কক্সবাজার উপকূলে প্যারাবন উজাড় বন্ধ হচ্ছে না সরকারি জমি দখল
১০ মার্চ ২০২৩, ১০:২৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম
কক্সবাজার জেলার উপকূলে প্যারাবন উজাড় ও সরকারি জমি দখল কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। মহেশখালী কুতুবদিয়া ও সদরের প্যারাবন কাটা শেষে এবার মেরিন ড্রাইভ সড়কের রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পেঁচার দ্বীপের জাদুঘর এলাকায় আগুন দিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে প্যারাবন। নির্বিচারে কাটা হয়েছে প্যারাবনের বাইন, কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় হাজার হাজার গাছ। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে জীববৈচিত্র্যসহ পাখির আবাসস্থল।
ইতোমধ্যে প্যারাবন দখল করে দেওয়া হয়েছে সীমানা পিলার। অভিযোগ উঠেছে, এভাবে আনুমানিক পাঁচ একর প্যারাবনে জবরদখল করে সেখানে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে স্থানীয় হারুন বিন হাশেম ও সাবেক ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন কামাল গং। এর আগে একই এলাকায় প্যারাবন কেটে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, জোয়ার-ভাটা বন্ধে বাঁধ তৈরি, এস্কেভেটর দিয়ে মৎস্য চাষের জন্য খাল খননসহ ২০ হাজারের অধিক গাছ কেটে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় কিংশুক ফার্মস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় সেখানে জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংসে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্থানীয় বসবাসকারি ও পরিবেশবাদী নেতারা। কিংশুক ফার্মসের প্যারাবন নিধনের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পরিবেশ বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেই ঘটনার কূল-কিনারা হতে না হতেই এবার সংলগ্ন প্যারাবনে আগুন ধরিয়ে দিয়ে নিধনের কাজ শুরু হয়েছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে পেঁচার দ্বীপের জাদুঘর এলাকার পশ্চিম পাশে ভরাখালে প্রায় ২০ বছর আগে প্যারাবন সৃজন করেছিল উপকূলীয় বন বিভাগ। উক্ত এলাকায় ঘন প্যারাবন, খালের জোয়ার-ভাটা, জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থলে পরিণত হয়েছিল। জায়গাটি সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু এখন এটি বন্দোবস্তমূলে খতিয়ানভুক্ত ব্যক্তি মালিকানার কথা বলে সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। খতিয়ানভুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ক্রয় করার কথা বলে স্থানীয় হারুন বিন হাশেম ও সাবেক ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন কামাল দীর্ঘদিন ধরে প্যারাবন কাটা শুরু করেন। গত ২ মার্চ প্যারাবনে সীমানা পিলার দিয়ে স্থায়ীভাবে দখল করে নেন তারা। এরপর পুরোদমে প্যারাবন কাটা শুরু করে।
গত বৃহস্পতিবার হারুন বিন হাশেম নিজে উপস্থিত থেকে স্থানীয় জাগির হোসেনকে দিয়ে প্যারাবনের কেটে ফেলা গাছের ডালপালায় আগুন ধরিয়ে দেন। এভাবে প্যারাবনে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। এতে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। স্থানীয় জাগির হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, স্থানীয় কিছু মানুষ লাকড়ির জন্য কিছু গাছ কেটে নিয়ে গেছে। কিছু ডালপালা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কারের জন্য আগুন দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হারুন বিন হাশেম বলেন, সেখানে তার কোনো জমি নেই। প্যারাবনে সীমানা পিলার দিয়ে দখল করে গাছ কাটার বিষয়ে ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়েও তিনি জড়িত নন বলে দাবি করেন। সাবেক ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন কামাল বলেন, তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তবে এলাকার কিছু মানুষ এ কাজে জড়িত বলে শুনেছেন তিনি।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, দিনদুপুরে যেভাবে প্যারাবন দখল, গাছ নিধন করে ধংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে সেটি উদ্বেগজনক। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকায় এসব জীববৈচিত্র্য বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চালানো হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তা আরো উদ্বেগজনক। এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান পরিবেশবাদী কয়েকজন নেতা।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, স্থানীয় মানুষের কিছু বাড়ি-ভিটা অ্যাটর্নি পাওয়ারমূলে হারুন বিন হাশেম ব্যক্তি মালিকানার দাবি করে আসছিলেন। সমস্যা দেখা দিলে সীমানা পিলার দেওয়ার সময় সেখানে গিয়ে দেখে আসি। প্যারাবনের কিছু অংশ কেটে ফেলেছে দেখেছি। তবে কে বা কারা কেটেছে জানা নেই। প্যারাবনে আগুন দেওয়ার ব্যাপারেও খবর পাইনি। রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) আবছার কামাল বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু জমিতে সীমানা পিলার দেওয়ার কথা শুনেছি। সেখানে প্যারাবন কাটা ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানি না।
পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় কিংশুক ফার্মস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে প্যারাবন কাটা, প্যারাবনের ভেতরে সীমানা দেয়াল দেওয়া ও এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে পরিবেশের ক্ষতি করার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর উত্তর পাশে প্যারাবন কেটে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে জানা নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য সম্প্রতি কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় ভরা বাঁকখালীর প্যারাবন কেটে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে অভিযান চালিয়ে প্রশাসন ওই স্থাপনা উচ্ছেদ করে দেয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু
দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা
পঞ্চগড়ে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ