অস্তিত্ব সঙ্কটে ঝিনাই নদী
০৫ জুন ২০২৩, ০৯:৪৬ পিএম | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩, ১২:০৫ এএম

এক সময় প্রচুর ঝিনুক পাওয়া যেতো বলে নদীটির নাম হয়েছে ঝিনাই। স্বাধীনতা যুদ্ধসহ নানা কারণে জামালপুরবাসীর জন্য ঝিনাই নদী ঐতিহাসিক একটি নদী। এই নদীর নামেই নামকরণ হয়েছিলো জামালপুর জেলার জনপ্রিয় পত্রিকা সাপ্তাহিক ঝিনাই।
ঝিনাই নদীর উৎস শেরপুর জেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে। আর জামালপুর হয়ে টাঙ্গাইল জেলার বংশী নদীর মোহনায় মিলিত হয়েছে নদীটি। ১৩৩ কিলোমিটার দৈর্ঘের সর্পিলাকার প্রকৃতির ঝিনাই নদীর গড় প্রস্থ ৭৬ মিটার। এই নদীর পানি দিয়ে এক সময় চাষাবাদ হতো নদীর দু’পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকার জমি। যেই নদীর বুকে চলতো পাল তোলা নৌকা, জাহাজ। সেই নদীর বুকে এখন আবাদ হচ্ছে ধান, মরিচ, পাট, ভুট্টাসহ নানা ফসল। নদী দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে নানা স্থাপনাও। শুকনো মৌসুমে নদীটি মরা গাঙ্গে পরিনত হয় এক সময়ের খরস্রোতা ঝিনাই নদী।
জামালপুর পৌরসভার কম্পপুর এলাকার বাসিন্দা আনু হোসেন বলেন- ‘এই নদীতে খুব স্রোত ছিলো। কুমির ছিলো, নৌকা চলতো। আমরা ছোট বেলা দেখছি। এহন মরুভূমি হয়ে গেছেগা। নদীতে পানি নাই।’
নদীর তীরবর্তী হাটচন্দ্রা এলাকার বাসিন্দা শতবর্ষী ইদ্রিস আলী বলেন- ‘দশ পনেরো বছর ধরে এই নদীতে পানি নাই। এহন নদী শুকায় গেছে। এর আগে নদীটা খুব গভীর ছিলো। নৌকা চলছে। বড় বড় লঞ্চ চলছে। সব কিছুই চলছে এই দিক দিয়ে। এখনতো একেবারে তর হয়ে গেছে। এখন ফসলাদি কেউ কেউ করতাছে। এরকম পইরে আছে। কোথাও কোথাও পানি আছে।’
স্থানীয়দের দাবি, দখল-দূষণ ও পলি জমে নদীর উৎস মুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে ঝিনাই।
নদীর তীরবর্তী কম্পপুর এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান বলেন- ‘১০-১৫ বছর ধরে নদীটি ভরাট হয়ে গেছে। এই নদীর মুখটা বন্ধ হয়ে গেছে। যে জায়গা দিয়ে পানিটা অতিবাহিত হয়ে আসতো। ওই জায়গাটাই ভরাট হয়ে গেছে। এখন পানিটা আসে উল্টাভাবে। যমুনার পানিটা আসে। আগে আসতো ব্রহ্মপুত্র হয়ে। খুব স্রোত ছিলো একসময়। ভাঙনও ছিলো। এখন ভরাট হওয়ার পরে ভাঙনও নাই। নদীতে ওই রকম পানিও নাই। নদীই নাই।’
জামালপুর জেলা নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন- ‘ভূমি দস্যু ও এক শ্রেণির লোভী মানুষের কারণে আজকে ঝিনাই নদী মৃত প্রায়। নদীর দুই পাড়ে দখল হয়ে গেছে। নদীর প্রবাহ বাধা গ্রস্থ করে বাধ দিয়ে এখানে ধান চাষ করা হচ্ছে। তারপরে জ¦ালা ফালানো হচ্ছে। এছাড়াও অনেক পলি জমে নদীটি ভরাট হয়ে গেছে।
নদীটি খনন করা হলে দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি কৃষি কাজ ও মৎস আহরন করেও উপকৃত হবেন বলে আশা করছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা।
নদীর তীরবর্তী রশিদপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন- ‘নদী অনেক দিন ধইরে মরা। নদীটি খননের দরকার। নদীটা খনন হলে আঙ্গর এলাকাবাসী সবারই উপকারে আসবো। গোসল করতে পারবো, গরু-বাছুর ধোয়াতে পারবো। আবাদি ফসলের জন্যেও উপকারি হবো। আমরা সবাই মিলে মাছও পাবো।’
কম্পপুর এলাকার বাসিন্দা লেবু মিয়া বলেন- ‘নদীটা থাকলে আমাদের সুবিধা হতো। পচা-মল যা আছে, সব ভেসে যেতো। গরু-বাছুর সবাই সাতার কাটতো, গোসল করতো। মাছ মেরে খেতে পারতো। গরীব মানুষের এটাই সুবিধা। আমি চাই যে খনন করে নদীটা আগের মতো সচল হোক। আগে যেমন ছিলো তেমনই জারি হোক। সচল স্বাভাবিক হলে অনেক ভালো হবে।’
এ প্রসঙ্গে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন- ‘ঝিনাই নদী পুন:খননের জন্য এবং প্রবাহ সচল করার জন্য ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক আইডাব্লিউ দ্বারা একটি স্টাডি সম্পন্ন করেছে। তারা যদি এবিষয়ে কোনো প্রকল্প গ্রহণ না করে। তাহলে পরবর্তীতে ওখানে নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।’
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

র্যাংগস ই-মার্টে শুরু হলো এসি কার্নিভাল

ঈদুল ফিতরে ২১ হাজার উদ্যোক্তাকে ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়তা করলো জাতিকইজি

‘মঙ্গল’ নাম বদলে ক্ষোভ, ব্যাখ্যা চান চারুকলার শিক্ষার্থীরা

এক হাজার শয্যার আধুনিক হাসপাতাল উপহার দিচ্ছে চীন

২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রিজার্ভ

বৈশাখের কালো ঘোড়া

কালবৈশাখী

বৈশাখ

আচানক এইসব দৃশ্য

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

নারায়ণগঞ্জে আরসা প্রদানসহ ছয় জনের ফের আট দিনের রিমান্ডে

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ সরদার বকুলের বিরুদ্ধে

ভারতীয় আধিপত্যবাদের হুমকিভারতীয় আধিপত্যবাদের হুমকি

কবিতায় বৈশাখ

দ্রুত সময়ে ময়মনসিংহে বিভাগীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু হবে: বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ

নববর্ষ ও বিজাতীয় আগ্রাসন

নানার বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে পুকুরে ডুবে প্রাণ গেলো শিশুর

বাংলা সন ও সাংস্কৃতিক লড়াই

মাগুরার চাঞ্চল্যকর আছিয়া ধর্ষন মামলার চার্জশিট দাখিল

‘জয় শ্রীরাম’ শ্লোগান দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বিতর্কে তামিলনাডুর রাজ্যপাল