‘ধন্যবাদের তালিকা শেষ হওয়ার নয়’
৩০ মার্চ ২০২৫, ০২:৩২ এএম | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫, ০২:৩২ এএম

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরা একজন জানেন হৃদস্পন্দনের মাহাত্ম্য, মানেন সৃষ্টিকর্তার মহানুভবতা। সেই উপলব্ধি হার্ট অ্যাটাকের পরই বুঝেছিলেন তামিম ইকবাল। দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ভেবেছেন বিস্তর, বুঝেছেন জীবনের সত্যিকারের মানে। এমনিতেই তামিম পরপোকারী হিসেবে তামিমের সুনাম ক্রীড়াঙ্গণে, এবার তার তালিকায় যুক্ত হলো আরো কিছু নাম, মুখ। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরে তাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন দেশসেরা এই ক্রিকেটার। হার্ট অ্যাটাকের পর সবার কাছ থেকে পাওয়া সহযোগিতা, সমর্থন ও ভালোবাসার পরশে কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের হৃদয়।
সামাজিক মাধ্যমে গতপরশু রাতে তাই বিশদ এক বার্তায় তিনি খুলে দিলেন মনের আগল। কঠিনতম সময়ে কাছে পাওয়া সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন দেশের সর্বকালের সেরা ওপেনার, ‘আপনাদের সবার দোয়ায় ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর রহমতে এখন আমি বাসায়। উথালপাথাল এই চারটি দিনে নতুন জীবন যেমন পেয়েছি, তেমনি আমার চারপাশকে আবিষ্কার করেছি নতুন করে। সেই উপলব্ধির সবটুকুতে মিশে আছে কেবল ভালোলাগা ও কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সবার ভালোবাসার ছোঁয়া ক্যারিয়ারজুড়ে নানা সময়ই পেয়েছি। তবে এবার তা অনুভব করতে পেরেছি আরও তীব্রভাবে। আমি সত্যিই আপ্লুত।’
বিকেএসপিতে গত সোমবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে টস করার পর অসুস্থবোধ করেন তামিম। কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে মাঠে ফেরেন তিনি। এরপর ঢাকায় ফেরার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার মুহূর্তেই ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব অধিনায়কের। তখন দ্রুততার সঙ্গে তাকে নিয়ে আবার কেপিজে হাসপাতালের দিকে ছোটেন ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পাল ও মোহামেডান ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরি ডালিম। অ্যাম্বুলেন্স চালকের অসামান্য দক্ষতায় মহামূল্যবান কিছু সময় বেঁচে যায় তখন। বাসায় ফিরে ওই চালকের কথাও আলাদা করে বললেন তামিম, ‘বিকেএসপিতে আমার অসুস্থতার শুরু থেকেই তাৎক্ষণিকভাবে অনেককে পাশে পেয়েছি । ম্যাচ রেফারি দেবু দা (দেবব্রত পাল), বিকেএসপির চিকিৎসকরা এবং আরও যারা তখন ছিলেন সেখানে, অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার যে ভাই আমাকে দ্রুতগতিতে নিয়ে গেছেন হাসপাতালে, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
দ্বিতীয় দফায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে বেশ কিছুক্ষণ হৃৎস্পন্দন ছিল না তামিমের। এমনকি মুখ দিয়ে ফেনা ঝরতে শুরু হয় তার। তখন তাৎক্ষণিকভাবে ‘সিপিআর’ ও ‘মাউথ টু মাউথ রিসাসিটেশন’ দিয়ে তামিমের জ্ঞান ফেরান ট্রেনার। কেপিজে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর, হৃদরোগ ইন্সটিউটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদসহ বিশেষজ্ঞরা বারবারই বলেছেন, তামিমকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল ট্রেনার ডালিমের। তাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষাই যেন নেই তামিমের কাছে, ‘আমাদের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরী ডালিম ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব কীভাবে, আমার আসলে জানা নেই। আমি পরে জেনেছি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন যে, ডালিম ভাই ওই সময় সঠিকভাবে সিপিআর না দিলে হয়তো আমাকে বাঁচানো যেত না। উপযুক্ত মানুষকে উপযুক্ত সময়ে আমার পাশে রেখে আল্লাহ আমাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়েছেন।’
হাসপাতালে নেওয়ার পর তামিমের হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। তখন কেপিজে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মনিরুজ্জামান মারুফের তত্ত্বাবধানে দ্রুততম সময়ে স্টেন্ট বসানো হয়। ফলে জটিলতা বাড়ার ঝুঁকি কমে যায় অনেকটা, ‘কেপিজে হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনিরুজ্জামান মারুফ ও তার দক্ষ চিকিৎসক দল তাদের পেশাদারিত্ব আর আন্তরিকতার মিশেলে যেভাবে দ্রুততায় চিকিৎসা করেছেন, আমাদের দেশের চিকিৎসকদের মান ও কার্যকারিতাই ফুটে উঠেছে তাতে। আমি পরে শুনেছি যে, দেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডা. মারুফ ও তার দল মিরাকল ঘটিয়েছেন। গোটা চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় কেপিজে হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকা থেকে শুরু করে যারা যে কোনোভাবে যতটুকু সম্পৃক্ত ছিলেন, সবাইকে হৃদয়ে লালন করব আজীবন। এই হাসপাতালে যতটুকু সময় ছিলাম, তাদের হৃদ্যতার পরশ অনুভব করে যাব সবসময়।’
প্রথম দফায় হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে তামিম চাচ্ছিলেন ঢাকায় ভালো কোনো হাসপাতালে চলে যেতে। নিজ থেকেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার ব্যাপারে যোগাযোগও করেন তিনি। কিন্তু সেটিতে ওঠার আগেই ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয় তার। তাই সময় নষ্ট না করে কেপিজে হাসপাতালেই আবার নেওয়া হয় তাকে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হাসপাতালটিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসাই পান তামিম। ফলে দুই ঘণ্টার মধ্যে স্টেন্ট বসানোর প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়ে যায়। ঢাকার বাইরে এমন হাসপাতাল ও সেবার মান দেখে অভিভূত তামিম, ‘ঢাকা শহরের বাইরে ওই এলাকায় এতটা উঁচু মানের হাসপাতাল আছে, এতটা কুশলী চিকিৎসক দল ও স্টাফরা আছেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার এগিয়ে চলার একটি প্রমাণ এটি। দেশজুড়ে নানা জায়গায় এর কাছাকাছি মানের হাসপাতাল যদি আরও কিছু থাকে, আমার মতো আরও অনেক মানুষের প্রাণ রক্ষা পেতে পারে।’ ট্রেনার ডালিম, চিকিৎসক মারুফ ছাড়াও কঠিন এই সময়ে পাশে পাওয়া সবার প্রতিই কৃতজ্ঞ অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার, ‘ধন্যবাদের তালিকা আসলে শেষ হওয়ার নয়। আরও অনেকেই নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, অনেকের কথা জানি, অনেকের কথা হয়তো জানি না। এতটুকু জানি, ধন্যবাদ পাওয়ার আশায় তারা কিছু করেননি। আমি তাদের ভালোবাসার ঋণে আবদ্ধ সারা জীবনের জন্য। পুরোপুরি সেরে ওঠার পথ এখনও দীর্ঘ। আমাকে ও আমার পরিবারকে প্রার্থনায় রাখবেন। সবার জীবন সুন্দর ও শান্তিময় হোক। ভালোবাসা সবার জন্য।’
এই ভালোবাসা নিয়েই এবার তামিমের লড়াইটা ক্রিকেটে ফেরার। সেই অপেক্ষাতে দেশের ক্রিকেটও।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

মাথায়গুলি নিয়েই মারা গেলেন জুলাই যোদ্ধা হৃদয়

আটঘরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২জন এসএসসি পরীক্ষার্থী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

শেরপুরের গজনী অবকাশ কেন্দ্র ও মধুটিলা ইকোপার্কে ঈদের পরে ৬ষ্ট দিনেও পর্যটকের ভিড়!

বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৮ দিন পর আমদানি-রপ্তানি শুরু

পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেই ছাড়ল নিউজিল্যান্ড

তুরস্কে কেনাকাটা বয়কটের আন্দোলনে গ্রেপ্তার ১১

চিকিৎসক সংকট কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

গদিতে থাকার চেষ্টা করলে চুপ করে বসে থাকবে না বিএনপি

বিশ্বের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকা থেকে বাদ সামিটের আজিজ খান

ফলের কার্টনে পাওয়া লাশের টুকরো অংশগুলো সাভারের সবুজ মোল্লার

জুলাইযোদ্ধা হৃদয় মাথায় গুলি নিয়েই চলে গেলেন

শরীয়তপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ

যুদ্ধবিরতি-বন্দি বিনিময়ের নতুন প্রস্তাব দিয়েছে মিশর

সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে ভারতীয় ৬ গরু আটক

এবার ভারত মহাসাগরে সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমানের বহর পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

নোয়াখালীতে ভয়াবহ আগুনে ৫ দোকান পুড়ে ছাই

বিতর্কিত ওয়াকফ বিল পাস, বিক্ষোভে উত্তাল ভারত : গ্রেফতার ৪০

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা চাইলেন মোদি, ড. ইউনূস বললেন, হাসিনাকে ‘থামাতে’

ওয়াকফ বিল সংশোধন সংবিধানের ওপর নির্লজ্জ আক্রমণ : সোনিয়া গান্ধী

স্নান উৎসবকে ঘিরে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে ১৫ কিলোমিটার যানজট