ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
লৌহজংয়ে ৫ বছরে কৃষি জমি কমেছে ১ হাজার ৩৩ হেক্টর

ড্রেজিংয়ে ভরাট হচ্ছে কৃষি জমি

Daily Inqilab মো. শওকত হোসেন, লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) থেকে

১৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলাজুড়ে অবাধে উর্বর ও তিন ফসিল জমি কেটে দিনে-রাতে পুকুর খনন ও কৃষি জমি ভরাট বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষ মাটি কাটা বন্ধ করে দিলেও ১/২ দিন পরে আবারো (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কাটা ও ড্রেজারের মাধ্যমে ভরাট কারছে এসব সিন্ডিকেট। এতে বিলুপ্তির পথে তিন ফসলি কৃষি জমি। হারাতে বসছে উপজেলার মৎস্য ও শস্য ভান্ডার।

তবে এসব ভরাট কাজের ড্রেজার মালিক সংশ্লিষ্টরা বলছে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে জমি ভরাট করা হচ্ছে। লৌহজং উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে ভরাটের মাধ্যমে উপজেলা থেকে কৃষি জমি কমেছে ১ হাজার ৩৩ হেক্টর। যার কারণে ২০০ কোটি টাকার খাদ্য শস্য উৎপাদন কমেছে। যার মধ্যে আলুর উৎপাদন কমেছে ১৩৩ কোটি টাকা। পাঁচ বছর আগে আলুর আবাদ হতো ৪ হাজার ২৬৫ হেক্টর, বর্তমানে আবাদ হচ্ছে ৩ হাজার ১০৮ হেক্টর। ৫ বছরে আলুর আবাদ কমেছে ১১শ’ ৫৭ হেক্টর। ব্যাপক হারে কমেছে তিল, বোনা আমন, শাক-সবজির আবাদ। এতে ২০০ কোটি টাকার শস্য উৎপাদন কমেছে। উপজেলায় বার্ষিক খাদ্য চাহিদা ২৭ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন, সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ২৩ হাজার ১৬৯ মেট্রিক টন।

এলাকাবাসী বলছেন, প্রতি বছর আলু উত্তোলনের পরে বর্ষা মৌসুমজুড়ে ফসলি জমি কাটা ও ভরাট করা হচ্ছে এ নিয়ে মাঝে মধ্যে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত আবার প্রশাসন এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কাজ বন্ধ করার কয়দিন পর আবার কাটা ও ভরাট বাণিজ্য চলে। এখন পর্যন্ত একটি জমিরও স্থায়ীভাবে কাটা ও ভরাট কাজ বন্ধ করেননি। গত সপ্তাহে হাড়িদিয়া বিলে শিল্পপতির দুই ভাগিনা বাড়ি করার জন্য বেকু দিয়ে আলুর জমি কাটা সময় কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলো, পরে ইউএনও অফিস থেকে অনুমোদন এনে কাজ করছে।

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, আইনের তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। যেখানে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হতো। বর্ষায় জমতো থৈ থৈ পানি। এলাকার সাধারণ মানুষ এই প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ সংগ্রহ করত, যা ছিল জীবিকার উৎসও। অথচ চোখের সামনে কৃষি জমির ধরন রাতারাতি বদলে যাচ্ছে। উপজেলা জুড়ে প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে।
প্রান্তিক বর্গা ও ঠিকা চাষি কৃষকেরা বলেন, যেভাবে ফসলি জমি ভরাট করছে আগামীতে চাষ করার মতো জমি পাওয়া যাবে না, জমি সংকটের কারণে ঠিকা বর্গা চাষি অনেক কৃষক অন্য পেশায় চলে গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা গাঁওদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে কৃষি জমিতে পকেট কেটে ভরাটের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। এবং খিদিরপাড় ইউনিয়নের ড্রেজার দিয়ে ভরাট করেছে কৃষি জমি।
কলারবাগ কবরস্থানের পাশে প্রায় ২ একর কৃষি জমিতে ভেকু দিয়ে কেঁটে আগে থেকেই পকেট তৈরি করে রাখেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী। সেখানে ড্রাম ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পকেটটি ভরাট হচ্ছে অন্য একটি একটি ফসলি কৃষি জমির থেকে। এই জমিটির মাঝে এক জমির পর আরেকটি কৃষি জমি থেকে ড্রেজার উপস্থাপনার মাধ্যমে মাটি আনা হচ্ছে এই স্থানে।

স্থানীয়রা জানান, এই জমিটির মালিক প্রবাস ফেরত মো. ইকবাল হোসেন বেপারী গং এর। তারা আরো জানান, এই জমিটি ভরাট করা হচ্ছে বিক্রি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রয়েছে তাদের। উপজেলার বিভিন্ন স্থান জুড়ে যেভাবে ভরাট হচ্ছে কৃষি জমি এভাবে চলতে থাকলে আর ফসল করা সম্ভব হবে না। খেতেরপাড়া কাজিরগাঁও এলাকায় বিশাল এরিয়াজুড়ে কৃষি জমি ভরাট হচ্ছে। ভিডিও করতে গেলে এগিয়ে আসে বালিগাঁও এলাকার রাজন মুন্সি নামে এক ব্যাক্তি তিনি বলেন প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। ভিডিও করছেন কেন।

কলারবাগের বিষয়টি নিয়ে মো. ইকবাল হোসেন জানান, লৌহজং উপজেলার বালিগাঁও প্রধান সড়কের পাশে কলারবাগ স্থানে জায়গাটি তার নিজস্ব সম্পত্তি বিক্রির জন্য ভরাট করা হচ্ছে না। প্রশাসনের সাথে পরামর্শ করেছি ভরাট করার জন্য। কারণ এই ১৭০ শতাংশ জমিতে তেমন ভালো ফসল হয় না। কৃষকরা বছরে দশ হাজার টাকার বেশি ঠিকা নেয় না। তাই চিন্তা করেছি জমিটি ভরাট করে গরুর খামার ও অর্গানিক আলুর আবাদের ফ্যাক্টরি করবো।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, উপজেলাজুড়ে ভরাটের মাধ্যমে আশঙ্কাজনকভাবে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরের উপজেলায় আবাদি জমি ছিল ৮ হাজার ৮২৫ হেক্টর, বর্তমানে আছে ৭ হাজার ৭৯২ হেক্টর। সারাদেশে ভরাটের কারণে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ হারে কৃষি জমি কমছে সেখানে লৌহজং উপজেলার কমেছে ১১.৭০ শতাংশ।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, কৃষি জমি কাঁটা ও ভরাট বিষয়টি আমি অবগত নই এসিল্যান্ডকে পাঠিয়েছি এ বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা