খাল ভরাট-বেদখলে ডুবছে ঢাকা
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
মাত্র কয়েক ঘণ্টার বর্ষণে রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। বিদ্যুতায়িত হয়ে চারজনের প্রাণহানি ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ও অলিগলি ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানির নিচে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় পুরোনো খালগুলো দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। রাস্তা নির্মাণের জন্যও অনেক খালের ওপর করা হয়েছে কালভার্ট রোড। এসব কালভার্ট রোডের বেশিরভাগই নির্মাণ করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। রাজধানীর ট্রেনেজ ব্যবস্থার অপরিকল্পিত নির্মাণ ও মেরামতের কারণেও সামান্ন বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাস্তা। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। সাম্প্রতিক সময়ের বৃষ্টিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জিগাতলা থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত অংশে দীর্ঘ সময়েও পানি নামেনি। নিউমার্কেটের ভেতর ও সামনের সড়ক পুরোটাই ছিলো পানির নিচে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল-সংলগ্ন রাস্তা পানির স্রোত বইতে দেখা গেছে। আজিমপুরের একাংশ এবং পিলখানায় ছিল হাঁটুপানি।
নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই সিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নতুন লাইন নির্মাণে আগ্রহী বেশি। এক্ষেত্রে কাজ দেখানোর প্রবণতা বেশি কাজ করে তাদের মধ্যে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাজে এমন কোনও পরিকল্পনার ছাপ নাই। এ পানিবদ্ধতার মূল কারণ খালগুলো অবৈধ দখলে থাকা, পানিপ্রবাহ ঠিক না থাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যত কোনো পরিকল্পনা না থাকা।
নগরীর বাসিন্দারা বলেন, বছরের বেশিরভাগ সময়েই বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা হয়। এসব উন্নয়ন কাজের কারণে রাস্তা কাটা হয় এসব অপরিকল্পিত রাস্তা কাটার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ট্রেনেজ ব্যবস্থা অপরিকল্পিত হওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশনের জন্য অনেক সময় লেগে যায়। বিভিন্ন এলাকার স্যুয়ারেজ (নিষ্কাশন) ব্যবস্থা অনেক দিন নষ্ট থাকলেও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, পলিথিন, বোতল সবকিছু ড্রেনে ফেলার কারণে পানির প্রবাহে সময় লাগছে। গলির রাস্তা দিয়ে জায়গার অভাবে প্রশস্ত ড্রেন করা যাচ্ছে না। ২০ফিট রাস্তার জায়গা না পেলে প্রশস্ত ড্রেন করা সম্ভব হচ্ছে না। জলাধার, খাল ধ্বংস করা যাবে না। নগরের খাল ভরাট, বেদখল মূলত পানিবদ্ধতার জন্য দায়ী। পরিবেশ দূষণ বন্ধ না করলে, পরিবেশ প্রতিশোধ নেবে। তাই আমরা কল্যাণপুরসহ সব বেদখলে থাকা খাল উদ্ধার করছি। ঢাকার খালগুলো মহানগর জরিপে অনেক ছোট হয়ে গেছে। শহরকে বাঁচাতে হলে খালগুলো মহানগর জরিপে নয় বরং সিএস এবং এসএ দাগ অনুযায়ী পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
জানা যায়, ঢাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিল ৪টি নদী ও ৬৫টি খাল। এখন খাল আছে ২৬টি। আর নদীগুলোর বেশির ভাগ অংশ ভরাট হয়ে গেছে। গত ৯ বছরে ঢাকার ৩ হাজার ৪৮৩ একর জলাভূমি ভরাট হয়ে গেছে। রাজউকের আওতাধীন ঢাকার আশপাশের জলাভূমির ৩৬ শতাংশ বা ২২ হাজার ১৫৬ একর নিচু জলাভূমি দখলদারদের হাতে। পানিবদ্ধতা নিরসনের মাধ্যম হিসেবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এখন ২৬টি খাল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার), প্রায় ৩৮৫ কিলোমিটার বড় নালা এবং চারটি পাম্পস্টেশন রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করে। প্রায় ২ হাজার ২১১ কিলোমিটার নালা ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে নেয় দুই সিটি করপোরেশন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে বর্ষা মৌসুমের আগে পানিবদ্ধতা নিরসনে তারা বেশকিছু কাজ করেছেন। ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর শাখা-প্রশাখাসহ ১১টি অচল খাল, বর্জ্যে জমাটবদ্ধ পাঁচটি বক্স কালভার্ট ও প্রায় ২০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নর্দমার মালিকানা নিয়েছে সংস্থাটি। দায়িত্বভার গ্রহণের পর এসব খাল, বক্স-কালভার্ট ও নর্দমা হতে বর্জ্য অপসারণ, সীমানা নির্ধারণ ও দখলমুক্ত কার্যক্রম শুরু করে তারা। এসব খাল, বক্স-কালভার্ট ও নর্দমা হতে ২০২১ সালে আট লাখ ২২ হাজার টন, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টন এবং ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টন বর্জ্য ও পলি অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি সংস্থাটির কর্মকর্তাদের। এছাড়া পানিবদ্ধতা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গত তিন বছরে ১৩৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করেছে ডিএসসিসি।
অন্যদিকে পানিবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসি ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার করার পাশাপাশি পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করেছে। এছাড়া খাল থেকে গত এক বছরে প্রায় ২ লাখ টন বর্জ্য অপসরণ করেছে। কল্যাণপুরে বেদখল হওয়া ৫৩ একর জায়গা উদ্ধারের পর এখন খনন কাজ চলছে। কল্যাণপুর ‘রিটেনশন পন্ড’ থেকে অপসারণ করা হয়েছে ৩০ লাখ ঘনফুট সø্যাজ। এছাড়া ২৯টি খাল নিয়ে কাজ করেছে ডিএনসিসি। খালগুলোর নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান আছে। উত্তরের মোট ১০৩টি স্থানে পানিবদ্ধতা সৃষ্টির পরিবেশ আছে। সেখানে অল্প বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। স্থানগুলো চিহ্নিত করে সংস্থাটি কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া তাৎক্ষণিক কোথাও পানিবদ্ধতা হলে ডিএনসিসির কুইক রেসপন্স টিম প্রস্তুত থাকছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার এই পরিস্থিতির জন্য এক-পঞ্চমাংশের দায় নাগরিকের। কিন্তু সে দায়ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে। ঢাকায় খাল ভরাট করে বড় ভবন তৈরি হচ্ছে। তখন এই অনুমতি তো কর্তৃপক্ষই দিচ্ছে। সিটি করপোরেশন মূলত নতুন লাইন তৈরিতে ব্যস্ত। কিন্তু যে ড্রেনগুলো আছে সেগুলোর কোথায় কোথায় ব্লক হয়েছে তা পরিষ্কার করার ব্যাপারে তারা মনোযোগী নয়। ফলে বেশি কাজ দেখানোর জন্য নতুন করে ব্যাপক অর্থ খরচ করা হলেও পুরো নেটওয়ার্কিং না হওয়ায় সুফল মিলছে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে