খুলনার পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৩ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে গত ২২ আগস্ট। জেলায় ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছে আরো চার উপজেলা। ধারাবাহিক ভাঙনের কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে জেলার বটিয়াঘাটা, দাকোপ, তেরখাদা এবং কয়রা উপজেলার নদী পাড়ের জনবসতীর মানচিত্র। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মেরামত না করলে যে কোন সময়ে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে বেড়িবাঁধ।

বটিয়াঘাটার ভদ্রা, পশুর ও তেরখাদার আতাই, দাকোপের শিবসা, পশুর এবং কয়রা উপজেলার কাপোতাক্ষের ভাঙন এখনও পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য।
প্রতি বছর কোন না কোন সময়ে ভাঙছে এসব নদীর বেড়িবাঁধ। প্লাবিত হচ্ছে বিস্তৃর্ণ এলাকা। ভৌগলিক কারণে জেলার দাকোপ এবং কয়রা ভাঙন প্রবন এলাকা। এর প্রধান কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, টেকসই বেড়িবাঁধের অভাব এবং উপজেলা দুটির চারপাশে খরস্রতা নদী। ফলে সারা বছর ধরে চলে ভয়াবহ নদী ভাঙন। আর প্রতিনিয়ত এখানকার স্থানীয় বাসিনদারা ভাঙনের কবলে পড়ে তাদের সহায় সম্পত্তি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। চলতি মৌসুমে আমনের চারা রোপন নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছে এসব এলাকার কৃষকেরা।

বটিয়াঘাটা উপজেলার ভদ্রা ও পশুর নদীর ভাঙন ঠেকাতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এছাড়া উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের ভগবতীপুর পূর্ব সীমান্তে মাঙ্গা নদীসংলগ্ন ওয়াপদা ভেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। জোয়রের পানি লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করেছে। ওই এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভাঙনকবলিত এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কাজ করেছেন। বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে আরো ২০-২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন ওই এলাকার মানুষ।

বটিয়াঘাটা উপজেলার বাসিন্দা মোহন লাল পাঠক জানান, ভদ্রা নদীর পাশেই আমার বাড়ি। নদী থেকে ২০-২৫ ফুট দূরে আমার ঘর। সেখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করি। সব সময় দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। নদীতে জোয়ারে পানির স্রোতের শব্দ আর ভাঙনের ভয়ে রাতে ঘুম আসে না।

অন্যদিকে নদী ভাঙনে খুলনার দাকোপে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিনটি পোল্ডারের মধ্যে দুইটি পোল্ডারের ওয়াপদা বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ৩১নম্বর পোল্ডার ও দ্বীপে রয়েছে চালনা পৌরসভা, পানখালী ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন। ৩২ নম্বর পোল্ডার ও দ্বীপে কামার খোলা ও সুতারখালী ইউনিয়ন। ৩৩ নম্বর পোল্ডার ও দ্বীপে বাজুয়া, দাকোপ, কৈলাশগঞ্জ, লাউডোব ও বানিশান্তা ইউনিয়ন।

দাকোপ ইউনিয়নের গুনারী এলাকার সন্তোষ সরদার জানান, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে টেকসই ওয়াপদা বেড়িবাঁধ নির্মাণ হচ্ছে না। যে কারণে সদ্য নির্মিত বেড়িবাঁধের গুনারী কালিবাড়িসহ কয়েকটি স্থানে আবারও ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। আর বার বার এমন ভাঙনের ফলে আমাদের এলাকার মানচিত্র পাল্টে যাচ্ছে।

কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চরামুখা এলাকায় কপোতাক্ষপাড়ে বেড়িবাঁধ সরু হয়ে গেছে। ঝড়ো বাতাস এবং জোয়ারের পানি বাড়লে উপছে লোকালয়ে পানি ঢোকে। এ এলাকার বাসিন্দা মো. ফেরদাউস গাজী জানান, আকাশে মেঘ করলে আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, খুলনা জেলায় ২৬টি পোল্ডার রয়েছে। ১ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালে ৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যার মধ্যে ৩৫ কিলোমিটার ওই সময় সংস্কার করা হয়েছে। বাকি ১০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিশেষ বরাদ্ধের মাধ্যমে কাজ চলমান রয়েছে।