জনমনে ফিরছে স্বস্তি
০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
সরকারের নানামুখী উদ্যোগে নিত্যপণ্যের বাজারে অন্থিরতা অনেকটা কমেছে। বাজার মনিটরিং, বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক ছাড়, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি এই সব ধরনের প্রচেষ্টায় বাজারে কিছুটা হলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ডিম ও পেঁয়াজের দাম কমাতে সরকার গত মাসে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। তাতে বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১১০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে ছিল। ডিমের বিক্রয় মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। এখনো সেই নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হলেও গত সপ্তাহের চেয়ে দাম ডজনে ১০ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহে ডিম ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা ডজন বিক্রি হলেও গতকাল তা ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা ডজন বিক্রি হয়। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সরকার যে অস্বস্তিতে ছিল তা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। তেমনি ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসছে। সবজির বাজারে ইতোমধ্যে স্বস্তি ফিরছে। বাজারে এরই মধ্যে আসতে শুরু করেছে আগাম শীতের সবজি। এতে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজির মধ্যে ঢেড়শ, পটোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে নেমেছে, যা গত সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ২০ টাকা কম। এছাড়া বেগুন, করলা ও কাঁকরোল ৫০ থেকে ৭০ টাকা ও পেঁপে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও এসব সবজির দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি ছিল। বাজারে ফুলকপি ৫০ টাকা থেকে কমে ৩০ টাকা, পাতাকপি ৭০-৮০ টাকা থেকে কমে ৪০-৫০ টাকা এবং লাউ ৮০-১০০ টাকা থেকে ৫০-৬০ টাকায় নেমেছে। কাঁচা কলার হালি ৫০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতিটি ৬০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শিম ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা ১৬০ টাকায়, দুই সপ্তাহ আগেও যা ছিল ২৫০-২৮০ টাকার ওপরে। মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ছে। কিছুদিনের মধ্যে সবজির দাম আরও কমে আসবে। বাজারে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে ৬৫-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দুই তিন সপ্তাহ আগেও ডিমের বাজার ছিল অস্থির। প্রতি ডজন ডিম ১৬০-১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর এ ভোগ্যপণ্যটির দাম কমে ১৪০-১৪৫ টাকায় নেমেছে।
মালিবাগ বাজারের ডিম বিক্রেতা আকবর আলী বলেন, সবজির দাম কমেছে, যে কারণে এখন ডিমের দামও কমে আসছে। ভোক্তারা তুলনামূলক কম দামে শীতের নতুন সবজি পাচ্ছে। এদিকে ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা গত সপ্তাহেও একই দাম ছিল। গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা এক হাজার ২০০ টাকা, বাইম এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তাদের জন্য এক বিব্রতকর অবস্থার তৈরী করেছিল। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর মানুষ ভেবে ছিল এবার বাজার সিন্ডিকেট ভাঙবে এবং নিত্যপণ্যের দাম কমবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হচ্ছিল না। বরং কিছুদিন যেতে না যেতেই অনেক পণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। এতে সাধারণ মানুষের জীবন ধারণ অসহনীয় হয়ে ওঠে। বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারকেও খুব চিন্তায় ফেলে দেয়। তারা নানান উদ্যোগ নিতে শুরু করে। এর মধ্যে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। এতেও কাজ না হওয়ায় পেঁয়াজ, ডিম এসব পণ্যের আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকার বাজার মনিটরিং বৃদ্ধি করে। বাজার মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাগাম ছাড়া। দিন যাচ্ছে তো দাম বাড়ছে আর বাড়ছে। নিত্যপণ্যের দামে এবার লাগাম টানতে বাজার মনিটরিংয়ে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হচ্ছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, অনেকগুলো পণ্য ডিউটি ফ্রি করার পরেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বাজার মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুতই মাঠে নামবে টাস্কফোর্স। এরপর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার পরিস্থিতি এবং সরবরাহ তদারক ও পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে ‹বিশেষ টাস্কফোর্স’ গঠন করে সরকার। জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের এই বিশেষ টাস্কফোর্সে ২ জন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আছেন। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এর সদস্যসচিব। টাস্কফোর্সের অন্যান্য সদস্যরা হলেন-অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা বা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, ক্যাবের প্রতিনিধি। এই টাস্কফোর্স নিয়মিত বিভিন্ন বাজার, আড়ত, গোডাউন, কোল্ড স্টোরেজ ও সাপ্লাই চেইনের অন্যান্য স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারক করছে। পণ্য উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্যে যেন দামের পার্থক্য ন্যূনতম থাকে তা নিশ্চিত করতে টাস্কফোর্স কাজ করছে ও সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছে। সরকারের এই উদ্যোগ যথেষ্ট ফলপ্রসু হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম অনেকটা কমেছে।
তবে গত আগস্ট সেপ্টেম্বর অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্যের কারণে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অক্টোবরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি আবারো ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলেও এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মূলত গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরের বন্যার প্রভাবে অক্টোবরে দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তিনি বলেন, গত সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতি জোর করে কমিয়ে রাখা হতো। কিন্তু জুলাইয়ের পর থেকে এটা ফ্রি। যার কারণে সঠিক তথ্যই ওঠে আসছে। পণ্যের দাম কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। ৭ বছর ধরে বেড়ে চলা মূল্যস্ফীতি হঠাৎ করেই কমানো যাবে না। মানুষকে আরও কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কম আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডলার রেট বর্তমানে স্থিতিশীল আছে। সুতরাং মূল্যস্ফীতি কমতে বাধ্য।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বিশেষ টাস্কফোসের বাজার মনিটরিংয়ের ফলে সিন্ডিকেটের কারসাজি অনেকটা কমে গেছে। পেঁয়াজ এবং ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। এর ফলে দাম অনেকটা কমে এসেছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসলে এ দাম অর্ধেকে নেমে যাবে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন। এ চাহিদার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশই পূরণ হয় স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে। বাকি চাহিদা আমদানি করে পূরণ করা হয়। ডিম নিয়ে এতদিন করপোরেট কম্পানিগুলো কারসাজি করেছে। টাস্কফোর্সের বাজার মনিটরিংয়ে ফলে সে কারসাজি এখন বন্ধ হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এর ফলে ডিমের বাজার আর অস্থিরহওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শহীদদের রক্তের সঙ্গে যাতে বেঈমানি না হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা থাকবে : নতুন সিইসি
খালেদা জিয়াকে ১২ বছর সেনাবাহিনী থেকে দূরে রাখা হয়েছে : মির্জা ফখরুল
সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস ফিরে আনতে হবে -আল-কাউসার পরিষদ বাংলাদেশ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কুশল বিনিময়
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি
শিখ নেতা হত্যা, মোদীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ কানাডার
দলীয় ভিত্তিতে প্রশাসন সাজিয়ে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না: এ এম এম বাহাউদ্দীন
আদানির সঙ্গে জড়িত মোদিও: রাহুল গান্ধী
আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ২৫ নভেম্বর ঢাকায় আসছেন
সোহেল-টুকু-হেলালসহ খালাস পেলেন বিএনপির ২২ নেতাকর্মী
ইরানে উদ্ভাবনে নারীদের অবদান ২৪ শতাংশের বেশি
প্রকাশায় ৯৩ শতাংশ নকল করেও পদোন্নতি পান রাবি অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন
বোরহানউদ্দিনে নিখোঁজের দুই ঘন্টা পর লেবু বাগানে মিললো শিশুর লাশ
নাবালক ছাত্রের সঙ্গে জবরদস্তি যৌন সঙ্গম, ৩০ বছরের জেল শিক্ষিকার
সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ
মার্কিন সংসদের নারী শৌচাগার ব্যবহার করতে পারবেন না রূপান্তরকামী এমপি
বাগেরহাটে হত্যা মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড
অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন জিওসি
কুড়িগ্রামের উলিপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু
ভারতে পাচারকালে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে দুই নারী উদ্ধার