আলাউদ্দীন খিলজি যুগনায়ক-১
২০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১০ এএম

যখন আলাউদ্দিন খিলজিকে (শাসনকাল: ১২৯৬ সাল থেকে ১৩১৬ সাল) ভাবি, দুই ধরনের ছবি হাজির হয়। রাজনীতি, গাল-গল্প, সিনেমা, কাব্য ইত্যাদির হাতে নির্মিত এক ছবি, আরেক ছবি ইতিহাসের হাতে তৈরি। দুই ছবিতে তিনি দুই বিপরীত ভ‚মিকায় হাজির। প্রথম ছবিতে খলনায়ক, স্বেচ্ছাচারি, নিপীড়ক ও দুশ্চরিত্রের ভ‚মিকায় দেখানো হয়েছে তাকে, দ্বিতীয় ছবিতে তাকে দেখা যায় একজন রাষ্ট্রনায়ক, মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধে অনবদ্য বীর, দিগি¦জয়ী লৌহমানব, প্রশাসনব্যবস্থাপক ও বৃহত্তর ভারতের একচ্ছত্র সম্রাট হিসেবে।
বিভিন্ন কবির কল্পনা আলাউদ্দীন খিলজিকে আশ্রয় করে নানা গল্প তৈরি করেছে। মালিক মুহম্মদ জায়সীর বিখ্যাত পদুমাবত আলাউদ্দীন খিলজিকে ঘিরে রচিত। এ কাব্য রচিত হয় খিলজির মৃত্যুর দুইশত চব্বিশ বছর পরে; ১৫৪০ সালে। সম্পূর্ণ কাল্পনিক এই কাব্যগ্রন্থে পদ্মাবতীর পাশাপাশি চিতোরের রাজা রতœসেন, দিল্লির সম্রাট আলাউদ্দীন খিলজি ও রাজা দেবপালের মতো চরিত্র নিয়ে কল্পনা বিস্তার করা হয়েছে। মহাকবি আলাওল একে অবলম্বন করে পদ্মাবতী লেখেন। কিন্তু জায়সী বা আলাওল কেউই একে ইতিহাস হিসেবে দাবি করেননি। এমনতরো কাহিনীকে কবির কল্পনা হিসেবেই জেনেছে এবং পাঠ করেছে সবাই।
সমস্যা দেখা দেয় ব্রিটিশ শাসনামলে। ব্রিটিশদের হাতে উপমহাদেশের ইতিহাস যে রক্তভেজা, বিদ্বেষভরা ও শত্রæতার জ্বালানিভরা অবয়ব লাভ করে, তার নির্মম শিকার হয় আলাউদ্দীন খিলজির শাসনামল। বিচিত্র অভিযোগে জর্জরিত হয় তার ব্যক্তিত্ব, যার অধিকাংশই জন্ম নিয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থের আদেশে। চরিত্রহনন ও সা¤প্রদায়িক বিদ্বেষবিষের বিস্তার ছিলো এর মূলে। সেই লক্ষ্য থেকেই জায়সীর কল্পনাকে অবলম্বন করে তৈরি হলো নানা গালগল্প। বহু গ্রন্থে দাবি করা হয়, ১৩০৩ সালে রাজপুত রাজা রাণা রতন সিংহের সুন্দরী রাণি পদ্মিনীকে অপহরণ করে নিজের হারেমে আনতে চাইলেন খিলজি। সেজন্য চিতোর আক্রমণ করলেন। তার নিষ্ঠুর আক্রমণে রাণা রতন পরাজিত হন এবং বন্দি হন। এ খবর শুনে খিলজির কবল থেকে রক্ষা পেতে রাণি পদ্মিনী ১৬,০০০ নারীকে নিয়ে চিতায় ঝাঁপ দেন। অথচ, জায়সীর কাহিনীতে পদ্মাবতী প্রথা অনুযায়ী স্বামীর চিতায় সতীদাহ হন। এখানে খিলজির ভয়ের কোনো ব্যাপারই ছিলো না।
এসব গল্প এখন লোকরঞ্জনবাদী রাজনীতির দাউদাউ উস্কানি। এই তো ক‘দিন আগে গোটা ভারতে ঝড় বইয়ে দিলো সঞ্জয় লীলা বানশালী নির্মিত ‘পদ্মাবতী’ সিনেমা। দাবি করা হয়, ৮০০ বছর আগের চিতোরের রাণি পদ্মিনীর জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে তা। বানশালী দাবি করেন, সিনেমাটি পদুমাবত অবলম্বনে তৈরি। কিন্তু এতে এমন সব কল্পকাহিনীর অবতারণা করা হয়েছে, যা খিলজিকে দেখায় এক যৌন বিকারগ্রস্ত উন্মাদ হিসেবে, পাশব হিসেবে। প্রকৃতপক্ষে খিলজির চিতোর অভিযান না ছিলো কোনো নারীকে অর্জনের জন্য, না সেখানে অস্তিত্ব ছিলো কোনো পদ্মাবতী নামের রাজপুত রাণির। অধ্যাপক রাম পুনিয়ানি, ইতিহাসবিদ ইফরান হাবিব, হারবান মুখিয়া, দেবদত্ত প্রমুখ স্পষ্ট জানাচ্ছেন যে, রাণি পদ্মাবতী একটি কাল্পনিক চরিত্র। সেকালের ইতিহাসে রাণি পদ্মাবতী বা পদ্মিনী নামে কারো কোনো অস্তিত্ব সন্ধান করেছেন জহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক আদিত্য মুখোপাধ্যায়। কিন্তু তার সন্ধান মিলেনি। কারণ, পদ্মাবতী মূলত মালিক মুহম্মদ জায়সীর কাল্পনিক চরিত্র। খিলজির শাসনামলের প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমির খসরু পদ্মাবতী বা পদ্মিনীর উল্লেখ করেননি। চিতোরের যুদ্ধে উপস্থিত থেকেও তিনি এই নারী সম্পর্কে কিছুই জানেন না! ইতিহাসবিদ জিয়াউদ্দীন বারানি, আবদুল মালিক ইসামী, আবদুল কাদির বাদায়ুনি কিংবা আবুল কাশেম ফারিশতা প্রমুখ মুসলমান ঐতিহাসিকদের কেউই এই তথাকথিত ‘হিন্দুরমণী’র অস্তিত্বের বিষয়ে জানতেন না। এমনকি কোনো নির্ভরযোগ্য হিন্দু ঐতিহাসিক দলিলও পদ্মাবতীর অস্তিত্বের কথা জানে না। মেবার রাজ্যের দরবারি ইতিহাসবিদ শ্যামল দাস একবার পদ্মাবতীর কথা এনেছিলেন, তবে সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গে। এর সাথে আলাউদ্দীন খিলজির কোনো যোগসূত্র নেই, নেই কোনো নিকট বা দূরবর্তী মিলসূত্র।
আলাউদ্দীন খিলজি সম্পর্কিত অভিযোগ কেবল এটাই নয়। তাকে দেখানো হয়েছে বিদেশ থেকে আগত এমন এক মুসলিম শাসক হিসেবে, যিনি হিন্দুদের বিনাশ ও দেবালয় ধ্বংসের জন্য সব রকমের নিষ্ঠুরতা চালিয়েছেন। বড় বড় জনপদ ও শহর বিরান করেছেন। ধ্বংস, বিপুল লুণ্ঠন, হাজার হাজার যুবতীকে দাসী বানিয়েছেন, তার ব্যক্তিগত কাজের জন্য নিয়োজিত ছিলো ৫০ হাজার বালক। তাদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ছিলো তার। কথায় কথায় তিনি কল্লা কাটতেন মানুষের। দুর্বলের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন নির্মম, বিশেষত হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন করতে তিনি বর্বরতায় সবাইকে ছাড়িয়ে যান। এমনতরো অভিযোগ উচ্চারিত হচ্ছে বিশেষ মতাদর্শের নেতা-কর্মী ও প্রচারকদের জবানিতে। মানুষের সম্ভাব্য সকল খারাপ দিক ঘৃণাপূর্ণ উপায়ে সিনেমায় আরোপ করা হয়েছে তার উপর। কিন্তু এর বাস্তবতা কতটুকু?
বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সৌদি রাষ্ট্রদূতকে হেয় করাই মূল উদ্দেশ্য মেঘনার?

২৯ এপ্রিল প্রথম হজ ফ্লাইট, হজযাত্রীদের সুবিধায় সরকারের যত উদ্যোগ

৪ মাসের সন্তান বিক্রি করে পায়ের নূপুর মোবাইল কিনলেন মা! উদ্ধার করল পুলিশ

কওমি সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের : ধর্ম উপদেষ্টা

অত্যাচারীরা কখনও শাসক বা নেতা হতে পারে না: সাবেক সাংসদ নিজাম

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে শয়নকক্ষে পুলিশ কনস্টবলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

খনিজ সম্পদ নিয়ে সই হলো কিয়েভ-ওয়াশিংটন সমঝোতা স্মারক

বিমান ছিনতাই করতে গিয়ে যাত্রীর গুলিতে মার্কিন নাগরিক নিহত

দুবাইতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের সব রেকর্ড ভঙ্গ, নেপথ্যে শেয়ারবাজারে ধ্বস

গাজায় ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের ১৩ জন নিহত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্থার ও বিচার কার্যক্রম শেষ করে ঘোষিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে

বিরলে বাড়ী থেকে অপহরণ করে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা

সাভার ও আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকদের ভরসা ব্যয়বহুল বেসরকারি হাসপাতাল

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশকে জড়ানোর চেষ্টা, আসিফ নজরুলের তীব্র প্রতিবাদ

ফরিদপুরে প্রেমের ফাঁদে ভুয়া মেজর আটক!

তেল ছাড়াই আমের আচার! সুগার, ব্লাড প্রেশার থাকলেও খেতে পারবেন

দুর্ঘটনায় উড়ে গেল বাসের ছাদ, ১০ কিমি চালিয়ে গেলেন বেপরোয়া চালক

মাগুরার আছিয়াকে নিয়ে হৃদয়বিদারক গান গাইলেন বাপ্পা

কুড়িগ্রামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি দুর্জয় গ্রেফতার

সালথায় কৃষককে হাতুড়িপেটা