মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করুণ দশা
২০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির দৈন্যদশা। খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। একাধিক পদে জনবল সংকট, এম্বুলেন্স থাকলেও নেই ড্রাইভার, নৌ-এম্বুলেন্সটি অকেজো অবস্থায় ২ বছর ধরে কাদা মাটিতে পানগুছি নদীর তীরে পানিতে ডুবে পড়ে রয়েছে। ভর্তি থাকা রোগীরা দুপুরের খাবার ভাতের সাথে পাচ্ছেন এক টুকরো পাঙ্গাস মাছ ও পেপে সবজি। কর্তৃপক্ষের নেই কোন নজরদারি। এ যেন অভিভাবকহীন। দেখার কেউ নেই। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগিদের মানববন্ধন, ঝাড়ু মিছিল করেও পায়নি কোন সুরাহ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শর্মী রায়ের বিরুদ্ধে নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তার পদত্যাগ দাবি করে ঝাড়ু মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী সেচ্ছাসেবক ও স্থানীয়রা।
গত ১ অক্টোবর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের সড়কে ব্যানারে মানববন্ধনে অংশগ্রহন করেন স্থানীয় শত শত নারী-পুরুষ। এ সময় জনতা ব্যানার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড ও হাতে ঝাড়ু নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা খাবারের লাইনে দাড়িয়ে দুপুরের খাবার নিচ্ছেন। জনপ্রতি এক টুকরো পাঙ্গাস মাছ ও পেপে সবজি। সকালে পেয়েছে ছোট একটি পাওয়া রুটি, একটি কলা ও একটি ডিম সাথে সামান্যতম চিনি। সানকিভাঙ্গা গ্রামের বৃদ্ধ আবুল বাশার (৭২), বারইখালী গ্রামের ছোবাহান খান (৭০), আকবর হাওলাদার (৪৫), নাসির হাওলাদার (৪৮) এরকম ভর্তি থাকা রোগীরা আক্ষেপ করে বলেন, বয়স্ক মানুষ সকালে নামমাত্র পাওয়া রুটি, কলা একটি ডিম তাতে কি পেট ভরে। দুপুরে ভাতের সাথে এক টুকরো পাঙ্গাস মাছ ও সবজি পেয়েছি। সরকারিভাবে একজন রোগীর খাবারে কত টাকা বরাদ্দ? আপনারা জানেন?। কর্মকর্তা ডাক্তার শর্মী রায়কে বলেছি উত্তরে পেয়েছি যা পেয়েছেন তাই খেতে হবে। এ রকম নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোরেলগঞ্জ উপজেলার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। গত এক সপ্তাহ ধরে আবহাওয়া জনিত কারনে নিউমোনিয়া, জ্বর, শ্বাসকষ্টজনিত ও ডায়রিয়া শিশু সাবিহা (৬ বছর), আরবিন (৯ মাস), রাফসান (১ বছর), তাহমিনা (১ বছর), নুসরাত (৬ মাস), ওমর (৫ মাস)। এ ছাড়াও বৃদ্ধসহ ৩৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।
পুরুষ ওর্য়াডের নোংরা অপরিচ্ছন্ন ল্যাটটিন মূল ফটকের দরজায় নেই ছিটকানি। মহিলা ওয়ার্ডে একটি ফ্যান নষ্ট, গরমে শিশু রোগীদের ভোগান্তি চরমে অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। অপরদিকে খাবারের তালিকায় নিন্ম মানের খাবার দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের বহনকৃত এম্বুলেন্স থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ড্রাইভার না থাকায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের যোগসাজসে বেশী টাকায় ভাড়ায় যেতে হচ্ছে এম্বুলেন্সে রোগীদের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি বছরের পর বছর ধরে অকেজো অবস্থায়। ২০১৮ সালের শেষ দিকে নৌ-পথে রোগীদের দ্রুততম সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছানোর জন্য সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উপকূলীয় মোরেলগঞ্জে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ প্রদান করে। ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে এ নৌ এম্বুলেন্সটি এখন অকেজো অবস্থা নদীর চড়ে ফেলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা অফিস সহকারী ৩টি পদ, পরিসংখ্যান পদে ১ জন, জুনিয়ার মেকানিক্স পদে ১ জন, স্টোর কিপার ১ জন, এম্বুলেন্স ড্রাইভার ২জন, নাইটগার্ড ২ জন, আয়া ৩জন, ওয়ার্ডবয় ও সুইপার পদে ১০জন, এ পদগুলো দীর্ঘবছর ধরে শূন্য রয়েছে। এ ছাড়াও হেলথ্ধসঢ়; এ্যাসিসট্যান্ড পদের এইচআই, এএইচআই, এইচ এ ৮২ জনের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছে মাত্র ৩১ জন।
এ সর্ম্পকে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শর্মী রায় বলেন, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি ২০২২ সালে একবার মেরামত করে সচল করা হয়েছিল। স্থানীয় পর্যায় মেকানিক্স না থাকায় অকেজো অবস্থায় রয়েছে এম্বুলেন্সটি। সরকারিভাবে তেল ও ডাইভার বরাদ্দ নেই। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।
একজন রোগীর খাবারে প্রতিদিন বরাদ্দ রয়েছে ১৭৫ টাকা, নিম্নমানের খাবারের বিষয়ে ঠিকদার প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার বলা সত্ত্বেও কোন কর্নপাত করছেন না। মামলা থাকায় (আইনি জটিলতায়) টেন্ডার প্রক্রিয়ায় নতুন করে ঠিকাদার পরিবর্তন করা যাচ্ছে না।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ