এক যুগে দেশে ধনী-গরিব বৈষম্য বেড়েছে ৮০ গুণ
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
গত এক যুগে দেশে ধনী-গরীব বৈষম্য বেড়েছে ৮০ গুণ। গত ৫০ বছরে দেশে উন্নয়নের আদর্শ স্থাপন হলেও আয় ও ব্যয়ে বৈষম্য, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা, দুর্নীতি, জবাবদিহিতার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছায়নি। যা আগামীতে টেকসই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে। রাজধানীর কেআইবি অডিটরিয়ামে সোমবার নাগরিক প্ল্যাটফর্মের এক সংলাপে উঠে আসে এসব তথ্য।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যন প্রফেসর ড. রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মানবধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের দেওয়া তথ্য মতে, দেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক এক শতাংশ। আকার বেড়ে ৪৬০ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৮৭ মার্কিন ডলার। গত ৬ বছরে দারিদ্রের হার কমে বর্তমানে হয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। অতি দারিদ্রের হারও কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। নাগরিক প্ল্যাটফর্ম মনে করে, দেশের উন্নয়ন হলেও এর সুফল সবাই পায়নি। আয় বৈষম্য বেড়েছে। ২০১০ সালে সবচেয়ে ধনী ও দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের আয়ের পার্থক্য ছিল ৩০ গুণ। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮০ গুণ। যাদের কাছে বেশি সম্পদ তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতাও অনেক বেশি, যা আগে কখনোই দেখা যায়নি।
অনুষ্ঠানে ড. রেহমান সোবহান বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নেও অঞ্চল ভেদে বৈষম্য দেখা যায়। ১৫ বছর ধরে দুর্নীতিসহ নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলেও সমাধান হচ্ছে না। দেশের বড় প্রকল্পের জন্য নেওয়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপের কারণে স্বাস্থ্যসহ সামাজিক নিরপাত্তা খাতে তুলনামূলক বরাদ্দ অনেক কম। যা দেশের জন্য দুঃখজনক বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত কয়েক বছরে দেশে আলির্গাক সমাজের উদ্ভব হয়েছে, যাদের কাছে বিশাল সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, আবার তাদের কাছে রাজনৈতিক ক্ষমতাও অনেক। তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালের ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসলেও এ সময়ে আয় বৈষম্য বেড়েছে ৯ শতাংশ।
অতিধনী ১০ শতাংশ মানুষের কাছে মোট আয়ের ৪১ শতাংশের বিপরীতে অতি দরিদ্র ১০ শতাংশ মানুষের কাছে যাচ্ছে মোট আয়ের মাত্র ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। আয়ে বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার কারণে গত ১২ বছরে ব্যয় বৈষম্যও বেড়েছে অন্তত ৪ শতাংশ। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, জিডিপি, জাতীয় আয়, রফতানি রেমিট্যান্স, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সব সূচকে উন্নতি হলেও সবাই এর সমান ভাগিদার হতে পারেননি। খাতভিত্তিক, জনসংখ্যাভিত্তিক ও এলাকাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে অনেকেই এই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব থাকায় পিছিয়ে থাকা লোকজন নিজেদের অধিকার সম্পর্কে আওয়াজ তুলতে পারছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতির মধ্যেও সামষ্টিক অর্থনীতির কয়েকটি সূচকে বেশ অসামঞ্জস্য রয়েছে। তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৩ শতাংশে রয়েছে, যা নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় ৩০ শতাংশ থেকে অনেক কম।
স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ২ শতাংশের কম, শিক্ষায় ১ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ বরাদ্দকে অপমানজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি। দেশের আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে শোভন কর্মসংস্থানের অভাব, আঞ্চলিক বৈষম্য, নারীর প্রতি সহিংসতা, পরিবেশের ঝুঁকি, সরকারি প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতা, মূল্যবোধের অধ:পতন ও দুর্নীতির বিস্তারকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, শোভন কর্মসংস্থান না থাকায় শিক্ষিত বেকার বেড়েছে। এর ফলে অনেকেই কম মজুরিতে কাজ করছেন। অবকাঠামো উন্নয়নেও বৈষম্য রয়েছে মন্তব্য করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ছোট দেশ হলেও অনেক এলাকা বরাদ্দে পিছয়ে আছে। এর ফলে ভারসাম্য উন্নয়ন নিশ্চিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিস্তার, স্থানীয় পর্যায়ে অদক্ষতার কারণে সরকারি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে না। এই সমস্যার সমাধানে গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারসহ মোট ১১টি সুপারিশ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি নিশ্চিত করতে হলে গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধার জরুরি।
মামুনুর রশীদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম করছি, দেশটাকে বাসযোগ্য করার চেষ্টা করছি। আমরা একদিকে বাসযোগ্য করার চেষ্টা করছি, অন্যদিকে টাকা পাচারকারীরা দেশ থেকে টাকা নিয়ে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, মালেশিয়াকে বাসযোগ্য করার চেষ্টা করছে। বইয়ে লেখা পিছিয়েপড়া মানুষের সমস্যা ও সঙ্কট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমস্যাগুলো রাজনৈতিক। এটাকে যদি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা না যায়, এতে যদি রাজনীতিবিদ, আমলা, প্রযুক্তিবিদ যুক্ত না হন তাহলে এগুলো সমাধান করা খুব কঠিন। আমরা কি শিক্ষাকে ধ্বংস করে দিলাম? এমন প্রশ্ন তুলে এই সংস্কৃতিকর্মী বলেন, পৃথিবীর পুঁজিপতি দেশগুলো কিছু কিছু জায়গায় স্পর্শ করে না। যেমনÑ শিক্ষা তারা স্পর্শ করে না। কিন্তু জিয়াউর রহমানের আমল থেকে শুরু হয়েছে শিক্ষকদের সামনে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলা। এই আঙুল উঠতে উঠতে কোথায় গেলো। শিক্ষকদের গলায় জুতার মালা, শিক্ষককে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সমাজের বৈষম্য দূর করতে রাজনৈতিক আন্দোলন দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ বিরোধীদল এক দাবিতেই আন্দোলন করে। সেটা হলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। ক্ষমতায় গিয়ে করবেটা কী? এটা একটু শুনি বলেন...। আপনি ক্ষমতায় আসতে চান। আপনাকে পূর্ণ সমর্থন দেবো, বলেন আপনি কী করবেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে