ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
দেড় দশকেও অপসারণ হয়নি বুড়িকিয়ারি বাঁধ

দীর্ঘ পানিবদ্ধতায় হাকালুকি হাওর তীরের ৩ উপজেলা

Daily Inqilab কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা

২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০৪ এএম

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বুড়িকিয়ারি বাঁধের কারণেই হাকালুকি হাওর তীরের তিন উপজেলায় দীর্ঘ পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় বন্যা হলেও সর্বোচ্চ সপ্তাহ-দশদিন থেকে দ্রুত পানি চলে যেতো। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি তীরের ৩ উপজেলা কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। সেই সময়ে দীর্ঘস্থায়ী ও ভয়াবহ বন্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় হাকালুকি হাওরের সাথে কুশিয়ারা নদীর সংযোগস্থলে অপরিকল্পিত বুড়িকিয়ারি সেই বাঁধ। শুধু বাঁধই নয় নদীর পাশে সেখানে গড়ে উঠা ইটভাটাও এজন্য দায়ী। সেই বুড়িকিয়ারি বাঁধ অপসারণের দাবিতে জাতীয় সংসদে বিষয়টি উত্থাপনসহ অনেক আন্দোলন হয়। কিন্তু দেড় দশকেও সেই বুড়িকিয়ারী বাঁধ অপসারণ হয়নি। ফলে গত ১৪ বছরে ৫বার হাওর তীরের মানুষকে ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে।

জানা যায়, সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ২০০৪ সালে উপজেলা পরিষদ ও পিটাই টিকর গ্রাম রক্ষার নামে কুশিয়ারা নদীর সাথে হাকালুকি হাওরের সংযোগস্থলে বুড়িকিয়ারী নামক স্থানে একটি অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে পানিউন্নয়ন বোর্ড। মূলত এর পর থেকে ২০১০, ২০১৪, ২০২০, ২০২২ ও ২০২৪ (চলতি) বন্যা দীর্ঘস্থায়ী ও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। হাওর তীরের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার প্রায় ১২ লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়।

২০১০ সালে যখন প্রথম দুর্ভোগের শিকার হন হাওর তীরের মানুষ, তখন প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। হাওর তীরের মানুষ বন্যার দুর্ভোগ উপেক্ষা করে তখন (হাওর বাঁচাও কৃষক বাঁচাও) সেøাগান তুলে নানা আন্দোলন চালিয়ে গেছে। তৎকালীণ জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাছ খান বুড়িকিয়ারি বাঁধ সরেজমিনে পরিদর্শণ করে বিষয়টি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন। এরপর টনক নড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। সংসদীয় কমিটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সরেজমিনে পরিদর্শণ করেন বুড়িকিয়ারি বাঁধ। কুশিয়ারা নদী খনন করাসহ বুড়িকিয়ারি বাঁধ অপসারণের ঘোষণা দেয়া হয়। হাওর তীরের মানুষ আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু তাদের সেই আশা হতাশায়রূপ নেয়। ধামাচাপা পড়ে যায় কুশিয়ারা নদী খননের কাজ। হাওরের সাথে কুশিয়ারার সংযোগস্থল টাই খনন হয়নি আজো। ফলে যেই দূর্ভোগ ছিলো সেই দূর্ভোগ থেকেই যায়। ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে ১৪ বছর। ২০২২ এবং চলতি জুন মাসের বন্যায় সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে এই বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে দীর্ঘ পানিবদ্ধতায় রুপ নেয়।

যার কারণে হাকালুকি হাওর তীরের মানুষ বুড়িকিয়ারি বাঁধ অপসারনের দাবিতে ফের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে সাম্প্রতি কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বুড়িকিয়ারি বাঁধ পরিদর্শণ করেন। এরপর গত ১৭ জুলাই পৌরসভার আয়োজনে কুলাউড়া-জুড়ী ও বড়লেখা তিন উপজেলায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও পানিবদ্ধতা নিরসনে করণীয় বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়, এতে তিন উপজেলার চেয়ারম্যান, মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যানসহ রাজনৈতিক এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

কুলাউড়া পৌর মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ বলেন, এই বাঁধটি অপসারণ ও সংযোগস্থলকে প্রসারিত ও গভীর করে খনন করলে দীর্ঘ পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হতোনা। তিন উপজেলার নেতৃবৃন্দদের নিয়ে বুড়ি কিয়ারি বাঁধ অপসারনের জন্য সরকারের শীর্ষমহলের নজরে আনতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যদি দাবি না মানা হয় তাহলে গণআন্দোলন গড়ে তুলা হবে।

বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবলু ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, তিন উপজেলার পানিবদ্ধতা নিরসনে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি। দাবি আদায় না হলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।

জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি বলেন, অপরিকল্পিত বুড়িকিয়ারি সেই বাঁধের কারনে মাসখানেক থেকে পানিবন্দি উপজেলা পরিষদসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। একসময় বন্যা হলেও পানি দ্রুত চলে যেতো। কিন্তু সেই বাঁধের কারনেই এখন দীর্ঘ পানিবদ্ধতা। আমরা এই বাঁধ অপসারনে দাবীতে ঐক্যবদ্ধ আছি।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, বুড়িকিয়ারি বাঁধের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। বিষয়টি নিয়ে ডিসি এবং বিভাগীয় কমিশনারকে জানানো হয়েছে।

সিলেট বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার মুঠো ফোনে জানান, তিনি সরেজমিনে বুড়িকিয়ারি বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। বাঁধের বিষয় নিয়ে যে আলোচনা চলছে সেটা মূলত ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার রক্ষার জন্য দেয়া হয়েছিলো। বাঁধ নির্মাণ হলেও হাকালুকি হাওর ও জুড়ী নদীর পানি কুশিয়ারা নদীতে যাওয়ার জন্য খনন করে বিকল্প পথ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে নদীতে পানি বেশি তাই পানি নিষ্কাশন হতে বিলম্ব হচ্ছে।

 


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা