কুতুবউদ্দিন আইবেক : নতুন ভারতের রাজসড়ক-২
১৮ মে ২০২৩, ১১:২২ পিএম | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম
১২০৬ খ্রিস্টাব্দে আততায়ীর হাতে নিহত হন মুহাম্মদ ঘুরী। তার যেহেতু কোনো সন্তান ছিলো না, ফলে যোগ্য ও বিশ্বস্ত সঙ্গীরা হলেন উত্তরসূরী। কিরমান-সাদকুয়ানের শাসক তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ, উচ ও মুলতানের শাসক নাসিরউদ্দিন কুবাচা, দিল্লীর শাসক কুতুবউদ্দিন আইবেকের মধ্যে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হয়। প্রত্যেকেই চেয়েছিলেন দিল্লীর অধিকার।
আইবেকের সক্ষমতার কাছে সকলেই পরাজিত হন। তারপর ক‚টনৈতিক দক্ষতা, প্রতিদ্বদ্বীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন, সামরিক অনন্যতা ও নেতৃত্বগুণ আইবেককে করে তোলে অপ্রতিহত। এরই মধ্যে তার দিকে ধেয়ে আসে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চ্যালেঞ্জ। খাওয়ারিজমের শাহ আলাউদ্দিন মুহম্মদ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন গজনী এবং দিল্লী জয়ের। স্থানীয় রাজপুত রাজারা নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে হৃত রাজ্যসমূহ পুনর্দখলের জন্য নৈরাজ্য শুরু করেন। বাংলা-বিহারে অভ্যন্তরীণ সংকট ফেনায়িত হচ্ছিলো। কুতুবউদ্দিন অত্যন্ত দক্ষতার মাধ্যমে এসবের মোকাবেলা করেন।
ঘুরী জীবদ্দশায় তাকে দিয়েছিলেন মালিক উপাধী, তার ঘুর রাজ্যের উত্তরসূরী সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ তাকে দেন সুলতান উপাধি। ঘুর আমিরদের অনুরোধে দিল্লী থেকে লাহোরে এসে ১২০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুন কুতুবউদ্দিন আইবেক শাসনক্ষমতা গ্রহণ করেন। লাহোর জামে মসজিদে তাঁর নামে খুৎবা পাঠ করা হয় এবং তাঁর নামেই মুদ্্রা প্রচলন করা হয়। স্বাধীন সুলতান হিসেবে সংহত হবার প্রথম প্রহরেই চান্দেলা রাজপুতগণ কালিঞ্জরে, গহরওয়ালাগণ ফরুখাবাদ ও বদায়ুনের কিছু অংশে এবং গোয়ালিয়রের প্রতিহারগণ নতুন করে বিদ্রোহী হয়ে উঠে। কুতুবউদ্দিন আইবেক সেই বিদ্রোহকে অতি সহজেই নস্যাৎ করেন। সঙ্কট নিরসনে রক্তপাত এড়ানো বা সর্বনি¤œ মাত্রার রক্তক্ষয় ছিলো তার নীতি। তার চার বছরের স্বাধীন শাসনামল সমাপ্ত হয় ১২১০ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে। লাহোরে চৌগান বা পোলো খেলার মাঠে অশ্বপৃষ্ঠ থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হন তিনি এবং এতেই তার মৃত্যু ঘটে।
আইবেকের মাধ্যমে ভারতে ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে মামলুক শাসন সূচিত হয় এবং ১২৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই বংশে ১১ জন সুলতান ৮৪ বছর ধরে শাসনকাজ চালিয়ে যান, যার অবসান ঘটে শামসুদ্দিন কাইমুরস (১২৮৯-১২৯০ খ্রি.) এর শাসনের সমাপ্তিতে। হেমার পারগস্টল তার বিখ্যাত Gemaldesaal der .010Lebensheschreibungen grosser Moslemischer Herrscher গ্রন্থে কুতুবউদ্দিন আইবেকের শাসনকর্ম নিয়ে আলাপ করেন সবিস্তারে। আইবেকের উন্নত চরিত্র, স্বাধীনচেতা নীতি এবং প্রজাকল্যাণে আত্মনিয়োগ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের শাসক ও সামন্তপ্রভুদের জন্য ছিলো অনন্য দৃষ্টান্ত। হেমার দেখান যে, আইবেক হিন্দু-মুসলিমসহ সকল জাতির মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন প্রধানত প্রজাকল্যাণী নীতি ও চারিত্রিক উৎকর্ষের জন্য। তিনি পূর্ববর্তী রাজস্ব ব্যবস্থা অক্ষুণœ রাখেন এবং স্থানীয় শাসনভার স্থানীয় কর্মচারিদের উপর ন্যস্ত করেন। প্রাদেশিক রাজধানী শহরগুলোতে নিযুক্ত মুসলমান রাজকর্মচারিগণ সেনাধ্যক্ষ এবং কাজীর সাহায্যে প্রদেশের শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। উদারচিত্তের অধিকারী এই রাষ্ট্রনায়ক প্রতিভা ও কর্মশক্তিতে কেবল মহান ছিলেন না, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, স্থাপত্যসহ মননকর্মের পৃষ্ঠপোষকতায় তার অবদান ছিলো অগ্রণী। এই সত্য স্বীকার করেছেন ডবিøউ ন্যাসান লিসও, তার বিখ্যাত Materials for the History of India শীর্ষক নিবন্ধে। তার রাজদরবার হয়ে উঠেছিলো শীর্ষস্থানীয় জ্ঞানী-গুণী ও পÐিত ব্যক্তিদের মিলনমেলা। হাসান নিযামী, ফখরে মুদাব্বীর এবং অন্যান্য বুদ্ধিজীবী ও বিদ্বান মনীষীকে তিনি স্বীয় দরবারে উচ্চ মর্যাদা দান করেন। সদরুদ্দিন হাসান নিজামী তার সমকালে রচনা করেন দিল্লীর সালতানাতের ইতিহাস; তাজুল মাসির। এতে তিনি আইবেকের মহত্বের প্রশংসা করেছেন অকৃপণভাবে। নিজামী তার ইতিহাসগ্রন্থটি উৎসর্গ করেন আইবেকের নামে। দানশীলতার দিক থেকে কুতুবউদ্দিনকে হাতেম তাইয়ের সাথে তুলনা করা হয়। তিনি প্রত্যেক দিন লক্ষ লক্ষ মুদ্রা দান করতেন বলে কোনো কোনো ঐতিহাসিক তাকে ‘লাখ বক্স’ উপাধি প্রদান করেন। তিনি ছিলেন পরমত ও পরধর্মসহিষ্ণু। হেমারের মতো শত্রæভাবাপন্ন লেখকও আইবেকের অসা¤প্রদায়িক নীতি ও সর্বজনকল্যাণী প্রয়াসসমূহের মূল্যকে উপেক্ষা করতে পারেননি। আবুল কাশেম ফেরেশতা দেখান আইবেকের শান্তিময় রাজত্বকালে ধনাগারে কোনো প্রহরীর দরকার ছিল না; মেষপালের কোনো রাখালের প্রয়োজন ছিল না। প্রাণ ও সম্পদের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করা হতো নিñিদ্রভাবে।
ক্ষমতা সংহত করে নতুন রাজ্যদখলের পরিবর্তে দখলিকৃত রাজ্যে তিনি বৃহত্তর কল্যাণে মনোযোগ দেন। তার মহান কৃতিত্বসমূহ তার বিশালতাকে প্রমাণ করে। তাঁর কোনো পুত্র ছিলো না। তিনি বলতেন, অন্য রাজাদের এক পুত্র বা দুই পুত্র থাকতে পারে; আমার আছে হাজার হাজার ছেলে। আমার তুর্কি দাসগণ আমার রাজত্বের উত্তরাধিকারী হবে এবং যারা আমার পরে এই সমস্ত অঞ্চলে খুতবায় আমার নাম সংরক্ষণে যতœ নেবে। (চলবে)
বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু
দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা