ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১
কুড়িগ্রামে অনাবৃষ্টি ও বেপরোয়া লোডশেডিং

ভরা বর্ষায় আমন ক্ষেত চৌচির

Daily Inqilab শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে

০১ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০০ পিএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

কুড়িগ্রামে অনাবৃষ্টি ও অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের কারণে জমিতে সেচ দিতে না পারায় আমন আবাদ নিয়ে দুঃচিন্তায় কৃষক। মৌসুমের শুরুতেই খরায় আমনের অনেক বীজতলা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। এতে আমন চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার প্রান্তিক চাষিরা। বৃষ্টি না হলে আমন ফসলের আশানুরুপ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা করছে কৃষকরা।

আমন আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত ও জমিতে লাগানো চারা বাঁচাতে এখন কৃষকদের ভরসা ভূগর্ভস্থ পানি। বর্ষা নির্ভর আমন চাষে এখন অনাবৃষ্টির কারণে সেচ দিতে খরচ বাড়ছে কৃষকের।

জেলার কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় কমবেশি সব এলাকাতেই এবার খরার কবলে পড়েছে আমন। এর মধ্যে সদরের হলোখানা, ভোগডাঙ্গা, পাঁচগাছী, উলিপুর উপজেলার থেতরাই, বজরা, ধামশ্রেণী ও রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ, নাজিমখা এবং ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা এবং নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে অবস্থা বেশি খারাপ। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকরা গভীর-অগভীর সেচযন্ত্র চালু করে আমনের চারা লাগাচ্ছেন।

এদিকে লোডশেডিংয়ে সেচ কাজও ব্যাহত হচ্ছে। সঠিক সময়ে জমিতে সেচ দিতে না পারায় আমনের ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে চারা লাগানো হয়েছে। সেচের জন্য মাঠে রয়েছে ৩০ হাজার সেচযন্ত্র। খরা মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত সেচযন্ত্রের প্রায় সবগুলোই চালু রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রস্তুত রয়েছে ৭ হাজার হেক্টর আমন বীজতলা।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন এক বিঘা জমিতে বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিতে বর্তমানে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে। আমনের চারা লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত ও খরার কবলেপড়া আমনের চারা বাঁচাতে ইতোমধ্যে কমপক্ষে দুইবার সেচ দিতে হয়েছে। এই মৌসুমে এভাবে অনাবৃষ্টি থাকলে কমপক্ষে আরও ছয়বার সেচ দিতে হবে। সেই হিসাবে জেলার ১ লাখ ২৮ হাজার হেক্টর আমনের ফসল রক্ষায় এবার সেচের খরচ বাবদ ব্যয় হবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

কৃষকরা বলছেন, জুনের শেষ সপ্তাহ ও জুলাইয়ের প্রথম চার-পাঁচ দিন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছিল। মাঠের অনেক জমিতে পানিও জমে গিয়েছিল। কিন্তু তখন জমি প্রস্তুত না হওয়ায় ও বীজতলার চারার বয়স কম থাকায় কৃষকেরা ধানের চারা লাগাতে পারেনি। সাধারণত জুলাইয়ের এক-দুই সপ্তাহ পর থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমনের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। এখন বৃষ্টির দরকার, কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। গত ১৫-২০ দিন ধরে কুড়িগ্রামে ভারি বৃষ্টি হয়নি। এই সময়ে কখনো টিপটিপ, কখনো একপশলা বৃষ্টি হলেও বর্ষা নির্ভর আমন চাষের জন্য তা নগন্য।

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর গ্রামের কৃষক রহিম উদ্দিন হায়দার বলেন, গত ১৫ দিন ধরে আমাদের এলাকায় ভারি বৃষ্টি হয়নি। খরার কারণে চারা লাগানোর জন্য প্রস্তুত করা জমির মাটি ফেঁটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। যেসব জমিতে চারা লাগানো হয়েছে পানির অভাবে ওই সব চারা মরে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছে। একদিকে খরা আরেক দিকে চলছে লোডশেডিং। এতে প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আবাদ করার চেয়ে না করাই ভালো মনে হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়নের চৈতার খামার গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, বৃষ্টি তো নাই, তার উপর ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং। এভাবে চলতে থাকলে এবার আবাদ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিলে প্রচুর খরচ। আর বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমনের সময় পার হলে ফলন ভালো হয় না।

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের কৃষক চাঁদ মিয়া বলেন, গত বছরও আষাঢ়-শ্রাবণ মাস ঠিকমতো বৃষ্টি ছিল না। এবারো একই অবস্থা। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে আবাদ খরচও বেড়েছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হলেও আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে এখনই চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। আমনের মৌসুম কেবলই শুরু হয়েছে। পুরো আগস্ট মাস জুড়েই আমনের চারা লাগানো যাবে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকবে এবং আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবো।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন

বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন

এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার

এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস

লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের

লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের

সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক

সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক

ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!

ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!

যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা

তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল

তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল

৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা

৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা

‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে

‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে