ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর তাৎপর্য

Daily Inqilab মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম

মুসলিম ঈদোৎসবগুলির মধ্যে ঈদুল ফেতর ও ঈদুল আজহা- এই দুই ঈদকে প্রধান উৎসব বলে খোদ রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন। হিজরতের পর এ ঈদ দুটি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে দান করা হয় এবং এই সূত্রে তা মুসলিম উম্মাহ প্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মুসলমানদের জন্য এমন একটি আনন্দোৎসব, যার কোনো তুলনা হয় না। মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর দুনিয়ায় আগমন উপলক্ষে মক্কায় তার জন্মোৎসব পালন করার প্রথাটি পালন করেন খোদ রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মহান দাদা হযরত আবদুল মোত্তালেব। হযরত আবদুল মোত্তালেব রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্মোৎসবের সূচনা করে গেলেও মহানবী (সা.) এর জীবদ্দশায় তার পবিত্র জন্মোৎসব উদযাপনের খবর জানা যায় না। অথচ, গভীরভাবে চিন্তা করলে অনুধাবন করা যায় যে, দিবসটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য সর্বপ্রথম হযরত আবদুল মোত্তালেবই বুঝেছিলেন। বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সকল সীরাত গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্মের সুসংবাদে হযরত আবদুল মোত্তালেব অসীম আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে তৎকালীন প্রথা অনুযায়ী খাবার দাওয়াতের আয়োজন করেছিলেন। হযরত মওলানা সৈয়দ মুফতী মোহাম্মদ আমীমুল এহসান মোজাদ্দেদী বরকতী (রহ.) এর বর্ণনা অনুযায়ী, বৃদ্ধ সর্দার আবদুল মোত্তালেব পৌত্রের জন্মের সংবাদ শ্রবণ করে গৃহে আগমন করেন এবং নবজাতক শিশুকে খানা-ই-কাবায় নিয়ে যান এবং দোয়া করেন। সপ্তম দিবসে আকীকা করে মুহম্মদ (সা.) নাম রাখেন এবং কোরেশদের দাওয়াত করেন। তিনি বলেন, ‘আমার এই সন্তান সমগ্র বিশ্বে প্রশংসার অধিকারী হবে।’
হযরত শেখ আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী (রহ.) এ সম্পর্কে তার বিখ্যাত পুস্তক মা সাবাতা বিসসুন্নাহ-য় কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। ১২ রবিউল আউয়াল (সোমবার) রাসূলুল্লাহ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন বলে প্রসিদ্ধ বর্ণনায় বলা হয়েছে। এদিন মক্কাবাসীরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্মস্থানের জিয়ারত করত।
জন্মরাতের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে শেখ আবদুল হক (রহ.) বলেন যে, এই রাত শবে কদর হতে উত্তম। কেননা তাঁর শবেবেলাদত হচ্ছে তার জন্মরাত এবং শবে কদর তাকে প্রদান করা হয়। যে রাত্রটিকে তাঁর আবির্ভাবে সম্মানিত করা হয়েছে এটি শবে কদর অপেক্ষা উত্তম। তাছাড়া শবে কদরে শুধু আসমান হতে ফেরেশতারা আগমন করে থাকেন, পক্ষান্তরে জন্মদিবসের রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুমহান সত্তার আবির্ভাব ঘটে। জন্মরজনীর শ্রেষ্ঠত্বের আরও একটি কারণ হচ্ছে এই যে, শবে কদরের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ব শুধু উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য নির্ধারিত। পক্ষান্তরে বাস্তব ঘটনা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উন্মতে মুহম্মদীর জন্য নির্ধারণ করেছেন এবং তারই মহান জাতি সত্তার গুণাবলীর কারণে আসমান এবং জমিন সকল মখলুকাতকে আল্লাহ তা’লা সাধারণ নিয়ামত দ্বারা ধন্য করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) কে আল্লাহ তা’লা সমগ্র জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন বলে স্বয়ং পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল লিল আলামীন।’ সকল সীরাত গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দুনিয়ায় আগমনের খবরে আবু লাহাবের প্রতিক্রিয়ার ঘটনাটি উল্লিখিত হয়েছে। এ সম্পর্কে হযরত শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী (রহ.) এর বর্ণনাটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, আবু লাহাবের বান্দীগণের মধ্যে সোওয়াইবা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ভূমিষ্ট হবার সুসংবাদটি আবু লাহাবকে পৌঁছান। খবরটি শুনে আবু লাহাব বান্দী সোওয়াইবাকে মুক্ত করে দেন। আবু লাহাবের মৃত্যুর পর তার কোনো সঙ্গী তাকে স্বপ্নযোগে দেখেন এবং তার কি অবস্থা জিজ্ঞাসা করেন। আবু লাহাব জবাবে বলেন, ‘জাহান্নামে পড়ে রয়েছি তবে এতটুকু অবশ্যই হয়েছে যে, প্রতি সোমবার রাতে আযাব কিছুটা হ্রাস করা হয়। আবু লাহাব তার দুই আঙ্গুলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন যে, এই আঙ্গুলদ্বয়ের ইঙ্গিতে আমি সোওয়াইবাকে ঐ কারণে আজাদ করেছিলাম যে, সে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্ম লাভের সুসংবাদ জানিয়েছিল। এর বিনিময়ে ঐ দুই আঙ্গুল দ্বারা কিছু পানি পান করি। সোওয়াইবা সম্পর্কে আবু লাহাব বলেন, সে আমার আজাদকৃত বান্দী ছিল, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সে দুধও পান করিয়েছিল।’
শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী (রহ.) বলেন, সোওয়াইবাকে আজাদ করে এই বিনিময় লাভ করতে পারে যে, দোজখে অবস্থান করে ও এক রাতের জন্য আনন্দ খুশি লাভ করে, তাহলে সেসব মুসলমানের অবস্থা চিন্তা করা যায়, যারা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্মোৎসব উপলক্ষে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করে এবং তার মহব্বত ভালবাসায় ক্ষমতানুযায়ী ব্যয় করে। আমার প্রাণের শপথ; রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্মরজনীতে আনন্দ প্রকাশের কারণে আল্লাহ তা’লা তার সাধারণ দয়া-অনুগ্রহে আনন্দ প্রকাশকারীগণকে বেহেশতের বাগানে দাখিল করবেন। মুসলমানগণ সব সময় মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আসছেন। মিলাদ মাহফিলের সঙ্গে সঙ্গে দাওয়াত করে থাকেন, খাবার ইত্যাদির ব্যবস্থা করেন এবং গরিব-দরিদ্রদের নানা রকমের উপহার উপঢৌকন দিয়ে থাকেন। তারা আনন্দ প্রকাশ করেন এবং অকাতরে খরচও করেন। এতদ্ব্যতীত জন্মোৎসব উপলক্ষে কোরআন খতম করান এবং নিজেদের আবাসগৃহ সুসজ্জিত করেন। এসব উত্তম কাজের বরকতে ঐসব লোকের উপর আল্লাহর বরকত রহমত নাজিল হতে থাকে।
শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী (রহ.) ইবনে জওযীর বর্ণনা উদ্ধৃত করে বলেন, মিলাদ মাহফিল আয়োজনকারীদের জন্য বিশেষ অভিজ্ঞতা হচ্ছে এই যে, মিলাদ অনুষ্ঠানকারীরা সারা বছর আল্লাহর আশ্রয়ে নিরাপদে থাকে এবং উদ্দেশ্য ও মকসুদ হাসিলের আনন্দ তাড়াতাড়ি উপভোগ করতে পারে। আল্লাহতায়ালা রহমত নাজিল করেন মীলাদুন্নবীর রাতে যারা ঈদোৎসব পালন করে তাদের প্রতি। আর যাদের অন্তরে দুশমনী হঠকারিতা থাকে তাদের অন্তর সে কাজে আরও শক্ত হয়ে যায়। শায়খ বলেন, ইবনুল হাজ তার ‘মাদখাল’ পুস্তকে উল্লেখ করেছেন যে, মিলাদুন্নবীর মাহফিলে লোকদের বেদাত কুসংস্কার অবৈধ কার্যকলাপ। হারাম বাদ্যযন্ত্রের দ্বারা গান বাজানো এবং বাজনাকে কঠোরভাবে বিরোধিতা করেছেন এবং ঐ সকল গান বাদ্য সম্পূর্ণ নাজায়েজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লামা কুসতুলানী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাস-এই মতের সমর্থনে লিখেছেন যে, তাঁর জন্ম তারিখের দিন মক্কাবাসীরা নিয়মিত জন্মস্থান জিয়ারত করত। আল্লামা কুসতুলানীর উক্তি হতে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্ম তারিখে মক্কাবাসীরা তার জন্মস্থান জিয়ারত করত। এটি ওফাতের পূর্বের ঘটনা হওয়াই স্বাভাবিক। অর্থাৎ জীবদ্দশায় মক্কী জীবনে মুসলমানগণ হযরতের জন্মস্থানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে এরূপ করত। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে যে, মক্কায় হযরতের জন্ম হয় কোন স্থানে? এ সম্পর্কে হযরত থানভী (রহ.) তিনটি মতের কথা উল্লেখ করেছেনÑ শোয়াব, রাদম ও আসফান। সে যাহোক, এই ঘটনা মিলাদোৎসবের এক বড় দলিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বের এসব ঘটনা তার জন্মোৎসব বা ঈদে মিলাদ উদযাপনের প্রকৃষ্ট প্রমাণ। সুতরাং বিশ্ব নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর উম্মতের পক্ষ হতে তার জন্মোৎসব অর্থাৎ ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করার প্রয়োজন ও গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আপন চাচা হযরত আব্বাস (রা.) ইবনে আবদুল মোত্তালেবের একটি ঘটনা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ঘটনাটি হাকিমুল উম্মত হযরত মওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) তার ‘নাশরুত্বীব’ পুস্তকে উল্লেখ করেছেন। যেখানে তিনি হুজুর (সা.) এর অনুমতিক্রমে প্রশস্তিসূচক একটি কাসিদায় তার জন্মবৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কে হযরত থানভী (রহ.) যা বলেছেন তা এই: রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন তাবুক যুদ্ধ হতে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন তখন হযরত আব্বাস (রা.) আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল, আমাকে আপনার কিছু প্রশংসা করার অনুমতি দান করুন।’ (যেহেতু হুজুর (সা.) এর প্রশংসা করা স্বয়ং আনুগত্য তাই), তিনি ইরশাদ করেন, ‘বলো, আল্লাহ তোমার জবানের হেফাজত করুন।’ তখন হযরত আব্বাস (রা.) হুজুর (সা.) এর এক প্রশংসায় আটটি কবিতা সম্বলিত এক কসিদা পাঠ করেন। এসব কবিতায় হুজুর (সা.) এর জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে। তিনি স্বয়ং এই কাসিদা শ্রবণ করেন। মূল কাসিদাটি হযরত থানভী (রহ.) এর উল্লিখিত পুস্তকে উদ্ধৃত হয়েছে।
এই ঘটনা হতে আরো প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্মোৎসব পালন করার সময় তার জীবন চরিত ও আদর্শ শিক্ষা আলোচনা করা একান্ত আবশ্যক। তবে এরূপ আলোচনা বা মিলাদ মাহফিল কেবল তার জন্মদিবস বা জন্ম মাসেই সীমাবদ্ধ নয়, সর্বদাই তা করা উচিত। আরো উল্লেখযোগ্য যে, হযরত হাসসান ইবনে সাবেত (রা.) ছিলেন একজন সাহাবী কবি। তার উপাধি ছিল সায়েরুননবী। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উপস্থিতিতে তার প্রশংসায় বহু কবিতা আবৃত্তি করেন। মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে হুজুর (সা.) এর জীবনচরিত আলোচনা করার তাৎপর্য এতে সহজেই অনুমেয়।
আল্লাহর নামের সাথে যাঁর নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত, যাঁর স্মরণকে স্বয়ং আল্লাহ তা’লা সুমহান করেছেন, মাকামে মাহমুদ যাঁকে দান করে আল্লাহ তাঁর মর্যাদা সুউচ্চ করেছেন, তাঁর জন্মোৎসব ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন করার গুরুত্ব সর্বাধিক, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহর আনুগত্যের সাথে তাঁর রাসূলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের নির্দেশ রয়েছে। তার প্রতি ভালবাসা, আল্লাহর প্রতি ভালবাসা স্বরূপ। যাঁর মধ্যে উত্তম আদর্শ, পবিত্র কোরআন যার মহান চরিত্র এবং যার প্রতি খোদ আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ দরূদ পাঠ করে থাকেন, তার জন্মোৎসব উদযাপন করার সৌভাগ্য আল্লাহর এক মহান অবদান। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের একটি ক্ষুদ্র অথচ মহামূল্যবান আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং আমি আপনার জন্য আপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি।’ (সূরা ইনশেরাহ, আয়াত-৪)।
এই আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কোরআনের ভাষ্যকারগণ বহু মূল্যবান তথ্য পরিবেশন করেছেন, যা একত্রিত করা হলে এক বিরাট গ্রন্থ হয়ে যাবে। কতিপয় হাদীসের আলোকে এখানে আয়াতটির ব্যাখ্যার সার সংক্ষেপ প্রদত্ত হল:
১. ইবনে হাব্বান তার গ্রন্থে হযরত আবু সাঈদ (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আয়াতটি সম্পর্কে হযরত জিবরাইল (আ.) কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ এরশাদ করেন: ‘ইয়া যুকিরতু যুকিরতা মায়ী’। আপনার স্মরণকে সমুন্নত করার অর্থ হচ্ছে যখন আমাকে স্মরণ করা হয়, আমার সাথে আপনাকেও স্মরণ করা হয়।২. ২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, আয়াতের অর্থ হচ্ছে, আযানে তাকবীরে, তাশাহুদে মিম্বরসমূহের উপর, খোৎবাসমূহে। সুতরাং যদি কেউ আল্লাহতালার এবাদত করে এবং প্রত্যেক কথায় তার সত্যতা স্বীকার করে কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) এর রেসালাতের সাক্ষ্য না দেয় তাহলে তার এসব আমল নিষ্ফল। সে কাফেরই থেকে যাবে।৩. হযরত কাতাদাহ (রা.) বলেছেন, আল্লাহতালা তার স্মরণকে দুনিয়া ও আখেরাতে বুলন্দ করেছেন। প্রত্যেক বক্তা, প্রত্যেক তাশাহুদ পাঠকারী-আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাথে আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলুল্লাহ-ও উচ্চারণ করে থাকে।
কেবল বিশ্বজগতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর স্মরণ সীমাবদ্ধ নয়, যার কিছুটা বিবরণ উপরে বর্ণিত হয়েছে, এমনকি আলমে গাইব বা অদৃশ্য জগতেও তাঁর নাম অহরহ স্মরণ করা হচ্ছে। আলমে গাইবের তিনি হচ্ছেন সুলতান। কোনো স্থান, মহল এমন নেই যেখানে তাঁকে উত্তরূপে স্মরণ করা হয় না। তাঁকে স্মরণ করা হয় কবরে, হাশরে এবং ফেরেশতাগণও জিজ্ঞাসা করেন মুহম্মদ (সা.) এর আনুগত্য স্বীকার করেছিল কিনা কিংবা তাঁর অবাধ্য ছিল কিনা? তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল কিনা? জান্নাতের দ্বার সমূহে এবং আরশের উপরও তাঁর নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে। অনুকূল, প্রতিকূল এমন কোনো তারিখ নেই যাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে স্মরণ করা হয় না। অস্বীকারকারীরা ও তাঁর প্রশংসা না করে পারে না। 
মোট কথা, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গুণাবলি বর্ণনা ও প্রশংসা বলে শেষ করা যাবে না। তাই জন্মদিবস পর্যন্ত তাঁর স্মরণ আলোচনা সীমাবদ্ধ করে তাঁর সুমহান মর্যাদাকে খাটো করা যায় না বরং আল্লাহর জিকিরের ন্যায় সার্বক্ষণিকভাবে হযরত মুহম্মদ (সা.) এর জন্মোৎসব ও সীরাতে পাক আলোচনা করা এবং তাঁর আদর্শ-শিক্ষার অনুসারী হওয়ার মধ্যেই রয়েছে সর্বপ্রকারের কল্যাণ।


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

ধীর গতিতে নাৎসি-স্টাইলের ফ্যাসিবাদে এগুচ্ছে ভারত

ধীর গতিতে নাৎসি-স্টাইলের ফ্যাসিবাদে এগুচ্ছে ভারত

আতঙ্ক কাটিয়ে আবারও নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প

আতঙ্ক কাটিয়ে আবারও নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প

কোরআনে বর্ণিত স্বৈরশাসকদের করুণ পরিণতি

কোরআনে বর্ণিত স্বৈরশাসকদের করুণ পরিণতি

শোক পালন বা শোক দিবস : প্রেক্ষিত ইসলামের নির্দেশনা-১

শোক পালন বা শোক দিবস : প্রেক্ষিত ইসলামের নির্দেশনা-১