বন্যায় ক্ষতবিক্ষত ফটিকছড়ি
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম
সপ্তাহব্যাপী বন্যার তাণ্ডবে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ৪৭৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় দেড় লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন ৩ জন। ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে এখনো। তবে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি অসংখ্য পরিবারে।
মূলত বন্যার পানি নেমে যাবার পর বন্যা তাণ্ডবের ক্ষত চিহ্নগুলো উঁকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তলিয়ে যাওয়া ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাটের ক্ষত বেরিয়ে পড়ছে। ধসে পড়ছে কাঁচা ও মাটির ঘর। নষ্ট হয়ে গেছে বন্যা নিমজ্জিত ঘর-বাড়ির আসবাবপত্র। দেখা দিয়েছে গ্রামীণ সড়কে নির্মিত কালভার্ট সমূহের দু’পাশে বড় গর্ত। গ্রামীণ ছোট্ট অনেক রাস্তা যেন অস্তিত্বহীন। বন্যার পানি নেমে যাবার পর নিজেদের বাড়ি-ঘরের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে অনেকে দিশেহারা। আবার অনেকে ঘরের মেঝেতে পা ফেলতে গেলে হাঁটু পর্যন্ত কাঁদায় দেবে যাচ্ছে। বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ায় মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষতিতে মাথায় হাত পড়েছে। অনেকের বাড়িতে পালন করা হাঁস-মুরগিও মারা গেছে। উপজেলা জুড়ে আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
জানা যায়, গেল সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টি কমতে শুরু করায় ফেনী ও হালদা নদী এবং ধুরুং, লেলাং, মানাইছড়ি, কুতুবছড়ি, বারমাসিয়া, ফটিকছড়ি, হারুয়ালছড়ি, গজারিয়া, শোভনছড়ি, রক্তছড়ি, সর্তা ও তেলপারই খালের পানি কমতে শুরু করে। তার আগে কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে এসব নদী ও খালের পাড় উপড়ে এবং একাধিক স্থানে ভেঙে পানি ঢুকে ফটিকছড়ির বাগান বাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট, ভূজপুর, পাইন্দং, হারুয়ালছড়ি, সুন্দরপুর, সুয়াবিল, রোসাংগিরী, নানুপুর পশ্চিমাংশ, লেলাং, বখতপুর পশ্চিমাংশ, ধর্মপুর পশ্চিমাংশ, সমিতিরহাট, জাফতনগর পশ্চিমাংশ, খিরাম ইউনিয়নের পশ্চিমাংশে তান্ডব চালায়। এছাড়া নাজিরহাট পৌরসভার অধিকাংশ জায়গায় তান্ডব চালিয়েছে এ বন্যা। এসব এলাকায় লাখো মানুষ পানি বন্ধি ছিল। বন্যার পানিতে গহিরা-ফটিকছড়ি-হেঁয়াকো সড়ক, নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক, কাটিরহাট-সমিতিরহাট-যুগিরহাট সড়ক, সমিতিরহাট-নানুপুর সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে পানি সরে গেলে স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।
এদিকে বানে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দিয়ে যাচ্ছে দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বৃত্তবানরা। তাদেরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী।
বন্যাকালীন সময়ে উদ্ধার কাজ থেকে শুরু করে সব কিছু সরেজমিনে থেকেই ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়েছেন ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। আয়তনের দিকে মালদ্বীপ দেশের তুলনায় বড় এ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, ৫০ বছরেও এতদাঞ্চলের মানুষ এমন বন্যা দেখেনি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ঘর মেরামত ও পুনর্বাসন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রাপ্ত অর্থ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। ভয়াবহ এ বন্যায় ১৮ ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভা এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত মানুষের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার। বন্যায় আংশিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ৭ হাজার ২ শতটি এবং সম্পূর্ণ ৬ শতটি। তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ২০ জন। ৬ হাজার ৫ শত জনকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। ৩০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হয়েছে। ১০ হাজার মানুষকে রান্না খাবার দেয়া হয়েছে। ২ হাজার মানুষকে পোশাক (শাড়ি-লুঙ্গি) দেয়া হয়েছে। ১০ হাজার ওরস্যালাইন দেয়া হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেয়া হয়েছে ১০ হাজার পিস। এ পর্যন্ত প্রাণীসম্পদের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৪৫৬টি হাঁস, ৪১ হাজার ৭শ’ মুরগি। মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে সম্পূর্ণ পুকুর ৩ হাজার ১২টি, আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৫ শত ৩০টি পুকুর। বৈদ্যুতিক ক্ষতি হয়েছে ২৪টি ট্রান্সফর্মার, ১২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি, ১শ’ মিটার লাইন তার নষ্ট হয়েছে। মোট ক্ষতিগ্রস্থ বিদ্যুৎ লাইন ৭.২ কিলোমিটার।
এছাড়া ফটিকছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী তন্ময় নাথ›র মতে বন্যায় আনুমানিক ২২ কি.মি. উপজেলা সড়ক, ৩৭ কি.মি. ইউনিয়ন সড়ক, ২৬৮ কি.মি. গ্রামীণ সড়ক, ৩০টি ব্রিজ, ১২০টি বক্স কালভার্ট, ৭৪টি সøাব কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক ও কালভার্ট।
উপজেলা কৃষি অফিসার হাসানুজ্জামান বলেন- কৃষি জমিতে আমন ধানের বীজতলা প্রায় ক্ষতি হয়েছে। এ মুহূর্তে বীজ সংকট আছে। সে বিষযে আমরা বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ করছি। বীজ সরবরাহ জন্য চেষ্টা করবো। আমন রোপাও সব শেষ হয়ে গেছে। কৃষক যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
ইউএনও মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরো বলেন- পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে আমরা একটা বাজেট চাইবো পাশাপাশি আমাদের অনেক ব্যক্তি স্বপ্রণোদিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের একটি ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সহযোগিতা করছেন। সেই আর্থিক সহযোগিতারও আমরা হিসাব রাখছি। যাদের ঘর নষ্ট হয়েছে তাদের সহযোগিতা করবো। এছাড়া বিভিন্ন মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন প্রত্যকটি ইউনিয়নে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা প্রণয়ন করছে। সেই তালিকা থেকে এসব মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা নিতে পারেন।
তিনি বলেন- এ মুহূর্তে খাদ্যের অভাব আছে এ রকম কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ আছে বিভিন্ন জায়গায় ঘর ধসে পড়েছে। সরকারিভাবে ঘর তৈরিতে সময় লাগে। তাই বিত্তবানদের প্রতি আহবান- যে ঘরগুলো একেবারে ধসে গেছে ওই ঘরগুলো করে দেয়া যেতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন- সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ঘরের মধ্যে প্রায় ২৫০টি ঘর করে দেবার চেষ্টা করবো। সেই ধরণের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি। তাছাড়া কারিতাস প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হয়েছে। তারা বলেছে ২শ’ ঘর নির্মাণ করে দিবে।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা