ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৫ পৌষ ১৪৩১

লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক

Daily Inqilab এ কে এম ফজলুর রহমান মুনশী

২১ জুন ২০২৩, ১০:৫৭ পিএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

হজ্জ অথবা ওমরাহ এর এহরাম বাঁধার পর সাফা এবং মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সাঙ্গ করা ওয়াজিব। এতদ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন: ‘নিশ্চয়ই সাফা এবং মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে কেউ কাবা ঘরের হজ্জ অথবা ওমরাহ সম্পন্ন করে, এ দু’টির মধ্যে সাঈ করলে তার কোনো গুনাহ নেই। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো সৎকাজ করবে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ’। (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ১৫৮)

এই আয়াতে কারীমায় ‘শায়াই রিল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। শায়ায়ের শব্দটি শায়ীরাতুন শব্দের বহুবচন। এর অর্থ চিহ্ন বা নিদর্শন। শায়াই রিল্লাহ বলতে সে সব আমলকে বোঝায় যেগুলোকে মহান আল্লাহ তায়ালা দ্বীন ইসলামের নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ পর্যায়ে স্মরণ রাখা দরকার যে, আরবী হজ্জ শব্দটির শাব্দিক অর্থ সংকল্প করা, ইচ্ছা পোষণ করা। আল কুরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় হজ্জ হচ্ছে বিশেষ সময়ে বিশেষ অবস্থায় বাইতুল্লাহ শরীফে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে গমন করে বিশেষ ধরনের কিছু কর্ম সম্পাদন করা। আর ওমরাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ দর্শন করা। শরীয়তের পরিভাষায় ইহরামসহ আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহ শরীফে হাজির হয়ে তাওয়াফ ও সাঈ প্রভৃতি বিশেষ কয়েকটি ইবাদত সম্পাদনের নাম ওমরাহ।

বস্তুত সাফা এবং মারওয়া বাইতুল্লাহর নিকটবর্তী দু’টি পাহাড়ের নাম। হজ্জ কিংবা ওমরা আদায় করার সময় কাবা ঘরের তাওয়াফ করার পর এ দু’টি পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াতে হয়। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় একে সাঈ বলা হয়। অন্ধকার যুগেও যেহেতু এই সাঈর রীতি প্রচলিত ছিল এবং তখন এ দু’টি পাহাড়ের মধ্যে কয়েকটি মূর্তি সাজিয়ে রাখা হয়েছিল, এ জন্য মুসলমানদের মধ্যে কারো কারো মনে একটা সন্দেহ ও দ্বিধার ভাব জাগ্রত হয়েছিল যে, বোধহয় এই সাঙ্গই অন্ধকার যুগের কোনো অনুষ্ঠান এবং ইসলামের যুগে এর অনুসরণ করা হয়তো গোনাহের কাজ। কোনো কোনো লোক যেহেতু অন্ধকার যুগে একে একটা অর্থহীন কুসংস্কার বলে মনে করত, সে জন্য ইসলাম গ্রহণের পরও তারা একে অন্ধকার যুগের কুসংস্কার হিসেবেই গণ্য করত। এরূপ সন্দেহের নিরসনকল্পে মহান আল্লাহ তায়ালা যেভাবে বাইতুল্লাহ শরীফের কেবলা হওয়া সম্পর্কিত সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবকাশ ঘটিয়েছেন ঠিক তেমনিভাবে এ আয়াতে কারীমায় বাইতুল্লাহ সংশ্লিষ্ট আরো একটি সংশয়ের অপনোদন করেছেন। ইরশাদ হয়েছে: ‘নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে কেউ (কাবা) কাবা ঘরের হজ্জ বা ওমরাহ সম্পন্ন করে, এ দু’টির মধ্যে সাঈ করলে তার কোনো পাপ নেই।’ তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর বিভিন্ন হাদীস দ্বারাও সাফা ও মারওয়ার মাঝখানের সাঈ প্রমাণিত। এর জন্য দেখুন, মুসনাদে আহমাদ : ৬/৪২১, ৪২২। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেস এক ওমরাহ অন্য ওমরাহ পর্যন্ত সময়ের জন্য গোনাহ মোচনকারী। আর যে গোনহ ও খারাবি থেকে মুক্ত হয়ে হজ্জ করে, জান্নাতই হলো তার পুরস্কার। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।

স্মরণ রাখা দরকার যে, হজ্জের ফরজ ৩টি। যথাÑ (১) ইহরাম বাঁধা, (২) আরাফায়অবস্থান করা, (৩) তাওয়াফে জিয়ারত করা। এই ৩টি ফরজসমূহের কোনো একটি আদায় না করলে হজ্জ আদায় হবে না। আর হজ্জের ওয়াজিব ছয়টি। যথাÑ (১) মুজদালিফায় রাত্রিযাপন করা, (২) মিনায় শয়তানসমূহের ওপর কংকর নিক্ষেপ করা। (৩) হজ্জে কিরান বা তামাত্তু পালনকারীদের জন্য কুরবানি করা, (৪) সাঈ করা (সাফা-মারওয়ায় সাতবার দৌড়ানো), (৫) ইহরাম খোলার পর মাথা মু-ন করা, (৬) তাওয়াকুল বিদা বা সর্বশেষ তাওয়াফ করা। আর হজ্জের সুন্নাতসমূহ এগারোটি।

যথাÑ (১) ইহরাম বাঁধার সময় গোসল বা অযু করা, (২) দু’টি নতুন বা ধৌত করা সাদা কাপড় পরিধান করা, (৩) ইহরামের নিয়ত করার পর দু’রাকাত নামায পড়া, (৪) বেশি বেশি তালবিয়াহ বা লাব্বাইকা পড়া (৫) মক্কার অধিবাসী ব্যতীত অন্য লোকদের তাওয়াফে কুদুস (প্রথম তাওয়াফ) করা, (৬) মক্কায় থাকাবস্থায় বেশি বেশি তাওয়াফ করা, (৭) তাওয়াফ করাকালীন সময়ে চাদরের এক পাশ ডান হাতের বগলের নীচ দিয়ে অন্য পাশ বাম কাঁধের উপর রাখা, (৮) তাওয়াফ করার সময় প্রথম তিন চক্কর হেলেদুলে চলা, (৯) সাফা এবং মারওয়ায় সাঈ করার সময় দ্রুত চলা, (১০) প্রতি চক্করের শেষে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা, (১১) কুরবানির দিন মিনায় অবস্থান করা। আসুন, আমরা যাথযথভাবে হজ্জ আদায় করতে মনোযোগী হই। আমীন!


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইন্দোনেশিয়ার নতুন কোচ ক্লাইভার্ট

ইন্দোনেশিয়ার নতুন কোচ ক্লাইভার্ট

কোপ দেলরের শেষ ষোলোতে কে কার মুখোমুখি

কোপ দেলরের শেষ ষোলোতে কে কার মুখোমুখি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন গাপটিল

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন গাপটিল

পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি লাখো মানুষের

পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি লাখো মানুষের

ভোগান্তিতে সেবা নিতে আসা জনসাধারণ

ভোগান্তিতে সেবা নিতে আসা জনসাধারণ

আদমদীঘিতে ফসলি জমিতে ফের কোল্ড স্টোর নির্মাণ

আদমদীঘিতে ফসলি জমিতে ফের কোল্ড স্টোর নির্মাণ

পদ্মার চরে শিকারিদের কবলে অতিথি পাখি

পদ্মার চরে শিকারিদের কবলে অতিথি পাখি

বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ৮ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ২০

বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ৮ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ২০

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন

বিপন্ন প্রজাতির হনুমান পাচারকালে ২ জনের কারাদ-

বিপন্ন প্রজাতির হনুমান পাচারকালে ২ জনের কারাদ-

মিরপুরে তুরাগ নদী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান

মিরপুরে তুরাগ নদী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান

৪৮ ঘণ্টা পরও লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ

৪৮ ঘণ্টা পরও লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ

ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি

ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি

ভারত আইনের শাসন মানে না : রিজভী

ভারত আইনের শাসন মানে না : রিজভী

ভয়াবহ দাবানলে ছাড়খাড় লস অ্যাঞ্জেলেস

ভয়াবহ দাবানলে ছাড়খাড় লস অ্যাঞ্জেলেস

সরকারের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশনা ইমরান খানের

সরকারের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশনা ইমরান খানের

‘উন্নয়ন চাইলেও গণতন্ত্র দরকার সংস্কার চাইলেও গণতন্ত্র দরকার’ : বিএনপি শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান

‘উন্নয়ন চাইলেও গণতন্ত্র দরকার সংস্কার চাইলেও গণতন্ত্র দরকার’ : বিএনপি শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান

ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত

ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত

সচিবালয়ের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

সচিবালয়ের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

আওয়ামী সরকারের অসহযোগীতায় ব্রাজিল থেকে গরুর গোশত আমদানি করা সম্ভব হয়নি : রাষ্ট্রদূত

আওয়ামী সরকারের অসহযোগীতায় ব্রাজিল থেকে গরুর গোশত আমদানি করা সম্ভব হয়নি : রাষ্ট্রদূত