লবণ আমদানীর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী

বিক্ষুব্ধ লবণ চাষি ও সংশ্লিষ্টরা

লবণ আমদানীর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে

০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম

মাঠে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ থাকা সত্বেও মৌসুমের শেষে এসে লবণ আমদানীর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী বলে মনে করেন কক্সবাজারের লবণ চাষিরা। দুই লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানী করার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ কক্সবাজার অঞ্চলের লবণ চাষিরা। তাদের মতে এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী এবং দেশের স্বনির্ভর লবণ খাত ধ্বংস করার পাঁয়তারা।
কক্সবাজার বিসিক সূত্র মতে, মাঠে এখন সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ মজুদ আছে। খবর নিয়ে জানা গেছে, লবণ মিলগুলোতে জমা আছে দুই থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন লবণ। এছাড়াও পাইপ লাইনে আছে ৫০ থেকে এক লাখ মেট্রিক টন লবণ। সব মিলে প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন লবণ এখন মজুদ আছে। এদিকে আগামী নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে নতুন লবণ মৌসুম। অভিজ্ঞজনদের মতে এখন থেকে নতুন লবণ উৎপাদন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ ৫ লাখ মেট্রিক টন লবণের প্রয়োজন হতে পারে। এতে করে লবণ ঘাটতির কোন শঙ্কা নেই। ফলে চাষিদের প্রশ্ন, তাহলে দুই লাখ মেট্রিকটন লবণ আমদানীর সিদ্ধান্ত কার স্বার্থে?
কক্সবাজার বিসিক সূত্র মতে চলতি লবণ উৎপাদন মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। লবণের উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছিল ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। তার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। দেড় লাখ মেট্রিকটন কম উৎপাদনের কথা বলে মধ্যসত্বভোগীরা এখন আমদানীর সুযোগ নিতে চায়। সংশ্লিষ্টদের মতে চাষিদের সুযোগ সুবিধা দিয়ে নার্সিং করা হলে লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন করা সম্ভব। এমনকি অতিরিক্ত লবণ রফতানি করাও সম্ভব।
মহেশখালীর কয়েকজন লবণ চাষি বলেন, লবণ আমদানীর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী ও দেশের স্বনির্ভর লবণ খাত ধ্বংস করার পাঁয়তারা। লবণ আমদানীর সিদ্ধান্তে তারা ক্ষুব্ধ। সাবেক চেয়ারম্যান লবণ চাষি রুহুল কাদের বাবুল বলেন, এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তা হবে আত্মঘাতী। অসন্তোষ বাড়বে লবণ চাষিদের মাঝে। মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ শরীফ বাদশা বলেন, মাঠে যথেষ্ট লবণ আছে। আমদানীর কোন প্রয়োজন নেই। বরং মিল মালিকরা চড়া দামে বিক্রির জন্য প্রচুর লবণ জমা রেখেছে। ওই লবণ বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করা হলে লবণের দামও বাড়বে না, শঙ্কটও হবে না।
বিসিক লবণ সেল প্রধান সরওয়ার হোসেন বলেন, বিসিক কক্সবাজার অফিসের দেয়া মাঠে চার লাখ মেট্রিক টন লবণ জমা থাকার রিপোর্টটি ভুয়া। মাঠ পর্যায়ের রিপোর্ট ভুয়া না ঢাকা অফিসের রিপোর্ট ভুয়া এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মধ্যসত্বভোগীরা লবণ মজুদ করে শঙ্কট সৃষ্টি করে এবং চড়া দামে লবণ বিক্রি করে। এ কারণে এখন লবণের মূল্য প্রতিমন ৫০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। এটি ৪০০ টাকার মধ্য হলে সহনীয় হয়। মধ্যসত্বভোগীরা যেন মূল্য আরো বাড়াতে না পারে এবং মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রেখে আপদকাল মোকাবেলার জন্য সরকার দুই লাখ মেট্রিক টন লবণ আমাদনীর কথা ভাবছে। তবে এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে, চূড়ান্ত নয় বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার বিসিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি লবণ মৌসুমে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে লবণ চাষ হয়েছে। লবণ সংশ্লিষ্ট চাষি ও শ্রমিক ছিল দেড় লাখের মত।
কক্সবাজার বিসিকের ডিজিএম জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, লবণের লক্ষমাত্রা পূরণে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া ও আগভাগে উৎপাদনে মাঠে নামানোর কোন বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, অক্টোবরেই কুতুবদিয়ার লবণ চাষিদের আগাম মাঠে নামাতে নার্সিং কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন তিনি।

বিভাগ : জাতীয়