অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচনের তাগিদ
১৩ জুলাই ২০২৩, ১১:৩০ পিএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৩ পিএম
যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ চায় তবে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করবে না :: প্রধানমন্ত্রী অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন :: একটি সমৃদ্ধশালী দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর :: কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব নয় : অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র :: মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নিশ্চিত করতে হবে
ঢাকা সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া গতকার ব্যস্ত সময় পার করেছেন। সকাল থেকে শুরু করে রাত অব্দি বৈঠকের পর বৈঠক করেছেন। প্রতিটি বৈঠকে তিনি জো বাইডেনের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য মডেল নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সুশীল সমাজ যাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সকলকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন দলের প্রতি আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র) কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রæতি পেয়েছি। বাকিরাও প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছে একটি সমৃদ্ধশালী দেশের ভবিষ্যৎ। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের অবাধ অংশগ্রহণের ওপর সেটা নির্ভর করছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনো সরকারই টেকসই উন্নয়ন করতে পারে না।
এদিকে রাত পৌনে ৯টায় প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের গুলশানের বাসভবনে প্রবেশ করে মার্কিন প্রতিনিধিদল। সেখানে তারা ডিনারে মিলিত হন বলে ক‚টনৈতিক সূত্রে জানা যায়।
বাংলাদেশ সফররত মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে মধ্যহ্নভোজের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র তার ভ‚মিকা রাখতে চায়। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত মে মাসে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর দেশটির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম বাংলাদেশ সফর করছেন উজরা জেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান। গত বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এসে গতকাল সকাল থেকে একের পর এক মন্ত্রীদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নির্বাচন এবং সুশাসনে ব্যাপকসংখ্যক বাংলাদেশির অংশগ্রহণের ওপর বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। একটি অংশগ্রহণমূলক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা থাকবে, যেখানে সব নাগরিকের বিকাশ হবে। জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে।
উজরা জেয়া যা বললেন : বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা সফররত দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংলাপ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। তিনি বলেন, গত বুধবার বাংলাদেশে দুই রাজনৈতিক দল যে র্যালি করেছে সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি এবং সেখানে কোনো সংহিসতার ঘটনা ঘটেনি। এটা একটা ভালো অনুশীলন এবং আমরা এটার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে সেটা বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে। সংলাপের বিষয়ে বলব, এ বিষয়ে আমাদের প্রত্যক্ষ কোনো হস্তক্ষেপ থাকে না। বাংলাদেশে সরকারের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ বাকিদের কাছ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। আমরা চাই, সাংবাদিকরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে অবাধে সংবাদ প্রচার করতে পারবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাব। মানবাধিকারসহ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, মানবপাচার রোধের বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করব। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা এবং সমাবেশ যেন অবাধে করা যায়, সেটাই আমাদের চাওয়া। সুশীল সমাজ যেন অবাধে কথা বলতে পারে সেটা আমরা চাই।
উজরা বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছে একটি সমৃদ্ধশালী দেশের ভবিষ্যৎ। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের অবাধ অংশগ্রহণের ওপর সেটা নির্ভর করছে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এমন একটি কথা চাউর হচ্ছে- এ বিষয়ে উজরার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি যা বলতে চাইছেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। আমি এখানে এসেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরো গভীর করতে। অবাধ ও সহনশীল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে কীভাবে আরো সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধশালী করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছি। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ বাকিদের কাছ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। আমরা চাই, সাংবাদিকরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে অবাধে সংবাদ প্রচার করতে পারবে।যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করতে চায় জানিয়ে উজরা বলেন, গত ৫ দশক ধরে আমাদের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করতে চায়। আমাদের সহযোগিতার বিষয়গুলো হচ্ছে জলবায়ু, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা। এর মধ্যে বোঝা যায় আমাদের সম্পর্ক কত মজবুত ও দৃঢ় এবং এ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা রয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই। তারা এত বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। গতকাল আমি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র হোস্ট কমিউনিটি এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ২.১ বিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা এবং রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ৭৪ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা ঘোষণা করেছেন উজরা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য আমি ৭৪ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করছি। রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে অন্যান্য দাতা দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহŸান জানাই। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বর্তমান পরিস্থিতি অনুক‚লে নয় বলে মত প্রকাশ করে উজরা বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন যেন স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণ হয়, সেটাকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু বর্তমানে প্রত্যাবাসনের মতো পরিস্থিতি নেই।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক : অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। মার্কিন প্রতিনিধি দলকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবসময়ই দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে লড়াই করেছি এবং ইতোমধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করেছি।’ এ সময় উজরা জেয়া বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকারকে সহায়তা করতে তার দেশ নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। কোনও দলের প্রতি আমাদের কোনও পক্ষপাতিত্ব নেই। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা (আওয়ামী লীগ) সবসময়ই জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকারের জন্যে লড়াই করেছি। বিএনপিই দেশে ভোট কারচুপি শুরু করেছিল, যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তন করেছে। আমরা নির্বাচনের জন্যে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালু করেছি অথচ ২০১৩-১৫ সালে বিএনপি এবং তাদের মিত্রদের নৃশংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাÐ এবং অগ্নিসংযোগের কথা স্মরণ করেন যাতে ৫০০ লোক নিহত হয়েছিল।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ডোনাল্ড লু ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক নাগরিকের নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধি দল অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। এ কথা তারা পরিষ্কারভাবেই বলেছে বলে জানিয়েছেন আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তবে তাদের সঙ্গে তত্ত¡াবধায়ক সরকার এবং মানবাধিকার নিয়ে কোনো কথা হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা জানতে চান, মার্কিন প্রতিনিধি দল কি জানতে চেয়েছেন? তত্ত¡াবধায়ক সরকার ইস্যু, গণতন্ত্র কিংবা মানবাধিকার বিষয় নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের কথা হয়নি। তারাও জিজ্ঞাসা করেনি। আমারও বলার প্রয়োজন হয়নি। তারা গাজীপুরের শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে কথা হয়েছে। এ আইন নিয়ে আমি আগেও যে কথা বলেছি ঠিক সেই কথাগুলো আমি উনাদের আজ বলেছি। আগের মতো বলেছি যে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশোধিত হবে। প্রতিনিধি দল পরিষ্কারভাবেই বলেছেন, সব দেশেই অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চান। বুধবার আমার সচিব ইউরোপীয় ইউনিয়নের টিমকে যেভাবে বলেছে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার যে আইনি কাঠামো, সেটা বাংলাদেশে আছে। যে আইনগুলো এ ব্যাপারে সহায়ক, আমি সেগুলোর কথা উল্লেখ করেছি।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, তারা কিছু কিছু বিষয়ে বলেছে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সেসব বিষয় নিয়ে তারা শুধু এটুকু বলেছেন, সুষ্ঠু তদন্ত হলে সেটা ভালো। আমি তাদের অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলেছি, বাংলাদেশ আগের সংস্কৃতি নাই যে, বিচার হবে না। বাংলাদেশে এখন যে কোনো অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার হয় এবং তাই হবে।
কোন্ প্রসঙ্গে তিনি সুষ্ঠু বিচারের কথা বলেছেন-জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন,ওনার শহিদুল ইসলামের (গাজীপুরের শ্রমিক নেতা ) মৃত্যু নিয়ে কথা বলেছেন। আমি এ কথাটাই বলেছি। এই পরিপ্রেক্ষিতে জেনারেলি যেটি আলাপ করার সেই আলাপটাই করেছি।
মানবাধিকার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ঈদের আগে গত ২৫ জুন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা আদায়ে আরো দুই শ্রমিক নেতাকে নিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীর প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেডে গিয়েছিলেন শহিদুল ইসলাম। কারখানা থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পরেই তাদের ওপর হামলা করা হয়। এতে নিহত হন শহিদুল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক : যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মার্কিন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসন্ন সংসদ নির্বাচন ‘ফেয়ার ও ভায়োলেন্স-ফ্রি’ দেখতে চান। আমরা বলেছি সংবিধান অনুসারে নির্বাচন কমিশনের তত্ত¡াবধানে ভোটগ্রহণ হবে। আমাদের আইনশৃংখলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্দেশনা দেবে তারা সেভাবে কাজ করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আমাদের খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। বুধবারের দুই দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ) যে বড় একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিল সেটা নিয়েও তারা প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের ল’ এনফোর্সমেন্ট সবই তৈরি আছে। এছাড়া ল’ এনফোর্সমেন্ট ফোর্সের স্পেশাল কিছু বাহিনীকে তারা যে সহযোগিতা করেছে, প্রশিক্ষণ দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে সে বিষয়েও মনে করিয়ে দিয়েছি। এটিই ছিল আজকের আলোচনার মূল সারমর্ম।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের দেশে আমেরিকান হাই পাওয়ার একটা টিম এসেছে (উজরা জেয়া, ডোনাল্ড লু এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ আরও কয়েকজন)। আমাদের এখানে আসার আগে তারা আইনমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা সেসব বিষয় আমাদের জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী যে তার ভিশনারি লিডারশিপে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এতে তারা বেশ সন্তুষ্ট। আমরা তাদের বলেছি যে, আমাদের আইনশৃংখলা বাহিনী সবসময় প্রস্তুত আছে। তারা বেশ ভালোভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদেরকে আপনারা ভালো প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সেই প্রশিক্ষণে তারা উজ্জীবিত রয়েছে। আমরা মনে করি তারা একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে পারবে। ইতোমধ্যে দেশে অনেকগুলো শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিএনপির এক দফা নিয়ে কথা হয়েছে কি না এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন এখানে তারা কোনো রাজনৈতিক দলকে উৎসাহিত করতে আসেননি। তারা কোনো দলকে সমর্থন করেন না। তারা এসেছেন এখানে যাতে একটি ফেয়ার, ফ্রি এবং ভায়োলেন্স ফ্রি নির্বাচন হয় এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে, এর বাইরে কিছু নয়। এর বাইরে তারা কিছুই বলেননি। তারা বারবার বলে গিয়েছেন কোনো ব্যক্তি বা দলকে তারা সমর্থন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে আসেননি।
পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বৈঠকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তিনি জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গত এক দশকের অগ্রগতি তুলে ধরেছি। প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। রোহিঙ্গা শিবিরে তার অভিজ্ঞতা তিনি তুলে ধরেছেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রসচিব। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়েছে বলে জানান মাসুদ বিন মোমেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কে হবেন বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার?
বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান
৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক
পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক
বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)
দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল
টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন
পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার
দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০
বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন
সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন
যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত
ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর
বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস
রাস্তাটি সংস্কার করুন
থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা
ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা
কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১
সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি
দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা