রেকর্ড বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি
০৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৮ এএম
আশ্বিনের রেকর্ড বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সারাদেশে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় দুই লাখ হেক্টরের বেশি আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে। এর ফলে আমনে উৎপাদন লক্ষমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এ ছাড়া নষ্ট হয়েছে চাষিদের নানান জাতের সবজির ক্ষেত। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, যশোর, নাটোর, বগুড়া, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্দা, রংপুর, দিজানপুর, নীলফামারিসহ দেশের কমপক্ষে ৩০টি জেলায় আমন ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক জেলায় মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে।
এবার দেশে এক অদ্ভূত বর্ষা অতিবাহিত হয়েছে। আষাঢ়-শ্রাবণ গেছে অনাবৃষ্টিতে। এরপর ভাদ্র এবং আশ্বিণের শুরুতে অনেকটা স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। এতে আমন এবং সবচি চাষিরা বেশ আশাবাদী হয়েছিলেন। তবে বিদায় বেলায় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত কয়েকদিনের অতি বৃষ্টিতে তাদের আশা দীফ নিভে গেছে। এবার গত ৫২ বছরের রেকর্ড ভেঙে সবচেয়ে বেশি ৩৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ময়মনসিংহে। এর আগে ময়মনসিংহে ১৯৭১ সালে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিলো। গত ৬ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের নিকলিতে চলতি বর্ষা মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা অববাহিকায় ভারি বৃষ্টি ও ভারতীয় ঢলে পাঁচ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। টানা ভারি বর্ষণের ফলে রাস্তা ঘাট, হাটবাজার, খাল বিল নদী নালা পুকুর রাস্তাঘাট সব পানিতে তলিয়ে গেছে। শাক-সবজি বাগান ও ফসলের অকল্পনীয় ক্ষতি হয়েছে। আশ্বিনের এই অতিবৃষ্টিতে সারাদেশে ফসলের ক্ষতির যে চিত্র আমাদের সংবাদদাতারা পাঠিয়েছেন তা তুলে ধরা হলো।
রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, আষাঢ়ে কাঙ্খিত বর্ষণ না হলেও আশ্বিনের শেষ বর্ষণে ডুবেছে ফসলের ক্ষেত। ভেসেছে পুকুরের মাছ। এবার বরেন্দ্র অঞ্চলের চার জেলায় রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগায় শাকসবজি আবাদেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় চল্লিশ হাজার চারশো হেক্টরে। কিন্তু আবাদ হয়েছে প্রায় তেতাল্লিশ হাজার হেক্টরে। আবাদেও শুরুতে বর্ষণ না হওয়ায় গভীর নলকূপের পানিতে সেচদিয়ে চাষাবাদ করতে হয়। একটু বেশি লাভের আশায় অনেকে আগাম জাতের ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটোসহ নানা ধরনের সবজির আবাদ করে। শীতকালীন সবজি যখন মাঠে মাঠে বেড়ে উঠছিল আর আবাদকারীরা স্বপ্ন দেখছিল ঠিক সেসময় আশ্বিনের অপ্রত্যাশিত ভারী বর্ষণ সব ডুবিয়েছে। হারিয়েছে স্বপ্নও। আবাদকারীরা বলছেন তারা আশ্বিনে এমন ভারী বর্ষণ নিকট অতীতে তেমন দেখেননি। বৃষ্টিতে শুধু শাকসবজি নয় ক্ষতি হয়েছে ধানের জমিও।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পিরচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, আমরা ক্ষয়ক্ষতি নিরাপনের জন্য মাঠ পয্যায়ে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি। রাজশাহীতে পনের হাজার হেক্টর জমিতে পটল, বেগুন, কাকরুল, বরবটি, শসা. লাউ, কুমড়া, মিষ্টকুমড়া, ফুলকপি, বাধাকপি, পুইশাক, লালশাক, পালংশাক, মনিকচু, ঝিঙ্গা, চিচিংগাসহ বিভিন্ন শাক সবজির আবাদ হয়েছে। কিছু ফসল তলিয়ে গেছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কম হবে। বেশী ক্ষতি হয়েছে নীচু জমিতে। গোদাগাড়ীর কৃষক রনি বলেন, আমার ধান কেবল পুষ্ট হচ্ছিল। এরমধ্যে ধান ক্ষেতে পানি জমে যায়। কিছু ধান কেটে ফেলেছি। রাজশাহীর সবচেয়ে সবজি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হলো তানোর মোহনপুর, পবা, দূর্গাপুর। দূর্গাপুরে ফসল ডুবে যাওয়ায় এক কৃষক হাটফেল করে মারা গেছেন বলে জানাগেছে।
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, শরতের শেষ প্রান্তিকের টানা বর্ষনে বিপর্যস্ত এখন বগুড়ার জনজীবন। সেই সাথে উজানের ভারতীয় ঢলের পানিতে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, বাঙালী, করতোয়া, নাগর নদসহ খাল বিল, নদীনালা পানিতে টইটম্বুর। অক্টোবরের ৩ তারিখে শুরু হওয়া বৃষ্টির বিরাম নেই। বগুড়া আবহাওয়া দপ্তরের রিপোর্ট মোতাবেক গতকাল বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২শ মিলিমিটার। পর্যবেক্ষকদের মতে এটা অস্বাভাবিক। তিস্তা ব্রম্ভপুত্র হয়ে উজানের ভারতীয় ঢলের পানিতে পুর্ব বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, ধুনট , গাবতলী ও শেরপুরের অংশবিশেষ এবং কেবল বৃষ্টির পানিতে বগুড়া সদর সহ বন্যামুক্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত পশ্চিম বগুড়ার কাহালু, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া আদমদীঘী উপজেলাতেও এবার ফসলের ক্ষেত খামার ছাড়াও লোকালয়ে ব্যাপকভাবে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় বগুড়া সদরসহ পশ্চিম বগুড়া অঞ্চলে কয়েকশত মাটির ঘর ধ্বসে গেছে। বগুড়া জুড়েই শতশত ফিশিং প্রজেক্টের মাছ ভেসে গেছে। নিচু এলাকায় আমন ফসলসহ কমপক্ষে ৩০ হাজার হেক্টর জমির শাক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। বগুড়ার ১২ উপজেলার আশ্রায়ন প্রকল্পের অর্ধেক বাড়িঘরের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন । অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে অনত্র সরে গেছেন। পশ্চিম বগুড়ার উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হল বগুড়ার নন্দী গ্রাম। এখানে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বসতবাড়িতে হাঁটুপানি থাকায় কয়েকটি ঘর ভেঙে পড়েছে। সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার কৈগাড়ী, রিধইল, সিংড়া খালাস, কামুল্যা, পারশুনসহ বেশকয়েকটি গ্রামের ফসলি জমিগুলোও হাবুডুবু অবস্থা।
বরিশাল থেকে নাছিম উল আলম জানান, লাগাতর প্রবল বর্ষনে বরিশালের জনজীবন বিপন্ন। অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শনিবার দিনের প্রথমভাগে কেউ ঘর থেকেই বের হতে পারেননি। গগন বিদারী আওয়াজের বজ্রপাতের সাথে প্রবল বর্ষণে খোদ বরিশাল মহানগরীর রাস্তাঘাটই অনেকটা জনমানব শূন্য হয়ে পরে। আষঢ়Ñশ্রাবনে অনাবৃষ্টির পরে আশি^নের শুরু থেকে লাগাতার বর্ষণে বরিশাল অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন সবজির বেশীরভাগই বিনষ্ট হবার সাথে শীতকালীন আগাম শাক-সবজিরও পুরোটাই গেছে। ফলে বাজারে এখন ৮০ টাকা কেজির নিচে কোন সবজি নেই। কাঁচা মরিচের কেজি আবার ৩শ টাকা। প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের ভবিষ্যত নিয়েও চরম দুঃশ্চিন্তায় বরিশাল অঞ্চলের কৃষক। চলতি মৌসুমে ২২ লাখ ৮ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রায় ৮.৭০ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হলেও বৈরী আবহাওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় তারা।
ময়মনসিংহ থেকে মো: শামসুল আলম খান জানান, টানা ভারি বৃষ্টিতে জেলায় ১২ হাজার হেক্টর রোপা আমন ও সবজি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে হাজার হাজার পুকুর ও মাছের ঘের থেকে ভেসে গেছে শত শত কোটি টাকার মাছ। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন এই জেলার কয়েক হাজার কৃষক ও মৎস চাষি। জেলার মৎস চাষিদের ক্ষতির পরিমান নির্ণয়নের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস অধিপ্তরের সিনিয়র সহকারি পরিচালক রিপন কুমার পাল। তিনি জানান, টানা বৃষ্টির কারণে জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হওয়া কয়েক হাজার পুকুর ও ঘের থেকে বিপুল পরিমাণ মাছ বৃষ্টি প্লাবনে ভেসে গেছে। এতে পকুর ও মাছের ঘেরগুলোর অবকাঠামোতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি, তবে নির্ণয়রে চেষ্টা চলছে।
যশোর থেকে শাহেদ রহমান জানান, এ অঞ্চলে এবার শ্রাবণ-ভাদ্রে প্রত্যাশিত বৃষ্টি হয়নি। তবে আশ্বিনের শুরুতে কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন যশোরের সবজি চাষিরা। দেশের সবজি জোন হিসেবে পরিচিত যশোর সদরের চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর, লেবুতলা, ইছালী, নওয়াপাড়া ও কাশিমপুর ইউনিয়নে ইতিমধ্যে শত শত বিঘা শীতকালীন সবজি রোপণ করেছেন কৃষকরা। একটানা বৃষ্টিতে শহরের নি¤œাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। আবহাওয়া অফিস বলছে, নি¤œচাপের কারণে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এদিকে বৃষ্টিতে আমন ধানের তেমন ক্ষতি না হলেও আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে বীজতলার মালিকদের।
রংপুর থেকে হালিম আনছারী জানান, অব্যাহত ভারী বর্ষন এবং জলাবদ্ধতার কারনে বিভিন্ন স্থানে আমন ধান ও রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে নিচু এলাকাগুলোতে আমন ধান ও রবি ফসলের গাছে পচন ধরেছে। পানি দ্রুত না সরলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন নি¤œাঞ্চলের কৃষকেরা। টানা বৃষ্টি এবং ভারতের উত্তর সিকিমে বন্যার কারনে তিস্তাসহ প্রায় সবক’টি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন স্থানে তুলনামুলক নিচু এলাকাগুলোতে ঢুকে পড়েছে। এতে করে ঐসব এলাকায় বিশেষ করে তিস্তা ও ধরলা তীরবর্তী নিচু এলাকাগুলোতে আমন ধানক্ষেত এবং রবিশস্য ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে করে কিছু কিছু রবিশস্যক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বেগুন, বরবটি, পটল, বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি’র ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ফরিদপুর থেকে আনোয়ার জাহিদ জানান, টানা বর্ষন এবং হটাৎ ঘুর্নিঝড়ে মাদারিপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, ও ফরিদপুর জেলা সদরে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এর মধ্যে, ফরিদপুর অঞ্চলের ৪ টি জেলা সদরসহ, ফরিদপুর সদর উপজেলা, ভাঙ্গা, বোয়ালমারী, সদরপুর, চরভদ্রাসন, গোয়ালন্দ, নগরকান্দা, সালথা, মুখালি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘুর্নিঝড়ে ফরিদপুর জেলার সালথায় ১৮ টি ঘর,বোয়ালমারী, ১৫ টি, আলফাডাঙায় ৮৬ টিএবং ভাঙ্গা উপজেলায় ১২ ঘর ভেঙ্গে তছনছ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মধুখালি, সদরপুর, চরভদ্রাসন, তিন উপজেলা সবজি খ্যাত এলাকাগুলোর ৯০ শতাংশ সবজি ক্ষেত, কাঁচামরিচের ক্ষেত ও আগাম শীতকালীন সবজিক্ষেতও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায়, এই তিন উপজেলার সহস্রাধিক কৃষকের চরম ক্ষতি হয়েছে।
মানিকগঞ্জ থেকে শাহীন তারেক জানান, টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফসলের জমিতে পানি জমে গেছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। সবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় এর দামে প্রভাব পড়েছে কাঁচাবাজার গুলোতে। জানা গেছে, বন্যার পানি জমিতে না ওঠায় মানিকগঞ্জে সাতটি উপজেলায় আগাম সবজি চাষ করেছিলেন এ জেলার হাজারো চাষী। কিন্তু লাগাতার বৃষ্টির কারণে শীতকালীন আগাম সবজি পেপে বেগুন, মুলা, ফুলকপি এবং রোপা আমন ধানের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে।
নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ জানান, টানা কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিপাতে নেত্রকোনার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানি বাড়ায় জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ১১ হাজার ৮ শত ৮২ হেক্টর জমির আবাদি আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। মোহনগঞ্জ উপজেলার বিরামপুর গ্রামের কৃষক বাবুল মিয়া জানান, তিনি এ বছর ৪০ কাঠা জমিতে আমন আবাদ করেছেন। এর মধ্যে তিন দিনের বৃষ্টিতে ২০ কাঠা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। কেন্দুয়া উপজেলার আমতলা কোনাপাড়া গ্রামের কৃষক হারুন মিয়া বলেন, কয়দিনের বৃষ্টিতে আমার ২০ কাঠা ক্ষেত তলায়া গেছে। রোয়াইলবাড়ী গ্রামের জিলু মিয়া বলেন, আমার তিনটা পুকুরের বেশীরভাগ মাছ পানিতে ভাইস্যা গেছে।
টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, টানা দুইদিনের ভারি বৃষ্টিপাতে ডুবে গেছে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার পুকুর, ফসলের মাঠ ছোট-বড় বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক। মাছ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক ও মৎস্যচাষীরা। পুকুরের মাছ ভেসে মুক্ত জলাশয়ে চলে যাওয়ার মৎস্য শিকারের মেতেছে সাধারণ মানুষ। অন্য দিকে হতাশা ও দুশ্চিন্তায় পড়েছে মৎস্য খামারীরা। আমান ধান তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরাও রয়েছে হতাশায়। কৃষক ও মৎস্য খামারীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই শুরু হয়ে শুক্রবার পর্যন্ত যে পরিমান বৃষ্টিতে যে পরিমান পানি হয়েছে সারা বছরের এমন বৃষ্টি হয়নি। অতিবৃষ্টিতে পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি রোপা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও টানা বৃষ্টির কারণে কলাবাগান, সবজি খেতও ক্ষতির মুখে পড়েছে। মধুপুর, ঘাটাইল, সখিপুর কালিহাতী উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকায় সবজির ব্যাপক হয়েছে। মির্জাপুর, কালিহাতী, ভূয়াপুর ধনবাড়ি ,ঘাটাইল, মধুপুর সহ ১২ উপজেলার সব কয়টিরই নিচু এলাকার আমন ধান তলিয়ে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে মুহাম্মদ আতিকুল্লাহ জানান, এ উপজেলায় গত দুই দিনের ভয়াবহ সর্বনাশা অসময়ের প্রবল বর্ষনের ফলে প্রায় ১৭ কোটি টাকা চলতি আমন ফসল ও শাক সবজি সর্ম্পুণ রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে গফরগাঁও উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রকিব আল রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। চলতি মৌসুমে আমন ২২হাজার ৬শত ৬০ হেক্টর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আমনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ শত ৭হেক্টর। শাকসবজি আবাদ হয়েছে ৮শত ৫০হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১শত ৩০ হের্ক্ট । মোট রোপা আমনের ক্ষতি ৯ কোটি টাকা ও শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি টাকা। বেসরকারি হিসেব মতে আরও বাড়তে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। টাংগাব ইউনিয়নের বাশিঁয়া গ্রামের সবজি কৃষক মো. ইসরাফিল মৃধা জানান, নতুন রূপে হরেক রকমের শাকসবজি আবাদ করে ছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের নিমর্মপরিহাস অসময়ের বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেত সম্পুর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। গফরগাঁও বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক মোঃ ইন্ত মহাজন জানান, দুই দিনের বৃষ্টির দরুন শাক সবজি পাগলা ঘোড়ার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলছে ।
বাজিতপুর উপজেলা থেকে মো. রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে ফলে আমন ধান ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক শ একর জমি বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। মাছ চাষীদের মাছের পুকুর ভেসে গেছে। ভারী বর্ষণের পাশাপাশি উজান থেকে ঢলের পানি আসায় নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঠ ভরা আমন ধান,ও মাছের খামারের মাছ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে মো. হেলাল উদ্দিন জানান, এ উপজেলায় তিনদিনের টানা বৃষ্টির পানিতে নিকলীর হাওরের আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে। উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন কারপাশা, সিংপুর, দামপাড়া, গুরুই, ছাতিরচর, জারুইতলা, নিকলী সদরে প্রায় ৫ শত হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়। এসব ফসলি জমি এখন পানির নিচে। কাঁচামরিচসহ সব ধরনের শাক সবজির ক্ষেত পানির নিচে। ভেসে গেছে পুকুরের চাষ করা মাছ।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় থেকে মো. আবদুল আলীম খান জানান, গত ক’দিনের বৃষ্টিতে শীতকালীন আগাম সবজির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। অনেক জমিতে জমেছে বৃষ্টির পানি। এতে শীতকালীন আগাম সবজি শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, ওলকপি, গাজর, লেটুস, পালংশাক, ব্রকলি, শালগম, টমেটো, মুলা, ঢ্যাঁড়স, লাউ ও বেগুন জাতের বিভিন্ন শীতকালীন আগাম ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান উপজেলার অনেক চাষি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সালথা উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক নাসির উদ্দিন বহিষ্কার
হোক না সবার সুপারনিউমেরারি পদোন্নতি, কর্মক্ষেত্রে আসুক গতি
জামিনে এসে হত্যা মামলার সাক্ষীসহ ৫ জনকে কুপিয়েছে প্রধান আসামি
সীমান্তে ভারত উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে: ইসলামী আন্দোলন
কলম্বিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৬০
প্রতিযোগিতায় যারা টিকে থাকবে তারাই গ্রহণযোগ্য সাংবাদিক হবে
কাঁটাতার পেরিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে কুড়িগ্রামে ভারতীয় গৃহবধূ
জাতির সংকট উত্তরণে সর্বদা মানুষের আস্থা ও ভরসাস্থল জিয়া পরিবার : মীর হেলাল
স্বৈরাচার মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে বিএনপি সবকিছু নতুনভাবে শুরু করতে চায়: আমিনুল হক
গুলি করা পুলিশের শাস্তি নয়, চিকিৎসকের গ্রেফতার ফ্যাসিবাদের উদাহরণ - ডা. রফিকুল
ফেনীতে সিক্সার্স ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে ছাগলনাইয়া উপজেলা দল চ্যাম্পিয়ন
দৌলতপুর সরকারি প্রমোদা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
গোপালগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করণে জেলা প্রশাসকের ব্যতিক্রম আয়োজন
সৈয়দপুরে শহিদ জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালন
বিশ্বনাথের চাউলধনী হাওরে সীমানা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত
স্বভাবী চোরের শাস্তি ইসলামেই নির্ধারিত - পীর সাহেব চরমোনাই
‘সীমান্তে গন্ডগোল শুরু হয়েছে, জীবন বিপন্ন হলেও দেশের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখবো’
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী: সরকারের নতুন পদক্ষেপে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ সম্ভাবনাময়
আলজেরিয়ায় কুরআন প্রতিযোগিতায় হাফেজ তাওহিদুলের দেশত্যাগ
লামায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষীকি পালিত