মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) দ্বীন ও মিল্লাতের নবায়ন-৬

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৩ এএম

হৃদয়াবেগ ও আন্তরিকতায় পূর্ণ ছিলো এসব চিঠি। দরদ, ঐকান্তিকতা ও খোদার প্রতি নিবেদনে নিবিড় ছিলো প্রতিটি বাক্য। চিন্তা ও প্রজ্ঞার উজ্জ্বলতায় প্রদীপ্ত ছিলো এর আবেদন। ভাষার অনন্যতা ছিলো বিস্ময়কর। বাক্যশৈলী ফার্সি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম নমুনা হয়ে আছে আজো। ধর্মীয় সংস্কারের লক্ষ্যে রচিত পত্রসাহিত্যের অতুল শিল্পমান ও প্রভাব বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। পত্র এমন যুগান্তকারী প্রভাব তৈরী করতে পারেনি কোনো সমাজ-সংস্কৃতিতে।
আলফেসানীর এমন কৃতিত্ব বৈশিষ্ট্যের স্বাতন্ত্র্যে অনবদ্য, আবেদনের বিপুলতায় বেনজির। এই আবেদন বহু শতাব্দীর পথ পেরিয়ে আজকের পৃথিবীতেও নিজেকে প্রাসঙ্গিক রেখেছে।

আজকের ভক্ত পাঠকের হৃদয়-মনেও তার পবিত্র প্রভাব ও অনুভূতি বিচিত্র মাত্রায় প্রতিফলিত হয়। সেই সময় পত্রের প্রাপকের ভেতর পত্রগুলোর বাণী ও ভাষা কত প্রখর ও গভীর প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিলো, তা উপলব্ধি করতে হলে আন্দোলনের ফলাফলের দিকে চোখ বুলাতে হবে। যে সম্রাট জাহাঙ্গীর ও পরিষদবর্গ মুজাদ্দিদে আলফেসানীকে কারাগারে প্রেরণ করেছিলেন, তারা হয়ে গেলেন তার ভক্ত-মুরীদ। নিজেকে তারা অবশেষে শায়খের সেবক হিসেবে ভাবতে লাগলেন। মুজাদ্দিদে আলফেসানীর সেই সব পত্র ‘মাকতুবাত শরিফ’ নামে বিশ্ববিখ্যাত, যা অনূদিত হয়েছে বিশ্বের বহু ভাষায়। পঠিত হচ্ছে দরবেশদের হাজারো খানকায়, সাধারণ পাঠকদের ঘরে ঘরে।


ইসলামের আকিদা-দর্শন, তাসাউফ, ফিকহ বা ইসলামী আইন, আখলাকিয়্যাত বা নৈতিকতার উপর বিশেষ জোর দেন শায়েখ সেরহিন্দি। এসব বিষয়ে রয়েছে তার বহু সংখ্যক রচনা। মাকতুবাত ছাড়াও খুতবাত-ই-মোজাদ্দেদিয়া (মুজাদ্দিদদের বক্তৃতা) সমাজে গভীর-নিবিড় প্রভাব তৈরি করে। তাঁর যেসব বক্তৃতা অনুলিখিত হয়, সেগুলোর সংকলন মুরিদদের কাছে থাকতো। অচিরেই তা সাধারণ পাঠসামগ্রীতে পরিণত হয়। তাঁর শিক্ষা এবং ধারণাসমূহ অসংখ্য মানুষকে আকৃষ্ট করে। তাঁর প্রভাব ভারতের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিল, যা ইসলামী চিন্তাধারা এবং আধ্যাত্মিকতার একটি স্থায়ী উত্তরাধিকারকে বিকশিত করে। ইসলামের সুন্নাহভিত্তিক অনুশীলন এবং সুফিবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে তিনি মুসলিম জীবনে নতুন ঋতুকে আমন্ত্রণ করেন। এর ফল-ফসল এতো ব্যাপক ছিলো এবং এর স্বভাব ও প্রভাব এতো বহুমুখী ছিলো, যা কোথাও আটকে থাকেনি কালের সীমানায়। প্রকৃতপক্ষে আলফেসানীর সাধনা উপমহাদেশে মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের বোঝাপড়াকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং এখনো মুসলিম মনের পুনর্গঠন করে চলছে। আহমদ আল-ফারুকী আল-সিরহিন্দি, মুজাদ্দিদ আলফ-ই সানী, ২৮ ডিসেম্বর ১৬২৪ খ্রিস্টাব্দে (১০৩৪ হিজরি) সিরহিন্দে ইন্তেকাল করেন। (সমাপ্ত)


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে ঘন কুয়াশায় কারণে এক ঘন্টা পর ফেরি চলাচল শুরু

দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে ঘন কুয়াশায় কারণে এক ঘন্টা পর ফেরি চলাচল শুরু

ভারত ও বাংলাদেশের বর্ণনায় বিস্তর ফারাক, কে কি বলছে?

ভারত ও বাংলাদেশের বর্ণনায় বিস্তর ফারাক, কে কি বলছে?

স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেন মির্জা ফখরুল

স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেন মির্জা ফখরুল

জাজিরায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামী আব্দুল কুদ্দুস গ্রেফতার

জাজিরায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামী আব্দুল কুদ্দুস গ্রেফতার

৩ বিভাগ ও ৬ জেলায় বইছে তাপপ্রবাহ

৩ বিভাগ ও ৬ জেলায় বইছে তাপপ্রবাহ

হোসেনপুরে জায়গা নিয়ে সংঘর্ষ

হোসেনপুরে জায়গা নিয়ে সংঘর্ষ

বাংলাদেশে চাইনিজ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার

বাংলাদেশে চাইনিজ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার

ট্রাম্পের শুল্কারোপের প্রভাব সামাল দেওয়া কঠিন হবে না: অর্থ উপদেষ্টা

ট্রাম্পের শুল্কারোপের প্রভাব সামাল দেওয়া কঠিন হবে না: অর্থ উপদেষ্টা

স্যোশাল মিডিয়ায় নজর কেড়েছে আথিয়া, কি বার্তা দিলেন রাহুলের প্রতি?

স্যোশাল মিডিয়ায় নজর কেড়েছে আথিয়া, কি বার্তা দিলেন রাহুলের প্রতি?

ইভ্যালির রাসেল-শামীমার তিন বছরের কারাদণ্ড

ইভ্যালির রাসেল-শামীমার তিন বছরের কারাদণ্ড

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান প্রধান উপদেষ্টা

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান প্রধান উপদেষ্টা

ফিলিস্তিনি শিশু অধিকার দিবসে গাজার শিশুদের করুণ চিত্র, বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ

ফিলিস্তিনি শিশু অধিকার দিবসে গাজার শিশুদের করুণ চিত্র, বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ

টানা ৮ দিন বন্ধ থাকার পর হিলি বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি শুরু

টানা ৮ দিন বন্ধ থাকার পর হিলি বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি শুরু

শরীয়তপুরে জাজিরায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ৭

শরীয়তপুরে জাজিরায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ৭

ভারতে ওয়াকফ সংশোধন বিলের প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের সামনে লেবার পার্টির বিক্ষোভ ৩টায়

ভারতে ওয়াকফ সংশোধন বিলের প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের সামনে লেবার পার্টির বিক্ষোভ ৩টায়

দুই দিনে মার্কিন শেয়ারবাজার থেকে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার উধাও

দুই দিনে মার্কিন শেয়ারবাজার থেকে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার উধাও

উৎসবের পর প্রথম কার্যদিবস : পতনে শুরু শেয়ারবাজার

উৎসবের পর প্রথম কার্যদিবস : পতনে শুরু শেয়ারবাজার

লেবানন-সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে ইসরাইল: আরব লীগ

লেবানন-সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে ইসরাইল: আরব লীগ

পিলখানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা

পিলখানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা

চেনা রূপে ফিরেছে রাজধানী, সড়কে যানজট

চেনা রূপে ফিরেছে রাজধানী, সড়কে যানজট