ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

জহির উদ্দীন বাবর : দিগি¦জয়ের বাঘ-৮

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

০৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম

বিজয়ী বাবর হলেন নতুন সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। মোগল সাম্রাজ্য যদি ভারতে প্রতিষ্ঠিত না হতো তাহলে ভারতের সংস্কৃতি হয়তো এতটা বিচিত্র হবার সুযোগ পেত না। মোগল সাম্রাজ্য উপমহাদেশে ভাষায়, সংগীতে স্থাপত্যে চিত্রকলায়, যোগাযোগ ব্যবস্থায়, শিক্ষায় অর্থনীতিতে, খাদ্য রুচিতে, পোশাক-আশাকে রেখেছে অবিস্মরণীয় অবদান। কথাটি স্বীকার করেছেন হরবংশ উখিয়ার মত ইতিহাসবিদ। অবদানের বহু শতাব্দীব্যাপী এই নবধারার সূচনা হয় বাবরের হাত দিয়ে। সংস্কৃতি, সামরিকতা, সাহিত্য ও শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে বাবর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন। দৈহিক গঠনে যেমন বাবর ছিলেন অনন্য, তেমনি মানসিক দৃঢতা ও বলিষ্ঠতায় ছিলেন নজিরবিহীন। তাকে নিয়ে যেসব লোকশ্রুতি ঐতিহাসিকের কলমে ভাষা লাভ করেছে, তার মধ্যে দুজন মানুষ কাঁধে নিয়ে উচু পাহাড়ের চূড়ায় দ্রুত গতিতে উঠতে পারার বয়ান রয়েছে। বাবর একটানা ৩০ ঘন্টা সাতরাতে পারতেন, দৌড়াতে পারতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, ছুটন্ত ঘোড়ায় সওয়ার অবস্থায় উড়ন্ত পাখি শিকার করতে পারতেন। এমনতর কিংবদন্তি বহুভাষ্যে বিবৃত। ১২ বছর বয়স থেকে ৪৭ বছর বয়সে মৃত্যু পর্যন্ত বহু উত্থান-পতন, বহু ভাঙা-গড়া ও দুর্যোগের ঝড়ের মুখে একদিনের জন্যও উদ্যম হারাননি বাবর। অবিরল যুদ্ধে নিজের মন মস্তিষ্ক ও বাহুবলের পরীক্ষা দিয়ে গেছেন অবিরত।

একটি কৃতজ্ঞ ও পরিতৃপ্ত পরিসমাপ্তি অর্জন করেছিলেন তিনি। জীবনের শেষ লগ্নে ‘সব পেয়েছি’ উপলব্ধি নিয়ে তিনি সমাহিত হন আপন কবরে। ১৫৩০ সালের ডিসেম্বর আগ্রার পুরনো দুর্গে অসুস্থ বাবর ঘোষণা করেছিলেন আল্লাহর দয়ায় আর প্রিয়জনের সমর্থনে জীবনে অর্জনযোগ্য সবই অর্জন করেছি। কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ থাকেনি। তবে নিজের এমন বহু কাজ রয়ে গেছে, সুস্থ অবস্থায় যা বাস্তবায়ন করা গেল না।

কিছু কাজ তো অবশ্যই রয়ে গিয়েছিল বাবরের। উন্নত কোনো শাসনব্যবস্থা তিনি প্রবর্তন করতে পারেননি। বরং সুলতানি আমলের প্রশাসন আর রাষ্ট্রীয় সংগঠন জারি রাখেন তিনি। বাবরের রাজনৈতিক দৃষ্টি এবং শাসনতান্ত্রিক নীতিমালার একটি স্পষ্ট নমুনা পাওয়া যায় তার ওসিয়াতনামায়ে মাখফি বা গোপন উইলে। ফারসি ভাষায় লেখা এ উইল পাওয়া যায় ভূপালের হামিদা লাইব্রেরিতে। এতে নিজের পুত্র ও পরবর্তী সম্রাট নাসির উদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ুনকে তিনি সাম্রাজ্যের স্থিতিশীলতার যে নীতিমালা লিখে দেন, তার মধ্যে আছে (১) সকল রকমের ধর্মীয় গোড়ামির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। (২) প্রত্যেক ধর্মের মূলনীতি অনুযায়ী রাষ্ট্র ও নাগরিকদের মধ্যে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। (৩) মানুষের মন জয়ে নিবেদিত থাকতে হবে। (৪) ভারতে গরু জবাই না করা উচিত। (৫) কোনো সম্প্রদায়ের মন্দির ও উপাসনালয়ের কোনো ক্ষতি করা যাবে না। (৬) ন্যায়ের শাসন কায়েম করতে হবে। (৭) জনগণকে ভালো বাসতে হবে। তাদের নিয়েই সুখী ও খুশি থাকতে হবে। (৮) রাজা যেন প্রজাদের উপর সন্তুষ্ট থাকেন, প্রজাদেরও রাজার ওপর সন্তোষে রাখতে প্রয়াসী হন। (৯) ইসলামকে এগিয়ে নিতে হবে উদারতার মাধ্যমে। (১০) এজন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বা তলোয়ার ব্যবহার পরিহার করতে হবে। (১১) শিয়া-সুন্নী সংঘাত বা মুসলিম সমাজের আভ্যন্তরীণ দুর্বলতার চর্চাকে পাত্তাই দেওয়া যাবে না। (১২) সকল ধর্মের নাগরিকদের রাষ্ট্রের ছায়াতলে এক কাতারে আনার জন্য নীতিভিত্তিক মনোযোগ জারি রাখতে হবে। (১৩) ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত চলবে না। (১৪) ভারত বৈচিত্র্যের সমাহার। এই সব বৈচিত্র্যকে মাথায় রাখতে হবে।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

পানির সংকট

পানির সংকট

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু

তাইওয়ান পার্লামেন্টে তুমুল মারামারি

তাইওয়ান পার্লামেন্টে তুমুল মারামারি