ভার্মি কস্পোস্ট সার উৎপাদনে নারীদের ভাগ্য বদল
১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় ভার্মি কপোস্ট সার উৎপাদন ও বাজারজাত করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছে নারী উদ্যোক্তা জাসমা আক্তার ও তার প্রতিবেশীরা। এতে করে দিন দিন তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ও কৃষিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। এ সার উৎপাদনে বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয় না। ভার্মি কস্পোস্ট সার বা কেঁচো সার কৃষি ফসল উৎপাদন অত্যন্ত কার্যকরী একটি জৈব সার। এই সার রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করে গোয়ালন্দে উপজেলার কৃষকেরা ব্যাপক সুবিধা পাওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাপক হারে। এতে করেও উজানচর ইউনিয়নের নবুনছিম উদ্দিনপাড়া জাসমা আক্তারসহ ছোট ভাকলা ইউনিয়নের স্বরুপারচক গ্রাম ও এর আশপাশের সীমিত আয়ের প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের সদস্যরা স্বল্প পুঁজি খাটিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় এই সার উৎপাদন ও বাজারজাত করে বাড়তি আয় করছে। এই আয়ে তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় শতাধিক বাড়িতে এই ভার্বিকম্পোস্ট সার বা কেঁচো সার উৎপাদন করা হচ্ছে। ওই গ্রামগুলো দিনে দিনে কেঁচো সার গ্রাম নামে পরিচিত পাচ্ছে। পরিবারের নারী পুরুষ মিলে এই সার তৈরি করে বাড়তি আয় করছে।
ভার্মি কস্পোস্ট সার উৎপাদনে নারী উদ্যোক্তা জাসমা আক্তার বলেন, আমার এক বান্ধবীকে দেখেছি এই কেঁচো সার উৎপাদন করতে। তখন আমি আমার বান্ধবীর কাছ থেকে মাত্র তিন কেজি কেঁচো ৩৬০০ টাকা দিয়ে কিনে এনে। আমার বাড়িতে দুটো গরু ছিলো। সেই গরুর গোবর দিয়ে প্রথমে তিনটি রিং বসিয়ে তার মধ্যে গোবর পচা কলা গাছ কেটে দিয়ে সার উৎপাদনের কাজ শুরু করি। যখন এখান থেকে তিন বস্তা সার পেলাম তখন ভাবলাম এটা কোথায় বিক্রি করব। তখন আমার বান্ধবীকে আমি বলি যে এই সার কোথায় বিক্রি করব। সে আমাকে বলে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করো। আমি কৃষি অফিসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তিন বস্তা সার বিক্রি করেছি। পরবর্তীতে ১০টি রিংয়ের সার উৎপাদন করি তারপরে বিশাল একটি সেট করে নিয়েছি সেখানেই ভার্মিকম্প সার উৎপাদন করি। তখন কৃষি কর্মকর্তা আমাকে বললেন আপনি কি আরো বড় পরিসরে করতে চান। তখন আমি বললাম জি আমি আরো বড় পরিসরে করতে চাই। সে সময় থেকে কৃষি অফিস আমার সব ধরনের সহযোগিতা করতে লাগলো। তারা ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করার জন্য বিশাল একটি সেট করে দিয়েছে এবং কি সার ছাকনি করার জন্য একটি বড় মেশিন দিয়েছে। ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরিতে প্রাথমিকভাবে এ সার উৎপাদনে ৪২ ইঞ্চি স্কয়ারের একটি পাকা রিং ১২০ কেজি গরুর গোবর ও ৫০০ টি কেঁচো দিয়ে সার উৎপাদনের কাজ শুরু করা যায়। এতে রিং প্রতি এক হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। ৫০ থেকে ৬০ দিন পর ৮০ কেজি সার পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা। এরপর আর কিছু কিনতে হয় না। শুধু গবর কিনতে হয় পরবর্তীতে ওই কেঁচো নতুন রিংয়ের মধ্যে গবরে বসিয়ে দিতে হয়। এ সময় রিং প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করা যায়। প্রথমে দশ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে দশটি রিং এর মাধ্যমেও উৎপাদন কাজ শুরু করলে প্রতি মাসে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা আয় করা যায় বাড়িতে বসে।
কৃষক হুমায়ুন জানান, আমার যত আবাদি জমি আছে। আমার সব জমিতে আমি জৈব সার ব্যবহার করি এতে করে জমিতে ভালো ফলনপাই। এক বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ২০ বস্তা করে জৈব সার লাগে। যে জমিতে জৈব সার দিয়ে শাকসবজি আবাদ করা হয় সে শাকসবজির স্বাদই ভিন্নরকম। তাই এই উপজেলার প্রতিত জমিতে জৈব সার ব্যবহার করে ফসল আবাদ করা হচ্ছে আর ভালো ফলন পাচ্ছে কৃষকেরা। দিনে দিনে এই উপজেলার কৃষকেরা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করছে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খোকনুজ্জামান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার কৃষি উন্নয়নে ব্যয় কমিয়ে ফলন উৎপাদন বাড়াতে ভার্মি কম্পোস্ট সার বা কেঁচো সার উৎপাদন করে রাসায়নিক সার ব্যবহার কমানো সম্ভব। তাই আমরা কেঁচো সার উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়েছি। উদ্যোক্তাদেরকে আমরা সব ধরনের সুবিধা ও সহযোগিতা করে যাচ্ছি। নারীরা যাতে করে সংসারের পাশাপাশি বাড়িতে বসেই বাড়ির আঙিনায় রিংয়ের মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট কেঁচো সার উৎপাদন করে সারে চাহিদা মেটাতে পারে।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভিক্ষুক, মোট সম্পত্তি ৭.৫ কোটি
মেসির ফেরার ম্যাচে মায়ামির নাটকীয় জয়
ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম
মোদি বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতে নির্বাচনের চেষ্টা করছেন : কেজরিওয়াল
রাজনীতিবিদের সুন্দরী স্ত্রীকে নিয়ে হইচই
‘কারা আগে যাবে’ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২ গ্রুপের দ্বন্দ্ব, নিহত তরুণ
সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু
ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে
প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক
স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা
বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন
বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু
ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার
যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা
সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন
পানির সংকট
নীতি ও দুর্নীতির লড়াই
শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা
মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে