সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় চাঞ্চল্য আমার ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘটনা সরকারকে কিছুটা হেয় করে : আজিজ আহমেদ

যুক্তরাষ্ট্রের আজিজ সিগন্যাল

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২২ মে ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২২ মে ২০২৪, ১২:০৭ এএম

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবমূল্যায়ন, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমানো কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত সোমবার (বাংলাদেশ সময় সোমবার মধ্যরাতের পর) যুক্তরাষ্ট্র এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য ঘোষণার কথা জানানো হয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির ঘটনায় দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অফিস-আদালত, হাটে-মাঠে-ঘাটে সর্বত্রই এ নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক চলছে। আরো কার কার ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ‘আমি অবাক হয়েছি। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমি নিশ্চিত, এটা লোকজন বুঝবে। আমার ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘটনা সরকারকে কিছুটা হেয় করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আজিজ আহমেদের কোনো ভূমিকা ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে ২০২৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। তবে আজিজ আহমেদ ২০১৮ সালের রাতের নির্বাচনে গণতন্ত্র ধ্বংস এবং জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ায় যে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছেন সেটার বিবেচনায় এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এটা মূলত আজিজ আহমেদকে দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের মানুষকে সিগন্যাল দিলো। ২০২৪ সালের নির্বাচনে যারা ভূমিকা (যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায় বিতর্কিত) রেখেছেন তাদের জন্য হয়তো সামনে বার্তা অপেক্ষা করছে। কারণ ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরের পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যে ‘র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া’ ও ‘যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে’ বক্তব্য দেয়া হয়েছে ‘ভুয়া’ হিসেবে অভিহিত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।

এর আগে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও তার ভাইদের অপকর্মের চিত্র তুলে ধরে কাতার থেকে প্রকাশিত আল জাজিরা টিভিতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হলে দেশ-বিদেশে হৈচৈ পড়ে যায়। অতঃপর জার্মানির ডয়সে ভেলে অনলাইন টিভিতে আজিজ আহমেদ নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নয় বরং অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন (ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১, সি ধারা) আইনের প্রয়োগ করা হয়েছে’। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ নামের এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ভিসানীতিতে আজিজ আহমেদের নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বাংলাদেশের ওপর যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছিল, সেটা ছিল থ্রি’সির আওতায়। আর জেনারেল আজিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ফরেন অফিস অপরেশন অ্যাক্টের আওতায়। এই দু’টি আলাদা বিষয়। নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আগে আমাদের যুক্তরাষ্ট্র মিশনকে আগে জানানো হয়েছিল। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগের মধ্যে আছি।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। কেন এই নিষেধাজ্ঞা আসছে, সেটা আমার কাছে এখনো আসেনি। আমি কেবল একটি বিজ্ঞপ্তির কথা শুনেছি।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় খুশির কিছু নেই। র‌্যাবের ওপরও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাতে তাদের কিছুই হয়নি, তাদের অপকর্ম থামেনি।’

আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের দেয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার কারণে সাবেক জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে, পূর্বে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। এর ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হবেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, তার (আজিজ আহমেদ) কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনীর প্রধান থাকার সময় তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। এ ছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন। আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো। সরকারি সেবা আরো স্বচ্ছ ও নাগরিকদের সেবা লাভের সুযোগ তৈরি, ব্যবসা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মুদ্রাপাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র দুর্নীতির সঙ্গে ব্যাপক সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগের টুইটার) লিখেছেন : ‘সাবেক বাংলাদেশি জেনারেল আজিজ আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্যÑ আজকের এই ঘোষণা দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা বাড়াতে আমাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের সাথে কাজ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিকেই পুনঃনিশ্চিত করে।’ মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ম্যাথিউ মিলারের ওই পোস্টটি শেয়ার করে নিজের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন : ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা বাংলাদেশিদের সমর্থন করি। স্বচ্ছ সরকারি প্রক্রিয়ার পক্ষে কথা বলি। সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রকাশে সহায়তাকারীদের সাধুবাদ জানাই।’

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আজিজ আহমেদ বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ভাই বা আত্মীয়দের কন্ট্রাক্ট দিয়েছেন কেউ প্রমাণ করতে পারলে যেকোনো কনসিকোয়েন্স মেনে নিতে প্রস্তুত আছি। আমি এখানে দেখতে পাচ্ছি, অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন অনুষ্ঠানে যে অভিযোগ দু’টি আনা হয়েছিল, সেটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। যদিও এখানে অত কিছু বিস্তারিত বলা হয়নি কিন্তু একই জিনিস। প্রথম অভিযোগ হলো, আমি আমার ভাইকে বাংলাদেশের প্রচলিত যে আইন আছে তার অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে সে যাতে এড়িয়ে চলতে পারে সে জন্য আমি আমার পদ-পদবি ব্যবহার করে তাকে সহযোগিতা করে দুর্নীতি করেছি। দ্বিতীয় হলো, আমি সেনাপ্রধান হিসেবে আমার ভাইকে সামরিক কন্ট্রাক্ট দিয়ে ঘুষ নিয়েছি; আমি আরেকটি দুর্নীতি করেছি। প্রথম অভিযোগের বিষয়ে বলব, আমার সেই ভাই, যদিও এখানে নাম উল্লেখ করা হয়নি, আমি জেনারেল হওয়ার অনেক আগে থেকে বিদেশে এবং নিশ্চয়ই সে বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই বিদেশে গিয়েছে। সেখানে দেশ থেকে চলে যাওয়ার বা দেশের প্রচলিত আইন ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি আমার পদ-পদবি ব্যবহার করেছি এই অভিযোগ আমি মেনে নিচ্ছি না। মেনে নিতে পারি না, এটা সঠিক না। দ্বিতীয় অভিযোগের ক্ষেত্রে বলব, আমি চার বছর বিজিবি প্রধান এবং তিন বছর সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কেউ যদি একটা প্রমাণ দিতে পারে আমি আমার ভাই বা আত্মীয়কে বিজিবি বা সেনাবাহিনীতে কোনো কন্ট্রাক্ট দিয়েছি, আমি যেকোনো কনসিকোয়েন্স মেনে নিতে প্রস্তুত আছি। আমি আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন, ভাইকে কোনো কন্ট্রাক্ট দেইনি। আমার ভাইদের কারও বিজিবি বা সেনাবাহিনীতে ঠিকাদারি করার জন্য, কন্ট্রাক্ট নেওয়ার জন্য কোনো ধরনের লাইসেন্স আছে কি না খোঁজ নিলেই পেয়ে যাবেন।

গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবেন কি না? জবাবে তিনি বলেন, আমার জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
এর আগে ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টার বাসায় নৈশভোজের পর সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, আলোচনায় ডোনাল্ড লু জানিয়েছে, র‌্যাব অনেক উন্নতি করেছে। এখন তোমাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া উচিত। হোয়াইট হাউজ থেকে এ কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের বিচার বিভাগের একটা প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ চলছে।’ আবার সচিবালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ডোনাল্ড লু’র আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ডোনাল্ড লু বলেছেন, আগে যে ‘জিএসপি’ সুবিধা পেতাম, সেটি তারা (যুক্তরাষ্ট্র) ফিরিয়ে দিতে চায়। সেজন্য আমাদের লেবার পলিসিটা একটু রিভিউ করতে হবে।’

সরকারের এই দাবিকে ‘ভুয়া’ হিসেবে অভিহিত করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল। তিনি বলেন, কথিত বক্তব্য ‘ভুয়া’। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে না। এই দাবিগুলো মিথ্যা। নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হলো আচরণের পরিবর্তন এবং জবাবদিহিতাকে উৎসাহিত করা।

যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হোক। এ লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ২৪ মে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভিসানীতি ঘোষণা করে জো বাইডেন প্রশাসন। দু’মাসের মধ্যে ওই বছরের জুলাই মাসে তা কার্যকর করে। মূলত চারটি কারণে ভিসানীতি দেয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছেÑ ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারচর্চাকে সহিংসতার মাধ্যমে বাধাদান এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড। ভিসানীতি ঘোষণা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে’ এই নতুন নীতি ঘোষণা করা হয়েছে এবং এর লক্ষ্য হচ্ছে ‘যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায়, তাদের সবাইকে সমর্থন’ দেওয়া।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে জানান, পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাদানে দায়ী এবং তাতে সহযোগিতাকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে। যাদের ওপর এই নীতি কার্যকর হবে তারা হলেনÑ বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্য। এসব ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অন্য ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির আওতায় ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন।

এর আগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। পরে তিনি এখন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে অবসর নিয়ে অবৈধভাবে উপার্জিত হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ায় বিতর্কের মুখে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞার আওতায়ও পড়েছেন তিনি। এ ছাড়া র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) বর্তমানে আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দিনাজপুরে আজ রবিবার আগাম ঈদুল আজহা'র নামাজ অনুষ্ঠিত

দিনাজপুরে আজ রবিবার আগাম ঈদুল আজহা'র নামাজ অনুষ্ঠিত

কোকাকোলার বিতর্কিত বিজ্ঞাপন: জীবন-শিমুলকে লিগ্যাল নোটিশ

কোকাকোলার বিতর্কিত বিজ্ঞাপন: জীবন-শিমুলকে লিগ্যাল নোটিশ

নেটিজেনের বিরুদ্ধে ১০০ কোটির মামলা রাবিনার

নেটিজেনের বিরুদ্ধে ১০০ কোটির মামলা রাবিনার

আগে দুই-তিন ঘণ্টা পেটাব, তারপর কথা: বুবলীর হুমকি

আগে দুই-তিন ঘণ্টা পেটাব, তারপর কথা: বুবলীর হুমকি

ফের ডিপফেক ভিডিওর শিকার আলিয়া ভাট!

ফের ডিপফেক ভিডিওর শিকার আলিয়া ভাট!

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে বেবী নাজনীন

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে বেবী নাজনীন

স্কটল্যান্ডকে বিদায় করে ইংল্যান্ডকে নিয়েই সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে বিদায় করে ইংল্যান্ডকে নিয়েই সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়া

উখিয়ায় 'আরএসও' সদস্যকে 'আরসা' সন্ত্রাসীর গুলি করে হত্যা

উখিয়ায় 'আরএসও' সদস্যকে 'আরসা' সন্ত্রাসীর গুলি করে হত্যা

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ৬ ক্যাচ মিস নিয়ে শোরগোল

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ৬ ক্যাচ মিস নিয়ে শোরগোল

মাঠে নেমেই ইয়ামালের ইতিহাস

মাঠে নেমেই ইয়ামালের ইতিহাস

৯ জনের মায়ামির নাটকীয় জয়

৯ জনের মায়ামির নাটকীয় জয়

'বৃষ্টি' ও নামিবিয়াকে হারিয়ে সুপার এইট স্বপ্ন উজ্জ্বল করল ইংল্যান্ড

'বৃষ্টি' ও নামিবিয়াকে হারিয়ে সুপার এইট স্বপ্ন উজ্জ্বল করল ইংল্যান্ড

শুরুর ধাক্কা সামলে ইতালির স্বস্তির জয়

শুরুর ধাক্কা সামলে ইতালির স্বস্তির জয়

২৩ সেকেন্ডেই জালের দেখা! ইউরোর দ্রুততম গোলের রেকর্ড

২৩ সেকেন্ডেই জালের দেখা! ইউরোর দ্রুততম গোলের রেকর্ড

ইয়ামাল-কারভাহালের দুই 'বিপরীত' মাইলফলকের রাত

ইয়ামাল-কারভাহালের দুই 'বিপরীত' মাইলফলকের রাত

মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে শুভসূচনা স্পেনের

মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে শুভসূচনা স্পেনের

পশুবাহী গাড়ি আটকে চাঁদাবাজির অভিযোগে পাঁচ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

পশুবাহী গাড়ি আটকে চাঁদাবাজির অভিযোগে পাঁচ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

সিলেট বিভাগের ১০ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ

সিলেট বিভাগের ১০ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ

ঈদুল আযহা উপলক্ষে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর ৫ দিন বন্ধ থাকবে

ঈদুল আযহা উপলক্ষে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর ৫ দিন বন্ধ থাকবে

লালমনিরহাটে তিস্তার নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে, বন্যার আশংখা

লালমনিরহাটে তিস্তার নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে, বন্যার আশংখা