ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
সালথার পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসা

চার বছরেও শেষ হয়নি ভবন নির্মাণকাজ

Daily Inqilab হারুন-অর-রশীদ, সালথা (ফরিদপুর) থেকে

১১ জুলাই ২০২৩, ০৮:১৭ পিএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসার চার তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় চার বছর আগে শুরু হয়। দেড় বছর মেয়াদি ওই প্রকল্পের ৫০ ভাগ কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কক্ষ সঙ্কটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকেরাও বসার জায়গা পাচ্ছেন না।

মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল ৩ কোটি ২৫ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘নির্বাচিত মাদরাসাসমূহের উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় চারতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ফরিদপুর শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করা হলে ফরিদপুরের মেসার্স রিয়াজ কর্পোরেশন এন্ড গোলাম মনসুর জেভি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। ২০১৯ সালের ৭ জুলাই কার্যাদেশ দেয়া হয়। কাজের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় ১৮ মাস। সে হিসাবে ২২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখের মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে অজুহাত দেখিয়ে গত ২০ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়িয়েও নির্মাণাধীন চতুর্থ তলা ভবনের কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন চতুর্থ তলা ভবন নির্মাণের জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষ পুরাতন ভবনের ৫টি শ্রেণিকক্ষ ভেঙে ফেলে। এ কারণে নিমার্ণাধীন ভবনের পাশে টিনশেডের জরাজীর্ণ একটি ভবনে পাঠদান চলছে। নতুন নির্মাণাধীন চতুর্থ তলা ভবনটির তিনতলার ছাদ ঢালাই করা হয়েছে। শৌচাগার নির্মাণ হয়নি। দেয়ালে পলেস্তারা লাগানো হয়নি। রুমের জানালা নেই, দরজা নেই, ফ্যান নেই, প্রচন্ড গরম, শ্রেণিকক্ষের অভাব ও জরাজীর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হচ্ছে।

এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ঝড়-বৃষ্টি হলে পানি পড়ে বই-খাতা ভিজে যায়। এ কারণে অধিকাংশ সময় নিয়মিত পাঠগ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শৌচাগার নির্মাণ না হওয়ায় আমরা খুব বিপদে আছি। তাই দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি। মাদরাসার ইংরেজি শিক্ষক ফরহাদ হোসাইন ফাহিম বলেন, ‘আমরা যেভাবে পাঠদান অব্যাহত রেখেছি তা একেবারেই অমানবিক। শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে, পাশাপাশি আমাদেরও সমস্যা হচ্ছে।’

মাদরাসা সুপার মাওলানা মাহফুজুর রহমান বলেন, শুরু থেকেই ঠিকাদার বিরতি দিয়ে দিয়ে কাজ করছেন। আমরা ঠিকাদারকে দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করার অনুরোধ করছি, তাতে কোন লাভ হয়নি। বর্তমানে যেসব শ্রেণি কক্ষে পাঠদান চলছে সেগুলো জরাজীর্ণ ও বেহাল অবস্থা। তাছাড়া শ্রেণিকক্ষ সংকটে গাদাগাদি করে একই কক্ষে অথবা খোলা আকাশের নিচে রোদ, বৃষ্টি, শীত উপেক্ষা করে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এতে করে শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা একাধিক বার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো সত্ত্বেও কোনো ফল মেলেনি। নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ভবন নির্মাণকাজে দেরি হচ্ছে। মাঝে মাঝে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোক আসে, একটু আধটু কাজ করে চলে যায়। যেসব শ্রেণি কক্ষে পাঠদান চলছে সেগুলো বৃষ্টি হলেই টিনের ফুটা দিয়ে পানি পড়ে বইপুস্তকসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চলমান বর্ষা মৌসুমে ঝড় শুরু হলে যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে শিক্ষকদের বসার কক্ষটিও।

এ প্রসঙ্গে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, করোনাকালীন বেশ কিছু উন্নয়ন কাজই স্থবির হয়ে পড়েছিল। তার মধ্যে ফান্ডের অভাবে পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসার চতুর্থ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কাজটাও অনেক দিন বন্ধ রয়েছে। তবে, সেটা চালু করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই ফের কাজ শুরু করা হবে।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিয়াজ কর্পোরেশন এন্ড গোলাম মনসুর জেভির স্বত্বাধিকারী মো. রিয়াজ হোসেন শান্ত তার গাফলতির কথা স্বীকার করে বলেন, আমার পারিবারিক সমস্যার কারণে ও বরাদ্দ সংকটে কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।’

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, ফান্ডে টাকার সংকট থাকায় কাজের ধীরগতি হয়েছে। তারপরেও আমরা দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বলেছি। কাজটি দ্রুত শেষ করাতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান