রেকর্ড বলেছে, এ পর্যন্ত তিনি অন্তত ২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। যদিও শাহজাহান ভূঁইয়ার দাবি, তিনি ৬০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন।
শাহজাহান ভূঁইয়া যাঁদের ফাঁসি কার্যকর করেছেন, তাঁদের মধ্যে আরও আছেন বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনি, জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জেএমবির দুই জঙ্গি। আছেন শারমিন রীমা হত্যার আসামি মুনীর এবং খুলনার আলোচিত ব্যক্তি এরশাদ শিকদার। শাহজাহান বলেন, ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার বলেছিলেন, তিনি কোনো অন্যায় করেননি, আর মুনীর একটি সিগারেট চেয়েছিলেন। আর বাংলা ভাই ফাঁসির আগে তেমন কিছু বলেননি। তবে তিনি ফাঁসির আগে বলেছিলেন ‘মৃত্যুর পর যেন আমার ছবি তুলা না হয়। ফাঁসির আগে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কোনো কথা বলেননি। যুদ্ধাপরাধীরাও ফাঁসির আগে কোনো কথা বলে নাই।
শাহজাহান ভূঁইয়ার জন্ম ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে। বাবা হাছেন আলী। ৭৩ বছর বয়সী শাহজাহান ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৯১ সালে আটক হওয়ার আগে ও পরে শাহজাহানের নামে সর্বমোট ৩৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি অস্ত্র মামলা, একটি ডাকাতি মামলা এবং বাকি ৩৪টি হত্যা মামলা। বিচারকাজে দেরি হওয়ার কারণে সাজা ছাড়াই তিনি ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চার বছর হাজতি হিসেবে কারাগারে থাকেন। ১৯৯৫ সালে তার সাজা হয় ১৪৩ বছরের। পরে ৮৭ বছরের সাজা মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর ও সশ্রম কারাদ-ের সুবিধার কারণে সেই সাজা ৪৩ বছরে এসে নামে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, তাঁদের রেকর্ড অনুযায়ী দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন শাহজাহান ভূঁইয়া। একটি ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা মামলা এবং আরেকটি অস্ত্র আইনে মামলা। নথি অনুসারে, ১৯৯২ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির জন্য ১২ বছর এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অপর একটি মামলায় ডাকাতি ও হত্যার জন্য ৩০ বছরের কারাদ- হয় তার। এ ছাড়া উভয় রায়ে তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় করে মাস কারাদ- হয়। ৪২ বছরের সাজার মধ্যে প্রতি ফাঁসির জন্য দুই মাস কারা রেয়াত পেয়েছেন শাহজাহান।
কারাবিধি অনুযায়ী, আচার-আচরণ এবং অন্যান্য কারণে সব মিলিয়ে ১০ বছর ৫ মাস রেয়াত পেয়েছেন। সাজা খেটেছেন ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন। শাহজাহানের হাতে কোনো টাকাপয়সা না থাকায় যে ১০ হাজার টাকা তার দ- হয়েছিল, তা কারা কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে দিয়েছে।
ফাঁসি কার্যকর ও অন্যান্য কারণে তার সাজার মেয়াদ কমিয়ে করা হয়েছে ৩২ বছর। তার সাজার মেয়াদ গতকাল রোববার শেষ হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মির্জাপুর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর মৃধার পদ স্থগিত
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে বিজিবি হেফাজতে ৩৬ মিয়ানমার নাগরিক
খালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির মহাসচিব নেওয়াজ
আইনজীবীদের জুরিসপ্রুডেন্সের ওপর বই লেখার আহ্বান প্রধান বিচারপতির
রোমানিয়ায় কূটনীতিক মহসিনকে শাস্তির দাবিতে ৭ দিনের আলটিমেটাম
লক্ষ্মীপুরে ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান, ৩৯ হাজার টাকা জরিমানা
দক্ষিণ এশিয়ান টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ানশীপে রানার্স-আপ সৈয়দপুর দলকে সংবর্ধনা
সাভার হাইওয়ে থানার ইনচার্জ শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত
ভাড়াটিয়াসহ মালিককে বের করে বসত বাড়ি দখল
যে মামলায় আটক লতিফ বিশ্বাস
নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের প্রস্তুতি নিতে হবে
প্রশাসন সংস্কারে কঠোর হতে হবে
অসভ্য নগরীতে পরিণত ঢাকা
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চীনের পাল্টা নিষেধাজ্ঞা
সমুদ্রে ক্ষয়যোগ্য শক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে গাড়িতেও
উৎসবে আতশবাজি নিষিদ্ধে হাজারও মানুষের আবেদন
বাথরুমের নাম করে গয়না নিয়ে পালালেন কনে
অর্থ, রসিদ বই নিয়ে পালিয়ে গেল ইসকনের কর্মী
পণবন্দীর ভিডিও প্রকাশ হামাসের ইসরাইলে মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ