এখন দড়ি ধরে টান মারার সময় এসেছে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাস বলেছেন, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। কোনো রাজা রানীর রাজত্ব করার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করিনি। দেশে আজ কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা হয়েছে। দেশ আজ হিরক রাজার দেশে পরিণত হয়েছে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না।
এখন দড়ি ধরে টান মারার সময় এসেছে। মীর্জা আব্বাস গতকাল মঙ্গলবার ঝিনাইদহ শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে খুলনা অভিমুখে রোডমার্চ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে পৌঁছাতে আমাকে আড়াই কিলোমিটার জনসমুদ্র পাড়ি দিতে হয়েছে। দেখে মনে হয়েছে আমরা প্রাক বিজয় উৎসব পালন করছি। তিনি বলেন, সারা দেশের মানুষ আজ আবেগতাড়িত, উদ্বেলিত। অন্যদিকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বেদনাহত। মীর্জা আব্বাস বলেন, কিছুদিন আগে আমি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছি। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম ম্যাডম কিছু বলবেন? উনি মাথা নাড়লেন, কিন্তু কোন কথা বললেন না। আমি তার চোখের দিকে তাকালাম। তার চাহনিতে অব্যক্ত ভাষা। তিনি হয়তো এটাই বলতে চেয়েছিলেন, তোমরা আমার জন্য কি করেছ। আমি কি দেশের গণতন্ত্র, দেশের মানুষ ও রাষ্ট্রের জন্য কিছুই করেনি ?
মীর্জা আব্বাস বলেন, আমি ম্যাডামকে বলে এসেছি সারা দেশের মানুষ আজ আপনার জন্য চিন্তিত। আপনি বাংলাদেশের জন্য যা করেছেন তা মানুষ ভুলবে না। মুুহুর্মুহু করতালী ও সেøাগানের মধ্য দিয়ে মীর্জা আব্বাস বলেন, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে এই সরকারকে বাধ্য করা হবে। একদফার আন্দোলন চূড়ান্ত করেই দেশের মানুষ ঘরে ফিরবে ইনশাআল্লাহ।
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. এম এ মজিদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনার পরিচালনায় রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহদী আহম্মেদ রুমী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দীন, বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দীন টুকু, কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আসাদুজ্জামান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, মেহেরপুরের মাসুদ অরুন, চুয়াডাঙ্গার মাহবুব হাসান খান বাবু, শরিফুজ্জামানসহ জেলা ও উপজেলার বিএনপি নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
মীর্জা আব্বাস আরো বলেন, দেশ দেউলিয়া হবার পথে। অর্থনীতি খারাপ। ডলারের রিজার্ভ শুণ্যের কোঠায় ঠেকেছে। তিনি বলেন, ১৫ বছর দেশে সীমাহীন লুটপাট চলেছে। পিকে হালদারসহ অনেক রাঘববোয়াল হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১০৯ হাজার কোটি টাকা। আমরা এই চুরিধারীর প্রতিবাদ করলে জেলে পাঠানো হচ্ছে। তিনি বলেন, সময় মতো এসব চোরদের বিচার করা হবে।
সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, আমরা একদফার দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। তারেক রহমান মৃত বিএনপিকে জীবিত করেছেন। এই ফ্যাসিবাদী বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে শত শত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ৪০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তারপরও বিএনপি মাঠ ছাড়েনি। কারণ একটাই হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া বিএনপি ঘরে ফিরবে না। তিনি বলেন, ৭১ সালে সেদিন শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল বিজয়ের তুর্য্যধ্বনি। বুলু অভিযোগ করেন, শেখ মুজিব ক্ষমতায় এসে এক ঘন্টার মধ্যে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিলেন। গণতন্ত্র ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ধ্বংস করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। শেখ মুজিব যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করেছিলেন, সেই আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ারউর রহমান। কাজেই আজকের আওয়ামী লীগ জিয়ার সার্টিফিকেট নিয়ে জন্ম। তিনি দাবি করেন, আজকের আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবের আওয়ামীগ নয়। তিনি প্রশাসনকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, এই ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন যারা নসাৎ করতে চেষ্টা চালাবে, নাজিম উদ্দীন রোডের কারাগার হাসিনার পাশাপাশি তাদের জন্যও প্রস্তুত রাখা হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আর কত রক্ত দেশের মানুষ দিলে শেখ হাসিনা ক্ষ্যান্ত হবে ? এই খুনি জালিম সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত বিদায় না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না। তিনি বলেন, শয়তানীর একটা সীমা আছে। সরকার চোর ডাকাতদের মুক্তি দিচ্ছে অথচ তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তি দিচ্ছে না। তিনি বলেন, সময় থাকতে পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙ্গে দিন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করুন। নইলে মাইর একবার শুরু হলে রেহাই পাবেন না। তিনি তারেক রাহমানকে বিমান বন্দরে রিসিভ করার জন্য উপস্থিত জনতাকে অগ্রিম দাওয়াত দেন।
সমাবেশে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, রোডমার্চ শুধু বিএনপি নয়। দেখবেন রাস্তার দুই ধারে হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে এই সরকারের পতন দাবি করছে।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, দেশের হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ও দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি যে লড়াই শুরু করেছে তা তীব্রতর হচ্ছে। এই আন্দোলন তিনি বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের ভোটাধিকার ফিরে আসার মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
বিএনপির খুলনা অভিমুখে রোডমার্চকে ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতাদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে ঝিনাইদহ। সর্বত্রই উচ্ছাস আর আড়ম্বর পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে ঝিনাইদহ ছাড়াও কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে গতকাল মঙ্গলবারের রোডমার্চকে ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। কেন্দ্রীয় ও বাইরের নেতাকর্মীদের বরণ করতে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রোডমার্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্মরণীয় করতে ঝিনাইদহ শহরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল সাজানো হয় বর্ণিল সাজে।
স্টাফ রিপোর্টার, মাগুরা থেকে জানান, খুলনা বিভাগের রোডমার্চ গতকাল সকালে ঝিনাইদহ থেকে শুরু হয়ে মাগুরা-যশোর হয়ে খুলনায় যাওয়ার পথে মাগুরা ভায়না মোড়ে দুপুর ১টায় সমাবেশ করে। রোডমার্চ শুরুর আগে ঝিনাইদহে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করার মধ্যদিয়ে শুরু করে গোপালপুর আলমখালীসহ কয়েকটি পথসভা করে। এরমধ্যে মাগুরার ভায়নামোড়, শালিখার আড়পাড়ায় পথসভা করে। ভায়নামোড়ে সমাবেশে বিপুলসংখ্যক মহিলা অংশগ্রহণ করে। মাগুরা জেলা মহিলা দলের সভাপতি উম্মে কুলসুম উর্মি, জেলা মহিলা দলের সহ সভাপতি অ্যাড. তানজিরা রহমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ফারহানা পারভীন বিউটি, সাবিনা ইয়াসমিন মেরী, জেসমিন রহমান স্মৃতি প্রমুখ নেতৃত্ব দেন। বেলা ১টার দিকে বিএনপি কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী ও মনোয়ার হোসেন খানের নেতৃত্বে জেলা বিএনপি আহ্বায়ক আলী আহম্মদ, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জেলার অন্যান্য উপজেলার নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে রোডমার্চ যশোরের পথে শালিখার আড়পাড়ায় পথসভা করে বেলা দুইটায় যশোরের পথে যাত্রা করে।
সমাবেশে বন্দি খালেদা জিয়া সেজে শিশু প্রার্থনা ভাইরাল! : ঝিনাইদহ শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে খুলনা অভিমুখে বিএনপির রোডমার্চের উদ্বোধনী সভায় একটি বন্দি খাঁচাকে ঘিরে উৎসুক জনতার ভীড়। সবার দৃষ্টি সেদিকে। হঠাৎ ছন্দপতন। কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি পড়ে। আস্তে আস্তে ভীড় বাড়তে থাকে। রড দিয়ে ঘেরা জেলখানার আদলে তৈরি খাঁচার মধ্যে একটি শিশু বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মতো সাজগোজ করে বসে আছেন। চোখে সানগ্লাস। মাথাভর্তি চুল। প্রতিকী জেলখানার উপরে লেখা ‘মুক্তি চাই’। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিশুটির নাম হুমায়রা জান্নাত প্রার্থনা। সে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার একটি প্রাইমারি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। তার পিতা আব্দুল হামিদ কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিশু হুমায়রা জানায়, খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাঁর মুক্তির দাবিতেই মূলত সে বেগম খালেদা জিয়া সেজেছেন। শিশুটির পিতা আব্দুল হামিদ জানান, দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই রোডমার্চ। সে কারণে তিনি তার শিশু কন্যাকে নেত্রী সাজিয়ে প্রতিকী জেলখানায় ভরে রোডমার্চে নিয়ে এসেছেন। এটি প্রতিবাদের একটি অংশ বলে জানান তিনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে