সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ
১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম
বাংলাদেশ আর ভারতের মধ্যে বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম চার হাজার ১৫৬.৫৬ কিলোমিটার সীমান্ত। দীর্ঘ এ সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকা সমতল ভূমি হলেও হত্যাকা-ের দিক থেকে দুদেশের সীমান্ত ভয়ঙ্কর। সীমান্তের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী (বিএসএফ) মানেই যেন খুনি। প্রতিদিনই সীমান্তের কোনো না কোনো এলাকায় নিরাপত্তার নামে বাংলাদেশি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটছেই। দিল্লির ‘নাচের পুতুল’ শেখ হাসিনার শাসনামলে এ হত্যাকা- নিয়ে বাংলাদেশ উচ্চবাচ্য করেনি; বরং চোরাচালানিরা মারা গেছে প্রচার করত। কিন্তু ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। সীমান্তে বিএসএফ কিছু করার চেষ্টা করলেই তা প্রতিহত করছে বাংলাদেশের সীমান্তের সাধারণ মানুষ। বিজিবির প্রহরার সঙ্গে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ মানুষ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একাট্টা হয়ে উঠেছেন। ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল কুড়িগ্রামের রৌমারীর বরইবাড়ি সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত যুদ্ধে আম-জনতার সহায়তায় বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে; সেই চেতনা বুকে ধারণ করে ফের জেগে উঠেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার লাখ লাখ বাংলাদেশি জনতা। বিএসএফ অপকর্ম করলে এখন আর পতাকা বৈঠক আর কেতাবি ভাষায় প্রতিবাদ নয়; এখন থেকে তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে বিএসএফ একজন পাকিস্তানিকে হত্যা করলে জবাবে পাকিস্তান দু’জন ভারতীয় হত্যা করে; বাংলাদেশও তেমনি কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।
ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা পালিয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেয়ার পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে শীতল সম্পর্ক বিরাজমান। যেমন সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল ২০০১ সালে রৌমারী সীমান্তে ১৮ ভারতীয় জওয়ানকে ধরাশায়ী করার পর। দু’দেশের সীমান্তে ভারত নানাভাবে দাদাগিরি করার অপচেষ্টা করছে। রৌমারীর বরইবাড়িতে পরাজয়ের পর ২০০৯ সালে পিলখানায় হত্যাকা-ের নেপথ্যে থেকে প্রতিশোধ নেয় ভারত। দিল্লির ইন্ধনে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে বিজিবি করার পর থেকেই মূলত এ অবস্থা চলছে। গত ১৫ বছর সীমান্তে বিএসএফ বাঘের ভূমিকায় থাকলেও বিজিবি ছিল ভেজা বিড়ালের মতোই। শেখ হাসিনা কার্যত বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বিএসএফের তাঁবেদারে পরিণত করে। কেন্দ্রের নির্দেশনার কারণে বিজিবির সদস্যরা সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে ১৫ বছর প্রতিরোধ গতে তুলতে পারেনি। এখন দিন পরিবর্তন হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সীমান্তের বিভিন্ন স্পটে বিজিবির সঙ্গে স্থানীয় মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। সে কারণে অন্যায়ভাবে নো-ম্যানস ল্যান্ডে কাঁটাতারের বেড়া এবং স্থাপনা নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন বাংলাদেশিরা। গণহত্যা করে পালিয়ে যাওয়া হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দেয়ার পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে ভারত; ফলে ভারতের বিরুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে ১৮ কোটি মানুষ দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা ভাগাভাগি মূলত চার হাজার ১৫৬.৫৬ কি.মি। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ দুই হাজার ২১৭ কি.মি, আসাম ২৬২ কি.মি, ত্রিপুরা ৮৫৬ কি.মি, মিজোরাম ১৮০ কি.মি, মেঘালয় ৪৪৩ কি.মি। এই সীমান্ত এলাকার বেশ কয়েকটি স্পটে ভারত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। প্রতিটি সীমান্তের আশপাশের গ্রামের মানুষ হন্তারক বিএসএফকে প্রতিহত করতে একাট্টা হয়েছে। নো-ম্যানস ল্যান্ডে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার চেষ্টা প্রতিহত করছে। বিজিবিতে চাকরি করেছেন এমন কয়েকজন জানান, এক সময় বিডিআরের ১০ জন সদস্য বিএসএফের ১০০ জনকে প্রতিহত করত। বিএসএফ আমাদের ভয়ে আতঙ্কে থাকত। হাসিনা রেজিমে সীমান্তে বিএসএফের বিরুদ্ধে বিজিবি ছিল নীরব দর্শক। কিন্তু সরকার যদি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে তাহলে বিএসএফের সদস্যরা বাড়াবাড়ি করলে তাদের রৌমারীর পরিণতি বরণ করতে হবে।
২০২৪ পরবর্তী বাংলাদেশকে আর কেউ গোলামির জিঞ্জিরে বন্দি করতে পারবে না। দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়। প্রিয় মাতৃভূমির এক চুল মাটিও কাউকে ছুঁতে দেয়া হবে না। এই বাংলা আমার অহঙ্কার। নিজের সেই অহঙ্কার, অস্তিত্ব ধরে রাখতে আগে-পিছে না ভেবে বিজিবির সাথে নেমে পড়েন শত শত গ্রামবাসী। হাতে কাস্তে আর পরনে লুঙ্গি নিয়ে তীক্ষ্ম রক্তচক্ষু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দিকে। যেন বাংলাদেশ নামের প্রিয় মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকালেই সব শেষ করে ফেলবে এ দেশের সাধারণ মানুষ। মাতৃভূমির প্রতি সাধারণ মানুষের এত প্রেম, এত ভালোবাসার শক্তিই বিজিবির অনুপ্রেরণা।
গত চার দিন আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের চেষ্টা করে বিএসএফ। এ সময় স্থানীয় কৃষক-দিনমজুরসহ সর্বস্তরের শত শত সাধারণ দেশপ্রেমিক বাংলাদেশি প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। সীমান্তের সাধারণ মানুষ লাঠি, রামদা, কাস্তের মতো অস্ত্র হাতে ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দিয়ে বিজিবির জওয়ানদের পাশে দাঁড়ায়। একই সাথে সীমান্তে ব্যাংকার করতেও কঠোর পরিশ্রম করেন তারা। ভারত সাময়িক কাঁটাতারের বেড়া দেয়া বন্ধ করলেও টানা চারদিন উত্তেজনার পর শুক্রবার থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে জনজীবন। এদিকে সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সর্তক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি-বিএসএফ সদস্যরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে বাংলাদেশি সাধারণ মানুষ যে দেশপ্রেম দেখিয়েছেন তা যেন পুরো দেশেরই প্রতিচ্ছবি। এ ঘটনায় ২০০১ সালের ১৬ থেকে ২০ এপ্রিল, প্রায় টানা পাঁচদিন ধরে ভারতের বিএসএফ ও বাংলাদেশের বিডিআরের (তখন বিজিবির নাম এটাই ছিল) মধ্যে যে সঙ্ঘাত হয়েছিল তা মনে করিয়ে দেয়। সীমান্তে বিজিবির মূল শক্তির উৎস সাধারণ মানুষ। বিজিবিকে এটি মাথায় রেখে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় অংশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করার চেষ্টা করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্গন করে। এতে করে বিজিবি, বিএসএফ এবং উভয় দেশের স্থানীয় জনতার মধ্যে টানাপড়েন বা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ-ভারত দুই দিকেই গ্রামের মানুষজন জড়ো হয় সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে। বাংলাদেশ অংশে বেশি সংখ্যক লোকজন জড়ো হয়েছে, অন্যদিকে ভারত অংশে কিছু মানুষকে লাঠি, রামদা, কাস্তের মতো অস্ত্র হাতে স্লোগান দিতেও দেখা যায়। তখন বাংলাদেশের মানুষ ‘আল্লাহু আকবার’ বলে জবাব দেয়।
বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শূন্যরেখা বরাবর দুই দেশের অন্তত দেড়শ’ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে দুই দিকের সম্মতির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ-ভারতের ১৯৭৫ সালের নীতিমালা অনুযায়ী সীমান্ত লাইন নির্ধারিত হওয়ার পর লাইনের উভয় পাশে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো পক্ষই স্থায়ী বা অস্থায়ী সীমান্ত রক্ষী বা সশস্ত্র কর্মী রাখবে না এবং উভয় পাশে ১৫০ গজের মধ্যে (মোট ৩০০ গজ এলাকায়) কোনো প্রতিরক্ষামূলক কাঠামো, যেমন পরিখা বা অন্য কিছু থাকলে সেগুলো ধ্বংস বা ভরাট করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিবির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তের অপর পারে ভারতের মালদহ জেলার বৈষ্ণবনগর থানার সুকদেবপুর এলাকায় বেড়া নির্মাণের তৎপরতা দেখা যায়। সীমান্তের এক হাজার ২০০ গজের মতো অংশে কোনো কাঁটাতারের বেড়া ছিল না এবং সেই বেড়া তৈরির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ভারতের অভ্যন্তরে ১০০ গজ ভেতরে মাটি খোঁড়া হচ্ছিল। নিয়ম অনুযায়ী সীমান্ত লাইন থেকে দেড়শ’ গজের মধ্যে কিছু করা হলে সেটি অপর পাশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সঠিক নিয়ম মেনে অবহিত করতে হয়, যেটি এক্ষেত্রে ভারতের বিএসএফ বাংলাদেশের বিজিবিকে জানায়নি। এ ঘটনায় দুই দফায় রোববার ও সোমবার দুই দেশের বাহিনীর পতাকা-বৈঠক হলেও ফের নির্মাণকাজ শুরু করে বিএসএফ। মঙ্গল ও বুধবার ব্যাপকহারে বাংলাদেশের সীমান্তে সাধারণ মানুষের জমায়েত বেড়ে যায়। এর সময় ব্যাপক উত্তেজনার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরে বৃহস্পতিবার ভারত নির্মাণকাজ বন্ধ করে। তবে ভারতের পক্ষে বিএসএফ সেখানকার স্থানীয় লোকজন জড়ো করলেও তা সংখ্যায় ছিল অনেক কম।
৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া ইনকিলাবকে জানান, বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা সীমান্ত ঘেঁষে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করলে বিজিবির পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়। এরপর সোমবার ও মঙ্গলবার উভয় পক্ষের মধ্যে পতাকা বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি। তবে পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। দুই দেশের বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা যেমন বিজিবির দায়িত্ব, তেমনি সবার দায়িত্ব। আমরা দেশের সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে দায়িত্ব পালন করছি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিলের কয়েকজন ব্যবসায়ী ইনকিলাবকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবির সঙ্গে হাজারো বাঙালি পাশে এসে দাঁড়ায়। অথচ এটি রাজনৈতিক দলের ভূমিকা রাখা দরকার ছিল। বিএনপি-জামায়াতসহ কোনো রাজনৈতিক দলের এ নিয়ে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। রাজনৈতিক ইন্ধন ছাড়াই দেশের মানুষ ভূমি রক্ষার্থে বিজিবির পাশে এসে দাঁড়ায়। আর এতে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে কোটি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমর্থন জানায়। এ ঘটনায় রাজনৈতিক দলের ভূমিকা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তারা আরো বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণ জনতার সাহসীকতার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, হাজার হাজার বাঙালি বলতে থাকেন ‘জীবন দেবো, তারপরও আমাদের কোনো ভূমি দেবো না’। ‘রক্ত দিয়ে হলে আমাদের ভূমি রক্ষা করব’। নেটিজেনরা বলেন, এই দেশ এখন হাসিনার দেশ নয়। এই দেশ এখন ১৮ কোটি মানুষের। গত ১৬ বছরে হাসিনা ভারতের গোলামি করেছে। এখন আর গোলামির সময় নেই। কাজেই অন্যায়ভাবে আমাদের কাছে ভারত কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে পারবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাফিজুর রহমান রুবেল নামে একজন লিখেছেন, ‘এটিই দেশপ্রেম। স্যালুট বীর যোদ্ধাদের। প্রিয় মাতৃভূমির জন্য সব কিছু করতে পারে এ দেশের মানুষ। এই ভূখ-ের এক ইঞ্চি জমিও দখল হতে দেবো না।’
মির্জা আব্বাস নামে একজন লিখেছেন, ‘স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ শহীদ হতে প্রস্তুত, তবুও ভারতের কাছে মাথা নত করব না। বাংলাদেশের মানুষ অনেক রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে ভারতের দাদাগিরি মেনে নেয়ার জন্য নয়।’ সাইফুল ইসলাম সাইফ নামে একজন লিখেছেন, ‘স্যালুট বাংলাদেশ বিজিবি-ছাত্র-জনতা। আমরা গর্বিত এ জন্য যে, আমাদের ন্যায্য দাবিতে আমরা অনড়।’ আবার কয়েকজন লেখেন, ওই ঘটনায় রাজনৈতিক দলের বড় কর্মসূচির দরকার ছিল। কিন্তু তারা এখনো নীরব। আসলে কী হচ্ছে দেশে! আমাদের বুঝে আসে না। সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দলের এগিয়ে আসা দরকার।’
আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্ত পরিস্থিতি এখন থমথমে। ভারত-বাংলাদেশের শূন্যরেখার কাছাকাছিতে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনার জেরে টানা চারদিন উত্তেজনার পর এ অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে সীমান্তে উত্তজনাকর পরিস্থিতিতে মোতায়েন করা বাড়তি বিজিবি-বিএসএফ সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।
চৌকা সীমান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার সকাল থেকে চৌকা সীমান্তের কাছে বিজিবি সদস্যদের পাহারা দিতে দেখা গেছে। ওপারের সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরেও একই পরিস্থিতি ছিল। সেখানে বাড়তি জনবল মোতায়েত করা বিএসএফ সদস্যের চোখে পড়েনি। ছিল না সাধারণ নাগরিকও। তবে বাংলাদেশ অংশে উৎসুক জনতার ভিড় পরিলক্ষিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাস আগে সীমান্তের শূন্যরেখা কাছাকাছি জায়গায় একটি কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করে বিএসএফ। সেই রাস্তা ঘেঁষে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের চেষ্টা করছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়ায় গত রোববার সন্ধ্যায় ১১৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সুবদেলপুর এলাকায় স্থানীয় বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনার জন্য খুঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। সেদিনই বিজিবির পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়। রাত হয়ে যাওয়ায় সেদিন আর কোনো কাজ করেনি তারা। সোমবার সকালে ফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ শুরু করে বিএসএফ সদস্যরা। বিজিবির পক্ষের বাধা কর্ণপাত না করায় সেদিনই বিকেলে বিষয়টি মীমাংসায় পতাকা বৈঠক হয়। তবে, কোনো সমাধান হয়নি। মঙ্গলবার সকালে বিএসএফের পক্ষ থেকে আবার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ শুরু করলে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় সতর্ক অবস্থান নেয় বিজিবি।
গত সোমবার বিজিবি-বিএসএফের শক্ত অবস্থান আর মঙ্গলবার দু’দেশের নাগরিকদের সীমান্তের কাছে এসে পাল্টাপাল্টি সেøাগানে সীমান্তজুড়ে আরো উত্তাপ ছড়ায়। ফলে গত দুদিন সীমান্তের কাছের আবাদি জমিতে কৃষকরা কাজ বন্ধ রেখেছিলেন। আব্দুর রাজ্জাক নামের এক কৃষক বলেন, গত সোমবার ও মঙ্গলবার দুদিন মাঠে কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। তবে, শুক্রবার থেকে কাজ শুরু করেছি। অনেকেই আবাদি জমিতে সেচ দেয়ার পাশাপাশি কৃষিকাজ করছেন। এখন পরিস্থিতি থমথমে হয়েছে। তবে আতঙ্ক কমেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, সীমান্তের কাছাকাছি কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করলে আবাদি জমিগুলোয় চাষবাসে সমস্যা হবে। তখন বিএসএফের সদস্যরা আমাদের কাজ করতে দেবে না। এই সমস্যার কারণে আমরা প্রতিবাদ করতে সীমান্তের কাছে জড়ো হয়েছিলাম। দেশের জন্য প্রয়োজনে জীবন দেবো, তবু কোনো ছাড় দেবো না।
পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের বেড়া স্থাপনে বিজিবির বাধা, নওগাঁয় উত্তেজনা নিরসনে পতাকা বৈঠক : লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া সীমান্তে আবারো শূন্যরেখা বরাবর কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের চেষ্টা চালিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তবে খবর পেয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে বেড়া নির্মাণের প্রতিবাদ জানালে কাজ বন্ধ রাখে বিএসএফ সদস্যরা। শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনার পর সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে নওগাঁর ধামইরহাট সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় উপজেলার বস্তাবর সীমান্ত চৌকি (বিওপি) সংলগ্ন শূন্যরেখায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএসএফের ১২৩ ব্যাটালিয়নের শিবরামপুর কোম্পানির কমান্ডারের সঙ্গে বিজিবির বস্তাবর কোম্পানির কমান্ডারের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এ বিষয়ে বিজিবির নওগাঁর পতœীতলা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, বিজিবি ও বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে সম্মত হয়েছে বিএসএফ। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বা রাস্তা হবে কি-না, তা বিজিবি-বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরো বলেন, বিএসএফ বলেছে তারা সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে তারা কোনো বেড়া বা স্থাপনা করবে না। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ১৫০ গজের মধ্যে বেড়া বা স্থাপনা করার চেষ্টা করলে বিজিবি প্রতিহত করবে।
বিজিবি ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, নওগাঁর বস্তাবর সীমান্তে প্রায় ৬০০ গজের মধ্যে দুই দেশের কোনো বেড়া নেই। গত বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিজিবির সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ভারতীয় সীমান্তে বিএসএফের সদস্য ও কিছু নির্মাণশ্রমিকের কার্যক্রম চোখে পড়ে। ওই এলাকায় তারা গাছপালা কাটছিলেন এবং এক্সকেভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কাটার কাজ করছিলেন। আইন অনুযায়ী সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে ফসল চাষ ছাড়া সীমান্তবর্তী কোনো দেশ তাদের সীমানায় বেড়া কিংবা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না। কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে সীমান্তে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করে। জানতে পেরে বিজিবি সদস্যরা তাদের বাধা দেন। পরে কাজ না করেই ফিরে যায় বিএসএফের সদস্যরা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক
দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম
জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে
সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট
মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে
চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল
সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক
মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে
মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার
ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্
মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫
ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান
মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন
কানাডা এবং গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে নজর রাখছে রাশিয়া