ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

আকবর দ্য গ্রেট-৫

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

১৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম


আকবরের রাষ্ট্র শাসনের ধারণার বিবরণ আমরা পাই আবুল ফজলের জবানিতে। তার ভাষ্য হলো, রাজধর্ম খোদাতালার জ্যোতি এবং তারই থেকে বিচ্ছিুরিত আলো বা নূরে ইয়াজদানী। খোদার তরফ থেকে তা রাজার মধ্যে সঞ্চারিত হয়। মধ্যবর্তী কোনো সংযোগ ছাড়াই। ফলে রাজধর্ম আকবরের কাছে ছিলো অপার্থিব আশীর্বাদ। এটা শাসকের মধ্যে থাকলেই অন্যরা বশীভূত হবে, মাথা নোয়াবে। আকবরের উপদেষ্টা আবুল ফজল সমাজকে অধ্যয়ন করেন এবং সামাজিক নীতি স্থির করার জন্য তাকে চারভাগে বিভাজন করেন। এক. যোদ্ধা। দুই. কারিগর-উৎপাদক, বণিক, তিন. জ্ঞান ও প্রজ্ঞাচর্চায় নিয়োজিত মানুষ, চার. কৃষক ও শ্রমিক। মুসলিম সমাজে উলামা শ্রেণীকে যোদ্ধা ও কারিগর-বণিকদের নিচে নামানো হয়। আকবর অগ্রগামী মানুষ বলতে এমন মানুষদের বুঝতেন, যারা অর্থনীতি সংগঠন, প্রশাসন পরিচালনা, জাগতিক প্রয়োজন পূরণ ও সামরিক কর্তব্য পালনে সক্ষম। সাধারণ মানুষ উন্মুক্ত অবস্থান পায়। তাদের জন্য থাকবে সুযোগের সমতা। পেশা, অবস্থান বা শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতায় তারা আবদ্ধ থাকবে না। যে কেউ একে অতিক্রম করতে চাইলে করতে পারবে। তার জন্য সুযোগ করে দিতে হবে রাষ্ট্রকে।

আকবরের বিচারে জনগণের জন্য উচ্চ নৈতিক অবস্থান নিতে হবে রাষ্ট্রকে। এটা সম্ভব হবে নৈতিক গুণসম্পন্ন এমন এক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শাসকের উদারনৈতিক শাসনের ওপর ভিত্তি করে, যেখানে সম্রাট সরাসরি ঐশ্বরিক আদেশে পরিচালিত হতেন, আইনি বৈধতার জন্য তাকে কোনো ধর্মীয় নেতার ওপর নির্ভর করতে হতো না। আবুল ফজলের দাবি, আকবরের রাজ্যজয় আসলে তার নিজ কর্তৃত্বের আস্ফালন ছিল না, বরং তা ছিল সুবিচার ও সহনশীলতার ওপর ভিত্তি করে এক সর্বভারতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রকল্প। এটা ছিল আকবরের সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনার একটা অংশ, যাকে বলা যায় দার-উল-সুলহ বা সমঝোতাভিত্তিক রাষ্ট্র-সরকার।
ক্ষমতা লাভ করে আকবর বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সংস্কার করলেন। দ্রুতই তিনি এমন এক প্রভাবশালী অবস্থানে চলে যান, যেখান থেকে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে নতুন সজ্জা দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে তিনি কয়েক ধাপে কাজ করলেন। প্রথমত, তিনি এমনভাবে বিভিন্ন দফতরের কাজ ও দায়িত্ব বণ্টন করেন, যাতে কোনো দফতর একে অপরের কাজে হস্তক্ষেপ না করেও সহজে প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকে ভারসাম্য ও সহযোগিতা বজায় রাখতে পারে। এভাবেই আকবর এমন একটি নিয়ন্ত্রিত ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ আমলাতন্ত্রের উদ্ভাবন করেন, যা মুঘল রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নব প্রাণের সঞ্চার করে।

নতুন এই দৃষ্টিভঙ্গি কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে যেমন নতুন চরিত্র ও আকার দেয়, স্থানীয় প্রশাসনেও এর প্রভাব ছিলো ব্যাপক। আকবর প্রদেশ, জেলা বা মহকুমাকে নতুন বিন্যাস দেননি। তবে কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার আদলে প্রাদেশিক প্রশাসনকেও সাজিয়ে নেন। বিভাগসমূহের ক্ষমতার বিন্যাস এবং পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি হয় আইন। প্রত্যেক প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তৈরি নিয়ম ছিলো অভিন্ন। নতুন নিয়মকানুনগুলো পরবর্তীকালে দস্তুর-উল-আমল বা জঁষব ইড়ড়শং হিসেবে প্রচারিত হয়। এভাবেই রাষ্ট্র ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে আমলাতন্ত্রের উন্মেষ ঘটেছিল, যদিও শাসনের রাশ ছিল সম্রাটের হাতেই।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

সৌদি রাষ্ট্রদূতকে হেয় করাই মূল উদ্দেশ্য মেঘনার?

সৌদি রাষ্ট্রদূতকে হেয় করাই মূল উদ্দেশ্য মেঘনার?

২৯ এপ্রিল প্রথম হজ ফ্লাইট, হজযাত্রীদের সুবিধায় সরকারের যত উদ্যোগ

২৯ এপ্রিল প্রথম হজ ফ্লাইট, হজযাত্রীদের সুবিধায় সরকারের যত উদ্যোগ

৪ মাসের সন্তান বিক্রি করে পায়ের নূপুর মোবাইল কিনলেন মা! উদ্ধার করল পুলিশ

৪ মাসের সন্তান বিক্রি করে পায়ের নূপুর মোবাইল কিনলেন মা! উদ্ধার করল পুলিশ

কওমি সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের : ধর্ম উপদেষ্টা

কওমি সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের : ধর্ম উপদেষ্টা

অত্যাচারীরা কখনও শাসক বা নেতা হতে পারে না: সাবেক সাংসদ নিজাম

অত্যাচারীরা কখনও শাসক বা নেতা হতে পারে না: সাবেক সাংসদ নিজাম

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে শয়নকক্ষে পুলিশ কনস্টবলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে শয়নকক্ষে পুলিশ কনস্টবলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

খনিজ সম্পদ নিয়ে সই হলো কিয়েভ-ওয়াশিংটন সমঝোতা স্মারক

খনিজ সম্পদ নিয়ে সই হলো কিয়েভ-ওয়াশিংটন সমঝোতা স্মারক

বিমান ছিনতাই করতে গিয়ে যাত্রীর গুলিতে মার্কিন নাগরিক নিহত

বিমান ছিনতাই করতে গিয়ে যাত্রীর গুলিতে মার্কিন নাগরিক নিহত

দুবাইতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের সব রেকর্ড ভঙ্গ, নেপথ্যে শেয়ারবাজারে ধ্বস

দুবাইতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের সব রেকর্ড ভঙ্গ, নেপথ্যে শেয়ারবাজারে ধ্বস

গাজায় ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের ১৩ জন নিহত

গাজায় ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের ১৩ জন নিহত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্থার ও বিচার কার্যক্রম শেষ করে ঘোষিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্থার ও বিচার কার্যক্রম শেষ করে ঘোষিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে

বিরলে বাড়ী থেকে অপহরণ করে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা

বিরলে বাড়ী থেকে অপহরণ করে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা

সাভার ও আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকদের ভরসা ব্যয়বহুল বেসরকারি হাসপাতাল

সাভার ও আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকদের ভরসা ব্যয়বহুল বেসরকারি হাসপাতাল

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশকে জড়ানোর চেষ্টা, আসিফ নজরুলের তীব্র প্রতিবাদ

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশকে জড়ানোর চেষ্টা, আসিফ নজরুলের তীব্র প্রতিবাদ

ফরিদপুরে প্রেমের ফাঁদে ভুয়া মেজর আটক!

ফরিদপুরে প্রেমের ফাঁদে ভুয়া মেজর আটক!

তেল ছাড়াই আমের আচার! সুগার, ব্লাড প্রেশার থাকলেও খেতে পারবেন

তেল ছাড়াই আমের আচার! সুগার, ব্লাড প্রেশার থাকলেও খেতে পারবেন

দুর্ঘটনায় উড়ে গেল বাসের ছাদ, ১০ কিমি চালিয়ে গেলেন বেপরোয়া চালক

দুর্ঘটনায় উড়ে গেল বাসের ছাদ, ১০ কিমি চালিয়ে গেলেন বেপরোয়া চালক

মাগুরার আছিয়াকে নিয়ে হৃদয়বিদারক গান গাইলেন বাপ্পা

মাগুরার আছিয়াকে নিয়ে হৃদয়বিদারক গান গাইলেন বাপ্পা

কুড়িগ্রামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি দুর্জয় গ্রেফতার

কুড়িগ্রামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি দুর্জয় গ্রেফতার

সালথায় কৃষককে হাতুড়িপেটা

সালথায় কৃষককে হাতুড়িপেটা