ভারতের ওয়াকফ সংশোধন বিল অবিলম্বে বাতিল করুন :বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ
০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক পাশকৃত ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার, ঐতিহাসিক আমানত এবং সাংবিধানিক সুরক্ষার বিরুদ্ধে এক নেক্কারজনক হস্তক্ষেপ। মুসলিম বিদ্বেষী বিজিপি কর্তৃক ওয়াকফ বোর্ডের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। অবিলম্বে মোদি সরকারের পাশকৃত ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ বাতিল করতে হবে। মোদি সরকারের পাশকৃত ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়ে পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঃ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক পাশকৃত ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫-এর প্রতি গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে তারাঁ বলেন, এই বিলটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার, ঐতিহাসিক আমানত এবং সাংবিধানিক সুরক্ষার বিরুদ্ধে এক নেক্কারজনক হস্তক্ষেপ। নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন, অমুসলিমদের ( মূলত হিন্দুদের) সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা, কোন সম্পত্তি ওয়াকফ বলে বিবেচিত হবে কোনটা হবে না সরকারকে তা নির্ধারণের কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে। অথচ ওয়াকফকৃত সম্পদ পরিচালনা ও ভোগের একমাত্র হকদার মুসলমানগণ।
নেতৃদ্বয় বলেন, এই বিলের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ভারতে ওয়াকফ আইনকে দুর্বল করে দেওয়া এবং ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও দখল করার আইনি পথ তৈরি করা। তারাঁ বলেন, মুসলমানরাই হলো ভারতের নির্মাতা । এই ভারত যা কিছু নিয়ে গর্ব করে তার প্রায় সবগুলোই মুসলিম শাসকদের অবদান। ৩০ কোটির বেশি মুসলিমের এই ভারতে বিপুল পরিমাণ ওয়াক্ফ সম্পত্তি রয়েছে। প্রায় ৯ লাখ স্থাপনা রয়েছে, যাতে জমির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ একর। এসব সম্পদের দাম প্রায় দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলার। শহর ও নগর এলাকায় ওয়াক্ফ বোর্ড হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে বেশি জমির মালিক প্রতিষ্ঠান। আর সব মিলিয়ে হিসাব করলে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও রেলওয়ের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ ভূমির মালিক হচ্ছে মুসলমানদের এই প্রতিষ্ঠান। হিন্দুত্ববাদী উগ্র-বিজিপি এই সম্পত্তির প্রতি আজন্ম লোভ লালন করে আসছে। এরা ইতোমধ্যে ভারতের একাধিক স্থানে মন্দিরসহ বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণের জন্য ওয়াকফকৃত মুসলিম সম্পত্তি জবরদখল ও অবৈধ অধিগ্রহণ করেছে।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, ওয়াকফ সম্পত্তি কেবল জমি আর স্থাপনা নয় এটি মুসলিম সমাজের ধর্মীয় বিশ্বাস, ইতিহাস এবং জনকল্যাণমূলক কর্মকা-ের ভিত্তি। এই সম্পদ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মসজিদ, মাদরাসা, খানকা ও গরীব-দুঃখীদের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পাশকৃত সংশোধনী এই সম্পদের ব্যবস্থাপনায় হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় সরকারকে আইনি ক্ষমতা প্রদান করে, যা সংবিধানের সংখ্যালঘু অধিকার ও তথাকথিত ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থীও বটে। তারাঁ আরও বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলছি; মুসলিম বিদ্বেষী বিজিপি কর্তৃক ওয়াকফ বোর্ডের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। ধর্মীয় সম্পত্তি ব্যব¯’াপনায় রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আরেকটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, এই বিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অবিচার এবং সামাজিক ঐক্যের পরিপন্থী।
এই বিলের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ওয়াকফ আইনকে দুর্বল করে দেওয়া এবং ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করা। এর মাধ্যমে মুসলমানদের মর্যাদাহানি করবে ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে। ভারত সরকারকে অবিলম্বে ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ বাতিল করতে হবে। ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বায়ত্তশাসন ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। মুসলমানদের মতামত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত আরোপ করা চলবে না। ভারত সরকারের অব্যাহত মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর আহবান জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি নেতৃদ্বয় বলেন, ইসলাম বিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় সরকারের এহেন কর্মকা-ে যেকোনো সময় বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে নির্যাতিত ভারতীয় মুসলমানদের পাশে দাড়ানো উচিৎ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ফোরামে ভারতীয় মুসলমানদের উপর রাষ্ট্রীয় নিবর্তনমূলক আইনের ব্যাপারে সরব প্রতিবাদ জানানো দরকার। বিবৃতিতে তারাঁ বিশ্বের সকল ইসলামী শক্তি, মানবাধিকার সংস্থা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সচেতন নাগরিকদের এই বিলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
ইসলামী ঐক্য জোট ঃ ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারত সরকার ইসলাম বিদ্বেষী ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ করে মুসলামনদের ধর্মীয় স্বকীয়তা তথা ইসলাম ধর্মের উপরও প্রচ- আঘাত হেনেছে। ধর্মীয় সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আরেকটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই বিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অবিচার এবং সামাজিক ঐক্যের পরিপন্থী। মোদি সরকারকে অবিলম্বে ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ বাতিল করে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বায়ত্তশাসন ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, উগ্র- মোদি সরকার দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমানদের সম্পদ লুন্ঠনের পথ সুগম করতেই ইসলাম বিদ্বেষী ওয়াকফ সংশোধনী বিল গায়ের জোরে পাশ করেছে। মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুন্ন এবং ইবাদত বন্দেগিতে বাধা দেয়ার লক্ষ্যেই ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, উগ্র-হিন্দুত্ববাদীরা দেশটির বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায়েও বাধার সৃষ্টি করে ধর্মীয় স্বাধীনতা নস্যাতে মেতে উঠেছে। তিনি মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা এবং ইসলামী স্বকীয়তা বজায় রাখতে ভারত সরকারের ওপর কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
খেলাফত মজলিস ঃ সম্প্রতি ভারতের লোকসভায় ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল-২০২৪ পাশ করে মুসলমানদের মালিকানার ভূ-সম্পত্তি দখলের চক্রান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। এক বিবৃতিতে খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ভারতে মুসলমানদের দান করা শত শত কোটি ডলার মূল্যের ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও বহু বছরের পুরনো পরিচালনা পদ্ধতি সংশোধনে আনা একটি বিল সম্প্রতি লোকসভায় পাস হয়েছে। নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন, অমুসলিমদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা, কোন সম্পত্তি ওয়াকফ বলে বিবেচিত হবে, কোনটা হবে না সরকারকে তা নির্ধারণের এখতিয়ার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ আল্লাহর জন্য উৎসর্গকৃত এই সম্পদগুলোর পরিচালনা ও ভোগের একমাত্র হকদার মুসলিম জনগোষ্ঠী। এই বিলের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ওয়াকফ আইনকে দুর্বল করে দেওয়া এবং ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করা। এর মাধ্যমে মুসলমানদের মর্যাদাহানি করবে ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে। এটা মুসলামনদের ধর্মীয় স্বকীয়তা তথা ইসলাম ধর্মের উপরও প্রচ- আঘাত। আমরা ভারত সরকারকে এই সংশোধনী বিলটি অবিলম্বে বাতিলের আহ্বান জানাই।
উল্লেখ্য, ভারতের ওয়াকফ বোর্ডগুলোর অধীনে ৯ লাখ ৪০ হাজার একর জমি রয়েছে যা ৬/৭শত বছর পূর্ব থেকে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফকৃত। এসবে যথাযথ কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া এখন দুষ্কর। কোন কোন সম্পত্তি মৌখিকভাবেই আল্লাহর জন্য ওয়াক্ফ করা হয়েছিল। এখন বিজেপি সরকার এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সম্পত্তিগুলো কুক্ষিগত করবে। হতদরিদ্র মুসলমানদের এই বিশাল ভূ-সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

শেরপুর ভোগাই নদীতে অভিযান, ২০ ড্রেজার মেশিন ধ্বংস ও ১ লাখ টাকা জরিমানা

বিএনপি নেতাদের গোশত ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি, ছাত্রদল আহবায়ককে শোকজ

অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িতদের বিচারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে

চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পূর্ণ-নির্মাণের আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা

মোংলায় বজ্রপাতে বিএনপি নেতার মৃত্যু

ব্যাংকের ভেতরেই প্রতারক চক্রের ফাঁদে নারী!

শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একমত চীন ও মালয়েশিয়া

হাইকোর্টের ৪৮টি বেঞ্চ গঠন, রোববার থেকে চলবে বিচারকাজ

কালীগঞ্জে পৌরসভাকে পরিস্কার রাখতে প্লাসটিকের ডাস্টবিন স্থাপন

‘আগামী মাসে দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া’

তামাকের প্যাকেট দেখিয়ে পাকিস্তানী এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিদ্ধস্তের খবর দিলো ভারতীয় মিডিয়া!

পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা : আরাভ খানের যাবজ্জীবন

সদরপুরে স্বর্ণেরবার দেখিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তি গ্রেফতার

‘বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট নই, দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চলমান থাকবে’

সালথায় ডাকাত দলের ৫ সদস্য আটক

নগরীতে পানি সরবরাহ বন্ধের হুমকি

অবৈধ ভাবে ভারতের অনুপ্রবেশকালে দুই যুবক বকশীগঞ্জ সীমান্ত থেকে আটক !

কর্ণফুলীতে ৫ টাকা বেড়েছে ঘাট ভাড়া; বিপাকে পড়েছেন এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা

৫০ লাখ ডলারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ, বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু

রাঙ্গাবালীতে দাখিল পরীক্ষায় অনিয়ম, ১৪ শিক্ষার্থী সাসপেন্ড ও ৫ শিক্ষককে জরিমানা