ঢাকা   শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

আকবর দ্য গ্রেট-৫

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

১৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম


আকবরের রাষ্ট্র শাসনের ধারণার বিবরণ আমরা পাই আবুল ফজলের জবানিতে। তার ভাষ্য হলো, রাজধর্ম খোদাতালার জ্যোতি এবং তারই থেকে বিচ্ছিুরিত আলো বা নূরে ইয়াজদানী। খোদার তরফ থেকে তা রাজার মধ্যে সঞ্চারিত হয়। মধ্যবর্তী কোনো সংযোগ ছাড়াই। ফলে রাজধর্ম আকবরের কাছে ছিলো অপার্থিব আশীর্বাদ। এটা শাসকের মধ্যে থাকলেই অন্যরা বশীভূত হবে, মাথা নোয়াবে। আকবরের উপদেষ্টা আবুল ফজল সমাজকে অধ্যয়ন করেন এবং সামাজিক নীতি স্থির করার জন্য তাকে চারভাগে বিভাজন করেন। এক. যোদ্ধা। দুই. কারিগর-উৎপাদক, বণিক, তিন. জ্ঞান ও প্রজ্ঞাচর্চায় নিয়োজিত মানুষ, চার. কৃষক ও শ্রমিক। মুসলিম সমাজে উলামা শ্রেণীকে যোদ্ধা ও কারিগর-বণিকদের নিচে নামানো হয়। আকবর অগ্রগামী মানুষ বলতে এমন মানুষদের বুঝতেন, যারা অর্থনীতি সংগঠন, প্রশাসন পরিচালনা, জাগতিক প্রয়োজন পূরণ ও সামরিক কর্তব্য পালনে সক্ষম। সাধারণ মানুষ উন্মুক্ত অবস্থান পায়। তাদের জন্য থাকবে সুযোগের সমতা। পেশা, অবস্থান বা শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতায় তারা আবদ্ধ থাকবে না। যে কেউ একে অতিক্রম করতে চাইলে করতে পারবে। তার জন্য সুযোগ করে দিতে হবে রাষ্ট্রকে।

আকবরের বিচারে জনগণের জন্য উচ্চ নৈতিক অবস্থান নিতে হবে রাষ্ট্রকে। এটা সম্ভব হবে নৈতিক গুণসম্পন্ন এমন এক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শাসকের উদারনৈতিক শাসনের ওপর ভিত্তি করে, যেখানে সম্রাট সরাসরি ঐশ্বরিক আদেশে পরিচালিত হতেন, আইনি বৈধতার জন্য তাকে কোনো ধর্মীয় নেতার ওপর নির্ভর করতে হতো না। আবুল ফজলের দাবি, আকবরের রাজ্যজয় আসলে তার নিজ কর্তৃত্বের আস্ফালন ছিল না, বরং তা ছিল সুবিচার ও সহনশীলতার ওপর ভিত্তি করে এক সর্বভারতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রকল্প। এটা ছিল আকবরের সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনার একটা অংশ, যাকে বলা যায় দার-উল-সুলহ বা সমঝোতাভিত্তিক রাষ্ট্র-সরকার।
ক্ষমতা লাভ করে আকবর বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সংস্কার করলেন। দ্রুতই তিনি এমন এক প্রভাবশালী অবস্থানে চলে যান, যেখান থেকে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে নতুন সজ্জা দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে তিনি কয়েক ধাপে কাজ করলেন। প্রথমত, তিনি এমনভাবে বিভিন্ন দফতরের কাজ ও দায়িত্ব বণ্টন করেন, যাতে কোনো দফতর একে অপরের কাজে হস্তক্ষেপ না করেও সহজে প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকে ভারসাম্য ও সহযোগিতা বজায় রাখতে পারে। এভাবেই আকবর এমন একটি নিয়ন্ত্রিত ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ আমলাতন্ত্রের উদ্ভাবন করেন, যা মুঘল রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নব প্রাণের সঞ্চার করে।

নতুন এই দৃষ্টিভঙ্গি কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে যেমন নতুন চরিত্র ও আকার দেয়, স্থানীয় প্রশাসনেও এর প্রভাব ছিলো ব্যাপক। আকবর প্রদেশ, জেলা বা মহকুমাকে নতুন বিন্যাস দেননি। তবে কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার আদলে প্রাদেশিক প্রশাসনকেও সাজিয়ে নেন। বিভাগসমূহের ক্ষমতার বিন্যাস এবং পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি হয় আইন। প্রত্যেক প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তৈরি নিয়ম ছিলো অভিন্ন। নতুন নিয়মকানুনগুলো পরবর্তীকালে দস্তুর-উল-আমল বা জঁষব ইড়ড়শং হিসেবে প্রচারিত হয়। এভাবেই রাষ্ট্র ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে আমলাতন্ত্রের উন্মেষ ঘটেছিল, যদিও শাসনের রাশ ছিল সম্রাটের হাতেই।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৪
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৩
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১
ব্রিটিশ সরকারের তত্বাবধানে বাহদুর শাহ জাফর ও তাঁর বংশধরদের অবস্থা !
আরও

আরও পড়ুন

তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনের হুমকি হিন্দু সম্প্রদায়ের

তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনের হুমকি হিন্দু সম্প্রদায়ের

সুরমা-কুশিয়ারার জন্য ১৭৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প

সুরমা-কুশিয়ারার জন্য ১৭৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প

নকলায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

নকলায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

কালীগঞ্জে বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ফুলের শুভেচ্ছা জানালেন হামিদ

কালীগঞ্জে বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ফুলের শুভেচ্ছা জানালেন হামিদ

পর্ন তারকা স্টর্মিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুষ প্রদান মামলার রায় স্থগিত করলো আদালত

পর্ন তারকা স্টর্মিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুষ প্রদান মামলার রায় স্থগিত করলো আদালত

দৌলতপুরে মাদকাসক্ত যুবকের হাতে মাছ ব্যবসায়ী খুন : যুবক আটক

দৌলতপুরে মাদকাসক্ত যুবকের হাতে মাছ ব্যবসায়ী খুন : যুবক আটক

রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিক্ষোভ, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিক্ষোভ, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

পবিত্র কোরআন শরীফের পরে সত্য হিসেবে মানুষ সংবাদপত্রকে মনে করতো-বিটিভি মহা পরিচালক

পবিত্র কোরআন শরীফের পরে সত্য হিসেবে মানুষ সংবাদপত্রকে মনে করতো-বিটিভি মহা পরিচালক

লালমোহনে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ৭০ বছরের বৃদ্ধ নিহত

লালমোহনে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ৭০ বছরের বৃদ্ধ নিহত

বিচারের আগে ফ্যাসিস্ট আ. লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ নেই : নাহিদ

বিচারের আগে ফ্যাসিস্ট আ. লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ নেই : নাহিদ

ড. ইউনূসকে নিয়ে এক দশক আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি

ড. ইউনূসকে নিয়ে এক দশক আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি

গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুতের তারের স্পর্শে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুতের তারের স্পর্শে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে হামলা, চার ইতালীয় সেনা আহত

লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে হামলা, চার ইতালীয় সেনা আহত

এ আর রহমানের নামে মিথ্যাচার রটানোর অভিযোগে তীব্র ক্ষোভ ঝাড়লেন ছেলে এ আর আমিন

এ আর রহমানের নামে মিথ্যাচার রটানোর অভিযোগে তীব্র ক্ষোভ ঝাড়লেন ছেলে এ আর আমিন

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোন ধর্মই নিরাপদ ছিল না-এড.আহমেদ আযম খান

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোন ধর্মই নিরাপদ ছিল না-এড.আহমেদ আযম খান

শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন বাধ মানে না এমন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত আছে : পুতিন

শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন বাধ মানে না এমন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত আছে : পুতিন

ঢাকা আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় চতুর্থ

ঢাকা আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় চতুর্থ

পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, হচ্ছে মামলা

পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, হচ্ছে মামলা

ছয়-সাত মাসেই টিয়ার কাবিখার ২০০ কোটি লুটেছিলেন হাসিনা দোসর মহিবুর

ছয়-সাত মাসেই টিয়ার কাবিখার ২০০ কোটি লুটেছিলেন হাসিনা দোসর মহিবুর

আদানির দুই চুক্তি বাতিল করলো কেনিয়া

আদানির দুই চুক্তি বাতিল করলো কেনিয়া