ব্রিটিশবিরোধী প্রথম বিপ্লবী সেনানী হাবিলদার রজব আলী খাঁ দিবস আজ
১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
ব্রিটিশ বেনিয়ার শাসন-শোষণ-নিপীড়ন বিরোধী প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী অবিস্মরণীয় মহানায়ক ও মহাবিপ্লবী সৈনিক হাবিলদার রজব খাঁ দিবস আজ সোমবার। ১৮৫৭ সালের ১৮ নভেম্বর এই দিনে বিদ্রোহী ব্রিটিশ সেনানী হাবিলদার রজব আলীর অস্ত্র গর্জে ওঠে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের সময় ব্রিটিশ রেজিমেন্টের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ কোম্পানিগুলো চট্টগ্রামে মোতায়েন ছিল। ১৮ নভেম্বর রাতে এই তিনটি কোম্পানি একযোগে বিদ্রোহী হয়ে উঠে। হাবিলদার রজব আলী খাঁ এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। ১৮৫৭ সালের ১৮ নভেম্বর বিদ্রোহীরা রাত ৯ টার দিকে অনবরত গুলি বর্ষণ করে বিদ্রোহের জানান দেন। চট্টগ্রামে সংঘবদ্ধ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন রজব আলী খাঁন। হাবিলদার রজব আলী ৩৪ নম্বর নেটিভ বেঙ্গল পদাতিক বাহনীর বিপ্লবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। সাথে ছিলেন আরেক সিপাহী জামাল খান।
তারা একযোগে প্রথমেই জেলের তালা ভেঙে আটক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মুক্ত করেন। বিদ্রোহীরা আন্দরকিল্লা ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদ কম্পাউন্ডে আশ্রয় নেন। বিদ্রোহের ডামাডোলে চট্টগ্রামে থাকা ব্রিটিশরা আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে গিয়ে সমুদ্রে জাহাজে আশ্রয় নেন। ঐতিহাসিকদের মতে হাবিলদার রজব আলী খাঁ’র নেতৃত্বে বিদ্রোহ বা বিপ্লব এতটাই তীব্র ছিল যে চট্টগ্রাম প্রায় ত্রিশ ঘণ্টা ব্রিটিশ শাসনমুক্ত রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে হাবিলদার রজব আলী খাঁ’র নেতৃত্বে সৈনিকরা চট্টগ্রাম নগরীর কেন্দ্রস্থল ঐতিহাসিক প্যারেড গ্রাউন্ডে জমায়েত হন। বিদ্রোহের সময় গুলি বিনিময়কালে বহু বিপ্লবী সিপাহী শহীদ হন, যাদের কবর দেয়া হয় ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের আঙ্গিনায়। পরে মসজিদ সম্প্রসারণের সময় তা সরিয়ে নেয়া হয়।
হাবিলদার রজব আলী খাঁ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব, বিদ্রোহ বা উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনে চট্টগ্রামের বীর সিপাহসালার। তার নেতৃত্বে সিপাহী বিপ্লবের গৌরবময় অধ্যায়কে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। কালের আবর্তে তিনি হারিয়ে যাচ্ছেন। হাবিলদার রজব আলী খাঁ এক অবহেলিত নাম। নতুন প্রজন্ম জানেনা আজাদী সংগ্রামের রোমাঞ্চকর ইতিহাস। একটা বীরের জাতিকে পদানত করতে হলে তাকে প্রথম তার গৌরবগাঁথা ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হয়।
এ জন্যই বিপ্লবী চট্টলার ইতিহাস ধামাচাপা দেয়া হয়েছে অনাদিকাল থেকে। হাবিলদার রজব আলী খাঁ আমাদের ইতিহাসের এক অনিবার্য নাম। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, সারা দেশে রজব আলী খাঁ’র সাহস ও কীর্তিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। হাবিলদার রজব আলী খাঁ দেশপ্রেমিক বাঙ্গালী সিপাহীদের নিয়ে চট্টগ্রাম কারাগার ভেঙে বন্দীদের উদ্ধার, ট্রেজারি ও অস্ত্রাগার দখল করে সোনাদানা ও বিপুল পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র কব্জা এবং বীর বিক্রমে ব্রিটিশ সৈন্যদের সাথে যে লড়াই করেন, তা ছিল কল্পনাতীত ও রোমাঞ্চকর।
১৭৬৩ সালের ফকির বিদ্রোহ, ১৭৬৭ সালে ফেনীতে শমশের গাজীর বিদ্রোহ, ১৭৬৯ সালে সন্দ্বীপে কৃষক বিদ্রোহ, ১৭৮৩ সালে রংপুরের নুরুদ্দীনের বিদ্রোহ, ১৭৭৫ সালে করমশাহর বিদ্রোহ, ১৮১৯ সালে ফের সন্দ্বীপে কৃষক বিদ্রোহ, ১৮৩১ সালে তিতুমীরের বিদ্রোহ, ১৮৩৮ সালে ফরিদপুরে ফরাজীদের অভ্যুত্থান এবং ১৮৫৭ সালে রজব আলী খাঁ’র নেতৃত্বে সিপাহী বিদ্রোহ ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাংলার মুসলমানদের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়েছিল। এরই ধারাবাহিক বিদ্রোহ, বিপ্লব এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী বহু মহানায়কের নাম হারিয়ে গেছে। এমনই ইতিহাসের পাতায় বিলুপ্তপ্রায় বীর সেনানী বিপ্লবী যোদ্ধার নাম হাবিলদার রজব আলী।
কোন কোন গবেষকের ধারণা, হাবিলদার রজব আলী খাঁ সন্দ্বীপের বাসিন্দা ছিলেন। কারো মতে, তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ার হাইদগাঁও কিংবা লোহাগাড়া ও দোহাজারীর অধিবাসী ছিলেন। রজব আলী বিদ্রোহের আগে ৪ নম্বর কোম্পানীর হাবিলদার পদে উত্তীর্ণ হন। ইংরেজ সেনাবাহিনীর ৩৪ নম্বর নেটিভ বেঙ্গল পদাতিক বাহিনীর ১২০ জন হাবিলদার ছিলেন। রজব আলী ছিলেন তাদের একজন। ক্যাপ্টেন পিএইচকে ডিউলের অধীনে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী সংলগ্ন প্যারেড গ্রাউন্ডের সেনানিবাসে তার আবাস ছিল। যেখানেই রজব আলীর খাঁ’র জন্ম অথবা মৃত্যু হোক তিনি চট্টগ্রামের বিপ্লবী বীর হিসেবে সম্মানিত। ১৮৫৭ সালে ভারতবর্ষে সিপাহী বিদ্রোহে তার অগ্রণী ভূমিকা অবিস্মরণীয়।
বিশিষ্ট লেখক, আইনবিদ, মানবাধিকার সংগঠক কর্মী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেছেন, নতুনপ্রজন্ম জানেনা আমাদের ধারাবাহিক আজাদী সংগ্রামের গৌরবময় ও রোমাঞ্চকর ইতিহাস। কোন বীরের জাতিকে পদানত করতে হলে তাকে প্রথমে তার গৌরব গাঁথা ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হয়। বিপ্লবী চট্টলার ইতিহাস ধামাচাপা দেয়া হয়েছে অনাদিকাল থেকে। হাবিলদার রজব আলী খাঁ আমাদের ইতিহাসের এক অনিবার্য নাম।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশপ্রতিষ্ঠার অর্ধ শতাব্দি অতিক্রম হলেও রজব আলীর খাঁ’র মত অসীম সাহসী বীরদের এখনো আমরা রাষ্ট্রীয় সম্মান দিতে পারিনি। জাতি হিসাবে এটি আমাদের নিদারুণ ব্যর্থতা।প্রতি বছর ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের প্যারেড মাঠে কুচকাওয়াচের মাধ্যমে হাবিলদার রজব আলী খাঁ দিবস পালন করা সম্ভব। মাঠটির নাম হাবিলদার রজব আলী খাঁ ময়দান নামকরণের প্রস্তাবটিও বিবেচনার দাবি রাখে। আমাদের জাতিসত্বার মহানায়করা বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে গেলে স্বাধীন স্বকীয় জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। #
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়
‘হাই অ্যালার্টে’ লন্ডন, মার্কিন দূতাবাসের সামনে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ