তারেক-জোবাইদার কারাদন্ড
০২ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানে তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে যথাক্রমে: ৯ ও ৩ বছর কারাদ- দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)র দায়েরকৃত মামলায় গতকাল বুধবার ঢাকা মেট্টোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আসাদুজ্জামানের আদালত এ দ- দেন। দ-াদেশের পাশাপাশি তারেক রহমানের প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত এবং অর্থদন্ড এবং ডা. জোবাইদা রহমানকে ৩৩ লাখ টাকা অর্থদ- এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদ- দেয়া হয়েছে। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এ তথ্য জানান।
এর আগে পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী গতকাল বিকেল ৪টা ২ মিনিটে রায় ঘোষণা করেন আদালত। তারেক রহমান এবং ডা. জোবাইদা রহমানের অনুপস্থিতিতে পুরো বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন।
রায় ঘোষণার পরপরই আদালত চত্বরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের এবং নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ‘রায় প্রত্যাখ্যান’ করে মিছিল করেন দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। অন্যদিকে রায়ের পরপরই ঢাকা জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গনে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। রায় উপলক্ষে নিযুক্ত বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতেই এই হাতাহাতি হয়।
ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় এ রায় প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ মিছিল করেছে বিএনপি সমর্থকরা।
আদালতের এ রায়ের পর জুতা প্রদর্শন করে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বলেন, আমরা এ রায়ের প্রতি ধিক্কার জানাই। আজকের এ রায়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে দেশে আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। এ ধরণের ফরমায়েশি রায় আদালত অবমাননার শামিল।
অন্যদিকে রায়ের পর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ২০০৭ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর মামলাটি দায়ের করা হয়। বিএনপি’র নিযুক্ত সেনা প্রধান মইন উ আহমেদ সমর্থিত সরকার আমালে এ মামলা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত দ্বারা এই মর্মে রায় হয় যে, এ মামলা চলবে। আমি মনে করি, বাংলাদেশে যে আইনের শাসন আছে তারই প্রতিফলন। রাষ্ট্রের সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র যদি দুর্নীতি করেন আমারতো মনে হয় সেখানে সর্বোচ্চ সাজা দেয়াটাই উচিৎ। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন আছে। মামলার বিচার করার দায়িত্ব আদালতের ছিলো। আদালত তার দায়িত্ব পালন করেছে। যারা এটিকে ফরমায়েশী রায় বলছেন তাদের আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই।
আসামিতো আগে থেকেই সাজাপ্রাপ্ত। আরেক মামলায় ৭ বছর কারাদ- দিয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন পেয়েছেন। নতুন করে এটি দিয়ে তার ভাবমূর্তি খারাপ করার প্রয়োজন পড়ে না। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টাটা না করাই উচিৎ।
এদিকে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ রায়ে আবারও প্রমাণিত হলো দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৪২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর এ রায়কে কোনোভাবে ফরমায়েশি রায় বলার সুযোগ নেই। এ রায়কে যদি কেউ ফরমায়েশি রায় বলে আখ্যা দিতে চায় তাহলে সেটি হবে আদালত অবমাননার শামিল।
মামলার রেকর্ড অনুযায়ী, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমান,ডা. জোবাইদা রহমান ও তার মা সৈয়দা ইকবাল বানুর বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলো দুদক। এজাহারে তারেক রহমান ও তার স্ত্রীর ঘোষিত আয়ের বাইরেও ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকারও বেশি অবৈধ সম্পদ রয়েছে-মর্মে দাবি করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। তবে ডা. জোবাইদা রহমানের মা ইকবালমান্দ বানুর কোনো অবৈধ সম্পদ না থাকায় হাইকোর্ট তার বিচার কার্যক্রম বাতিল করে দেন। আদালত মামলার বাদীসহ ৪২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। গত বছর ১লা নভেম্বর আদালত তারেক রহমান ও ডা; জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পরে তাদের অনুপস্থিতিতে ‘পলাতক’ দেখিয়ে বিচার কার্যক্রম এগিয়ে নেয় আদালত।
রায়ের পর বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ২০০৭ সালের দায়েরকৃত মামলায় তড়িঘড়ি করে এ মামলায় রায় দেয়া হয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অবিচার করা হয়েছে। এ রায় রাজনৈতিক জিঘাংসার ফসল থেকেই এ ফরমায়েশি রায় হয়েছে। জনগণ এ রায় মানেনা। এটি অবৈধ রায়, অন্যায় রায়।
প্রসঙ্গত: এর আগে পৃথক ৪ মামলায় তারেক রহমানের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। তবে, রাজনীতির বাইরে থাকা ডা. জোবাইদা রহমানের এটি প্রথম মামলা এবং সাজা প্রদানের ঘটনা। এর আগে অর্থ পাচারের অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলায় ২০১৩ সালে তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন ঢাকা জেলা জজ মো: মোতাহার হোসেন। এ রায়ের পরপরই বিচারক মোতাহার হোসেনকে দেশ ছাড়তে হয়। দুদকও তার বিরুদ্ধে মামলা করে। তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। এতে তারেক রহমানের ৭ বছর কারাদ- হয়। পরে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেকের কারাদ-ের আদেশ হয়। বেগম খালেদা জিয়ার হয় ৫ বছর কারাদ-। তারেক রহমানের কারাদ- হয় ১০ বছর। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদ- দেয় আদালত। এ ছাড়া হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলার প্রতিটিতে কয়েকটি ধারায় তাকে ৩ বার যাবজ্জীবন কারাদ-, ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে বিস্ফোরক আইনের আরেকটি ধারায় তার ২০ বছর কারাদ-াদেশ হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগে নড়াইলে দায়ের হওয়া মানহানি মামলায় তারেক রহমানকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদ- দেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদ- দেয়া হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি লাখো মানুষের
ভোগান্তিতে সেবা নিতে আসা জনসাধারণ
আদমদীঘিতে ফসলি জমিতে ফের কোল্ড স্টোর নির্মাণ
পদ্মার চরে শিকারিদের কবলে অতিথি পাখি
বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ৮ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আহত ২০
গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির নতুন কমিটি গঠন
বিপন্ন প্রজাতির হনুমান পাচারকালে ২ জনের কারাদ-
মিরপুরে তুরাগ নদী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান
৪৮ ঘণ্টা পরও লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ
ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি
ভারত আইনের শাসন মানে না : রিজভী
ভয়াবহ দাবানলে ছাড়খাড় লস অ্যাঞ্জেলেস
সরকারের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশনা ইমরান খানের
‘উন্নয়ন চাইলেও গণতন্ত্র দরকার সংস্কার চাইলেও গণতন্ত্র দরকার’ : বিএনপি শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান
ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত
সচিবালয়ের সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
আওয়ামী সরকারের অসহযোগীতায় ব্রাজিল থেকে গরুর গোশত আমদানি করা সম্ভব হয়নি : রাষ্ট্রদূত
বেনজীরের স্ত্রী-মেয়ের আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ, ভাইসহ সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ
এবি পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনি বিতর্ক
নাশকতার মামলায় গয়েশ্বর-রিজভীসহ ১৭৩ নেতাকর্মীকে অব্যাহতি