বাফুফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তুষার
১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৪৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:২৮ পিএম
আর্থিক অনিয়মের দায়ে ফিফা কর্তৃক ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগকেই করা হয়েছে ‘বলির পাঠা’। নিষেধাজ্ঞা কাটালেও তাকে আর বাফুফেতে ফেরানো হবে না। তার জায়গায় বাফুফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন ইমরান হোসেন তুষার। যিনি এতদিন সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী ও বাফুফের প্রটোকল অফিসার ছিলেন। আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে বাফুফেতে স্থায়ী সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হবে। এই সময়ের জন্য তুষারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সোমবার বিকালে বাফুফের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিকাল ৪টায় ছিল এই জরুরি সভা। সেই সভা চলে ইফতারের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত।
বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ ফিফা থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন গত শুক্রবার। তিন দিনের মধ্যে সোমবার জরুরি সভার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দিয়েছে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি। সভা শেষে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন,‘আমাদের দৈনন্দিন অনেক কর্মকান্ড চলে। আমাদের কাজ চলমান রাখার জন্য ইমরান হোসেন তুষারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তার বর্তমান দায়িত্বের সঙ্গে অতিরিক্ত হিসেবে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।’
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বকাল প্রসঙ্গে সালাম মুর্শেদী বলেন,‘ইমরান হোসেন তুষারকে মূলত ৩ মাসের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই দায়িত্ব অনাধিক ৬ মাসের। আমরা মাস তিনেক পর পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্থায়ী সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যাবো। এর আগ পর্যন্ত তুষার কাজ চালিয়ে যাবেন।’
ইমরান হোসেন তুষার ২০১৬ সালে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। এরপর প্রটোকল বিভাগের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অতিরিক্ত হিসেবে এখন এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব।
এদিকে নিষিদ্ধ হওয়া সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগ ইস্যুতে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাফুফে। আর্থিক অনিয়ম ও অসঙ্গতির দায়ে গত ১৪ এপ্রিল সোহাগকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। নিষিদ্ধের পাশাপাশি তাকে প্রায় ১২ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। বাফুফের নির্বাহী কমিটি সোহাগের শাস্তির বিষয়ে তদন্ত করে দেখতে চায়। জরুরি সভা শেষে এ প্রসঙ্গে বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেন,‘পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।’ তদন্ত কমিটিতে বাফুফের চার সহ-সভাপতি যথাক্রমে ইমরুল হাসান, কাজী নাবিল আহমেদ, আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক ও মহিউদ্দিন আহমেদ মহির সঙ্গে আছেন তিনি সদস্য জাকির হোসেন চৌধুরি, সত্যজিৎ দাশ রুপু, ইলিয়াস হোসেন এবং বাফুফের ইন্টারন্যাল অডিট কমিটির তিন সদস্য।
আবু নাইম সোহাগের কর্মকা-ে আর্থিক অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। এই দায় ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আব্দুস সালাম মুর্শেদী এড়াতে পারেন কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সালাম মুর্শেদী দৃঢ়কন্ঠে বলেন,‘ফিন্যান্স কমিটির কোনো দায় বা ব্যর্থতা ফিফার প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। এটা সম্পূর্ণ সাধারণ সম্পাদক সোহাগের ভুল। এর দায় আমরা নেব না।’ তিনি যোগ করেন,‘ফিফার শাস্তির মেয়াদ শেষ হলেও আবু নাইম সোহাগকে আর বাফুফেতে ফেরানো হবে না। এটা আজকের (সোমবার) সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
এই সিদ্ধান্তের ফলে সোহাগ বাংলাদেশের ফুটবল থেকে আজীবন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পড়লেন। ফিফার দুই বছরের নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে আবেদনের কথা জানিয়েছিলেন। আবেদনে শাস্তির মেয়াদ কমলে বা শেষ হলে ফুটবলাঙ্গনে ফেরার সুযোগ ছিল সোহাগের। বাফুফের সিদ্ধান্তের ফলে সোহাগের ফুটবল অধ্যায় সমাপ্ত হলো। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে- তাহলে ২০০৮ সাল থেকে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত কাদের সঙ্গে কাজ করেছেন সোহাগ? বিপদের সময় যারা তার পাশে থাকবেন না। নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাফুফের সভাপতি বলেছিলেন, সোহাগের পাশে থাকবেন। কিন্তু এর ২৪ ঘন্টার মধ্যে তিনি ভোল পাল্টে বললেন, সোহাগের শাস্তির দায় নেবেন না। এবার সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী সরাসরি বলেই ফেললেন, শাস্তির মেয়াদ শেষ হলেও সোহাগকে আর বাফুফেতে ফেরাবেন না তারা! অথচ সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, আবু নাইম সোহাগ ছিলেন বাফুফের একজন বেতনভুক্ত কর্মকর্তা। কোনো পাগলও এটা বিশ্বাস করবে না যে, বাফুফের সভাপতি এবং ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যানের নির্দেশ ও অনুমতি ছাড়া কোন কাজ করেছেন সোহাগ।
বিভাগ : খেলাধুলা