আত্মহত্যা ও ইসলাম

Daily Inqilab মো: লোকমান হেকিম

০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৪ এএম | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৪ এএম

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। প্রতি দুই মিনিটে তিনজন মানুষ আত্মহত্যা করছে। অর্থাৎ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে আত্মহত্যা করছে ১ জন। আত্মহত্যা তথা নিজেকে হনন করা এ যেন এক অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ এবং মহাপাপ। এতো বড় মহাপাপ হওয়া সত্ত্বেও এমন অনেক দুর্ভাগ্যবান লোক আছে যারা জীবনযাপনের কঠিন দুঃখ-দুর্দশা ও ব্যর্থতার গ্লানি থেকে পরিত্রাণের জন্য অথবা জেদের বশবর্তী হয়ে বেছে নেন আত্মহননের মতো পথ। কিন্তু ধৈর্য ধারণ করে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে চললে এমন ভয়াবহ পথে পা বাড়াতে হয় না। যদি কেউ বুঝতো আত্মহত্যার ভয়াবহতা কত কঠিন তাহলে কোনভাবে এই পথে পা দিত না। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে আত্মহত্যাকারীর জন্য পরকালে কঠোর আজাবের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯-৩০)। আত্মহত্যার অপরাধে জান্নাত হারাম হওয়ার পাশাপাশি হাদিসে কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ হয়েছে। জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি জখম হয়ে (অধৈর্য হয়ে) আত্মহত্যা করে। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা আমার নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ আবু হুরায়রা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে (পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে পড়ে) আত্মহত্যা করতে থাকবে। এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সারাক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সেই লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢোকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ দুনিয়ায় আত্মহত্যাকারীর প্রতি মানুষের ঘৃণা জন্মায়। রাসুল (সা.) এসব ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়েননি। জাবের বিন সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হয়েছে, যে লোহার ফলা দ্বারা আত্মহত্যা করেছিল, ফলে তিনি তার জানাজার নামাজ আদায় করেননি।’ পারিবারিক ও সামাজিক নানা সংকট থেকে মানুষ আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়। চরম হতাশা, বিপদে অধৈর্য হয়ে আর অনিয়ন্ত্রিত জেদ-অভিমানই আত্মহত্যার মূল কয়েকটি কারণ। অথচ ইসলামে এই কারণগুলোর সান্তনা ও প্রতিদানের কথা ঘোষিত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সন্দেহ নেই, তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সূরা : জুমার, আয়াত : ৫৩)। সব বিষয়ে আল্লাহর রহমতই একমাত্র ভরসা। মনে রাখতে হবে, ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর কোনো সংকটই স্থায়ী হয় না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে।’ (সূরা ইনশিরাহ, আয়াত : ৫-৬)। বিলাসিতা উচ্চ আকাংখা ও অতিভোগকে মানুষ সফলতা মনে করে। এসব চাহিদা মুমিনের অন্তর থেকে আল্লাহভীতি দূর করে দেয়। অথচ অল্পে সন্তুষ্ট থাকার মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ ও সফলতা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে, যাকে প্রয়োজনমাফিক রিজিক প্রদান করা হয়েছে এবং যে তাতেই পরিতুষ্ট থাকে, সেই সফলকাম হয়েছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৩৮)। অধৈর্য মানুষকে আত্মহত্যার পথে নিয়ে যায়। মানবজীবনে ধৈর্যের চেয়ে কল্যাণকর আর কিছু নেই। ধৈর্যের মাধ্যমে অনেক কঠিন বাস্তবতাকে সহজে মেনে নেওয়া যায়। সবচেয়ে বড় সান্তনা হলো যারা ধৈর্যশীল তাদের সঙ্গে আল্লাহর বিশেষ সঙ্গ থাকে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে ‘হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)। একবার রাসুল (সা.) আনসার সাহাবিদের কিছু লোককে বলেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে, তিনি (আল্লাহ) তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দান করা হবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭০)। দুঃখ-দুর্দশা গ্লানি যত সংকট আসুক না কেন সব কিছুতেই আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সূরা তালাক, আয়াত : ৩)। তাই জন্ম ও মৃত্যু মহান আল্লাহর হাতে কেউ চাইলেও আগে বা পরে মারা যেতে পারবে না সবাইকে মহান আল্লাহর হুকুমেই মারা যেতে হবে। তবে কখনো আত্মহত্যার মতো এমন মহাপাপের কথা কখনোই কল্পনাতেও আনা যাবে না। যত বড়ই মানসিক চাপ আসুক সর্বদা ধৈর্য ধরে মহান আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। তাই সৎকাজে তোমরা একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা কর, কল্যাণসমূহকে যথাযথভাবে প্রাপ্ত হওয়ার জন্য। আর আল্লাহ সেই জাতির উন্নতি করেন না- যে নিজেই নিজের উন্নতি না করে।

লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট।


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সাদপন্থিদের ইজতেমা করার নৈতিক অধিকার নেই : মামুনুল হক
ইজতেমা ময়দানে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
প্রশ্ন: পবিত্র কুরআন কাদের জন্য সুপারিশ করবে?
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা
আরও

আরও পড়ুন

সহোদর বড় ভাইদের বিরুদ্ধে পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাৎ ও প্রাণনাশের হুমকি: এলডিপি নেতার অভিযোগ

সহোদর বড় ভাইদের বিরুদ্ধে পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাৎ ও প্রাণনাশের হুমকি: এলডিপি নেতার অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগ মিছিল করার প্রতিবাদে সড়ক  অবরোধ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগ মিছিল করার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

জুলাই আগষ্ট বিপ্লবের ঘাতকদের ক্ষমা নেই - রেজাউল করিম বাদশা

জুলাই আগষ্ট বিপ্লবের ঘাতকদের ক্ষমা নেই - রেজাউল করিম বাদশা

ফেনী নদীর পানি নিয়ে ভারতের একতরফা আগ্রাসন: বাংলাদেশের কৃষকদের অস্তিত্ব সংকটে

ফেনী নদীর পানি নিয়ে ভারতের একতরফা আগ্রাসন: বাংলাদেশের কৃষকদের অস্তিত্ব সংকটে

ভারতীয় অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে হবে

ভারতীয় অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে হবে

রাজধানীর গুলশানে নির্মাণাধীন ভবনে আগুন

রাজধানীর গুলশানে নির্মাণাধীন ভবনে আগুন

শপথ নেয়ার আগেই ঘুষ কাণ্ডে সাজা ঘোষণা, জেলে যাবেন ট্রাম্প?

শপথ নেয়ার আগেই ঘুষ কাণ্ডে সাজা ঘোষণা, জেলে যাবেন ট্রাম্প?

গফরগাঁওয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ডাঃ সাবেক ভিসি এম এ হাদীর স্মরণে আলোচনা সভা

গফরগাঁওয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ডাঃ সাবেক ভিসি এম এ হাদীর স্মরণে আলোচনা সভা

মোদির দেয়া মূল্যবান হিরা ব্যবহার করবেন না জিল বাইডেন, কেন?

মোদির দেয়া মূল্যবান হিরা ব্যবহার করবেন না জিল বাইডেন, কেন?

সাদপন্থিদের ইজতেমা করার নৈতিক অধিকার নেই : মামুনুল হক

সাদপন্থিদের ইজতেমা করার নৈতিক অধিকার নেই : মামুনুল হক

বাংলাদেশে নিয়ে আলোচনা! ভারত সফরে আমেরিকার জাতীয় উপদেষ্টা

বাংলাদেশে নিয়ে আলোচনা! ভারত সফরে আমেরিকার জাতীয় উপদেষ্টা

নীলফামারীতে জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি তাজমুল, সেক্রেটারি রেজাউল

নীলফামারীতে জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি তাজমুল, সেক্রেটারি রেজাউল

রাজশাহীর পুঠিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে বিদ্যুতের পোলের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছে দুর্বৃত্তরা

রাজশাহীর পুঠিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে বিদ্যুতের পোলের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছে দুর্বৃত্তরা

বগুড়ার নন্দীগ্রামে প্রবাসীর স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

বগুড়ার নন্দীগ্রামে প্রবাসীর স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

নীলফামারীতে ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেফতার

নীলফামারীতে ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেফতার

টাঙ্গাইলে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পক্ষ থেকে চার শতাধিক শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

টাঙ্গাইলে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পক্ষ থেকে চার শতাধিক শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

যশোর পৌষের দাপটে কাঁপছে

যশোর পৌষের দাপটে কাঁপছে

যশোরে সফল নারী কৃষি উদ্যোক্তা ফারহানা ইয়াসমিন

যশোরে সফল নারী কৃষি উদ্যোক্তা ফারহানা ইয়াসমিন

নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইলে খাঁজা মঈনুদ্দিন চিশতীর বাৎসরিক ওরশ শুরু

নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইলে খাঁজা মঈনুদ্দিন চিশতীর বাৎসরিক ওরশ শুরু

আইসিইউতে ভর্তি অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান

আইসিইউতে ভর্তি অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান