ভারত বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়
১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৯ এএম | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৯ এএম

ভারত কখনো বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না। প্রশিক্ষণের জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যদের ভারতে যাওয়া উচিত নয়। বিডিআর হত্যাকান্ডের সাথে ভারত জড়িত ছিল। র্যাবে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের থাকা উচিত নয়। ১৯৭১ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। গতকাল শনিবার রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস ওয়েলফেয়ার আ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) হেলমেট হলে আয়োজিত-‘রাষ্ট্র সংস্কার: রাজনীতি প্রভাবমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচকরা এসব কথা বলেন।
এ সময় তারা আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই অনভিপ্রেত বিতর্ককে কেন্দ্র করে পতিত ফ্যাসিবাদ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদ মিলিতভাবে সামরিক বাহিনীর সাথে জনগণের দূরত্ব বাড়িয়ে দেশে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টিরও অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ভারত বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এখন ষড়যন্ত্র ঘরে-বাইরে-লক্ষ্যবস্তু সশস্ত্র বাহিনী। অবিলম্বে সশস্ত্র বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রয়োজন।
চার ঘন্টারও বেশি সময়ের অনুষ্ঠানে রাওয়ার চেয়ারম্যান কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ আব্দুল হক এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে কর্নেল ড. অলি আহমদ,বীর বিক্রম (অবঃ) উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ড. মাহমুদুর রহমান এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড: আবদুল্লাহ আল ইউসুফ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কর্নেল (অব:) মো: আহসান উল্লাহ। অনুষ্ঠানে সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কর্নেল ড. অলি আহমদ,বীর বিক্রম (অবঃ) বলেন, সশস্ত্র বাহিনী ও জনগনের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন আরও দৃঢ় করতে হবে। ১৯৭১ সালের পর ভারত আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিরোধ তৈরি করেছে। আমাদের মধ্যে একতা ধরে রাখতে হবে। এটার খুব অভাব। আমাদের মূল দায়িত্ব হবে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষনা করা। তিনি বলেন, বুঝতে হবে-ভারত বাংলাদেশের কখনই ভালো চায় না। তারা বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। প্রশিক্ষনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর কাউকে যেনো ভারতে পাঠানো না হয়। এতে অনেকে অনৈতিক বিষয়ে জড়িয়ে পড়েন। এর প্রকৃষ্ট উদাহরন এইচএম এরশাদ। তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহে ভারতের ব্ল্যাক ক্যাট জড়িত ছিলো। তারা শেখ হাসিনার পাহারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। কোন অবস্থাতেই সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া সশস্ত্র বাহিনীর উচিত হবে না।
কর্নেল ড. অলি আহমদ বলেন, ভারত কখনোই বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না। সেনা প্রধান হওয়ার জন্য অনেকেই ভারতের স্বরনাপন্ন হয়েছেন। প্রমোশন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। যারা বলেছিল মৃত্যুর পরেও হাসিনার সাথে থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের দায়িত্ব চিহ্নিত করতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কারের প্রক্রিয়ায় দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান তার মূল প্রবন্ধে রাজনীতি প্রভাবমুক্ত সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যাশায় বিশদ আলোচনা তুলে ধরেন। প্রথমে তিনি রষ্ট্রে সংস্কার, সামরিক বাহিনী ও রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে টানাপোড়ন (দশক ওয়ারী বিশ্লেষণ), বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক শক্তি এবং সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যকার সার্বিক পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সামরিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাবনা রাখেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ও সামরিক বাহিনীতে পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন, বাণিজ্যিক সম্পর্ক রহিত করণ, বেসামরিক দায়িত্ব থেকে পৃথকীকরণ, স্বচ্ছ সামরিক বাজেট এবং প্রশিক্ষণে আন্তর্জাতিক মান অর্জনের ব্যাপারে জোর দেন। পাশাপাশি জনগণ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের ভারতীয় আধিপত্যবাদি আকাঙ্খা সম্পর্কে সব সময় সতর্ক হওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব কর্তৃক সেনাবাহিনীকে ব্যবহার প্রতিরোধের উপরে জোর দেন। যেখানে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ, মানবাধিকার লংগনে অভিযুক্ত সামরিক অফিসারদের বিচার এবং সর্বোপরি প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন। উর্দ্ধতন সামরিক অফিসারদের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, রাজনীতিবিদরাও নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি সংবিধানে পূনসংযোজন জরুরী বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, সংসদীয় পদ্ধতিতে আমৃত্যু ক্ষমতা দখলে রাখার সুযোগ আছে, সেই সুযোগ নিয়েই শেখ হাসিনা পুলিশ, র্যাব, এবং ডিজিএফআই’কে ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতকে দমন করেছেন, জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়েছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়েছেন এবং ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আদলে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি প্রবর্তনের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার সময় এসেছে। আমার প্রস্তাব হলো, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সর্বোচ্চ দুইবার পাঁচ বছরের মেয়াদের জন্য একজন নাগরিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন। এই দুই মেয়াদ উপর্যুপরি হওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে সকল সেনা অফিসার শেখ হাসিনার আমলে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের দায়ে, বিশেষ করে আয়না ঘর সৃষ্টি এবং মহান জুলাই বিপ্লবে গণহত্যায় সম্পৃক্ত থেকেছেন তাদের অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আব্দুল্লাহ আল ইউসুফ সশস্ত্র বাহিনীকে দলীয় অপরাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন সংস্কার প্রয়োজন এবং একইভাবে, রাষ্ট্রীয় সামরিক এবং অসামরিক গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের নিয়ন্ত্রণও কোন একক ব্যক্তি কিথা পদের অধীনে থাকাটা নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্র তথা জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শুধুই একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী, একটি কার্যকর প্রতিরক্ষা নীতি কিংবা একজন দক্ষ প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা যথেষ্ট নয়। বরং আমাদের প্রয়োজন একটি কার্যকর জাতীয় নিরাপত্তা নীতি, একটি কার্যকর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ, সংশ্লিষ্ট সংস্থাপনা বা সচিবালয় এবং একজন দক্ষ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা যিনি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানকে পরামর্শ দেবেন। এগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা কমিশন গঠনের ব্যাপারে তিনি মত দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ আব্দুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদরা আবার জাগ্রত হচ্ছে। ষড়যন্ত্র ঘরে-বাইরে-লক্ষ্যবস্তু বা টার্গেট হলো সশস্ত্র বাহিনী ও ইসলামী মুল্যবোধ। যে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত এদেশীয় দালালরা। বিডিআর হত্যাকান্ডের কথা আমরা ভ’লে গেছি। ভারত হাসিনাকে বলেছিল ৪ থেকে ৫ লাখ লোক মেরে ফেলেন আপনি আগামী ৫ বছর ক্ষমতায় থাকবেন। মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত বিভিন্ন পদবীর অবঃ সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং প্রত্যেকেই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সশস্ত্র বহিনীর প্রত্যাশা করেন। সশস্ত্র বাহিনীর সংস্কারকল্পে যুগোপযোগী এবং যুগান্তকারী নীতিমালা প্রনয়নের ব্যাপারে তারা জোর দেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

শেরপুর ভোগাই নদীতে অভিযান, ২০ ড্রেজার মেশিন ধ্বংস ও ১ লাখ টাকা জরিমানা

বিএনপি নেতাদের গোশত ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি, ছাত্রদল আহবায়ককে শোকজ

অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িতদের বিচারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে

চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পূর্ণ-নির্মাণের আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা

মোংলায় বজ্রপাতে বিএনপি নেতার মৃত্যু

ব্যাংকের ভেতরেই প্রতারক চক্রের ফাঁদে নারী!

শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একমত চীন ও মালয়েশিয়া

হাইকোর্টের ৪৮টি বেঞ্চ গঠন, রোববার থেকে চলবে বিচারকাজ

কালীগঞ্জে পৌরসভাকে পরিস্কার রাখতে প্লাসটিকের ডাস্টবিন স্থাপন

‘আগামী মাসে দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া’

তামাকের প্যাকেট দেখিয়ে পাকিস্তানী এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিদ্ধস্তের খবর দিলো ভারতীয় মিডিয়া!

পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা : আরাভ খানের যাবজ্জীবন

সদরপুরে স্বর্ণেরবার দেখিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তি গ্রেফতার

‘বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট নই, দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চলমান থাকবে’

সালথায় ডাকাত দলের ৫ সদস্য আটক

নগরীতে পানি সরবরাহ বন্ধের হুমকি

অবৈধ ভাবে ভারতের অনুপ্রবেশকালে দুই যুবক বকশীগঞ্জ সীমান্ত থেকে আটক !

কর্ণফুলীতে ৫ টাকা বেড়েছে ঘাট ভাড়া; বিপাকে পড়েছেন এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা

৫০ লাখ ডলারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ, বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু

রাঙ্গাবালীতে দাখিল পরীক্ষায় অনিয়ম, ১৪ শিক্ষার্থী সাসপেন্ড ও ৫ শিক্ষককে জরিমানা