অভি খালাস! তাহলে খুনী কে?
১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৭ এএম | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৭ এএম
আজ থেকে ২২ বছর আগে আলোচিত মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি (২৪) খুন হয়। ঘটনায় পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। সাত তদন্ত কর্মকর্তার হাত বদলে সাবেক ছাত্রনেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভিকে করে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোছা: শাহীনুর আক্তারের আদালত মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। রায় শুনতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন পলাতক আসামি গোলাম ফারুক অভির রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী শাহ ইলিয়াস রতন। আর রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সৈয়দ আবু জাফর রিজভী। তবে নিহতের পরিবার কেউও উপস্থিত ছিলেন না।
গতকাল বেলা ৩ টা ১৫ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। তিনি রায়ে উল্লেখ করেন, আসামির বিরুদ্ধে তিন্নি হত্যার অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারায় আসামি অভিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো।
রায়ের পর তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, আজকে যে রায় হবে তা তো আমি জানতামই না। আমাকে কেউ জানায়ওনি। রায়ের খবর আপনি প্রথম জানালেন। আমি কিছুই জানি না।
তিনি আরও বলেন, তিন্নি খুনের পর অভিকে বিদেশ পালাতে সহায়তা করে তৎকালীন সরকার। এরপর অভিকে দেখিয়ে দেখিয়ে মামলায় এতোদিন পার করলো। এখন রায় প্রচার হলো, অভি খালাস। আমার মেয়েকে যে খুন হয়েছে তাতো সত্য। তাহলে আমার মেয়ের খুনি কে? তা জানার অধিকার কি আমার নাই? আমার বয়স ৭৮। শরীরে দুই,দুবার অপারেশন হয়েছে। শরীর ও মাথা আগের মতো কাজ করছে না। তাহলে কি আমার মেয়ে হত্যার বিচার পাব না।
তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আমার বয়স হয়েছে। আমি আর দৌড়াদৌড়ি করতে পারবো না। আমার বড় ভাই সৈয়দ রেজাউল করিম তার অবস্থা আরও খারাপ। তিন্নির আরেক বোন তার মাকে নিয়ে আমেরিকার সানফ্রানসিস্কোতে থাকে। আবার নতুন করে দৌড়াদৌড়ি করার কেউ নাই। মৃত্যুর আগে আমার মেয়ের খুনিকে দেখে যেতে পারবো না।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অভির রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী শাহ ইলিয়াস রতন সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আদালত যা ভালো বুঝেছেন সেই রায় দিয়েছেন। এখানে আমার কোন হাত নেই। এর রায়ে আমি খুশি। তবে আসামি অভির সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই বলে জানান এই আইনজীবী।
তবে রায়ে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ আবু জাফর রিজভী। তিনি বলেন, ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও তদন্ত কর্মকর্তার রিপোর্ট বিবেচনা করে বিচারক আসামি অভিকে খালাস দিয়েছেন। এটা তো পূর্ণাঙ্গ রায় নয়। রায়ের পুর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে তথ্য -উপাত্ত দেখে পরবর্তী আপীল দায়েরের পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
তদন্ত কর্মকর্তার কোন গাফলতি ছিলো কি না মুল রায় দেখা বলা যাবে। অনুমান করে বলা ঠিক হবে না। বিচারক রায়ে বিচার্যে বিষয় কোনটা নিলেন, আর কোনটা বাদ দিলেন তা না দেখে বলা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রপক্ষ অপেক্ষা করবে মুল রায় হাতে পেলেই পরবর্তীতে পদক্ষেপ যাবে।
মামলার অভিযোগ বলা হয়, তিন্নির স্বামী পিয়ালের মাধ্যমেই তিন্নির সাথে অভির পরিচয় হয়। এরপর তিন্নি ও অভির ঘনিষ্টতা বাড়ে। স্বামী পিয়াল বিষয়টি ভালভাবে নিতে পারেনি। বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে অভি ২০০২ সালের ৬ নভেম্বর পিয়ালকে ডিভোর্স দেন তিন্নি। অভির ইচ্ছা ছিল ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিন্নিকে ভোগ করে যাওয়া। বিয়ে করে তিন্নিকে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার ইচ্ছা অভির কোনদিনই ছিলনা। বিষয়টি বুঝতে পেরেই তিন্নি তাকে বিয়ে করার জন্য অভিকে চাপ দেয়। কিন্তু অভি বিয়ে করতে অস্বীকার করলে অভির সব গোপন খবর মিডিয়ায় ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন তিন্নি। এরপর ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাত্রে ঢাকার কেরানীগঞ্জের ১১ নম্বর চীন মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলালের পাশে তিন্নির লাশ পাওয়া যায়।
তিন্নিকে না পেয়ে তার চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। ২০০২ সালের ১১ নভেম্বর অজ্ঞাত হিসেবে তিন্নির মরদেহ উদ্ধারের পর অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন কেরানীগঞ্জ থানার এএসআই মো. সফি উদ্দিন। এরপর মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় ওই থানার এসআই মো. কাইয়ুমকে। তিন্নির মরদেহের ছবি পত্রিকায় ছাপা হলে নিহতের এক আত্মীয় সুজন তিন্নির মরদেহটি শনাক্ত করেন। পরবর্তীতে একই বছর ২৪ নভেম্বর তদন্তভার ন্যাস্ত হয় সিআইডিতে। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির পরিদর্শক ফজলুর রহমানকে। একে একে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পরিদর্শক সুজাউল হক, এএসপি গোলাম মোস্তফা, এএসপি আরমান আলী, এএসপি কমল কৃষ্ণ ভরদ্বাজ এবং এএসপি মোজাম্মেল হক। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক একমাত্র আসামি করে গোলাম ফারুক অভিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
২০১০ সালের ১৪ জুলাই অভির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। এরপর চার্জশিটভূক্ত ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহন করেন আদালত। ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেন আদালত। তবে ওইদিন এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষী তিন্নির বাবা ও চাচা সাক্ষ্য দিতে চাইলে আদালত রায় মুলতবি করে সাক্ষ্য গ্রহণে চলে যায়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৬৩ জন ফিলিস্তিনি, মানবিক সংকট চরমে
ছাগলকাণ্ডের সেই মতিউর ও তার স্ত্রী গ্রেফতার
সেন্টমার্টিনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তিন রিসোর্ট পুড়ে ছাই
শুল্ক রেলস্টেশন দিয়ে ভারত থেকে ২ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন চাল আমদানি
শুল্ক–কর বৃদ্ধির ফলে দেশের তামাক খাতে কী প্রভাব পড়বে
ব্যাংকিং সেবা খাতে এখনো ভারতীয় আধিপত্য
পরিষ্কার বার্তা চায় জনগণ
অবশেষে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ
কারাগারে এস কে সুর
‘গ্রিনল্যান্ডকে সামরিক এলাকা বানাতে চান ট্রাম্প’
ছাত্রলীগ নেত্রী নিশি দুই দিনের রিমান্ডে
জল্পনা উড়াল চীনা সংস্থা টিকটক কিনছেন না মাস্ক
ধামরাইয়ে খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানায় ফের আবার ডাকাতির চেষ্টা
রাজউক জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন
দ্বিতীয় দিনের মতো অনশনে অব্যাহতি পাওয়া এসআইরা
বন্ধ বেক্সিমকো খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মানববন্ধন
আধুনিক ডেটা ওয়্যারহাউজ স্থাপন করবে বিবিএস
পরিবারসহ জ্যাকব ও ছেলেসহ সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন শুনানির নতুন তারিখ
সামাজিক ও আচরণ পরিবর্তনের বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান ইউজিসি’র