ঢাকা   সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
খালেদা জিয়াকে হেনস্তাকারী সেই নাজমুছ সাদাত কোথায়?

স্বাধীনতার ঘোষকের স্মৃতিময় বাড়ি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি

Daily Inqilab পঞ্চায়েত হাবিব

২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত’। ২২ নভেম্বর ইনকিলাবে ‘যার হাসিতে হেসে উঠেছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে হাজারো পাঠক লাইক, শেয়ার, কমেন্ট করেছেন। সেদিনের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৪ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ‘বেগম খালেদা জিয়াময়’ হয়ে উঠেছিল। সেই আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এক কাপড়ে বের করে দেয়া হয়েছিল ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের ৬ নম্বর বাড়ি থেকে। স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িতে থাকতেন বেগম খালেদা জিয়া তার দুই পুত্র সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে নিয়ে। তিনবার প্রধানমন্ত্রী ও দুইবার জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেত্রী হলেও তিনি গণভবনে যাননি, স্বামীর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িতেই থাকতেন। ভারতের সাজানো নির্বাচনে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে দিল্লির পাপেট শেখ হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে জোরপূর্বক এক কাপড়ে বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে বের করে দেন। এ সময় বেগম খালেদা জিয়ার বেডরুমের দরজা ভাঙচুর ও দুর্ব্যবহার করা হয়। শেখ হাসিনার নির্দেশে তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর আস্থাভাজন নাজমুছ সাদাত সেলিম (তৎকালীন ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার) এ ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেন । তিনিই গত ২০১০ সালের ১৪ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করেন। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্য, পুলিশ ও র‌্যাব খালেদা জিয়ার বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা বাড়ির ভেতর ও বাইর থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বেগম জিয়াকে বের হয়ে আসতে বলেন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। খালেদা জিয়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ায় তার রুমে প্রবেশ করে তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গুলশান কার্যালয়ে দেয় হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর অত্যন্ত আস্থাভাজন সাবেক এপিডি নাজমুছ সাদাত সেলিম। এছাড়া সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা লে: জেনারেল (অব.) শেখ মামুন খালেদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন সেনাকর্মকর্তা এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন। তাদের শেখ হাসিনা সরকার পদোন্নতি দিয়েছেন তা তদন্ত করলে তাদের নাম বেরিয়ে আসবে বলে বিএনপির অভিযোগ রয়েছে। তবে খালেদা জিয়া এর বিরুদ্ধে আপিল করেন কিন্তু আপিলের শুনানি হওয়ার আগেই জোরপূর্বক এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ দিকে সাবেক এপিডি নাজমুছ সাদাত সেলিমকে ওএসডি করা হলেও তার অপরাধের বিরুদ্ধে শাস্তি বা মামলা করা হয়নি।

এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর সেই সময়ের সরকার ইজারা দলিলের মাধ্যমে ১৯৮১ সালের ১৩ জুন খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের ১৬৫ কাঠা জমির ওপর বাড়িটি দিয়েছে। বর্তমান সরকার চাইলে সেই আইনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের নামে খালেদা জিয়াকে বাড়ি দিতে পারে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক এ বি এম আব্দুস সাত্তার ইনকিলাবকে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমান নিহত হওযার পর সেই সময়ের সরকার ইজারা দলিলের মাধ্যমে ১৯৮১ সালের ১৩ জুন খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের ১৬৫ কাঠা জমির ওপর বাড়িটি দিয়েছে। বর্তমান সরকার চাইলে সেই আইনে আবারো সাবেক প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের নামে খালেদা জিয়াকে বাড়ি দিতে পারে। কারণ তিনি একজন মহান স্বাধীনতার ঘোষক. সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। খালেদা জিয়ার বেডরুমের দরজা ভাঙচুর এবং তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা কর্মকর্তা তৎকালীন ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারিক সিদ্দিকীর অত্যন্ত আস্থাভাজন নাজমুছ সাদাত সেলিম জনপ্রশাসনের অতিরিক্ত সচিব পদে বদলি হয়ে এপিডির দায়িত্ব পালন করেন। এ পদকে পুঁজি করে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য শুরু করেন। নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য করে ১২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। অন্যদিকে বিএনপিপন্থি অফিসারদের সচিবালয় থেকে বদলি করে বিভিন্ন জেলায় দিয়েছেন। আবার যারা পদোন্নতির যোগ্য ছিলেন তাদের বাধ্যতামূলক অবসর পাঠিয়ে দিতে কাজ করছেন তৎকালীন ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারিক সিদ্দিকীর অত্যন্ত আস্থাভাজন নাজমুছ সাদাত সেলিম। ওই সময় পুলিশ পাহারায় বাড়ি ছাড়েন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি প্রথমে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে যান, সেখান থেকে রাতে যান বারিধারায় তাঁর ভাই সাঈদ ইস্কান্দারের বাসায়। সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মরহুম খন্দকার দেলোয়ার হোসেন দাবি করেন, খালেদা জিয়াকে জোর করে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ওই সময় তাঁর বাড়ি ভাঙচুরও করা হয়। খন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হয়। পরে খালেদা জিয়া রাতে সাংবাদিকদের জানান, তাকে জোর করে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তাঁর বেডরুমের দরজা ভাঙচুর এবং তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়।

জানা গেছে, সামরিক অভ্যুত্থানে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমান নিহত হওযার পর সেই সময়ের সরকার ইজারা দলিলের মাধ্যমে ১৯৮১ সালের ১৩ জুন খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের ১৬৫ কাঠা জমির ওপর বাড়িটি দেওয়া হয়। গত ২০০৯ সালের ২০ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেয় সামরিক ভূমি ও ক্যান্টনমেন্ট অধিদফতর। পরে আরো দু’বার নোটিশ দেওয়া হয়। যার সব চিঠিতে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারিক সিদ্দিকীর অত্যন্ত আস্থাভাজন নাজমুছ সাদাত সেলিম। পরে খালেদা জিয়া ওই নোটিশকে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করলে আদালত তাঁর আবেদন খারিজ করে নোটিশকে বৈধ বলে ঘোষণা করে। এক মাসের মধ্যে তাকে ক্যন্টনমেন্টের বাড়ি ছাড়ারও নির্দেশ দেন আদালত। এই এক মাস শেষ হয়ে যায় শুক্রবার। খালেদা জিয়া এর বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ করেছেন। কিন্তু বাড়ি ছাড়ার আদেশের ওপর কোনো স্থগিতাদেশ দেননি আদালত। তারপর তৎকালীন ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারিক সিদ্দিকীর অত্যন্ত আস্থাভাজন নাজমুছ সাদাত সেলিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাড়ি ভাঙার দায়িত্ব পালন করেছেন। ৪০ বছর পর স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার এই বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে নির্দয়ভাবে উচ্ছেদ করেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে উচ্ছেদ প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত অপমানজনক। ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের করে দেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। বল প্রয়োগ করে বাড়ির ফটক ও শয়নকক্ষের দরজা ভেঙে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সেনানিবাস থেকে বের করে দেয়াই ছিল হাসিনার মূল উদ্দেশ্য। গত ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে অভিষেক শুরু হয় হাসিনার। সে সময়ই সেনা হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে এপ্রিলে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। বিষয়টি গড়ায় আদালতে। সকল আইন ও নিয়মনীতি অমান্য করে শেষ পর্যন্ত বাড়িছাড়া করেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে নৈরাশ্যবাদী হাসিনা চরিতার্থ করেন দীর্ঘ দিনের লালিত প্রতিহিংসা। খালেদামুক্ত করেন সেনানিবাস। কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস! এক যুগের ব্যবধানে খালেদা জিয়া ঠিকই সসম্মানে ফিরেছেন সেনানিবাসে। সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তিনি। অপরদিকে গণঅভ্যুত্থানের মুখে শুধু গণভবন নয়, দেশছাড়া হয়েছেন হাসিনা। অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্র্রীয় অনুষ্ঠানটিতে খালেদা জিয়ার আতিথ্য গ্রহণের বিষয়টি পরিণত হয়েছে ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’। রাষ্ট্র বিরল সম্মান প্রদর্শন করেছে বয়োবৃদ্ধ আপোষহীন এই নেত্রীকে। ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে জেল-জুলুম ও চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন খালেদা জিয়া। শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে সেনাকুঞ্জে স্বাগত জানান তিন বাহিনীর প্রধান। খালেদা জিয়ার প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অভাবনীয় বিনয় ও সম্মান প্রদর্শন গর্বিত করেছে গোটা জাতিকে। প্রশংসিত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের আচরণও, যা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য বহন করছে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। অনুষ্ঠানে প্রথম সারিতে পাশাপাশি আসন ছিল ড. ইউনূস ও খালেদা জিয়ার। তারা পারস্পরিক কুশল বিনিময় করেন একজন ডাইনে ঝুঁকে, অপরজন বাঁয়ে বেঁকে। দু’জনের সৌজন্যভরা অন্তরঙ্গ এই দৃশ্যটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দৃশ্যটি রাজনীতিকদের জন্য শিক্ষণীয় হবে এমনটিই প্রত্যাশা দেশবাসীর।

উচ্ছেদ যেভাবে করা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয় বিডিআর সদর দফতর পিলখানায়। সুপরিকল্পিতভাবে দেশের সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ৫৭ জন মেধাবী সেনা অফিসারকে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের আসল ঘটনা চাপা দিতে সরকার ইস্যু করে অনেকগুলো নন-ইস্যুকে। তারই অংশ হিসেবে সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেয় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে দীর্ঘ ৪০ বছরের বসতবাড়ি ছেড়ে দিতে বেঁধে দেয়া হয় সময়সীমা। সর্বশেষ জিয়া পরিবারের সেনানিবাসস্থ শহীদ মইনুল রোডের বাড়ির ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার। অত্যন্ত কৌশলে তারা কটাক্ষ করতে থাকেন মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে। উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে তার স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার। অশালীন উক্তি করেন বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কেও। শহীদ জিয়ার স্মৃতি বিজড়িত সেনানিবাসের বাড়ি থেকে তার পরিবারকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত ছিল হিংসাত্মক। ১৯৭২ সালে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই শহীদ মইনুল রোডের বাড়িতে সপরিবারে উঠেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এ বাড়ি থেকেই সিপাহি-জনতা তাকে মুক্ত করে অংশীদার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার। এরপর সেনাপ্রধান, সরকারপ্রধান, এমনকি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পরও আমৃত্যু এই বাড়িতে ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জননন্দিত প্রেসিডেন্ট জিয়া। বাড়িটির প্রতিটি ইট, বালু-কণা শহীদ জিয়ার স্মৃতিধন্য। ১৯৮১ সালের ৩০ মে কতিপয় বিপথগামী সেনাকর্মকর্তার হাতে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে শাহাদাত বরণ করেন জিয়া। তার মরদেহ সেনানিবাসের বাড়িতেই নিয়ে যাওয়া হয় প্রথমে। প্রশ্নাতীত দেশপ্রেম, সততা, নির্মোহতা ও নিষ্ঠার কারণে জিয়ার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। অতিশয় সাদামাটা জীবনযাপনকারী জিয়ার শাহাদাত বরণের পর তার নিঃস্ব পরিবারের ছিল না মাথা গোঁজার ঠাঁই। সে সময় দেশের মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও জিয়ার প্রতি ভালোবাসার কারণেই তৎকালীন সরকার ১৯৮২ সালে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে জিয়া পরিবারকে বরাদ্দ দেয় সেনানিবাসের বাড়িটি। শহীদ জিয়ার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্র স্বপ্রণোদিত হয়েই তার অসহায় পরিবারকে বাড়িটি বরাদ্দ দেয়। খালেদা জিয়া কারো নিকট আবেদন-নিবেদন করে নেননি বাড়িটি। শহীদ জিয়ার স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে বেগম খালেদা জিয়া তার দু’সন্তানকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন এই বাড়িতে। তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরও এই বাড়ি ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী ভবনে উঠেননি তিনি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এ বাড়িতেই অন্তরীণ রাখা হয় তাকে। এক-এগারো পরবর্তী সময়ে এ বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয় তাকে এবং তার দুই পুত্রকে।

গত ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হাসিনার শ্যেন দৃষ্টি পড়ে বাড়িটির ওপর। তখন থেকেই বাড়িটি ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায় আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু তাতে সফল না হওয়ায় ২০০১ সালের ২ জুলাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধানমন্ডিতে শেখ রেহানার নামে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেয়। দখলী স্বত্ব নিয়ে জটিলতা থাকায় পরবর্তীতে বাড়িটির বরাদ্দ বাতিল করে দেয় বিএনপি সরকার। শেখ হাসিনা নিজে ১ টাকা মূল্যে রাষ্ট্রীয় আইকন গণভবন খরিদ করে নেয়ার উদ্যোগ নিলে তা ভণ্ডুল হয়ে যায় গণপ্রতিবাদের মুখে। গণভবন হারানোর দুঃখবোধ থেকেই শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেন, চেষ্টা করেন অন্তর্জ্বালা নিবারণের জন্য। শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেন, খালেদা জিয়া বাড়িটি ছেড়ে দিলে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শহীদ পরিবারদের সেখানে ফ্ল্যাট তৈরি করে দেয়া হবে। একটি শহীদ পরিবারকে উৎখাত করে অন্য শহীদ পরিবারকে সেখানে পুনর্বাসন করার চিন্তা শুধু অযৌক্তিকই নয়, অনৈতিকও বটে। সরকার একবার বলে, খালেদা জিয়ার বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে অবৈধভাবে। আবার বলে তার নামে বরাদ্দকৃত বাড়িটির শর্ত বরখেলাপ করেছেন তিনি। একেকবার একেক ধরনের কথা বলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এই বাড়ি ছাড়া সেনানিবাস এবং ৫৬ হাজার বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশে আর কোথাও কি কোনো জায়গা ছিল না পিলখানা শহীদদের ফ্ল্যাট তৈরির জন্য? খালেদা জিয়ার বাড়িটিই কেন বেছে নেয়া হলো? সেনানিবাসে থেকে রাজনীতি করা যাবে না এমন কোনো আইন বাংলাদেশের সংবিধানে নেই।
অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই বছর ১ এপ্রিল লিখিত প্রশ্নোত্তরে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছিলেন ১৯৮২ সালের ১৯ মার্চ এবং ২৫ মে অনুষ্ঠিত তৎকালীন মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়ার ও দু’পুত্রের জন্য শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি ২.৭২ একর জমিসহ ১ টাকা প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বার্ষিক ১ টাকা হারে খাজনা প্রদানের শর্তে বরাদ্দ দেয়া হয়। এ ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্যের মধ্য দিয়েই বোঝা যায় হাসিনার হীন উদ্দেশ্য কি ছিল। প্রতিরক্ষা বাহিনীর উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে এক কাপড়ে বের করে দেয়া হয়েছিল। তার সেই স্মৃতিবিজড়িত জায়গাটি নিয়ে এমন কিছু পদক্ষেপ নেন যাতে তিনি তার ক্ষত সারিয়ে নিতে পারেন। এবং দেশবাসীও যাতে মনে করে খালেদা জিয়ার প্রতি যে অন্যায়-অবিচার হয়েছে তার কিছুটা হলেও যাতে প্রতিকার হয়। খালেদা জিয়া এদেশের সূর্য সৈনিক। তিনি সামরিক বাহিনীর ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রী। তিনি সেনা দিবসে ক্যান্টমেন্ট যাবেন এটাই স্বাভাবিক।

সাবেক বিএনপির মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ারের অভিযোগ খালেদা জিয়াকে জোর করে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। মধ্যরাত থেকে উত্তেজনার মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ঢাকা সেনানিবাসের মইনুল সড়কের বাড়ি থেকে গাড়িতে তুলে গুলশানের কার্যালয়ে দেয়।

সাভারের সেই সাবেক এসি ল্যান্ড শরিফুজ্জামান। এদিকে গত ২০১০ সালের ৪ আগস্ট ঢাকার সাভারে অবস্থিত বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং মরহুম আরাফাত রহমানের ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। সেখানে থাকা ৮/১০টি দোকান ভাঙচুর করে জমিটি টাঙ্গাইল আওয়ামী লীগের এক নেতাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। গোটা ঘটনাটি ঘটান সাভারের তৎকালীন এসি ল্যান্ড মো. শরিফুজ্জামান (১৫৫২৪)। ২৪ বিসিএসের এই কর্মকর্তার (বিএনপির আমলে চাকরি) বাড়ি ঝিনাইদহে। এ ঘটনায় সাভারের আলোচিত এসি ল্যান্ড শরিফুজ্জামানের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, যা মিডিয়াতে ছাপা হয়। বর্তমানে এ কর্মকর্তা ভূমি আপিল বোর্ডে বদলি হয়ে আছেন। তারপর থেমে নেই। বর্তমান সরকার বিরোধী কাজকর্মে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’
জয়সওয়াল-কোহলিতে পিষ্ট অস্ট্রেলিয়া
আরও

আরও পড়ুন

গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত

গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত

কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের

কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা

হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন

হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন

শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা

শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত

পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে

পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন

মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু

মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন

ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা

ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা

বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা

বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা

কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ

কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ

হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার

হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার

ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি

ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা

সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা