হত্যা মামলার আসামি হয়েও অফিস করছেন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা
০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার আসামি হয়েও অফিস করছেন বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা। হত্যা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন না করায় প্রশ্ন উঠেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও পুলিশ সদর দফতরের বিরুদ্ধে। অনেকেই প্রশ্ন করেছেন যে, ছাত্র-জনতার রক্তে গড়া এ সরকার তা হলে কি শহীদদের রক্তে কোন মূল্য দিচ্ছেন না? তা না হলে হত্যা মামলার আসামি হয়েও কিভাবে পুলিশের এসব কর্মকর্তা বড় বড় পদে বসে রয়েছেন। এতে করে পুলিশ বাহিনীতে পেশাদার ও ১৫ বছরের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার ও বেনজির আহমেদসহ ২৫০জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতাকে হত্যার অভিযোগ এনে সারাদেশে শত শত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাবেক আইজিপিসহ ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হলেও অনেকেই বাকীরা এখনও ধরা ছোয়ার বাইরে। হত্যা মামলার আসামি হয়েও অনেক পুলিশ কর্মকর্তা অফিস করছেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং পুলিশ সদর দফতরের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলেও এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেই।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, হত্যা মামলার আসামি পুলিশ কর্মকর্তাদের সবাই পতিত আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ট কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। এ সব কর্মকর্তারা বিগত ১৫ বছর নানা ধরনের অপরাধের সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন এমন বহু অভিযোগ রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে পুলিশে অসন্তুষ বাড়বে। সূত্র জানায়, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর পুলিশ বাহিনী নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এর পর অন্তর্বতী সরকার গঠিত হলে ধীরে ধীরে কাজে ফেরে পুলিশ। বলতে গেলে এক সপ্তাহের বেশি সময় পুলিশবিহীন চলে দেশ। অনেকের মতে প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাসে এমনটা হয়নি। এদিকে, গত ৫ নভেম্বর বর্তমান সরকারের তিন মাস হলেও এখনো অনেক পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দেননি। আবার অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। অবশ্য এরই মধ্যে তাদের পলাতক হিসেবে ঘোষণা করে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছে সরকার।
পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ৫ আগস্টের পর অন্তত ১৮৭ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পুলিশ পরিদর্শক পর্যন্ত রয়েছেন। এরা কখনোই কাজে যোগ দেননি। এমনকি বারবার নোটিশ দেয়ার পরও তাদের দেখা যায়নি। এছাড়া, কাজে যোগ দেওয়াদের মধ্যেও যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে তাদের এরই মধ্যে কর্মস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে, পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেককে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে মনিরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, বিপ্লব কুমার সরকার, মেহেদী হাসান, প্রলয় কুমার জোয়ারদার, নুরন্নবী চৌধুরী, সঞ্জীব চক্রবর্তী, গাজী মোজাম্মেল হক, বনজ কুমার মজুমদার, কৃঞ্চপদ রায়, আব্দুল বাতেনসহ অনেক পুলিশ কর্মকর্তা পলাতক রয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ ভারতে, কেউ মালয়শিয়ায়, আবার কেউ অন্য কোনো দেশে পলাতক রয়েছেন।
জানা গেছে, বিপ্লব কুমার সরকার লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন। সিটিটিসির আসাদুজ্জামান রিপনও বেনাপোল এলাকার সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে। সঞ্জীব চক্রবর্তী ভারতে পালানোর পর সেখান থেকে মালয়েশিয়াতে চলে যান। মালয়েশিয়াতে তার সেকেন্ড হোম রয়েছে। এর বাইরেও অনেক পুলিশ কর্মকর্তার মালয়শিয়াতে সেকেন্ড হোম রয়েছে বলে তথ্য আছে। কেউ পলাতক, আবার কেউ গ্রেফতার হলেও এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা। যার মধ্যে রয়েছে ডিবির হারুনুর রশীদ হারুন। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম দোসর হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন প্রভাবশালী এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি কোথায় আছেন সেটিও স্পষ্ট নয়। তবে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী মাঠ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার না করায় জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। ডিবির হারুন আলোচনায় আসেন ২০১১ সালের এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নাল আবদিন ফারুককে ওই সময় সংসদ ভবন এলাকায় শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করেন হারুন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জয়নাল আবদিন ফারুক নিজেই বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন। এ পর্যন্ত আলোচিত কর্মকর্তার হারুনের বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে।
এদিকে, বাধ্যতামূলক অবসর ছাড়াও অনেক পুলিশ কর্মকর্তা কর্মস্থলে যাচ্ছেন না। এদের মধ্যে অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার নুরুন্নবী, অতিরিক্ত ডিআইজি এসএম মেহেদী হাসান ও অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জিত কুমার রায়। যাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের আগে-পরে সংঘটিত হতাহতের ঘটনায় একাধিক মামলা করা হয়েছে। এছাড়া, অসুস্থতার আবেদন করে কর্মস্থলে যাচ্ছেন না অতিরিক্ত ডিআইজি উত্তম কুমার পাল, এসপি আবু মারুফ হোসেন, শাহ নুর আলম পাটোয়ারী, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশানুল হক সৈকত, এএসপি মফিজুর রহমান পলাশ, এএসপি আরিফুজ্জামান, এএসপি আল ইমরান হোসেন, এএসপি ইফতেখার মাহমুদ। চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বহুল আলোচিত আরেক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান। এদের বাইরে এএসপি মি. জন রানা ৫ আগস্টের আগেই চাকরি ছেড়ে দেওয়ার তথ্য জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। তিনি ২ আগস্ট পুলিশের চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। রংপুর ডিআইজি কার্যালয় থেকে সেটি পুলিশ সদর দফতর হয়ে ২৮ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। পলাতকের ১৮৭ জনের এই তালিকায় পাঁচ জন ইন্সপেক্টরও আছেন। এ ছাড়া ১৪ জন এসআই, নয় জন এএসআই, সাত জন নায়েক এবং ১৩২ জন কনস্টেবল রয়েছেন। এই কনস্টেবলদের মধ্যে দু’জন নারী সদস্যও আছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, যেসব পুলিশ কর্মকর্তা জুলাই-আগস্ট ম্যাসাকারে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারেন সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
'দুর্বল' দলের বিপক্ষে পয়েন্ট হারাল ইউনাইটেড
সালাহর জোড়া গোলে লিভারপুলের জয়
গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন
মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন
ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা
বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা
কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ
হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার
ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি