ঢাকা   শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৬ পৌষ ১৪৩১
‘সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা প্রেরণায় বঙ্গমাতা’ প্রতিপাদ্য শীর্ষক অনুষ্ঠান

মা-বাবার থেকে যেটুকু শিখেছি, সেটুকুই দেবার চেষ্টা করছি : শেখ হাসিনা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৮ আগস্ট ২০২৩, ১০:৪১ পিএম | আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

ছাত্রজীবন থেকে রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন বলেই সফলতা পেয়েছিলেন জানিয়ে তার কন্যা প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মায়ের কাছ থেকে যেটুকু শিখেছি, বাবার কাছ থেকে যেটুকু শিখেছি, বাংলাদেশের মানুষের জন্য সেটুকু দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার মা কিন্তু তার জীবন ভিক্ষা চায়নি। জীবনে-মরণেও আমার বাবার সাথী হয়ে চলে গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন তিনি। ‘সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা প্রেরণায় বঙ্গমাতা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণলায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে খেলাধ‚লা, রাজনীতি শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদান রাখায় দুজন এবং গবেষণায় একজনসহ মোট চার নারীর হাতে ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক তুলে দেন তিনি।
জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী কথা জানান, বঙ্গবন্ধু লেখেন ‘আব্বা-আম্মা ছাড়াও সবসময় রেণু (বঙ্গমাতা) আমাকে কিছু টাকা পয়সা দিয়েছে। রেণু যা কিছু জোগাড় করতো বাড়ি গেলে এবং দরকার হলেই আমাকে দিত, কোনদিন আপত্তি করেনি। নিজে মোটেই খরচ করতো না, গ্রামের বাড়িতে থাকতো। আমার জন্য সব রাখতো।’ ‘এই ভাবে মা আমার বাবার পাশে থেকে তাঁকে সবরকমের সহযোগিতা দিয়েছেন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু যখন বিএ পরীক্ষা দেন, কলকাতায় তখন দাঙ্গা হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু দাঙ্গা দমনে ঝাঁপিয়ে পড়েন, কিন্তু সে সময় তার বঙ্গমাতা চলে আসেন বঙ্গবন্ধুর লেখাপড়ায় সহযোগিতা করার জন্য। অনেক আত্মীয়-স্বজন সে সময়ে কলকাতায় থাকতেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার মায়ের ধারণা হয়েছিল, তিনি যদি বঙ্গবন্ধুর পাশে থাকেন বাবা লেখাপড়া করবেন এবং পাস করবেন; যা করেছিলেনও তিনি। এটাও জাতির পিতা তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবার সাফল্য যদি আপনারা দেখেন সেই ছাত্রজীবন থেকে মা পাশে থাকাতে তার জীবন কিন্তু সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠে। শুধু ছাত্র জীবন থেকে নয় রাজনৈতিক জীবনে তিনি সবসময় আমার বাবার পাশে ছিলেন। বঙ্গমাতা জাতির পিতাকে বলতেন রাজনীতি করো আমার আপত্তি নেই, কিন্তু পড়াশোনা করতে হবে। আমার দাদাও বলেছিলেন যে কাজই করো তোমাকে পড়াশোনা করতে হবে। বাবা টানা দুই বছর কখনও জেলের বাইরে না থাকলেও মা সবসময় ঘর-সংসার সামাল দিতেন এবং কখনও হতাশ হননি।
প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমার মাকেও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মামলায় মাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। একটা পর্যায়ে পাকিস্তানের কিছু নেতা ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা আসেন ৬ দফার পরিবর্তে ৮ দফার প্রস্তাব নিয়ে। আমার মায়ের অদ্ভুত স্মরণশক্তি ছিল। তিনি শুনতে এবং জেলখানায় গিয়ে আব্বার কাছে সেই কথাগুলো বলতেন। আব্বা যে নিদের্শনা দিতেন সেটা নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। আমরা মাকে ঠাট্টা করে বলতাম তুমি তো জীবন্ত টেপ রেকর্ডার।
সব সময় বাসায় (ধানমÐির ৩২ নম্বর) গোয়েন্দা নজরদারি থাকত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে আমার মা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলতেন এবং নির্দেশনা দিতেন। ৭ জুনের হরতাল, আমি বলব, আমার মা সম্প‚র্ণ এই হরতালটা সফল করেছিলেন। কিন্তু ছয় দফা দেওয়ার পর আমাদের উপরের দিকের নেতারা একটু বেতাল হয়ে যায়। কারণ পাকিস্তান থেকে বড় বড় নেতারা আসছে। এখন যেটা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যারয় সেটা তখন একটা হোটেলেই ছিল। ওইখানেই সকলের আড্ডা এবং আট দফার জন্য আামদের অনেক নেতারা আমার মাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মার একটাই কথা ছিল, উনি ছয় দফা দিয়ে গেছেন, এই ছয় দফাই থাকবে, এর কোনো ব্যতয় ঘটবে না। যদি কিছু হয়, এটা ওনাকে (বঙ্গবন্ধু) বলতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার এখনও মনে আছে আমাদের বহু নেতা, আমাদের চাচার দল, আমাদেরকেও বোঝানোর চেষ্টা করেছে। তোমরা কিচ্ছু বুঝবে না, আট দফা দিলেই তো হয়ে গেল। মা বলতেন, এটা শুভঙ্করের ফাঁকি। আমাদের বাসায় মিটিং হত। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং, ছয় দফা না আট দফা সেটা নিয়ে তুমুল বিতর্ক। আমার মা রান্নাবান্না করে সবাইকে খাওয়াতেন। তখন টাকা পয়সাও ছিল না। এতো ডেকোরেশন-ডেকোরেটরও ছিল না। কিন্তু নিজের হাতেই সব করতেন। এরপর আইয়ুব খান আসলেন, আব্বার সঙ্গে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে। আমার মা সেখানেও বলেন, প্যারোলে না। আইয়ুব খান মামলা প্রত্যাহার করবে। সকলকে ছেড়ে দেবে। মুক্ত মানুষ হিসেবে যাবেন। আমাদের অনেক নেতারা, বেশ বড় বড় হোমড়া-চোমড়া নেতারাও তখন সেখানে আব্বাকে যে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী রাখা হয়েছে, সেখানে সবাই চলে গেছেন এবং তাকে বোঝাবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি মার ওই বার্তাটা আব্বার কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম। কারণ আমার মা জানতেন এ রকম একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাই আব্বাকে আগেই সতর্ক করেছিলেন। তিনি আরো বলেন, যখন আব্বা প্যারোলে গেলেন না, আমাদের নেতারা বাড়িতে এসে আমার মাকে ছেঁকে ধরলেন। শুধু বললেন, আপনি এটা কি করলেন? জানেন তারা (পাকিস্তানিরা) তো মেরে ফেলবে, আপনি বিধবা হবেন। মা খালি বলেছিলেন, আরো তো আসামিরা আছে? তাদেরও তো স্ত্রীরা আছে, তারাও বিধবা হবে। আমি একা সধবা থাকার চেষ্টা করব তাদের বাদ দিয়ে?
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মকাÐের ওপর ভিত্তি করে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান বেগম চেমন আরা তৈয়ব। পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য দেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।
শুরুতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্য প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আর্থিক অনুদান ও সেলাই মেশিন বিতরণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন। সারা দেশের ৪ হাজার ৫০০ দুস্থ নারীকে সেলাই মেশিন এবং ৩ হাজার দুঃস্থ নারীর প্রত্যেককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২ হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সীমান্তে বাংলাদেশি নিহত : পতাকা বৈঠকে বিএসএফকে বিজিবির কড়া প্রতিবাদ

সীমান্তে বাংলাদেশি নিহত : পতাকা বৈঠকে বিএসএফকে বিজিবির কড়া প্রতিবাদ

নিকোলাস মাদুরোর তৃতীয় শপথ, রাজনৈতিক দমন-পীড়নের আশঙ্কা

নিকোলাস মাদুরোর তৃতীয় শপথ, রাজনৈতিক দমন-পীড়নের আশঙ্কা

সুপার কাপ ফাইনালে বার্সা-রিয়াল মহারণ

সুপার কাপ ফাইনালে বার্সা-রিয়াল মহারণ

কার সাথে সংসার করছেন জয়া?

কার সাথে সংসার করছেন জয়া?

২৪ বিপ্লবের শহীদদের মতো বিডিআরের নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

২৪ বিপ্লবের শহীদদের মতো বিডিআরের নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

টানা চার ম্যাচে রোনালদোর গোল,নতুন বছর জয় দিয়ে শুরু নাসেরের

টানা চার ম্যাচে রোনালদোর গোল,নতুন বছর জয় দিয়ে শুরু নাসেরের

শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র দেওয়া সম্ভব নয় : উপদেষ্টা মাহফুজ

শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র দেওয়া সম্ভব নয় : উপদেষ্টা মাহফুজ

টঙ্গীবাড়ীতে মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে জখম

টঙ্গীবাড়ীতে মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে জখম

জার্মানিতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন

জার্মানিতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন

চীনে ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

চীনে ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনআইডি : আইন পর্যালোচনায় রোববার বৈঠকে বসছে ইসি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনআইডি : আইন পর্যালোচনায় রোববার বৈঠকে বসছে ইসি

কুমিল্লায় জনসম্মুখে শিশুকে দুগ্ধপান

কুমিল্লায় জনসম্মুখে শিশুকে দুগ্ধপান

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত লড়াই

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত লড়াই

টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছেন কিয়ার স্টারমার

টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছেন কিয়ার স্টারমার

আগুনে পুড়ল ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট

আগুনে পুড়ল ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, প্রবল বাতাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, প্রবল বাতাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ

কাতারের আমিরের উদ্দেশে ফেসবুকে যা লিখলেন তারেক রহমান

কাতারের আমিরের উদ্দেশে ফেসবুকে যা লিখলেন তারেক রহমান

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৭০ ফিলিস্তিনি, মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৭০ ফিলিস্তিনি, মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত

নারী শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুমে ভিডিও ধারণ, যুবক আটক

নারী শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুমে ভিডিও ধারণ, যুবক আটক

শেখ হাসিনার সাথে হত্যা মামলায় জড়িত পটুয়াখালীর ইটবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল আটক

শেখ হাসিনার সাথে হত্যা মামলায় জড়িত পটুয়াখালীর ইটবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল আটক