বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ
০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৮ এএম

বিশ্ব ঐতিহ্যের (World heritage) অংশ খান-উল-আযম উলুঘ খান-ই-জাহান (রহ.) এর শ্রেষ্ঠকীর্তি ষাটগম্বুজ মসজিদ উপমহাদেশে মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। পিরোজপুর-রূপসা মহাসড়কের পাশে খান জাহান (রহ.) এর মাজার শরীফ থেকে প্রায় দেড় মাইল উত্তর-পশ্চিম দিকে সুন্দরঘোনা গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে পাকা সড়ক, পশ্চিম পাশে ঐতিহাসিক ঘোড়াদীঘির অবস্থান। স্থাপত্য কৌশল আর লাল পোড়া মাটির উপর সুনিপুণ লতাপাতার অলংকরণে মসজিদের ভিতর-বাইরে অভাবনীয় সৌন্দর্যের সামাবেশ ঘটেছে।
মসজিদটির দৈর্ঘ ৪৮.৮০ মিটার এবং প্রস্থ ৩২.৯৫ মিটার (বাহ্যিক)। দেয়ালের প্রশস্থতা ২.৭৪ মিটার। এর সামনের দিকে একটি খিলান এবং দু’পাশে ৫টা করে খিলান রয়েছে। পূর্ব-পশ্চিমে ৭টি করে ১১টি সারিতে মোট ৭৭টি গম্বুজ রয়েছে। এর মধ্যে মাঝের এক সারিতে ৭টি গম্বুজের উপরিভাগ চৌকোণা, বাকি ৭০টির উপরিভাগ গোলাকার। মসজিদের ভিতরে পূর্ব-পশ্চিমে ১০টি সারিতে ৬টি করে মোট ৬০টি গুম্বুজ রয়েছে। স্থানীয় লবণাক্ত জলবাযুর প্রভাবে যাতে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে কারণে মসজিদের স্তম্ভের নিচে ৪ ফুট পর্যন্ত চারপাশে পাথরের আস্তরণ দেয়া হয়েছে। এসব পাথর বাইরে থেকে আমদানি করা হয়েছিল। মসজিদের ভিতরে এমন জ্যামিতিক পদ্ধতিতে স্তম্ভগুলো বিন্যাস করা হয়েছে যেন, ইমাম সাহেবের দৃষ্টি মসজিদের যেকোন প্রান্ত পর্যন্ত কোনো বাধা ছাড়াই পৌঁছাতে পারে। দুই পাশে ৭টি করে সম্মুখে ১০টি ও মেহেরাবের পাশে ১টিসহ মোট ২৫টি দরজা রয়েছে। পশ্চিম পাশে আরো ১০টি মেহরাবের মতো রয়েছে। মসজিদের ৪ কোণে রয়েছে ৪টি মিনার, যা ছাদ থেকে ১৩ ফুট উঁচু। মিনারের উপর যাওয়ার জন্য ভিতর থেকে সিঁড়িপথ রয়েছে, যার একটি এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অপরটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ মিনার থেকে আযান দেওয়া হতো। আবার কারো কারো মতে এখান থেকে সৈন্যরা পাহারা দিত, বহিঃশত্রুর চলাচল সম্পর্কে দৃষ্টি রাখত। মিনারের নিচের এ ছোট কক্ষ দুটিকে আন্ধার মানিক ও শলক মানিক বলা হয়।
ঐতিহাসিকদের ধারণা, খান জাহান (রহ.) জৌনপুরের দক্ষ নির্মাণ শিল্পী এনে এই সুরম্য মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে কত সময় এবং কত লোক এর নির্মাণ কাজ করেছেন তা জানা যায়নি। এ মসজিদে প্রায় আড়াই হাজার লোক একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারে। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে অযত্নে আবহেলায় মসজিদটি জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পড়ে। ১৯০৪ সালে পূরাতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক এটি সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। এর পর মসজিদটিকে কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। ৪ কোণে ৪টি গম্বুজসহ ৮১টি গম্বুজ থাকা সত্ত্বেও নাম ষাট গম্বুজ হলো কেন? প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। ছাদ গম্বুজ দিয়ে তৈরি সে কারণেই ছাদ থেকে ‘ষাটগম্বুজ’। আবার কারো কারো মতে, ৬০টি স্তম্ভের উপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত, ফলে ষাট খাম্বুজ থেকে ‘ষাটগম্বুজ’ হতে পারে।
পূর্বে মসিজদের চার পাশে বেষ্টক প্রাচীর ছিল। পূর্বদিকে ছিল প্রবেশ তোরণ। তোরণের দু’পাশে দুটি কক্ষ ছিল। কিন্তু এখন তাঁর কোনো অস্তিত্ব নেই। চার পাশে নতুন করে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এটি শুধু মসজিদ ছিল না, খান জাহান (রহ.) এর দরবার হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। এখান থেকেই তৎকালীন দক্ষিণাঞ্চলীয় স্বাধীন সার্বভৌম ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র হাবেলী পরগনা বা খলিফাতাবাদ রাষ্ট্র পরিচালনা করা হতো।
ইউনেস্কোর অধীন বিশ্ব ঐতিহ্যের (World heritage)অংশ হিসেবে স্বীকৃতির পর ৬শ’ বছরের পুরাতন এ মসজিদের গুরুত্ব এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। প্রতিদিন এ মসজিদ দেখার জন্য দেশ-বিদেশের শত শত পর্যটক ভিড় জমায়। বর্তমানে ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গনের এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন হল যাদুঘর।
১৯৯৩ সালে ইউনেস্কোর অর্থানুকূল্যে এখানে যাদুঘর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ষাট গম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ পাশে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের লাগোয়া ৪৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে যাদুঘরসহ স্টাফ কোয়াটার নির্মাণ করা হয়। ২০০১ সালে যাদুঘর আনুষ্ঠানিকভাবে দর্শকদের জন্য উম্মুক্ত করা হয়। যাদুঘরে ২৮টি গ্যালারি রয়েছে। এখানে খান জাহান (রহ.) এর আমলের শতাধিক নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। ঐ সময়কার রূপার মুদ্রার একটি বাক্স এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। মাত্র ১০ টাকা দর্শনী ফি দিয়ে মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষার্থী, ৩০ টাকা দিয়ে সকল বাংলাদেশি, ৫০০ টাকা দিয়ে সার্কভুক্ত দেশের নাগরিক এবং ২০০ টাকা দিয়ে বিদেশিরা এখানে প্রবেশ করে ঐতিহাসিক এই মসজিদ ও যাদুঘরে রক্ষিত নিদর্শনসমূহ দেখতে পারে।
গত কয়েক বছর ধরে ঐতিহাসিক ষাট গুম্বুজ মসজিদে দক্ষিণাঞ্চলের ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাগেরহাট ছাড়াও দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা ঈদ জামাতে অংশ নিয়ে থাকে।
লেখক : বাগেরহাট সংবাদাতা।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

রাবির ‘বি’ ইউনিটের ফল প্রকাশ: পাশের হার মাত্র ২০.৪৩%, দেখুন আপনার ফল

শেরপুর ভোগাই নদীতে অভিযান, ২০ ড্রেজার মেশিন ধ্বংস ও ১ লাখ টাকা জরিমানা

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলা ঠেকিয়ে দিলেন ট্রাম্প

বিএনপি নেতাদের গোশত ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি, ছাত্রদল আহবায়ককে শোকজ

অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িতদের বিচারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে

চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পূর্ণ-নির্মাণের আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা

মোংলায় বজ্রপাতে বিএনপি নেতার মৃত্যু

ব্যাংকের ভেতরেই প্রতারক চক্রের ফাঁদে নারী!

শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একমত চীন ও মালয়েশিয়া

হাইকোর্টের ৪৮টি বেঞ্চ গঠন, রোববার থেকে চলবে বিচারকাজ

কালীগঞ্জে পৌরসভাকে পরিস্কার রাখতে প্লাসটিকের ডাস্টবিন স্থাপন

‘আগামী মাসে দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া’

তামাকের প্যাকেট দেখিয়ে পাকিস্তানী এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিদ্ধস্তের খবর দিলো ভারতীয় মিডিয়া!

পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা : আরাভ খানের যাবজ্জীবন

সদরপুরে স্বর্ণেরবার দেখিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তি গ্রেফতার

‘বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট নই, দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চলমান থাকবে’

সালথায় ডাকাত দলের ৫ সদস্য আটক

নগরীতে পানি সরবরাহ বন্ধের হুমকি

অবৈধ ভাবে ভারতের অনুপ্রবেশকালে দুই যুবক বকশীগঞ্জ সীমান্ত থেকে আটক !

কর্ণফুলীতে ৫ টাকা বেড়েছে ঘাট ভাড়া; বিপাকে পড়েছেন এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা