মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের ঝিটকা-মানিকগঞ্জ ও ঝিটকা-হরিরামপুর আঞ্চলিক সড়কে তিন ব্রিজের চলমান কাজ ধীর গতি হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বেইলিব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে। এতে করে তিনটি বেইলি ব্রিজের পাটাতন ফাঁক হয়ে মাঝে মাঝেই যান চলাচলে বিঘœ ঘটছে। ফলে এই আঞ্চলিক সড়কে জনদুর্ভোগ যেন নিত্যনৈমিত্ত হয়ে উঠেছে অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা যায়, ঝিটকা-হরিরামপুর আঞ্চলিক সড়কে উপজেলার দিয়াবাড়ি বাজার সংলগ্ন খাল ও লেছড়াগঞ্জ বাজার সংলগ্ন ইছামতী নদীর ওপর এবং ঝিটকা-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের কৌড়ি কলেজ গেট এলাকায় খালের ওপরসহ তিনটি ব্রিজের কাজ চলছে প্রায় বছর দুয়েক ধরে। ব্রিজের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও সবগুলো ব্রিজের সংযোগ সড়ক এখনও নির্মাণ শেষ হয়নি। ফলে তিনটি ব্রিজের পাশেই দীর্ঘদিনের পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ বেইলিব্রিজের ওপর দিয়ে নিয়মিত পণ্যবাহী যানবাহনসহ যাত্রীবাহী সিএনজি, ইজিবাইক, নসিমন, মোটরসাইকেলসহ প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। অনেক সময় বেইলিব্রিজের পাটাতন ফাঁক হয়ে যাওয়ায় মাঝে মাঝেই যান চলাচলসহ পথচারীদের পায়ে চলার রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়।

গত এক সপ্তাহ আগে ঝিটকা-হরিরামপুর আঞ্চলিক সড়কের লেছড়াগঞ্জবাজার সংলগ্ন ইছামতী নদীর ওপর বেইলিব্রিজের পাটাতন ফাঁক হয়ে একদিকে কাত হয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রায় দুই দিন রাস্তাটি বন্ধ থাকায় হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাত হয়। এর দু’দিন না যেতেই ঝিটকা-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের কৌড়ি এলাকার বেইলি ব্রিজের ওপর পণ্যবাহী ট্রাক বিকল হয়ে রাস্তা আটকে যায়। এতে যানবাহন তো দূরের কথা পথচারীদের চলাফেরাই বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দুই দিন শত শত যানবাহন ৩/৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করেছে।

এ সব জায়গায় প্রতিটি বেইলিব্রিজের পাশেই দীর্ঘদিন ধরে নবনির্মিত ব্রিজের কাজ চলমান থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রাসহ যাতায়াত করা বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই সরু এই বেইলি ব্রিজের পাটাতনগুলো নড়বড় হয়ে গেছে। যে কোনো যানবাহন উঠলেই নড়বড়ে পাটাতনে বিকট শব্দ হয় এবং গাড়িগুলোও অনেক সময় একদিকে ঝুঁকে যায়। এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। উপজেলার বড় বাণিজ্যক কেন্দ্র ঝিটকা বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় শত শত টন কাঁচামাল নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক, বিভিন্ন কোম্পানির মালবাহী যানবাহন চলাচল করে। এছাড়াও ঝিটকা থেকে প্রতিদিন মানিকগঞ্জ শহর, সাভারের হেমায়েতপুর ও গিলন্ড পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক সিএনজি ও ইজিবাইকসহ হাজার যানবাহন চলাচল করে।

মোটরসাইকেল আরোহী বাল্লা ইউনিয়নের খেরুপাড়া গ্রামের সুমন চক্রবর্তী জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এই ব্রিজের কাজগুলো চলমান রয়েছে। ব্রিজের কাজ অনেকটা সম্পন্ন হলেও সংযোগ সড়কের কাজ এখনও শেষ হয়নি। ফলে এই পুরাতন বেইলিব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে পণ্যবাহী গাড়িগুলো বিকল হয়ে রাস্তা আটকে যায়। তাই ব্রিজের সংযোগ সড়কগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করা না হলে জনগণের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কাজ চলায় ধুলোবালিতে মানুষের চলাচলেও কষ্ট হচ্ছে।

ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত মানিকগঞ্জ সদরের বাসিন্দা মো. আব্দুর সাত্তার সাদিক বলেন, অনেক দিনের পুরাতন বেইলিব্রিজ নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় এই এলাকার তিনটি ব্রিজে চলাচলে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝেই আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। নবনির্মিত ব্রিজগুলোর কাজ সম্পন্নসহ সংযোগ সড়কগুলোর কাজ দ্রুত শেষ না হতে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ হবে না।

ঝিটকা-হরিরামপুর সড়কের ইজিবাইক চালক অসিম মিয়া বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ১ হাজারের অধিক ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করে। এছাড়া ছোট বড় ট্রাক, কাকড়া গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহনও এই সেতুটি দিয়ে চলাচল করে। এছাড়া ঈদসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক ও সামসজিক আচার অনুষ্ঠানেও যান বাহনের চাপ পড়ে। ফলে পাটাতনগুলো একদিকে নিচু হয়ে ফাঁক হয়ে যাচ্ছে। এতে করে অনেক সময় গাড়ি একটু কাত হলে যাত্রীরাও ভয় পায়। তাই দ্রুত নতুন ব্রিজগুলোর কাজ শেষ করা না হলে জনগণের ভোগান্তির শেষ নেই।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন ইনকিলাবকে জানান, বেইলিব্রিজের যে সমস্যাগুলো হয়, আমরা জানার সাথেই ব্যবস্থা গ্রহণ করি। পাশাপাশি নবনির্মিত ব্রিজের সংযোগ সড়কের কাজ ঈদের ছুটির জন্য বন্ধ ছিল। আবার কাজ শুরু করা হয়েছে। আশা করছি, জুনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, যদি বড় ধরনের কোনো সমস্যা না হয়।