ক্রীড়াঙ্গনে ২০২৪ সালের প্রভাবশালী নারী ব্যক্তিত্ব যারা
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম
তারা নেতৃত্ব দেন, অনুপ্রাণিত করেন, নিজস্ব ইভেন্টটিকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করে। এমনই উদাহরণ সৃষ্টি করে চলেছেন বিশ্ব জুড়ে সফল নারী ক্রীড়াবিদরা। ব্যালন ডি’অর বিজয়ী থেকে শুরু করে রেকর্ড ভাঙ্গাগড়ার অর্জন পর্যন্ত, এই নারীরা যা কিছু সম্ভব তার সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
এইতানা, সিমোনে বাইলস, ডায়ানা তওরাসি এমন কয়েকজন আইকন যারা বিশ্বজুড়ে নারীদের ভবিষ্যৎ ভাস্কর্য করে চলেছেন, তাদের কথাই এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা একবার বলেছিলেন, ‘বিশ্বকে বদলে দেবার ক্ষমতা ক্রীড়ার রয়েছে।’ প্রতিটি পদক্ষেপ, গতি ও সিদ্ধান্তের সাথে ২০২৪ সালে নারীদের দ্বারা এই ধারণা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আবেগ এবং শক্তির ক্ষেত্রগুলোতে, এই নারীরা প্রতিযোগিতার সীমাবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। মাঠ ও মাঠের বাইরে তারা পরবর্তী প্রজন্মের সামনে এমন একটি উদাহরণ রেখে গেছে যাতে করে সমতা ও অগ্রগতির জন্য অনুঘটক হিসেবে তাদের প্রভাব সকলের মাঝে বিরাজ করবে।
অলিম্পিক বছরে সবসময়ই ক্রীড়াঙ্গনে আলাদা একটি সৌন্দর্য্য, আকর্ষণ থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্যারিস অলিম্পিকের যাদুকরী সব লড়াই এখনো সকলের মনে গেঁথে আছে। শেষ পর্যন্ত প্রতিভা ও প্রতিশ্রুতিরই জয় হয়েছে। বছর জুড়ে সফল নারী ক্রীড়াবিদদের সংখ্যা নেহায়েত কম না, মাত্র ১০ জন দিয়ে এই তালিকায় সীমারেখা টানা যাবে না। এই প্রবাহ প্রতি বছরই নদীর মত বয়ে চলেছে। যা পুরো ক্রীড়াঙ্গনেই প্রভাব ফেলছে।
প্রতিটি নারী ক্রীড়াবিদেরই এগিয়ে যাবার পিছনে রয়েছে একেকটি গল্প। যে কারনে এই ধরনের তালিকা করা সত্যিই কঠিন। তাদের এই অর্জণ শুধুমাত্র পদক প্রাপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা, বরং পুরো সমাজকে বদলে দেবার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে করেছে। এই বছর, আগের চেয়ে আরও বেশি খেলাধুলা বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ এবং স্থানীয় বিজয়ের একটি মঞ্চ হয়েছে, যেখানে নারীরা দেখিয়েছে যে কেবলমাত্র শিরোপা জয়ই নয়, মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনেও ক্রীড়ার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
গত ১২ মাসে খেলাধুলায় সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০ জন নারীকে এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এমন একটি গল্পের প্রধান চরিত্র যা কেবল বর্তমানের মধ্যেই রচিত হচ্ছে না বরং একটি সফল ও অন্তর্ভুক্ত ভবিষ্যত হিসেবে সকলের মনে থেকে যাচ্ছে।
জুলিয়েন আলফ্রেড (সেন্ট লুসিয়ার স্প্রিন্টার) :
প্যারিস অলিম্পিকে ১০০ মিটারে স্বর্ণজয়ী স্প্রিন্টার আলফ্রেডের মাধ্যমে বিশ্ব এ্যাথলেটিক্সই শুধুমাত্র পরিবর্তিত হয়নি। বরং দ্রুততম মানবী হিসেবে তিনি একন জাতীয় আইকনে পরিনত হয়েছেন।
সেন্ট লুসিয়া এর আগে কখনই অলিম্পিকে পদক জয় করেনি। নিজের প্রিয় ইভেন্টে সবার আগে প্রতিযোগিতা শেষ করে আলফ্রেড নিজ দেশকে সেই সম্মান এনে দিয়েছে। ২০০ মিটারে তিনি জিতেছেন রৌপ্য পদক। মাত্র ২৩ বছর বয়সে আলফ্রেড শুধুমাত্র আর্থিক ভাবেই পুরস্কৃত হননি বরং নিজ দেশে একখন্ড জমিও পেয়েছেন। একইসাথে তরুণ ক্যারিবিয়ান এ্যাথলেটদের আজীবনের অনুপ্রেরণা হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার সম্মানে সেন্ট লুসিয়ায় একদিনের ছুটিও ঘোষনা করে স্থানীয় সরকার।
এইতানা বোনমাতি (বার্সেলোনার তারকা) :
বোনমাতির মাধ্যমে নারী ফুটবল একজন স্বীকৃত দূতকে খুঁজে পেয়েছে। টানা দ্বিতীয় ব্যালন ডি’অর ও ফিফার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের ট্রফিটি যেন বোনমাতির জন্যই এ বছর তুলে রাখা হয়েছিল। তার ধারেকাছেও এবারের এই দুই অর্জনের মঞ্চে কেউ ছিলেন না। বার্সেলোনার মধ্যমাঠে অতুলনীয় একজন নেতা বোনমাতির কল্যাণে গত বছর কাতালান জায়ান্টরা ঐতিহাসিক কোয়াড্রাপল জয় করে।
কিন্তু তার প্রভাব মাঠের বাইরেও বিস্তৃত হয়েছে। তিনি স্প্যানিশ জাতীয় দলের মধ্যে সমতার জন্য একজন কট্টর সমালোচক ছিলেন, নারী ফুটবলে কাঠামোগত ত্রুটিগুলো সম্পর্কে খোলাখুলিভাবে কথা বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্বকাপ জয়ে পর থেকে কিছুই পরিবর্তন হয়নি।’ এমন কথা বলতেও তিনি কার্পণ্য করেননি।
ডায়না তওরাসি (ডব্লিউএনবিএ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল আইকন) :
৪২ বছর বয়সেও বাস্কেটবল কিংবদন্তী ইতিহাস রচনা করে চলেছেন। প্যারিসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দলগত ইভেন্টে ষষ্ঠ অলিম্পিক পদক জয়ের রেকর্ড গড়েছেন। এখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক স্পিরিট বজায় রেখে তিনি অবিচল গতিতে বাস্কেটবল কোর্ট দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। অপ্রতিরোধ্য প্রতিভা দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। নতুন প্রজন্মের কাছে যা সত্যিই অনুপ্রেরণার। বাস্কেটবলে তার উত্তরাধিকার আসলে শ্রেষ্ঠত্ব এবং ধৈর্য উভয়েরই প্রমাণ।
ইলোনা মাহের (ইউএস রাগবি সেনসেশন) :
নিজস্ব কারিশমা ও সত্যতা দিয়ে মাহের রাগবিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। প্যারিস অলিম্পিকে তার সাফল্যের কারনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে ফলোয়ার্সের সংখ্যা মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে একজন নেতৃস্থানীয় দূত হিসেবে তিনি আবির্ভুত হয়েছেন। মাহের শুধুমাত্র শরীরের ইতিবাচকতা সম্পর্কে তার বার্তাগুলির জন্যই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাগবির প্রোফাইলকে উন্নত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবার জন্যও জনপ্রিয় হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দেশ যেখানে রাগবি এখনও প্রসারিত হচ্ছে।
আরি সানচেজ ও পওলা হোসেমারিয়া (বিশ্ব সেরা প্যাডেল জুটি) :
এ বছর সফল ও প্রভাবশালী নারী ক্রীড়াবিদদের তালিকায় শীর্ষস্থানেই থাকার কথা এই জুটির। প্যাডেলে আধিপত্য দেখিয়ে আরি ও পওলা ১০টি শিরোপা জয় করেছেন। এর মধ্যে চারটি মেজর টুর্নামেন্টের তিনটি ছাড়াও প্রিমিয়ার প্যাডেল ফাইনাল উল্লেখযোগ্য। ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত জিতেছেন ৩৭টি ট্রফি। এর মাধ্যমে নারী প্যাডেলার হিসেবে যমজ দুই তারকা সানচেজ-আলেয়াতোর কৃতিত্বকে ছাড়িয়ে ইতিহাস রচনা করেছেন।
সিমোনে বাইলস (জিমন্যাস্টিকসের অবিসংবাদিত রানী) :
প্যারিস অলিম্পিকে চারটি পদক জয় করে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকালের সেরা জিমন্যাস্ট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাইলস। ক্রীড়া প্রতিভা ছাড়িয়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তার শক্তিশালী বক্তব্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
মাইকেল ক্যাং (নারী ফুটবলে দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব) :
মাত্র পাঁচ বছরে, ফুটবল সম্পর্কে কিছুই না জেনে তিনটি নারী দলের মালিক হয়েছেন। ক্যাংয়ের দৃষ্টিভঙ্গি তাকে মহিলাদের খেলাধুলায় পারফরম্যান্স এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নেবার লক্ষ্যে প্রকল্পগুলিতে ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে পরিচালিত করেছিল। কিনিস্কা স্পোর্টস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে তার লক্ষ্য হল নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য ক্রীড়া বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটানো।
ক্যাং বলেছেন, "আমি এই তরুণ মহিলাদের তাদের স্বপ্ন অর্জনে সাহায্য করার জন্য কৃতজ্ঞ।’
ক্রীড়া জগতে একজন রূপান্তকারী নেতা হিসাবে তার ভূমিকা সকলের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
এমা হেইস (যুক্তরাষ্ট্র নারী ফুটবল দলের কোচ) :
হেইস প্রমাণ করেছেন যে তিনি কেন ফুটবলের সবচেয়ে প্রভাবশালী কোচদের একজন। ২০১২ সালের পর মাত্র ১০ সপ্তাহের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। উপরন্তু, তিনি চেলসির সাথে তার সপ্তম উইমেনস সুপার লিগ শিরোপা অর্জন করেন, একজন অভিজাত কৌশলবিদ হিসেবে তার খ্যাতি আরও শক্তিশালী করেন।
কেইতলিন ক্লার্ক (বাস্কেটবলের নতুন মুখ) :
মাত্র ২২ বছর বয়সে ক্লার্ক এনসিএএ স্কোরিং রেকর্ড ভাঙেন এবং আইওয়া এবং সাউথ ক্যারোলিনার মধ্যে চ্যাম্পিয়নশীপ খেলার জন্য ১৮.৯ মিলিয়ন দর্শকদের আকর্ষণ করেন। নিজেকে নারী বাস্কেটবলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। টাইম ম্যাগাজিন দ্বারা বছরের সেরা অ্যাথলিট হিসেবে মনোনীত ক্লার্ক তার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ডব্লিউএনবিএ’তে কালো নারীদের অবদানকে স্পটলাইট করেন। আধুনিক যুগের নি:সন্দেহে সবচেয়ে প্রভাবশালী ক্রীড়াবিদ বিলি জিন কিংও ক্লার্কের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
কোকো গফ (বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনভুক্ত টেনিস খেলোয়াড়) :
মাত্র ২০ বছর পেরিয়েছেন, তবুও তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী সম্পদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই টেনিসেও তিনি প্রভাব বিস্তার করছেন। আটলান্টার এই তরুণ টেনিসের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। ২০২৪ সালে তিনি রিয়াদের ফাইনালে শিরোপা জয়ের জন্য রেকর্ড ৪.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করেছেন।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাবিতে পোষ্য কোটা বিতর্ক: ১ শতাংশ নির্ধারণ, সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি শিক্ষার্থীদের
রাবির দুই সহকারী প্রক্টরের নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক, যোগদান থেকে বিরত
মানিকগঞ্জে পুরস্কার পেলেন পুলিশের তিন ট্রাফিক কর্মকর্তা
মানিকগঞ্জে “ ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পুরস্কার পেলেন পুলিশের তিন ট্রাফিক কর্মকর্তা
খালেদ এবার হাসনাতকে বললেন, মাস্তানি দেখাবেন? পেলেন যে সমুচিত জবাবও
সৈয়দপুরে জমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্বে বাড়ীতে হামলা ও লুটপাট থানায় আভিযোগ
এসএফসি (আর্মি) ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট সমাপ্ত
দেশে আবার চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে : মির্জা ফখরুল
ইংল্যান্ডে টুখেল অধ্যায় শুরু
অবতরণের আগে ঠিক কী করেছিলেন অভিশপ্ত বিমানের পাইলট?
ঢাকা আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে ১২ ইরানি চলচ্চিত্র
বর্ষসেরা এশিয়ান স্কুলবয় বক্সার ইরানের আহমাদি
মানিকগঞ্জে খান বাহাদুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবীনবরন অনুষ্ঠান
লক্ষ্মীপুরের জকসিন বাজারে কোটি টাকার খাস জমি উদ্ধার
৬৫ ডিআইজি-পুলিশ সুপারকে একযোগে বদলি
লক্ষ্মীপুরের জকসিন বাজারে কোটি টাকার খাস জমি উদ্ধার
সৈয়দপুরে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত
আটঘরিয়ায় ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে র্যালি-শোভাযাত্রা
সাবেক ডিএমপি কমিশনার গোলাম ফারুক ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শুরু হলো মাস্টারকার্ড-এর ফ্ল্যাগশিপ ‘উইন্টার স্পেন্ড অ্যান্ড উইন ক্যাম্পেইন ২০২৫’