যিনি ছিলেন আপোসহীন

Daily Inqilab আ.ক.ম আশরাফুল হক

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম

হক বাতেলের লড়াই চিরন্তন। ধর্ম-অধর্মের বিরোধিতা শাশ্বত। ন্যায়-অন্যায়ের সংঘর্ষ সর্বকালের। তাই যখনই কেউ সত্যের পথে আহবান করেছে, ধর্মের কথা বলেছে, ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করেছে, তখনই তাকে বাতেলের পক্ষ থেকে শক্ত বিরোধিতা ও কঠোর প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছে। হতে হয়েছে নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত। ফলে সময়ের প্রয়োজনেই গড়ে উঠেছে প্রতিরোধব্যবস্থা। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে কঠোরভাবে দমন করতে হয়েছে বাতেল ও অধর্মের অপশক্তিকে। সেখানে আপোস ও সমঝোতার প্রশ্ন অবান্তর। এ অবস্থায় আপোস বা সমঝোতার অর্থ বাতেল ও অধর্মের কাছে আত্মসমর্পণ, যা কোনো হকপন্থী ও মুমিনের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। যেমন, কোরআন মাজীদে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, ‘মুমিনদের থেকে আল্লাহপাক জান্নাতের বিনিময়ে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা লড়াই করবে আল্লাহর রাহে। অতঃপর তারা মারবে এবং মরবে।’ (সূরা আত তাওবাহ: আয়াত-১১১)।

সত্য প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে দ্বীন কায়েমের সংগ্রামে কোনো হক পথের সৈনিক কখনো পিছপা হতে পারে না। বাতেল ও মিথ্যার সাথে আপোস করতে পারে না। কারণ, সে তো ইতোপূর্বেই জান্নাতের বিনিময়ে তার জান-মাল বিসর্জন দিতে আল্লাহপাকের কাছে দায়বদ্ধ। এ দায়বদ্ধতা, নীতির প্রতি অবিচলতা, সত্য ও আদর্শের প্রতি অটলতা দৃঢ়তা এবং মিথ্যা-বাতেল, নীতি ও আদর্শহীনতার বিরুদ্ধে আপোসহীনতা একটি মহৎ গুণ। পৃথিবীতে যত মহামানবই এসেছেন সবাই এই মহৎগুণে বিভূষিত ছিলেন, আছেন।

রসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন চূড়ান্ত ও শাশ্বত সত্য ধর্মের প্রবক্তা। তিনি ছিলেন সেরা মানুষের সেরা; মহামানবের মহামানব। যিনি কেবল সমস্ত ভালগুণের অধিকারীই ছিলেন না; বরং সমস্ত ভালো গুণাবলী তার মাঝেই পেয়েছে পূর্ণতা ও স্বার্থকতা। তাইতো দেখা যায় রসূল (সা.) কে ব্যবহার ও আচরণের দিক দিয়ে পৃথিবীর সেরা অমায়িক ব্যক্তি, ব্যক্তিগত ব্যাপারে অদ্বিতীয় ক্ষমাপরায়ণ ও উদার। নিজের জানী দুশমনও যদি কখনও তার মেহমান হয়েছে, তখন তিনি তার যথেষ্ট মেহমানদারী করেছেন। পক্ষান্তরে নীতি ও আদর্শের ক্ষেত্রে ছিলেন চির আপোসহীন। জুলুম ও অপরাধের বিরুদ্ধে ছিলেন বলিষ্ঠকণ্ঠ। কারণ, তার উদারতা নীতি ও আদর্শবহির্ভূত ছিল না। তিনি উদারতার জন্য কখনও নীতি বিসর্জন দেননি, আদর্শচ্যুত হননি। যার দরুন আপন রক্তের লোকজনও যদি তার নীতি ও আদর্শের বিরোধিতা করেছে, তখন তিনি তাদেরকে সশস্ত্রভাবে মোকাবেলা করতেও কোনো কার্পণ্য করেননি। এমনকি নিজের রক্ত পর্যন্ত দিয়েছেন, দাঁত মোবারক শহীদ করেছেন। এর জ্বলন্ত সাক্ষ্য বদর ও উহুদের যুদ্ধ। সেসব যুদ্ধ ছিল, রসূল (সা.) এর স্বগোত্রীয় লোকজনেরই বিরুদ্ধে। অথচ, আবু জাহালের মতো কিছু প্রেতাত্মাদের রসূল (সা.) এর অত্যাকর্ষণীয় পুণ্যময় জীবনে কালিমা লেপনের ব্যর্থ চেষ্টা করতে দেখা যায়।

বাতেল, মিথ্যা ও অন্যায়ের সাথে রসূল (সা.) এর আপোসহীনতার শাশ্বত সাক্ষ্য সূরা আল কাফিরুন এবং সূরাটির নাযেল হওয়ার নেপথ্য কারণ, প্রেক্ষিত ঘটনা বা শানে নুযুল। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ওলীদ ইবনে মুগীরা, আস ইবনে ওয়ায়েল, আসওয়াদ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ও উমাইয়া ইবনে খালফ প্রমুখ মক্কার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কয়েকজন রসূল (সা.) এর দরবারে এসে বলল, আসুন! আমরা পরস্পরের মধ্যে শান্তিচুক্তি করি। এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যদের এবাদত করবেন এবং এক বছর আমরা আপনাদের উপাস্যের এবাদত করব। তাফসীর কুরতুবী ও তবারানীর বর্ণনায়, বিনিময়ে রসূল (সা.) কে প্রচুর পরিমাণ ধনৈশ্বর্য দেয়ার প্রতিশ্রুতিও ছিল। (তাফসীরে মাজহারী) ইবনে আব্বাস (রা.) থেকেই আবু সালেহ এর রেওয়ায়েতে মক্কার কাফেররা তাদের উপাস্য বা প্রতিমা রসূল (সা.) কর্তৃক স্পর্শ করার শর্তে ইসলামের স্বীকৃতি এবং এর সত্যতা মেনে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। (তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন) এই প্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক এ ধরনের নীতি তথা একত্ববাদ বিরোধী ও বাতেল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সূরায়ে কাফিরুন নাযেল করেন। ইরশাদ হচ্ছে: হে রসূল (সা.) বলুন! হে কাফেররা, আমি এবাদত করি না, তোমরা যার এবাদত কর এবং তোমরাও এবাদতকারী নও যার এবাদত আমি করি। আর আমিও এবাদতকারী নই যার এবাদত তোমরা কর। তোমরা এবাদতকারী নও যার এবাদত আমি করি। তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে। (সূরা আল কাফিরূন: আয়াত ১-৬)।

লেখক : মুহাদ্দিস ও গবেষক।


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বৈশাখের কালো ঘোড়া
কালবৈশাখী
বৈশাখ
আচানক এইসব দৃশ্য
ভারতীয় আধিপত্যবাদের হুমকি
আরও
X

আরও পড়ুন

রাবির ‘বি’ ইউনিটের ফল প্রকাশ: পাশের হার মাত্র ২০.৪৩%, দেখুন আপনার ফল

রাবির ‘বি’ ইউনিটের ফল প্রকাশ: পাশের হার মাত্র ২০.৪৩%, দেখুন আপনার ফল

শেরপুর ভোগাই নদীতে অভিযান, ২০ ড্রেজার মেশিন ধ্বংস ও ১ লাখ টাকা জরিমানা

শেরপুর ভোগাই নদীতে অভিযান, ২০ ড্রেজার মেশিন ধ্বংস ও ১ লাখ টাকা জরিমানা

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলা ঠেকিয়ে দিলেন ট্রাম্প

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলা ঠেকিয়ে দিলেন ট্রাম্প

বিএনপি নেতাদের গোশত ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি, ছাত্রদল আহবায়ককে শোকজ

বিএনপি নেতাদের গোশত ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি, ছাত্রদল আহবায়ককে শোকজ

অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িতদের বিচারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে

অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িতদের বিচারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে

চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পূর্ণ-নির্মাণের আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা

চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পূর্ণ-নির্মাণের আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা

মোংলায় বজ্রপাতে বিএনপি নেতার মৃত্যু

মোংলায় বজ্রপাতে বিএনপি নেতার মৃত্যু

ব্যাংকের ভেতরেই প্রতারক চক্রের ফাঁদে নারী!

ব্যাংকের ভেতরেই প্রতারক চক্রের ফাঁদে নারী!

শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একমত চীন ও মালয়েশিয়া

শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একমত চীন ও মালয়েশিয়া

হাইকোর্টের ৪৮টি বেঞ্চ গঠন, রোববার থেকে চলবে বিচারকাজ

হাইকোর্টের ৪৮টি বেঞ্চ গঠন, রোববার থেকে চলবে বিচারকাজ

কালীগঞ্জে পৌরসভাকে পরিস্কার রাখতে প্লাসটিকের  ডাস্টবিন স্থাপন

কালীগঞ্জে পৌরসভাকে পরিস্কার রাখতে প্লাসটিকের ডাস্টবিন স্থাপন

‘আগামী মাসে দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া’

‘আগামী মাসে দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া’

তামাকের প্যাকেট দেখিয়ে পাকিস্তানী এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিদ্ধস্তের খবর দিলো ভারতীয় মিডিয়া!

তামাকের প্যাকেট দেখিয়ে পাকিস্তানী এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিদ্ধস্তের খবর দিলো ভারতীয় মিডিয়া!

পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা : আরাভ খানের যাবজ্জীবন

পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা : আরাভ খানের যাবজ্জীবন

সদরপুরে স্বর্ণেরবার দেখিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তি গ্রেফতার

সদরপুরে স্বর্ণেরবার দেখিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তি গ্রেফতার

‘বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট নই, দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চলমান থাকবে’

‘বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট নই, দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চলমান থাকবে’

সালথায় ডাকাত দলের ৫ সদস্য আটক

সালথায় ডাকাত দলের ৫ সদস্য আটক

নগরীতে পানি সরবরাহ বন্ধের হুমকি

নগরীতে পানি সরবরাহ বন্ধের হুমকি

অবৈধ ভাবে ভারতের অনুপ্রবেশকালে দুই যুবক বকশীগঞ্জ সীমান্ত থেকে আটক !

অবৈধ ভাবে ভারতের অনুপ্রবেশকালে দুই যুবক বকশীগঞ্জ সীমান্ত থেকে আটক !

কর্ণফুলীতে ৫ টাকা বেড়েছে ঘাট ভাড়া; বিপাকে পড়েছেন এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা

কর্ণফুলীতে ৫ টাকা বেড়েছে ঘাট ভাড়া; বিপাকে পড়েছেন এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা